দিনে মাত্র ৬ ঘণ্টা ঘুম শরীরে কী প্রভাব ফেলে?

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
দিনে মাত্র ৬ ঘণ্টা ঘুম শরীরে কী প্রভাব ফেলে?
শরীর ও মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন গড়ে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ছবি: ফ্রিপিক

আজকের দ্রুতগতির জীবনে ঘুম যেন এক ধরনের বিলাসিতা। কাজের চাপ, সোশ্যাল মিডিয়া, দুশ্চিন্তা, সব মিলিয়ে অনেকে নিয়মিতই মাত্র ৬ ঘণ্টা বা তারও কম ঘুমান। কিন্তু শরীর ও মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন গড়ে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। এর কম ঘুমালে কী ধরনের প্রভাব পড়ে? গবেষণা বলছে, প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা বা তার কম ঘুম দীর্ঘমেয়াদে শরীরের বহু কার্যক্রমকে বদলে দিতে পারে।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা দ্রুত কমে যায়

ঘুম মস্তিষ্কের ‘রিস্টার্ট বাটন’। মাত্র ৬ ঘণ্টা ঘুমালে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না। এতে-

  • মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হয়
  • সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়
  • স্মৃতি দুর্বল হতে থাকে
  • ক্লাস বা অফিসের কাজ করতে মনোযোগ বারবার ভেঙে যায়
৬ ঘণ্টার কম ঘুমালে ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ছবি: ফ্রিপিক
৬ ঘণ্টার কম ঘুমালে ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ছবি: ফ্রিপিক

গবেষণায় দেখা গেছে, ৬ ঘণ্টা ঘুম টানা কয়েকদিন চললে মস্তিষ্ক ২৪ ঘণ্টা না ঘুমানোর মতো ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, অনুভব না করলেও মস্তিষ্কের ভেতরে প্রডাক্টিভিটি ধীরে ধীরে কমতেই থাকে।

হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়

ঘুম কম হওয়ার সবচেয়ে বাজে প্রভাব পড়ে হরমোনের ওপর হয়। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল বেড়ে যায়, ফলে সারাদিন অস্থিরতা, বিরক্তি ও দুশ্চিন্তা অনুভূত হয় ক্ষুধা বাড়ানোর হরমোন ঘ্রেলিন বাড়ে এবং এটি নিয়ন্ত্রনের হরমোন লেপ্টিন কমে। ফলে বারবার ক্ষুধা লাগে, মিষ্টি বা ঝাল খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। এই কারণেই ৬ ঘণ্টা বা এর চেয়ে ঘুমানোর অভ্যাস থাকা মানুষেরা সহজেই ওজন বাড়িয়ে ফেলেন।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হয়

যারা নিয়মিত কম ঘুমান, তাদের শরীর ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কম প্রস্তুত থাকে। পর্যাপ্ত ঘুমে শরীরে যে ‘প্রোটেকটিভ প্রোটিন’ ও ইমিউন সেল তৈরি হয়, ৬ ঘণ্টা ঘুমে তা কমে যায়। ফলে, বারবার ঠান্ডা-জ্বর এবং অ্যালার্জির সমস্যা বাড়ে। পাশাপাশি ক্ষত সেরে উঠতে সময় লাগে।

ত্বক ও বয়সের ছাপ দ্রুত দেখা দেয়

যারা কাজ বা পড়ার চাপ সামলে নিয়মিত ৬ ঘণ্টা বা এর কম ঘুমান, তাদের মুখে খুব দ্রুত ক্লান্তি, ডার্ক সার্কেল, শুষ্কতা দেখা দেয়। কারণ ঘুমের সময় শরীর কোলাজেন তৈরি করে, যা ত্বক টানটান, উজ্জ্বল ও তরুণ রাখে। কম ঘুমে এই কোলাজেন তৈরির প্রক্রিয়া নষ্ট হয়। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে আগেভাগেই।

হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে

কম ঘুম রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে হৃদ্‌পিণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। গবেষণা বলছে, যারা প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের হৃৎপিণ্ড-সংক্রান্ত সমস্যা বা উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেশি।

কম ঘুম মানসিক ভারসাম্যের জন্য ক্ষতিকর। ছবি: ফ্রিপিক
কম ঘুম মানসিক ভারসাম্যের জন্য ক্ষতিকর। ছবি: ফ্রিপিক

মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব

কম ঘুম মানে সারাদিন অস্থির, বিরক্ত, মনমরা ভাব নিয়ে চলা। দীর্ঘদিন এটি চলতে থাকলে-

  • উদ্বেগ-অস্থিরতা বাড়ে
  • মুড সুইং হয়
  • একসময় কাজ বা পড়াশোনায় আগ্রহ কমে যায়

ঘুম কম হলে মস্তিষ্ক ইতিবাচক বিষয় কম ধরে রাখে, নেতিবাচক বিষয় বেশি মনে থাকে, যা মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

বিপাকক্রিয়া ধীর হয়ে যায়

শরীরের সব কোষই ঘুমের সময় পুনর্গঠিত হয়। ৬ ঘণ্টা ঘুমে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে-

  • বিপাকক্রিয়া ধীর হয়
  • শরীরের শক্তি কমে যায়
  • ব্যায়াম করলে আগের মতো স্ট্যামিনা থাকে না
  • ওজন বৃদ্ধি, শক্তিহীনতা বা শরীর ভারি লাগে।
মানুষভেদে পার্থক্য থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদে ৭ ঘণ্টার কম ঘুম শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ছবি: ফ্রিপিক
মানুষভেদে পার্থক্য থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদে ৭ ঘণ্টার কম ঘুম শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ছবি: ফ্রিপিক

কাজের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা কমে যায়

অল্প ঘুমের কারণে দিনের শুরুটা ভালো হয় না। মুড খারাপ থাকে, মনোযোগ শক্তি নিচে নেমে যায়। এতে সঠিক পরিকল্পনা করতে সমস্যা হয়, নতুন ভাবনা বা সৃজনশীল আইডিয়া কমে যায়, যেকোনো কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তাহলে কি ৬ ঘণ্টা ঘুমে সবার ক্ষতি হয়?

মানুষ ভেদে পার্থক্য থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদে ৭ ঘণ্টার কম ঘুম শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই নিয়ে চিকিৎসক ও গবেষকদের মত এক। কখনও কখনও ৬ ঘণ্টা ঘুম ঠিক আছে, কিন্তু নিয়মিত হলে শরীর ধীরে ধীরে খারাপ হতে শুরু করে।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত