অস্ট্রেলিয়ার নতুন নীতি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কী সুবিধা দেবে

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
অস্ট্রেলিয়ার নতুন নীতি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কী সুবিধা দেবে
অস্ট্রেলিয়ার পতাকা। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সম্প্রতি লেভেল-১ স্ট্যাটাস পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র বিভাগ ঝুঁকি মূল্যায়ন করে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করেছে। এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে।

বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা বিড়ম্বনা নিয়ে এখন বেশ আলোচিত। সর্বশেষ হেনলি পাসপোর্ট সূচক-২০২৫ অনুযায়ী বাংলাদেশি পাসপোর্টের অবস্থান ৯৩তম। এই সূচক অনুসারে, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা ৩৯টি দেশে ভিসা-মুক্ত বা অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা পায়।

লেভেল-১ স্ট্যাটাস কী

অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থী ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে লেভেল-১ স্ট্যাটাস হলো একটি বিশেষ সুবিধা, যা কোনো দেশ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অফ হোম অ্যাফেয়ার্সের নির্ধারিত সর্বনিম্ন অভিবাসন ঝুঁকির স্তর। এই পদ্ধতিটিকে মূলত ‘সিম্পলিফাইড স্টুডেন্ট ভিসা ফ্রেমওয়ার্ক’-এর একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অস্ট্রেলিয়া অভিবাসন ঝুঁকি অনুযায়ী দেশ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সাধারণত তিনটি স্তরে ভাগ করে। এর মধ্যে লেভেল-১ হলো সবচেয়ে কম ঝুঁকির স্তর। কোনো দেশ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন এই স্ট্যাটাস পায়, তখন এটি নির্দেশ করে যে সেই দেশের বা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ার ভিসা শর্তাবলি মেনে চলার ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি নির্ভরযোগ্য।

বাংলাদেশের সুবিধা

অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থী ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে ওই স্ট্যাটাস বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু সুবিধা দেবে। বিগত সময়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ভিসা সংক্রান্ত বেশ কিছু জটিলতায় পড়ত। নতুন এই সুবিধার ফলে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদনের সময় আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে শিথিলতা থাকবে। অর্থাৎ ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা অন্যান্য নথির ওপর জোর কম দেওয়া হবে। ফলে ভিসা প্রক্রিয়াটি অনেকটাই সহজ হবে।

লেভেল-১ স্ট্যাটাস পাওয়া দেশের নাগরিকদের ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া সাধারণত দ্রুত শেষ করা হয়। ফলে বাংলাদেশিদের অপেক্ষার সময় কমবে এবং শিক্ষার্থীরা কোর্স শুরুর আগে তাদের প্রস্তুতি গুছিয়ে নিতে পর্যাপ্ত সময় পাবে। সামগ্রিকভাবে ভিসা আবেদনের জন্য অন্যান্য সহায়ক নথিপত্রের প্রয়োজনীয়তা কমে আসায় আবেদন প্রক্রিয়ার বোঝা কমবে এবং নির্ভুল আবেদনের সম্ভাবনা বাড়বে।

অস্ট্রেলিয়ান সরকার বাংলাদেশকে তুলনামূলকভাবে কম অভিবাসন ঝুঁকিপূর্ণ দেশ এবং প্রকৃত শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচনা করায়, বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা অনুমোদনের হার বাড়বে।

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের লেভেল-১ স্ট্যাটাস পাওয়া প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করেছে। বাংলাদেশ লেভেল-১ এ অবস্থান করলেও পাশের দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান যথাক্রমে লেভেল-২ ও ৩ এ অবস্থান করছে।

সহজ ভাষায়, ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানি নাগরিকদের অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পেতে ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং অন্যান্য নথি দেখানো বাধ্যতামূলক। বেশ কিছু ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার সরকার তাদের অযোগ্য বিবেচনা করতে পারে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সকল নথিপত্র কিংবা ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানো বাধ্যতামূলক নয়। অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে তবে সেক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতা বা বাকি কাগজগুলো দেখাতে হবে।

দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ প্রতিযোগী দেশ যখন লেভেল-২ বা ৩-এর কড়াকড়ির সম্মুখীন, তখন বাংলাদেশ একটি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। এই স্ট্যাটাসের কারণে অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে আরও বেশি আগ্রহী হবে।

সম্পর্কিত