চরচা ডেস্ক

একটি প্রচলিত কথা আছে,’ঘুম হলো সকল রোগের মহৌষধ’। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, এই মহৌষধের প্রয়োজনীয়তা নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে সমান নয়। সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের গড়ে প্রায় ১১ থেকে ২০ মিনিট বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়। আপাতদৃষ্টিতে এই সময়টুকু সামান্য মনে হলেও, এর পেছনে রয়েছে গভীর শরীরবৃত্তীয় এবং মানসিক কারণ।
মাল্টিটাস্কিং ও মস্তিষ্কের জটিল গঠন
লফবরো ইউনিভার্সিটির স্লিপ রিসার্চ সেন্টারের গবেষকদের মতে, নারীদের মস্তিষ্ক পুরুষদের তুলনায় বেশি জটিলভাবে কাজ করে। নারীরা সাধারণত একই সময়ে একাধিক কাজ বা 'মাল্টিটাস্কিং' করতে অভ্যস্ত। এই প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্ক অনেক বেশি শক্তি ব্যয় করে এবং ক্লান্ত হয়ে পড়ে। দিনের বেলা মস্তিষ্ক যত বেশি ব্যবহৃত হবে, তা পুনরুদ্ধার বা রিকভারির জন্য রাতে তত বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়।
হরমোনের পরিবর্তন
নারীদের জীবনচক্রে হরমোনের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। ঋতুচক্র (Menstruation), গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজ- এই প্রতিটি পর্যায়ে শরীরে হরমোনের ব্যাপক ওঠানামা ঘটে।
পিরিয়ড: মাসিক চক্রের সময় অনেকেরই পেট ব্যথা বা অস্বস্তির কারণে ঘুম ব্যাহত হয়।
গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় শারীরিক ওজন বৃদ্ধি এবং ভ্রূণের নড়াচড়ার কারণে গভীর ঘুম পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
মেনোপজ: এই সময়ে 'হট ফ্ল্যাশ' বা হঠাৎ শরীর গরম হয়ে যাওয়ার কারণে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। এই ঘাটতি পূরণে নারীদের দীর্ঘ সময় বিছানায় থাকতে হয়।
অনিদ্রা ও মানসিক স্বাস্থ্য
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়াতে বেশি ভোগেন। এছাড়া উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার হারও নারীদের মধ্যে কিছুটা বেশি। মন যখন অস্থির থাকে, তখন সহজে ঘুম আসতে চায় না। এর ফলে ঘুমের মান কমে যায় এবং শরীর তার ক্ষতিপূরণ করতে বাড়তি সময় দাবি করে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা ও ‘সেকেন্ড শিফট’
শারীরিক ও মানসিক কারণের পাশাপাশি সামাজিক প্রেক্ষাপটও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ পরিবারে ঘরের কাজ এবং সন্তান লালন-পালনের প্রাথমিক দায়িত্ব নারীদের ওপর থাকে। কর্মজীবী নারীরা অফিস শেষ করে এসে ঘরের কাজ করেন, যাকে সমাজতাত্ত্বিকরা ‘সেকেন্ড শিফট’ বলেন। এই অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের ক্লান্তি দূর করতে পর্যাপ্ত বিশ্রামের বিকল্প নেই।
এই নিয়ে ঘুম বিশেষজ্ঞ আন্ড্রে ওয়েলস বলেন, “নারীরা প্রায়শই সামাজিক প্রত্যাশা এবং তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের এক বিশাল বোঝা অনুভব করেন। এই ‘অদৃশ্য বোঝা’ একজন নারীর মনে মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। কারণ এই দায়িত্বগুলো এমন কিছু আবেগ তৈরি করে যা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে, রাতে তাদের সময়মতো ঘুমানো বা দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।”
ঘুমের ব্যাঘাতের প্রভাব
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে নারীদের মধ্যে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং মেজাজ খিটখিটে হওয়ার প্রবণতা পুরুষদের তুলনায় বেশি দেখা যায়। পর্যাপ্ত ঘুম মূলত নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।
নারীদের বেশি ঘুমের প্রয়োজন কোনো অলসতা নয়, বরং এটি একটি জৈবিক চাহিদা। সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর রাতে গড়ে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা মানসম্মত ঘুমের প্রয়োজন। নারীদের ঘুমের এই বিশেষ চাহিদাকে সম্মান জানানো উচিৎ। পাশাপাশি যেকোনো কাজে সহায়তা করে তাদের বিশ্রামের সুযোগ করে দেওয়া পরিবারের সকল সদস্যের দায়িত্ব।
তথ্যসূত্র: স্লিপ ফাউন্ডেশন, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ওয়েবসাইট

একটি প্রচলিত কথা আছে,’ঘুম হলো সকল রোগের মহৌষধ’। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, এই মহৌষধের প্রয়োজনীয়তা নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে সমান নয়। সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের গড়ে প্রায় ১১ থেকে ২০ মিনিট বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়। আপাতদৃষ্টিতে এই সময়টুকু সামান্য মনে হলেও, এর পেছনে রয়েছে গভীর শরীরবৃত্তীয় এবং মানসিক কারণ।
মাল্টিটাস্কিং ও মস্তিষ্কের জটিল গঠন
লফবরো ইউনিভার্সিটির স্লিপ রিসার্চ সেন্টারের গবেষকদের মতে, নারীদের মস্তিষ্ক পুরুষদের তুলনায় বেশি জটিলভাবে কাজ করে। নারীরা সাধারণত একই সময়ে একাধিক কাজ বা 'মাল্টিটাস্কিং' করতে অভ্যস্ত। এই প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্ক অনেক বেশি শক্তি ব্যয় করে এবং ক্লান্ত হয়ে পড়ে। দিনের বেলা মস্তিষ্ক যত বেশি ব্যবহৃত হবে, তা পুনরুদ্ধার বা রিকভারির জন্য রাতে তত বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়।
হরমোনের পরিবর্তন
নারীদের জীবনচক্রে হরমোনের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। ঋতুচক্র (Menstruation), গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজ- এই প্রতিটি পর্যায়ে শরীরে হরমোনের ব্যাপক ওঠানামা ঘটে।
পিরিয়ড: মাসিক চক্রের সময় অনেকেরই পেট ব্যথা বা অস্বস্তির কারণে ঘুম ব্যাহত হয়।
গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় শারীরিক ওজন বৃদ্ধি এবং ভ্রূণের নড়াচড়ার কারণে গভীর ঘুম পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
মেনোপজ: এই সময়ে 'হট ফ্ল্যাশ' বা হঠাৎ শরীর গরম হয়ে যাওয়ার কারণে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। এই ঘাটতি পূরণে নারীদের দীর্ঘ সময় বিছানায় থাকতে হয়।
অনিদ্রা ও মানসিক স্বাস্থ্য
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়াতে বেশি ভোগেন। এছাড়া উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার হারও নারীদের মধ্যে কিছুটা বেশি। মন যখন অস্থির থাকে, তখন সহজে ঘুম আসতে চায় না। এর ফলে ঘুমের মান কমে যায় এবং শরীর তার ক্ষতিপূরণ করতে বাড়তি সময় দাবি করে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা ও ‘সেকেন্ড শিফট’
শারীরিক ও মানসিক কারণের পাশাপাশি সামাজিক প্রেক্ষাপটও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ পরিবারে ঘরের কাজ এবং সন্তান লালন-পালনের প্রাথমিক দায়িত্ব নারীদের ওপর থাকে। কর্মজীবী নারীরা অফিস শেষ করে এসে ঘরের কাজ করেন, যাকে সমাজতাত্ত্বিকরা ‘সেকেন্ড শিফট’ বলেন। এই অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের ক্লান্তি দূর করতে পর্যাপ্ত বিশ্রামের বিকল্প নেই।
এই নিয়ে ঘুম বিশেষজ্ঞ আন্ড্রে ওয়েলস বলেন, “নারীরা প্রায়শই সামাজিক প্রত্যাশা এবং তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের এক বিশাল বোঝা অনুভব করেন। এই ‘অদৃশ্য বোঝা’ একজন নারীর মনে মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। কারণ এই দায়িত্বগুলো এমন কিছু আবেগ তৈরি করে যা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে, রাতে তাদের সময়মতো ঘুমানো বা দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।”
ঘুমের ব্যাঘাতের প্রভাব
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে নারীদের মধ্যে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং মেজাজ খিটখিটে হওয়ার প্রবণতা পুরুষদের তুলনায় বেশি দেখা যায়। পর্যাপ্ত ঘুম মূলত নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।
নারীদের বেশি ঘুমের প্রয়োজন কোনো অলসতা নয়, বরং এটি একটি জৈবিক চাহিদা। সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর রাতে গড়ে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা মানসম্মত ঘুমের প্রয়োজন। নারীদের ঘুমের এই বিশেষ চাহিদাকে সম্মান জানানো উচিৎ। পাশাপাশি যেকোনো কাজে সহায়তা করে তাদের বিশ্রামের সুযোগ করে দেওয়া পরিবারের সকল সদস্যের দায়িত্ব।
তথ্যসূত্র: স্লিপ ফাউন্ডেশন, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ওয়েবসাইট