নিঃসঙ্গতা কেন খারাপ নয়?

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
নিঃসঙ্গতা কেন খারাপ নয়?
সবসময় নিঃসঙ্গ থাকা সব ক্ষেত্রে খারাপ নয়। ছবি: ফ্রিপিক

সবসময়ই একা বা নিঃসঙ্গ থাকা, শুনতে অনেকের কাছেই নেতিবাচক মনে হয়। সমাজে প্রচলিত ধারণা হলো, মানুষ সামাজিক প্রাণী; তাই একা থাকা মানেই দুঃখ, বিষণ্নতা বা একঘেঁয়েমি। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, নিঃসঙ্গ থাকা সব ক্ষেত্রে খারাপ নয়। বরং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এবং সচেতনভাবে একা সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীও হতে পারে।

নিঃসঙ্গতা আর একাকীত্ব এক জিনিস নয়। এ ব্যাপারে গবেষকেরা একটি পার্থক্য টেনেছেন এভাবে। নিঃসঙ্গতা (solitude) হচ্ছে নিজের ইচ্ছায় একা থাকা। আর একাকীত্ব (loneliness) হচ্ছে সম্পর্কের অভাব থেকে হওয়া কষ্টকর অনুভূতি

এই দুইটি এক নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিজের পছন্দে একা থাকতে পারেন, তারা মানসিকভাবে তুলনামূলক বেশি স্থিতিশীল। চলুন জেনে নিই নিঃসঙ্গতা নিয়ে গবেষণা কী বলছে-

সৃজনশীলতা বাড়ে

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, একা সময় কাটালে মানুষের ডিপ থিংকিং বা গভীরভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে। লেখক, শিল্পী, গবেষকেরা একা থাকাকালীনই বেশি করে নতুন আইডিয়া পান। কারণ তখন মস্তিষ্ক বাইরের শব্দ বা সামাজিক চাপ থেকে মুক্ত থাকে।

আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, একা থাকা মানুষকে নিজের আবেগ বুঝতে সাহায্য করে। জার্নাল পারসোনালিটি এন্ড সোশ্যাল সাইকোলজি বুলেটিন-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত একা সময় কাটানো মানুষ রাগ, হতাশা বা দুশ্চিন্তা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

আত্মপরিচয় গড়ে ওঠে

বিশেষ করে কিশোর বয়সে, সবসময় অন্যদের সঙ্গে থাকলে নিজের পছন্দ-অপছন্দ বোঝা কঠিন হয়। গবেষণা বলছে, একা থাকা তরুণদের মধ্যে সেল্ফ-রিফ্লেকশন বা আত্মবিশ্লেষণের ক্ষমতা বেশি হয়, যা আত্মবিশ্বাস তৈরিতে সাহায্য করে।

মানসিক ক্লান্তি কমে

সবসময় মানুষের সঙ্গে মিশলে অনেকেরই সামাজিক ক্লান্তি (social fatigue) হয়। বিশেষ করে অন্তর্মুখী (introvert) ব্যক্তিদের জন্য একা থাকা এক ধরনের মানসিক রিচার্জ। গবেষণায় দেখা গেছে, নিরবতা ও একা সময় কাটানো স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমাতে পারে।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা উন্নত হয়

একাকী সময় মানুষকে অন্যের মতামতের প্রভাব ছাড়াই ভাবতে শেখায়। এতে সিদ্ধান্তগুলো হয় অনেক বেশি বাস্তবসম্মত ও ব্যক্তিগত মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

তবে কখন নিঃসঙ্গতা ক্ষতিকর হতে পারে?

নিঃসঙ্গতা নিয়ে গবেষণাগুলোয় গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তাও আছে। যদি একা থাকা জোর করে হয়, যদি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে শুরু করে এবং এ নিয়ে যদি দীর্ঘদিন ধরে মন খারাপ, আগ্রহহীনতা বা হতাশা থাকে; তাহলে সেটি আর স্বাস্থ্যকর নিঃসঙ্গতা থাকে না, বরং একাকীত্বে পরিণত হয়।

গবেষণা বলছে, সবসময় নিঃসঙ্গ থাকা খারাপ নয়, যদি তা হয় নিজের পছন্দে এবং ভারসাম্যের সঙ্গে। একা থাকা মানে সমাজবিমুখ হওয়া নয়; বরং নিজের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা। সামাজিক সম্পর্ক যেমন প্রয়োজন, তেমনি নিজের জন্য নিরিবিলি সময়ও মানসিক সুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

অতএব, নিঃসঙ্গতাকে ভয় না পেয়ে, সেটিকে সচেতনভাবে ব্যবহার করতে পারলেই তা হয়ে উঠতে পারে মানসিক শক্তির উৎস।

তথ্যসূত্র: অল পয়েন্টস নর্থ

সম্পর্কিত