আরমান ভূঁইয়া

সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। আওয়ামী লীগের আমলে ২০০৯ সালে হওয়া এই আইনের অধীনেই দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। চলুন জেনে নেওয়া যাক সন্ত্রাসবিরোধী আইন কী?
সন্ত্রাসবিরোধী আইন কী
বাংলাদেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সহিংস উগ্রবাদ মোকাবিলায় ১৬ বছর আগে প্রণয়ন হয় সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯। সাধারণ ফৌজদারি আইনের বাইরে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনস্বার্থ রক্ষায় এটি একটি বিশেষ আইন হিসেবে কার্যকর। এই আইনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সংজ্ঞা নির্ধারণ, সন্ত্রাসে জড়িত ব্যক্তি ও সংগঠনকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা, কঠোর শাস্তির বিধান এবং তদন্ত, বিচার ও সম্পত্তি জব্দের ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে। সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী আইনটি একাধিকবার সংশোধন করা হয়েছে।
আইনের পটভূমি ও প্রণয়নের প্রেক্ষাপট
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে বোমা হামলা, উগ্রবাদী তৎপরতা, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সংশ্লিষ্টতার ঘটনা সামনে আসে। এই প্রেক্ষাপটে ১/১১-পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রথম অধ্যাদেশ জারি হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নবম সংসদে ২০০৯ সালে ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯’ পাস হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জঙ্গিবাদ দমনের বাস্তবতায় প্রণীত এই আইনটি পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় শুরু হওয়া কিছু প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতাও বহন করে। টানা ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন আইনটি একাধিকবার সংশোধন করা। সর্বশেষ অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ২০২৫ সালের মে মাসে আইনটি আবারও সংশোধন করা হয়।
আওয়ামী লীগ আমলে আইনের প্রয়োগ ও সমালোচনা
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসবিরোধী আইনটি দ্রুত প্রয়োগ শুরু করে। সরকারিভাবে দাবি করা হয়, আইনটির উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইনটির প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক বাড়তে থাকে। সমালোচকদের অভিযোগ, সন্ত্রাস দমনের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই আইন রাজনৈতিক পরিসরেও ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা দায়েরের ঘটনা বাড়তে থাকে।
সেই সময়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্যদের বিরুদ্ধে এই আইনে অনেক মামলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কর্মসূচি, সভা-সমাবেশ বা বিক্ষোভে অংশ নেওয়াকেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে দেখানো হয়েছে বলে সমালোচকরা দাবি করেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, আইনের প্রয়োগ রাজনৈতিক দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষক, লেখক, বুদ্ধিজীবী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে আইনটি জননিরাপত্তার বদলে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে-এমন সমালোচনা দেশি-বিদেশি মহল থেকে উঠে এসেছিল।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে এই আইনে ১০টি ‘জঙ্গি দল’ নিষিদ্ধ হয়। আর প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে গত বছরের ১ অগাস্ট নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগের পতনের পর জামায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
সাম্প্রতিক মামলা ও নতুন বিতর্ক
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। উত্তরা পশ্চিম থানায় জুলাই রেভুলেশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ একটি অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগটিকে মামলা হিসেবে নেয় পুলিশ। মামলায় আনিস আলমগীর ছাড়াও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, মডেল মারিয়া কিসপট্টা ও ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে তা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই এক প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ বলে অভিহিত করেন। এ বক্তব্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ঘৃণামূলক ও উস্কানিমূলক উল্লেখ করে অভিযোগ করা হয় যে, এতে সারাদেশে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়। আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করলেও তার অনুসারীরা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় আইনে সংশোধন
জুলাই গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে এই আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, “কতিপয় সন্ত্রাসী কার্য প্রতিরোধ এবং উহাদের কার্যকর শাস্তির বিধানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়।”
এই আইনে সন্ত্রাসে জড়িত ‘সত্তার’ কার্যক্রম নিষিদ্ধে ‘স্পষ্ট’ কোনো বিধান ছিল না।
অন্তর্বর্তী সরকার আইনে যে সংশোধনী আনে, তাতে বলা হয়, সন্ত্রাসে জড়িত ব্যক্তি বা সত্তাকে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা তালিকাভুক্ত করা যাবে। সংশ্লিষ্ট সত্তার কার্যক্রমও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যাবে।
এছাড়া প্রয়োজনীয় অভিযোজন করা এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধকরণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সন্ত্রাসী কার্যক্রম কী
এই আইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বলতে শুধু বোমা হামলা বা অস্ত্র ধারণকেই বোঝানো হয়নি। আইনের পরিধি আরও বিস্তৃত। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সহিংসতা চালানো, রাষ্ট্র বা সরকারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে বাধ্য করা, ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা আদর্শিক উদ্দেশ্যে সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা, বিস্ফোরক বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা জনসমাগমস্থলে হামলা-সবই সন্ত্রাসী কার্য হিসেবে বিবেচিত। এমনকি সরাসরি হামলায় অংশ না নিয়েও সন্ত্রাসে সহায়তা, পরিকল্পনা বা অর্থায়ন করাও এই আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
কেন সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করা হয়
রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সন্ত্রাসী তৎপরতা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষই সন্ত্রাসের প্রধান ভুক্তভোগী। জনসমাগমস্থলে হামলা, যানবাহনে আগুন, নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের মতো সহিংসতা থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতেই এই আইন প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া সন্ত্রাসবাদ সাধারণ অপরাধের তুলনায় অনেক বেশি সংগঠিত ও নেটওয়ার্কভিত্তিক হওয়ায় পুরো কাঠামো ভাঙতে বিশেষ আইন প্রয়োজন হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সন্ত্রাস দমনে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য এই আইন প্রয়োগ করা হয়।
শাস্তির ধরন
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী অত্যন্ত কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, গুরুতর ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড, অর্থদণ্ড ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের বিধান রয়েছে।
এর প্রয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক ও মানবাধিকার উদ্বেগও রয়েছে। ফলে এই আইন কার্যকরের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। আওয়ামী লীগের আমলে ২০০৯ সালে হওয়া এই আইনের অধীনেই দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। চলুন জেনে নেওয়া যাক সন্ত্রাসবিরোধী আইন কী?
সন্ত্রাসবিরোধী আইন কী
বাংলাদেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সহিংস উগ্রবাদ মোকাবিলায় ১৬ বছর আগে প্রণয়ন হয় সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯। সাধারণ ফৌজদারি আইনের বাইরে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনস্বার্থ রক্ষায় এটি একটি বিশেষ আইন হিসেবে কার্যকর। এই আইনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সংজ্ঞা নির্ধারণ, সন্ত্রাসে জড়িত ব্যক্তি ও সংগঠনকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা, কঠোর শাস্তির বিধান এবং তদন্ত, বিচার ও সম্পত্তি জব্দের ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে। সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী আইনটি একাধিকবার সংশোধন করা হয়েছে।
আইনের পটভূমি ও প্রণয়নের প্রেক্ষাপট
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে বোমা হামলা, উগ্রবাদী তৎপরতা, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সংশ্লিষ্টতার ঘটনা সামনে আসে। এই প্রেক্ষাপটে ১/১১-পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রথম অধ্যাদেশ জারি হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নবম সংসদে ২০০৯ সালে ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯’ পাস হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জঙ্গিবাদ দমনের বাস্তবতায় প্রণীত এই আইনটি পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় শুরু হওয়া কিছু প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতাও বহন করে। টানা ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন আইনটি একাধিকবার সংশোধন করা। সর্বশেষ অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ২০২৫ সালের মে মাসে আইনটি আবারও সংশোধন করা হয়।
আওয়ামী লীগ আমলে আইনের প্রয়োগ ও সমালোচনা
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসবিরোধী আইনটি দ্রুত প্রয়োগ শুরু করে। সরকারিভাবে দাবি করা হয়, আইনটির উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইনটির প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক বাড়তে থাকে। সমালোচকদের অভিযোগ, সন্ত্রাস দমনের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই আইন রাজনৈতিক পরিসরেও ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা দায়েরের ঘটনা বাড়তে থাকে।
সেই সময়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্যদের বিরুদ্ধে এই আইনে অনেক মামলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কর্মসূচি, সভা-সমাবেশ বা বিক্ষোভে অংশ নেওয়াকেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে দেখানো হয়েছে বলে সমালোচকরা দাবি করেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, আইনের প্রয়োগ রাজনৈতিক দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষক, লেখক, বুদ্ধিজীবী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে আইনটি জননিরাপত্তার বদলে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে-এমন সমালোচনা দেশি-বিদেশি মহল থেকে উঠে এসেছিল।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে এই আইনে ১০টি ‘জঙ্গি দল’ নিষিদ্ধ হয়। আর প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে গত বছরের ১ অগাস্ট নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগের পতনের পর জামায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
সাম্প্রতিক মামলা ও নতুন বিতর্ক
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। উত্তরা পশ্চিম থানায় জুলাই রেভুলেশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ একটি অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগটিকে মামলা হিসেবে নেয় পুলিশ। মামলায় আনিস আলমগীর ছাড়াও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, মডেল মারিয়া কিসপট্টা ও ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে তা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই এক প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ বলে অভিহিত করেন। এ বক্তব্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ঘৃণামূলক ও উস্কানিমূলক উল্লেখ করে অভিযোগ করা হয় যে, এতে সারাদেশে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়। আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করলেও তার অনুসারীরা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় আইনে সংশোধন
জুলাই গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে এই আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, “কতিপয় সন্ত্রাসী কার্য প্রতিরোধ এবং উহাদের কার্যকর শাস্তির বিধানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়।”
এই আইনে সন্ত্রাসে জড়িত ‘সত্তার’ কার্যক্রম নিষিদ্ধে ‘স্পষ্ট’ কোনো বিধান ছিল না।
অন্তর্বর্তী সরকার আইনে যে সংশোধনী আনে, তাতে বলা হয়, সন্ত্রাসে জড়িত ব্যক্তি বা সত্তাকে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা তালিকাভুক্ত করা যাবে। সংশ্লিষ্ট সত্তার কার্যক্রমও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যাবে।
এছাড়া প্রয়োজনীয় অভিযোজন করা এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধকরণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সন্ত্রাসী কার্যক্রম কী
এই আইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বলতে শুধু বোমা হামলা বা অস্ত্র ধারণকেই বোঝানো হয়নি। আইনের পরিধি আরও বিস্তৃত। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সহিংসতা চালানো, রাষ্ট্র বা সরকারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে বাধ্য করা, ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা আদর্শিক উদ্দেশ্যে সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা, বিস্ফোরক বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা জনসমাগমস্থলে হামলা-সবই সন্ত্রাসী কার্য হিসেবে বিবেচিত। এমনকি সরাসরি হামলায় অংশ না নিয়েও সন্ত্রাসে সহায়তা, পরিকল্পনা বা অর্থায়ন করাও এই আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
কেন সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করা হয়
রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সন্ত্রাসী তৎপরতা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষই সন্ত্রাসের প্রধান ভুক্তভোগী। জনসমাগমস্থলে হামলা, যানবাহনে আগুন, নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের মতো সহিংসতা থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতেই এই আইন প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া সন্ত্রাসবাদ সাধারণ অপরাধের তুলনায় অনেক বেশি সংগঠিত ও নেটওয়ার্কভিত্তিক হওয়ায় পুরো কাঠামো ভাঙতে বিশেষ আইন প্রয়োজন হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সন্ত্রাস দমনে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য এই আইন প্রয়োগ করা হয়।
শাস্তির ধরন
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী অত্যন্ত কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, গুরুতর ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড, অর্থদণ্ড ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের বিধান রয়েছে।
এর প্রয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক ও মানবাধিকার উদ্বেগও রয়েছে। ফলে এই আইন কার্যকরের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

চলতি মাসের শুরুর দিকে কিছু ফ্লাইট দেরি ও বাতিল হওয়ার মাধ্যমে এই সমস্যার সূত্রপাত। এরপর ৫ ডিসেম্বর ভারতের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইনস ইন্ডিগো যখন দৈনিক নিজেদের ২ হাজার ৩০০ ফ্লাইটের অর্ধেকই বাতিল করে দেয়, তখন পরিস্থিতি চরমে ওঠে। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ভারতের আকাশপথ।