রয়টার্সের বিশ্লেষণ
চরচা ডেস্ক

বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের শাসক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যখন এ বছর নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন, তখন দেশ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা শোনার জন্য হাজারো মানুষ ভিড় জমিয়েছিল। তবে রাজপথে পাওয়া সেই জনসমর্থনকে ভোটে রূপ দিতে এখন হিমশিম খাচ্ছে দলটি।
রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দশকের পর দশক ধরে চলা স্বজনপ্রীতি ও দুই দলীয় আধিপত্য থেকে দেশকে মুক্ত করার অঙ্গীকার নিয়ে গঠিত হয় ছাত্র নেতৃত্বাধীন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। রাজনীতির মাঠে থাকা পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মোটেও এঁটে উঠতে পারছে না তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারে পতন হয়। ওই আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকাররকে ক্ষমতাচ্যুত করে তরুণ নেতৃত্ব। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে সেই তরুণ নেতৃত্বের রাজনৈতিক দল এনসিপি।
শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা রাখা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী নাহিদা হক তানহার অভিযোগ, এনসিপির নেতৃত্ব জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা থেকে সরে এসেছে।
তানহার মতো তরুণদের অভিযোগ, এনসিপির শীর্ষ নেতারা যাদের বিরোধিতা করেছিলেন আর যেই রাজনীতি বদলাতে চেয়েছিলেন, এখন তারা নিজেরা সেই একই পথে হাঁটছেন। তারাও তথাকথিত নেতাদের মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। সাধারণ মানুষ তাদেরকে কাছে পাচ্ছে না।

তানহা বলেন, “যারা অভ্যুত্থানকে সিঁড়ি বানিয়ে উচ্চপদে পৌঁছালেন, তারা এখন আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কথা শোনেন না। আমরা কোথাও তাদের খুঁজেই পাই না।”
আমেরিকাভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে পরিচালনা করা এক জরিপ তুলে ধরে রয়টার্স বলেছে, সংসদের ৩০০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্য নিয়ে নামা এনসিপি বর্তমানে মাত্র ছয় শতাংশ সমর্থন নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। দলটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির অনেক পেছনে, যাদের সমর্থন ৩০ শতাংশ। কট্টরপন্থী অবস্থান নেওয়া জামায়াতে ইসলামীও এনসিপির চেয়ে ভালো করবে। তারা জরিপ অনুযায়ী ২৬ শতাংশ সমর্থন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে।
রয়টার্স লিখেছে, দলের জনপ্রিয়তা কমার আরেকটি ইঙ্গিত হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেপ্টেম্বরের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এনসিপি একটি আসনও জিততে পারেনি।
তবুও কিছু তরুণ এখনো দলটির প্রতি আগ্রহী। তাদের বিশ্বাস-টাকা, প্রভাব ও পরিবারতন্ত্রে গড়া রাজনীতির ভেতরে এনসিপি তুলনামূলক সমতাভিত্তিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সুবাইতা বিনতে সেলিম মনে করেন ‘কিছুটা হলেও’ আস্থা রাখা উচিত।
নভেম্বরে এনসিপি এক ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নেয়। সারা দেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্য থেকে দুই দিনে এক হাজারেরও বেশি সম্ভাব্য প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেয় তারা।
দলের তরুণ নেতারা বুথ থেকে বুথে ঘুরে আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন এক রিকশাচালক, যিনি শুধু এই সুযোগটির জন্য একদিন কাজ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন।
‘রিকশাচালক সংসদে গিয়ে কী করবে’-এমন প্রশ্নের জবাবে ৩২ বছর বয়সী মোহাম্মদ সুজন খান বলেন, মানুষ তাকে একটি সুযোগ দেয় এবং দেখুক তিনি দেশের জন্য কী পরিবর্তন আনতে পারেন।
এমন সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের ধারণাই আকৃষ্ট করে তাসনিম জারাকে যিনি ক্যামব্রিজে গড়া সফল চিকিৎসা ক্যারিয়ার ছেড়ে এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তিনি।
জারা মনে করেন, তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিজের মূল্যবোধের প্রতি অটল থাকা, কারণ চারপাশের রাজনৈতিক পরিবেশ এখনো টাকার প্রভাব, পেশিশক্তি আর পৃষ্ঠপোষকতাভিত্তিক ব্যবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
এদিকে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক দল। আমরা যথেষ্ট পরিমাণে সময় পাইনি নিজেদেরকে সংগঠিত করার, মানুষের কাছে পৌঁছানোর। সেক্ষেত্রে নির্বাচন তো অবশ্যই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামো, অর্থের ঘাটতি এবং নারী ও সংখ্যালঘু অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অস্পষ্ট অবস্থান-এসব কারণে এনসিপি বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের সঙ্গে বৈঠক করছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এমন জোটে গেলে ক্ষুণ্ন হতে পারে এনসিপির ‘অভ্যুত্থানের চেতনা’নির্ভর ব্র্যান্ড-ইমেজ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ শহান এটিকে ‘একাকী পথ’ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, পরাজয়ের আশঙ্কা জেনেও দীর্ঘমেয়াদে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য এনসিপির হয়ত একাই নির্বাচন করতে হতে পারে।
তিনি বলেন, “ওরা বড় ব্যবধানে হারবে, হয়তো ২-৩% ভোটের বেশি পাবে না, কিন্তু এতে তারা অন্তত বুঝতে পারবে কোথায় দাঁড়াতে হবে। এরপর থেকে দল গড়ে তুলবে এবং ১০-১৫ বছরের মধ্যে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে আসতে পারবে।”

বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের শাসক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যখন এ বছর নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন, তখন দেশ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা শোনার জন্য হাজারো মানুষ ভিড় জমিয়েছিল। তবে রাজপথে পাওয়া সেই জনসমর্থনকে ভোটে রূপ দিতে এখন হিমশিম খাচ্ছে দলটি।
রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দশকের পর দশক ধরে চলা স্বজনপ্রীতি ও দুই দলীয় আধিপত্য থেকে দেশকে মুক্ত করার অঙ্গীকার নিয়ে গঠিত হয় ছাত্র নেতৃত্বাধীন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। রাজনীতির মাঠে থাকা পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মোটেও এঁটে উঠতে পারছে না তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারে পতন হয়। ওই আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকাররকে ক্ষমতাচ্যুত করে তরুণ নেতৃত্ব। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে সেই তরুণ নেতৃত্বের রাজনৈতিক দল এনসিপি।
শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা রাখা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী নাহিদা হক তানহার অভিযোগ, এনসিপির নেতৃত্ব জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা থেকে সরে এসেছে।
তানহার মতো তরুণদের অভিযোগ, এনসিপির শীর্ষ নেতারা যাদের বিরোধিতা করেছিলেন আর যেই রাজনীতি বদলাতে চেয়েছিলেন, এখন তারা নিজেরা সেই একই পথে হাঁটছেন। তারাও তথাকথিত নেতাদের মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। সাধারণ মানুষ তাদেরকে কাছে পাচ্ছে না।

তানহা বলেন, “যারা অভ্যুত্থানকে সিঁড়ি বানিয়ে উচ্চপদে পৌঁছালেন, তারা এখন আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কথা শোনেন না। আমরা কোথাও তাদের খুঁজেই পাই না।”
আমেরিকাভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে পরিচালনা করা এক জরিপ তুলে ধরে রয়টার্স বলেছে, সংসদের ৩০০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্য নিয়ে নামা এনসিপি বর্তমানে মাত্র ছয় শতাংশ সমর্থন নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। দলটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির অনেক পেছনে, যাদের সমর্থন ৩০ শতাংশ। কট্টরপন্থী অবস্থান নেওয়া জামায়াতে ইসলামীও এনসিপির চেয়ে ভালো করবে। তারা জরিপ অনুযায়ী ২৬ শতাংশ সমর্থন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে।
রয়টার্স লিখেছে, দলের জনপ্রিয়তা কমার আরেকটি ইঙ্গিত হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেপ্টেম্বরের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এনসিপি একটি আসনও জিততে পারেনি।
তবুও কিছু তরুণ এখনো দলটির প্রতি আগ্রহী। তাদের বিশ্বাস-টাকা, প্রভাব ও পরিবারতন্ত্রে গড়া রাজনীতির ভেতরে এনসিপি তুলনামূলক সমতাভিত্তিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সুবাইতা বিনতে সেলিম মনে করেন ‘কিছুটা হলেও’ আস্থা রাখা উচিত।
নভেম্বরে এনসিপি এক ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নেয়। সারা দেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্য থেকে দুই দিনে এক হাজারেরও বেশি সম্ভাব্য প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেয় তারা।
দলের তরুণ নেতারা বুথ থেকে বুথে ঘুরে আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন এক রিকশাচালক, যিনি শুধু এই সুযোগটির জন্য একদিন কাজ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন।
‘রিকশাচালক সংসদে গিয়ে কী করবে’-এমন প্রশ্নের জবাবে ৩২ বছর বয়সী মোহাম্মদ সুজন খান বলেন, মানুষ তাকে একটি সুযোগ দেয় এবং দেখুক তিনি দেশের জন্য কী পরিবর্তন আনতে পারেন।
এমন সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের ধারণাই আকৃষ্ট করে তাসনিম জারাকে যিনি ক্যামব্রিজে গড়া সফল চিকিৎসা ক্যারিয়ার ছেড়ে এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তিনি।
জারা মনে করেন, তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিজের মূল্যবোধের প্রতি অটল থাকা, কারণ চারপাশের রাজনৈতিক পরিবেশ এখনো টাকার প্রভাব, পেশিশক্তি আর পৃষ্ঠপোষকতাভিত্তিক ব্যবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
এদিকে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক দল। আমরা যথেষ্ট পরিমাণে সময় পাইনি নিজেদেরকে সংগঠিত করার, মানুষের কাছে পৌঁছানোর। সেক্ষেত্রে নির্বাচন তো অবশ্যই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামো, অর্থের ঘাটতি এবং নারী ও সংখ্যালঘু অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অস্পষ্ট অবস্থান-এসব কারণে এনসিপি বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের সঙ্গে বৈঠক করছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এমন জোটে গেলে ক্ষুণ্ন হতে পারে এনসিপির ‘অভ্যুত্থানের চেতনা’নির্ভর ব্র্যান্ড-ইমেজ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ শহান এটিকে ‘একাকী পথ’ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, পরাজয়ের আশঙ্কা জেনেও দীর্ঘমেয়াদে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য এনসিপির হয়ত একাই নির্বাচন করতে হতে পারে।
তিনি বলেন, “ওরা বড় ব্যবধানে হারবে, হয়তো ২-৩% ভোটের বেশি পাবে না, কিন্তু এতে তারা অন্তত বুঝতে পারবে কোথায় দাঁড়াতে হবে। এরপর থেকে দল গড়ে তুলবে এবং ১০-১৫ বছরের মধ্যে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে আসতে পারবে।”