চরচা ডেস্ক

সামাজিক আস্থা (সোশ্যাল ট্রাস্ট) কেবল একটি ধারণা মাত্র নয়, বরং এটি একটি সুস্থ ও শক্তিশালী সমাজের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। আমেরিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক একটি বৈশ্বিক জরিপ অনুযায়ী, সমাজে মানুষের একে অপরের ওপর এই ভরসা রাখার বিষয়টি অত্যন্ত গভীর প্রভাব ফেলে।
বিশেষ করে আমেরিকাতে দেখা গেছে, যারা অন্যদের বিশ্বাস করেন, বিপদের সময় প্রতিবেশী বা বন্ধুদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে তাদের এগিয়ে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, সামাজিক আস্থা বেশি থাকলে সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপরও মানুষের অগাধ আস্থা লক্ষ্য করা যায়।
তবে এই আস্থার চিত্র সব দেশে একরকম নয়। ২৫টি দেশে পরিচালিত এই জরিপে উঠে এসেছে দেশ, অর্থনীতি এবং জনতাত্ত্বিক ভেদে এর এক বৈচিত্র্যময় চিত্র।
বিশ্বজুড়ে আস্থার ব্যাপক ব্যবধান
জরিপে দেখা গেছে, সামাজিক আস্থা কোনো দেশেই সর্বজনীন নয়। আমেরিকাতে ৫৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মনে করেন, অধিকাংশ মানুষকে বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু ৪৪ শতাংশের মতে অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাসযোগ্য নন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চিত্র আরও নাটকীয়। সামাজিক আস্থার শীর্ষে রয়েছে সুইডেন। সে দেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ অন্যদের বিশ্বাস করেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা তুরস্কে। সেখানকার মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ সামাজিক আস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন।
অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণ
উত্তর আমেরিকার বৃহৎ দুইটি দেশ কানাডা এবং আমেরিকাতে অধিকাংশ মানুষ আস্থাশীল হলেও কানাডিয়ানদের মধ্যে এই হার আমেরিকানদের চেয়ে অনেক বেশি। ইউরোপ এখানে দ্বিধাবিভক্ত। সুইডেন, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে আস্থার হার বেশি হলেও হাঙ্গেরি, গ্রিস, ফ্রান্স ও ইতালিতে অধিকাংশ মানুষ অন্যদের অবিশ্বাসের চোখে দেখেন।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ইন্দোনেশিয়ায় অন্তত অর্ধেক মানুষ আস্থাশীল। কিন্তু ভারতে চিত্রটি এর উল্টো।
আফ্রিকাতে কেনিয়া, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোতে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মনে করেন, অধিকাংশ মানুষকে বিশ্বাস করা যায় না। লাতিন আমেরিকায় আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলেও মানুষের পরস্পরের প্রতি আস্থা অনেক কম।
অর্থনীতি বনাম সামাজিক আস্থা
জরিপ অনুযায়ী, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে আস্থার একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। জরিপভুক্ত ১৬টি উচ্চ-আয়ের দেশে আস্থার মধ্যক হার ৫৯ শতাংশ, যেখানে ৯টি মধ্যম-আয়ের দেশে এই হার মাত্র ২৭ শতাংশ।
একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, মাথাপিছু জিডিপি সবচেয়ে বেশি হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকায় সামাজিক আস্থার হার তুলনামূলক কম সম্পদশালী দেশ ইন্দোনেশিয়া বা স্পেনের কাছাকাছি। অর্থাৎ, শুধু সম্পদই আস্থার একমাত্র মাপকাঠি নয়।
সময়ের বিবর্তনে আস্থার পরিবর্তন
২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারির তুলনায় কিছু দেশে সামাজিক আস্থা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। জার্মানি ও সুইডেনে মানুষের পরস্পরের প্রতি আস্থা বেড়েছে যথাক্রমে ১৩ এবং ১২ শতাংশ।
ইন্দোনেশিয়া সামাজিক আস্থা গত বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেড়ে এখন ৫৩ শতাংশ। তবে ফ্রান্সের মতো দেশে আবার এই আস্থা ৬ শতাংশ কমেছে।
জনতাত্ত্বিক প্রভাব
সামাজিক আস্থা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ওপরও নির্ভর করে।
শিক্ষা ও আয়
উচ্চশিক্ষিত এবং উচ্চ আয়ের মানুষরা সাধারণত অন্যদের বেশি বিশ্বাস করেন। ফ্রান্সে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে আস্থার হার ৬১ শতাংশ, যেখানে স্বল্প শিক্ষিতদের মধ্যে তা মাত্র ৩৫ শতাংশ।
বয়স
১১টি উচ্চ-আয়ের দেশে দেখা গেছে, তরুণদের চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠরা বেশি আস্থাশীল। অস্ট্রেলিয়ায় ৫০ বছরে বেশি বয়সীদের ৮০ শতাংশ অন্যদের বিশ্বাস করেন, যেখানে ৩৪ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এই হার মাত্র ৫৫ শতাংশ।
লিঙ্গ
আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি ও ইন্দোনেশিয়ায় পুরুষরা নারীদের চেয়ে অন্তত ১০ শতাংশ বেশি আস্থা পোষণ করেন।
জাতি, ধর্ম ও রাজনীতিতে আস্থার গভীরতা
সামাজিক আস্থার ক্ষেত্রে জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়েরও বড় ভূমিকা রয়েছে। আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গ বা হিস্পানিকদের চেয়ে বেশি আস্থাশীল। ব্রাজিলে শ্বেতাঙ্গদের (২৯ শতাংশ) তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের (১২ শতাংশ) মধ্যে আস্থার হার অনেক কম।
ধর্ম
আমেরিকার ইহুদিরা (৭০ শতাংশ) খ্রিস্টানদের (৫৬ শতাংশ) তুলনায় বেশি আস্থাশীল। ইসরায়েলে ইহুদিদের মধ্যে এই হার ৫৩ শতাংশ, কিন্তু মুসলিমদের মধ্যে তা মাত্র ৩১ শতাংশ।
রাজনীতি
ইউরোপের সাতটি উচ্চ-আয়ের দেশে দেখা গেছে বামপন্থী আদর্শের অনুসারীরা ডানপন্থীদের চেয়ে বেশি বিশ্বাসপ্রবণ। জার্মানিতে ডানপন্থী পপুলিস্ট দল এএফডি বিরোধীরা সমর্থকদের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি আস্থা প্রকাশ করেছেন।

সামাজিক আস্থা (সোশ্যাল ট্রাস্ট) কেবল একটি ধারণা মাত্র নয়, বরং এটি একটি সুস্থ ও শক্তিশালী সমাজের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। আমেরিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক একটি বৈশ্বিক জরিপ অনুযায়ী, সমাজে মানুষের একে অপরের ওপর এই ভরসা রাখার বিষয়টি অত্যন্ত গভীর প্রভাব ফেলে।
বিশেষ করে আমেরিকাতে দেখা গেছে, যারা অন্যদের বিশ্বাস করেন, বিপদের সময় প্রতিবেশী বা বন্ধুদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে তাদের এগিয়ে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, সামাজিক আস্থা বেশি থাকলে সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপরও মানুষের অগাধ আস্থা লক্ষ্য করা যায়।
তবে এই আস্থার চিত্র সব দেশে একরকম নয়। ২৫টি দেশে পরিচালিত এই জরিপে উঠে এসেছে দেশ, অর্থনীতি এবং জনতাত্ত্বিক ভেদে এর এক বৈচিত্র্যময় চিত্র।
বিশ্বজুড়ে আস্থার ব্যাপক ব্যবধান
জরিপে দেখা গেছে, সামাজিক আস্থা কোনো দেশেই সর্বজনীন নয়। আমেরিকাতে ৫৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মনে করেন, অধিকাংশ মানুষকে বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু ৪৪ শতাংশের মতে অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাসযোগ্য নন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চিত্র আরও নাটকীয়। সামাজিক আস্থার শীর্ষে রয়েছে সুইডেন। সে দেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ অন্যদের বিশ্বাস করেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা তুরস্কে। সেখানকার মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ সামাজিক আস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন।
অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণ
উত্তর আমেরিকার বৃহৎ দুইটি দেশ কানাডা এবং আমেরিকাতে অধিকাংশ মানুষ আস্থাশীল হলেও কানাডিয়ানদের মধ্যে এই হার আমেরিকানদের চেয়ে অনেক বেশি। ইউরোপ এখানে দ্বিধাবিভক্ত। সুইডেন, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে আস্থার হার বেশি হলেও হাঙ্গেরি, গ্রিস, ফ্রান্স ও ইতালিতে অধিকাংশ মানুষ অন্যদের অবিশ্বাসের চোখে দেখেন।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ইন্দোনেশিয়ায় অন্তত অর্ধেক মানুষ আস্থাশীল। কিন্তু ভারতে চিত্রটি এর উল্টো।
আফ্রিকাতে কেনিয়া, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোতে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মনে করেন, অধিকাংশ মানুষকে বিশ্বাস করা যায় না। লাতিন আমেরিকায় আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলেও মানুষের পরস্পরের প্রতি আস্থা অনেক কম।
অর্থনীতি বনাম সামাজিক আস্থা
জরিপ অনুযায়ী, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে আস্থার একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। জরিপভুক্ত ১৬টি উচ্চ-আয়ের দেশে আস্থার মধ্যক হার ৫৯ শতাংশ, যেখানে ৯টি মধ্যম-আয়ের দেশে এই হার মাত্র ২৭ শতাংশ।
একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, মাথাপিছু জিডিপি সবচেয়ে বেশি হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকায় সামাজিক আস্থার হার তুলনামূলক কম সম্পদশালী দেশ ইন্দোনেশিয়া বা স্পেনের কাছাকাছি। অর্থাৎ, শুধু সম্পদই আস্থার একমাত্র মাপকাঠি নয়।
সময়ের বিবর্তনে আস্থার পরিবর্তন
২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারির তুলনায় কিছু দেশে সামাজিক আস্থা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। জার্মানি ও সুইডেনে মানুষের পরস্পরের প্রতি আস্থা বেড়েছে যথাক্রমে ১৩ এবং ১২ শতাংশ।
ইন্দোনেশিয়া সামাজিক আস্থা গত বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেড়ে এখন ৫৩ শতাংশ। তবে ফ্রান্সের মতো দেশে আবার এই আস্থা ৬ শতাংশ কমেছে।
জনতাত্ত্বিক প্রভাব
সামাজিক আস্থা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ওপরও নির্ভর করে।
শিক্ষা ও আয়
উচ্চশিক্ষিত এবং উচ্চ আয়ের মানুষরা সাধারণত অন্যদের বেশি বিশ্বাস করেন। ফ্রান্সে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে আস্থার হার ৬১ শতাংশ, যেখানে স্বল্প শিক্ষিতদের মধ্যে তা মাত্র ৩৫ শতাংশ।
বয়স
১১টি উচ্চ-আয়ের দেশে দেখা গেছে, তরুণদের চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠরা বেশি আস্থাশীল। অস্ট্রেলিয়ায় ৫০ বছরে বেশি বয়সীদের ৮০ শতাংশ অন্যদের বিশ্বাস করেন, যেখানে ৩৪ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এই হার মাত্র ৫৫ শতাংশ।
লিঙ্গ
আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি ও ইন্দোনেশিয়ায় পুরুষরা নারীদের চেয়ে অন্তত ১০ শতাংশ বেশি আস্থা পোষণ করেন।
জাতি, ধর্ম ও রাজনীতিতে আস্থার গভীরতা
সামাজিক আস্থার ক্ষেত্রে জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়েরও বড় ভূমিকা রয়েছে। আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গ বা হিস্পানিকদের চেয়ে বেশি আস্থাশীল। ব্রাজিলে শ্বেতাঙ্গদের (২৯ শতাংশ) তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের (১২ শতাংশ) মধ্যে আস্থার হার অনেক কম।
ধর্ম
আমেরিকার ইহুদিরা (৭০ শতাংশ) খ্রিস্টানদের (৫৬ শতাংশ) তুলনায় বেশি আস্থাশীল। ইসরায়েলে ইহুদিদের মধ্যে এই হার ৫৩ শতাংশ, কিন্তু মুসলিমদের মধ্যে তা মাত্র ৩১ শতাংশ।
রাজনীতি
ইউরোপের সাতটি উচ্চ-আয়ের দেশে দেখা গেছে বামপন্থী আদর্শের অনুসারীরা ডানপন্থীদের চেয়ে বেশি বিশ্বাসপ্রবণ। জার্মানিতে ডানপন্থী পপুলিস্ট দল এএফডি বিরোধীরা সমর্থকদের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি আস্থা প্রকাশ করেছেন।