চরচা ডেস্ক

ইরাবতী নদীর তীরের এক খণ্ড অসমতল জমিতে দাঁড়িয়ে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল তেজ কিয়াও তার শ্রোতাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন। তিনি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) প্রার্থী হিসেবে মান্দালয় শহরের আউংময়থাজান আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
৩০০-৪০০ মানুষের ভিড় হাতে দলীয় টুপি ও পতাকা নিয়ে বসে থাকলেও দুপুরের প্রচণ্ড গরমে অনেকেই ঝিমিয়ে পড়ছিলেন। চেয়ারের সারির মাঝে শিশুদের খেলাধুলা করতে দেখা যায়। এদের মধ্যে অনেক পরিবারই গত মার্চে মান্দালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পের শিকার। তারা মূলত কোনো সাহায্য পাওয়ার আশায় সেখানে এসেছিলেন এবং সমাবেশ শেষ হওয়া মাত্রই দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
প্রায় পাঁচ বছর আগে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর আগামী রোববার মিয়ানমারের জনগণকে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিতে যাচ্ছে জান্তা সরকার। এরই মধ্যে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে। তবে বারবার পিছিয়ে দেওয়া নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে ‘প্রহসন’ হিসেবে নিন্দা করা হচ্ছে। দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ইতোমধ্যে বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং দলটির নেত্রী অং সান সু চি এখনও কারাবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে এক মাসব্যাপী তিন ধাপে এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে যুদ্ধের কারণে দেশের বিশাল এক অংশে ভোট নেওয়া সম্ভব হবে না। এমনকি যেখানে ভোট হচ্ছে, সেখানেও ভয় ও হুমকির এক থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
মান্দালয়ের সমাবেশে বিবিসি যখন সাধারণ মানুষের মতামত জানতে চাইল, তখন দলীয় কর্মকর্তারা বাধা দিয়ে বললেন, ‘‘তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে জানে না, হয়তো ভুল কিছু বলে ফেলবে।’’
সেখানে সাদা পোশাকে সামরিক গোয়েন্দাদের উপস্থিতি সাধারণ মানুষের স্নায়বিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মান্দালয়ের মাছের বাজারেও একই চিত্র। একজন ক্রেতা সরাসরি বললেন, ‘‘আমাদের কোনো উপায় নেই, তাই ভোট দিতেই হবে।’’ মাছ বিক্রেতা বিরক্তির সঙ্গে বললেন, ‘‘আপনারা আমাকে বিপদে ফেলবেন।’’ কেবল একজন নারী সাহস নিয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা বলতে রাজি হলেন, তবে তা অত্যন্ত গোপনে।
তিনি বললেন, ‘‘এই নির্বাচন একটি মিথ্যা। সবাই ভয় পাচ্ছে। মানুষ তাদের স্বাধীনতা ও মানবতা হারিয়েছে। সামরিক বাহিনী দেশ চালালে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না।’’ তিনি ভোট দেবেন না বলে জানালেও স্বীকার করলেন যে, এই সিদ্ধান্তের ঝুঁকি অনেক।
মিয়ানমারের এক সেনা কর্মকর্তা জানান, জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং অবশ্য বেশ আত্মবিশ্বাসী। তিনি মনে করছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি তার পাঁচ বছরের শাসনকালকে এক ধরনের বৈধতা দিতে পারবেন। এমনকি তিনি ইয়াঙ্গুনের একটি গির্জায় বড়দিনের প্রার্থনায় অংশ নিয়ে ঘৃণা ও সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন। অথচ জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা এবং গৃহযুদ্ধে অন্তত ৯০ হাজার মানুষকে হত্যার অভিযোগ এনেছে।

মিন অং হ্লাইংয়ের এই নির্বাচনী পরিকল্পনাকে চীন পূর্ণ কূটনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সমর্থন দিচ্ছে। এমনকি এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোও হয়তো অনিচ্ছাসত্ত্বেও এটি গ্রহণ করে নেবে। চীনা ও রুশ অস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনী গত দুই বছরে হারানো কিছু এলাকা পুনর্দখল করেছে এবং জানুয়ারির শেষ ধাপে সেসব এলাকায় ভোট করার পরিকল্পনা রয়েছে। সু চি ও তার দল নির্বাচনে না থাকায় সেনা সমর্থিত দল ইউএসডিপির জয় প্রায় সুনিশ্চিত।
মান্দালয় শহর আপাতদৃষ্টিতে শান্ত মনে হলেও এর খুব কাছেই গৃহযুদ্ধের ক্ষত স্পষ্ট। ইরাবতী নদীর ওপারে একসময়ের পর্যটনকেন্দ্র মিনগুনে পৌঁছাতে হলে অনেকগুলো চেকপোস্ট পার হতে হয়। এলাকাটি বর্তমানে বিদ্রোহী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) এবং সরকারি বাহিনীর মধ্যকার লড়াইয়ের কেন্দ্রস্থল।
এক স্থানীয় পুলিশ কমান্ডারের সাথে কথা বলে জানা গেল, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। কোমরে রিভলভার এবং কিশোর বয়সের দেহরক্ষীদের নিয়ে চলাফেরা করা এই কর্মকর্তা জানালেন, উত্তরের গ্রামগুলোতে কোনো নির্বাচন হবে না। তার কথায়, ‘‘এখানে সবাই কোনো না কোনো পক্ষ নিয়েছে। কেউ আপস করতে রাজি নয়। দেখা হলেই আমরা একে অপরকে গুলি করি।’’
বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতন্ত্রের কবর দেওয়া সামরিক জান্তা এখন ছদ্ম-গণতন্ত্রের প্রলেপ দিয়ে নিজেদের শাসনব্যবস্থাকে সাজাতে চাইছে। বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ও স্কুল-হাসপাতালে বিমান হামলার বিষয়ে জেনারেল তেজ কিয়াও উল্টো বিরোধীদেরই দায়ী করে বলেন, ‘‘যারা আমাদের শত্রু, তারা আইনের চোখে জনগণ নয়, তারা সন্ত্রাসী।’’
মান্দালয়ের বাসিন্দাদের মতে, ২০২০ সালের নির্বাচনের মতো এবার কোনো উদ্দীপনা নেই। কোনো বড় সমাবেশ নেই, নেই কোনো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। তবুও প্রতিশোধের ভয় অথবা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাবেন। এক নারী বিবিসিকে বলেন, ‘‘আমরা ভোট দেব ঠিকই, কিন্তু মন থেকে নয়।’’

ইরাবতী নদীর তীরের এক খণ্ড অসমতল জমিতে দাঁড়িয়ে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল তেজ কিয়াও তার শ্রোতাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন। তিনি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) প্রার্থী হিসেবে মান্দালয় শহরের আউংময়থাজান আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
৩০০-৪০০ মানুষের ভিড় হাতে দলীয় টুপি ও পতাকা নিয়ে বসে থাকলেও দুপুরের প্রচণ্ড গরমে অনেকেই ঝিমিয়ে পড়ছিলেন। চেয়ারের সারির মাঝে শিশুদের খেলাধুলা করতে দেখা যায়। এদের মধ্যে অনেক পরিবারই গত মার্চে মান্দালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পের শিকার। তারা মূলত কোনো সাহায্য পাওয়ার আশায় সেখানে এসেছিলেন এবং সমাবেশ শেষ হওয়া মাত্রই দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
প্রায় পাঁচ বছর আগে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর আগামী রোববার মিয়ানমারের জনগণকে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিতে যাচ্ছে জান্তা সরকার। এরই মধ্যে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে। তবে বারবার পিছিয়ে দেওয়া নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে ‘প্রহসন’ হিসেবে নিন্দা করা হচ্ছে। দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ইতোমধ্যে বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং দলটির নেত্রী অং সান সু চি এখনও কারাবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে এক মাসব্যাপী তিন ধাপে এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে যুদ্ধের কারণে দেশের বিশাল এক অংশে ভোট নেওয়া সম্ভব হবে না। এমনকি যেখানে ভোট হচ্ছে, সেখানেও ভয় ও হুমকির এক থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
মান্দালয়ের সমাবেশে বিবিসি যখন সাধারণ মানুষের মতামত জানতে চাইল, তখন দলীয় কর্মকর্তারা বাধা দিয়ে বললেন, ‘‘তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে জানে না, হয়তো ভুল কিছু বলে ফেলবে।’’
সেখানে সাদা পোশাকে সামরিক গোয়েন্দাদের উপস্থিতি সাধারণ মানুষের স্নায়বিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মান্দালয়ের মাছের বাজারেও একই চিত্র। একজন ক্রেতা সরাসরি বললেন, ‘‘আমাদের কোনো উপায় নেই, তাই ভোট দিতেই হবে।’’ মাছ বিক্রেতা বিরক্তির সঙ্গে বললেন, ‘‘আপনারা আমাকে বিপদে ফেলবেন।’’ কেবল একজন নারী সাহস নিয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা বলতে রাজি হলেন, তবে তা অত্যন্ত গোপনে।
তিনি বললেন, ‘‘এই নির্বাচন একটি মিথ্যা। সবাই ভয় পাচ্ছে। মানুষ তাদের স্বাধীনতা ও মানবতা হারিয়েছে। সামরিক বাহিনী দেশ চালালে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না।’’ তিনি ভোট দেবেন না বলে জানালেও স্বীকার করলেন যে, এই সিদ্ধান্তের ঝুঁকি অনেক।
মিয়ানমারের এক সেনা কর্মকর্তা জানান, জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং অবশ্য বেশ আত্মবিশ্বাসী। তিনি মনে করছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি তার পাঁচ বছরের শাসনকালকে এক ধরনের বৈধতা দিতে পারবেন। এমনকি তিনি ইয়াঙ্গুনের একটি গির্জায় বড়দিনের প্রার্থনায় অংশ নিয়ে ঘৃণা ও সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন। অথচ জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা এবং গৃহযুদ্ধে অন্তত ৯০ হাজার মানুষকে হত্যার অভিযোগ এনেছে।

মিন অং হ্লাইংয়ের এই নির্বাচনী পরিকল্পনাকে চীন পূর্ণ কূটনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সমর্থন দিচ্ছে। এমনকি এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোও হয়তো অনিচ্ছাসত্ত্বেও এটি গ্রহণ করে নেবে। চীনা ও রুশ অস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনী গত দুই বছরে হারানো কিছু এলাকা পুনর্দখল করেছে এবং জানুয়ারির শেষ ধাপে সেসব এলাকায় ভোট করার পরিকল্পনা রয়েছে। সু চি ও তার দল নির্বাচনে না থাকায় সেনা সমর্থিত দল ইউএসডিপির জয় প্রায় সুনিশ্চিত।
মান্দালয় শহর আপাতদৃষ্টিতে শান্ত মনে হলেও এর খুব কাছেই গৃহযুদ্ধের ক্ষত স্পষ্ট। ইরাবতী নদীর ওপারে একসময়ের পর্যটনকেন্দ্র মিনগুনে পৌঁছাতে হলে অনেকগুলো চেকপোস্ট পার হতে হয়। এলাকাটি বর্তমানে বিদ্রোহী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) এবং সরকারি বাহিনীর মধ্যকার লড়াইয়ের কেন্দ্রস্থল।
এক স্থানীয় পুলিশ কমান্ডারের সাথে কথা বলে জানা গেল, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। কোমরে রিভলভার এবং কিশোর বয়সের দেহরক্ষীদের নিয়ে চলাফেরা করা এই কর্মকর্তা জানালেন, উত্তরের গ্রামগুলোতে কোনো নির্বাচন হবে না। তার কথায়, ‘‘এখানে সবাই কোনো না কোনো পক্ষ নিয়েছে। কেউ আপস করতে রাজি নয়। দেখা হলেই আমরা একে অপরকে গুলি করি।’’
বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতন্ত্রের কবর দেওয়া সামরিক জান্তা এখন ছদ্ম-গণতন্ত্রের প্রলেপ দিয়ে নিজেদের শাসনব্যবস্থাকে সাজাতে চাইছে। বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ও স্কুল-হাসপাতালে বিমান হামলার বিষয়ে জেনারেল তেজ কিয়াও উল্টো বিরোধীদেরই দায়ী করে বলেন, ‘‘যারা আমাদের শত্রু, তারা আইনের চোখে জনগণ নয়, তারা সন্ত্রাসী।’’
মান্দালয়ের বাসিন্দাদের মতে, ২০২০ সালের নির্বাচনের মতো এবার কোনো উদ্দীপনা নেই। কোনো বড় সমাবেশ নেই, নেই কোনো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। তবুও প্রতিশোধের ভয় অথবা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাবেন। এক নারী বিবিসিকে বলেন, ‘‘আমরা ভোট দেব ঠিকই, কিন্তু মন থেকে নয়।’’