নির্বাচনের ঠিক আগে বিএনপি কেন অনিশ্চয়তায়?

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
নির্বাচনের ঠিক আগে বিএনপি কেন অনিশ্চয়তায়?
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নেতৃত্ব সংকট আসন্ন ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের আগে বিএনপিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। হাতে আছে আর মাত্র দুই মাস। তবে এবারের নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় থাকা সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গভীর অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। কারণ দলটির শীর্ষ দুই নেতার একজন মারাত্মক অসুস্থ আর আরেকজন বিদেশে আটকে আছেন।

হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে লিখেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা থেকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

অন্যদিকে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তার ছেলে তারেক রহমান এখনো ‘স্বেচ্ছানির্বাসনে’ রয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তার ফিরে আসার আশা থাকলেও ফেরেননি তিনি।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, নেতৃত্বের এই শূন্যতা বিএনপির শক্তিশালী জায়গাগুলোতেও নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করতে পারে। সেইসঙ্গে প্রতিযোগিতা থেকে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বাদ পড়ায় যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, দলটির তা কাজে লাগানোর সুযোগও সীমিত হতে পারে। তারেক রহমানের অনুপস্থিতি বিশেষভাবে ক্ষতিকর, কারণ তিনি দলের মূল সমর্থকদেরকে চাঙ্গা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।

ও.পি. জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, “দেশে ফিরতে মায়ের এই অসুস্থতার চেয়ে ভালো সময় আর কি হতে পারে তারেক রহমানের জন্য?” এমনকি গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারেও তাকে বিশেষভাবে দেখা যায়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের আগস্টেই তারেক রহমানের ফিরে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছিল। কারণ আগের সরকারের দুর্নীতির মামলাগুলো বাতিল হয়ে তার দেশের ফিরে আসার বাধাগুলো দূর হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ছবি: চরচা
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ছবি: চরচা

তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে আছেন। তিনি বলেছেন, ফিরে আসার সিদ্ধান্তটি পুরোপুরিভাবে তার নিজের নয় এবং এটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, তার ফিরে আসায় তাদের কোনো আপত্তি নেই।

শ্রীরাধা দত্ত বলেন, “বাংলাদেশের কিছু এলাকায় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি রয়েছে এবং তার (তারেক) দেশে ফেরা ভোটের হারে পার্থক্য গড়ে দিত। তিনি একজন ক্যারিশম্যাটিক নেতা।”

এই বিশ্লেষক আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা অসম্ভব ছিল। কারণ এর অর্থ হবে নির্বাচনে টিকে থাকা একমাত্র মূলধারার দলটিকে কার্যত বাদ দেওয়া।

আসন্ন নির্বাচনে যে দলগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা বিক্ষোভে সহায়ক ভূমিকা পালনকারী ছাত্রদের মধ্যে এনসিপির সমর্থন রয়েছে। তবে ভোটারদের মধ্যে তাদের তেমন বিস্তৃত ভিত্তি নেই। অন্যদিকে, জামায়াতেরও সীমিত সংখ্যক অনুসারী রয়েছে।

এদিকে, আগামী বছর রমজান মাসের আগে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচন আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনকে বলেছে সরকার। একই দিনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণভোট আয়োজনের কথা রয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি/ সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি/ সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে লন্ডনভিত্তিক লেখক প্রিয়জিৎ দেবসরকার বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকা সত্ত্বেও তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফিরে আসতে অনিচ্ছা রহস্যজনক। এর মানে কি এই যে এখনো দেশে ফেরার পর তার গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হওয়ার ভয় আছে?”

দেবসরকার বলেন, বিএনপির এমন একজন বিশিষ্ট নেতার অনুপস্থিতি এই প্রশ্ন তুলেছে যে, জামায়াত বা এনসিপি বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়কেই ছাড়িয়ে যাবে কি না?

আওয়ামী লীগকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। তবে বিক্ষোভ করার এবং নির্বাচন রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, নির্বাচন আয়োজনে সম্ভাব্য কোনো বিলম্ব আওয়ামী লীগের জন্য সহায়ক হতে পারে এবং অন্তর্বর্তী প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টির উপায় ও মাধ্যম খুঁজে বের করতে তাদের আরও সময় দিতে পারে।

সম্পর্কিত