বাংলাদেশে সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি স্থানীয় বাজারে প্রতি ভরির (১১.৬৬৪ গ্রাম) দাম বাড়িয়ে ২ লাখ ৯ হাজার ১০০ টাকা করেছে। বিশ্ববাজারেও প্রতি আউন্স (২৮.৩৪৯৫ গ্রাম) সোনার দাম ৪ হাজার ডলারের ওপরে উঠেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মানি কন্ট্রোলের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বিশ্ববাজারে সোনার দাম ৬০ শতাংশ বেড়েছে। ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সোনার দাম ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। একইভাবে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে সোনার দাম প্রায় ৫৩ শতাংশ বেড়েছিল।
বেশ কয়েকটি কারণে সোনার দাম দেশে ও বিশ্ববাজারে দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৈশ্বিক সোনার বাজারে উত্থান
আমেরিকান সংবাদমাধ্যম ইনভেস্টোপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমার প্রত্যাশা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বেশি বেশি সোনা কেনায় ধাতুটির দাম বিশ্বব্যাপী বেড়েছে।
নিরাপদ বিনিয়োগ সোনা
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, অর্থনৈতিক মন্দা বা মুদ্রাস্ফীতির সময় সোনাকে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে ইসরায়েল–গাজা সংঘাত পর্যন্ত নানা অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনা কেনার দিকে ঝুঁকছেন।
ডলারের দুর্বলতা
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের তথ্য অনুযায়ী, সোনা সাধারণত মার্কিন ডলারে মূল্যায়িত হয়। ডলার যখন দুর্বল হয়ে পড়ে সোনার আমদানি আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। ফলে কোম্পানিগুলোকে পণ্য ও পরিষেবা আমদানির জন্য বেশি ডলার খরচ করতে হয়। এর ফলে সোনার দাম বাড়ে। বিপরীত ক্ষেত্রে, ডলার শক্তিশালী হওয়ার অর্থ হলো সোনার মূল্য হ্রাস। মোদ্দা কথা হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম কমে যাওয়ার প্রভাব পড়ে সোনার বাজারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর ১ হাজার টনের বেশি সোনা কিনছে। অথচ ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই পরিমাণ ছিল গড়ে ৪৮১ টন। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সোনা কেনার তালিকায় শীর্ষে ছিল পোল্যান্ড, তুরস্ক, ভারত, আজারবাইজান ও চীন। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন সংকটের সময় সোনা বেশি কেনে, তখন এর দাম বেড়ে যায়।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য বলছে, গত দশকে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের সোনার মজুত প্রায় দ্বিগুণ করেছে। এই তথ্য বিশ্বব্যাপী রিজার্ভ সম্পদ হিসেবে ধাতুটির প্রতি আস্থার ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে ভারত অস্থির বৈশ্বিক পটভূমির মধ্যেও তার সোনার রিজার্ভ ক্রমাগত বৃদ্ধি করেছে।
টাকার মান কমে অতিরিক্ত চাপ
বাংলাদেশ সরাসরি বেশি পরিমাণে সোনা আমদানি না করলেও, স্থানীয় বাজার বৈশ্বিক দামের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। এর পাশাপাশি টাকার অবমূল্যায়ন স্বর্ণের স্থানীয় দাম আরও বাড়িয়েছে।
২০২০–২১ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রায় ৪৫ শতাংশ কমেছে, ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। বাংলাদেশে মূলত বিদেশফেরত যাত্রীরা রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ব্যাগেজ নিয়মে সোনা আনেন। যখনই সংকট, ডলারের মূল্য, তেলের দাম, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের মূল্য বাড়িয়ে দেয় তখন বাংলাদেশেও এর দাম বাড়ে।