চরচা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের সফরে ভারত পৌঁছেছেন। এই সফরে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনা বন্ধ করার জন্য ভারতের ওপর আমেরিকার চাপ বাড়ার কয়েক মাসের মধ্যে পুতিনের এই সফরটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সফরটি এমন একটা সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন বিশ্বব্যবস্থা অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ওয়াশিংটনে ক্ষমতার পালাবদল আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের হুমকির মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভারত তার পুরোনো বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের সুতোটি কতটা শক্ত রাখতে পারে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং ভারতের ‘নিরপেক্ষতা’
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে পশ্চিমা বিশ্ব মস্কোকে একঘরে করার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু ভারত ছিল ভিন্ন এক অবস্থানে। জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে ভারত বরাবরই ভোটদানে বিরত থেকেছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ভারত রাশিয়ার সঙ্গে তার বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পুতিনের এই সফর পশ্চিমাদের প্রতি ভারতের একটি স্পষ্ট বার্তা। বার্তাটি হলো—ভারত কোনো নির্দিষ্ট বলয়ের অংশ হতে চায় না। তারা তাদের ‘কৌশলগত স্বাতন্ত্র্য’ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। তবে এই জায়গায় ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কৌশলগত ভারসাম্য তারা কতটা বজায় রাখতে সক্ষম। ভারতের ওপর আমেরিকার চাপ থাকবে, সেটিকে মোকাবিলা করেই তাদের মস্কোর ওপর নির্ভরশীলতা বজায় রাখতে হবে।

তেলের রাজনীতি
এই সফরের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় অনুঘটক হলো ‘জ্বালানি তেল’। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে রাশিয়া থেকে সেভাবে তেল আমদানি করত না ভারত। কিন্তু যুদ্ধের পর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া রীতিমতো বিশাল ছাড় দিয়েই ভারতে তেল বিক্রি শুরু করে। এই মুহূর্তে ভারতের মোট আমদানি করা তেলের প্রায় ৩৫ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে।
বিবিসি-র তথ্যমতে, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের শেষে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বেড়ে ৬৮.৭২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২০ সালেই ছিল মাত্র ৮.১ বিলিয়ন ডলার। তবে এই বাণিজ্যের পাল্লা রাশিয়ার দিকেই বেশি ভারী। ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনেছে দেদারসে, কিন্তু রাশিয়ায় ভারতের রপ্তানি সেই তুলনায় বাড়েনি। এই সফরে মোদী এবং ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী তেল চুক্তির বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। ভারত চায় তেলের অস্থির বিশ্ববাজারে একটি স্থিতিশীল সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে।
প্রতিরক্ষা এবং এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম
ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্য রাশিয়া থেকে তেল কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য দুটি দেশ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো বিবেচনা করবে।
প্রতিরক্ষা সেক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ বিকল্প। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, রাশিয়া থেকে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০১০ থেকে ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ ৭২ শতাংশ এবং ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ৫৫ শতাংশ ছিল।
বহু আগে থেকেই ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। সেটি সোভিয়েত আমল থেকেই। ভারতীয় বিমান বাহিনীর ২৯টি স্কোয়াড্রন আছে। এর বেশিরভাগই রাশিয়ার তৈরি সুখোই-৩০ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে। যদিও গত এক দশকে ভারত এক্ষেত্রে ফ্রান্স, ইসরায়েল ও আমেরিকার দিকে ঝুঁকেছে, তবুও রাশিয়া ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় খুব শক্ত অবস্থান নিয়েই আছে।

একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত আপগ্রেড করা রাশিয়ান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৫০০ ক্ষেপনাস্ত্র ও রাশিয়ার তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান এসইউ–৫৭ কিনতে চায়। পাকিস্তান চীনের তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান জে-৩৫ কিনতে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এটির ওপর ভারতের কড়া নজর আছে। ভারতও দ্রুত একই রকমের কিছু কিনতে চাইবে সেটিই স্বাভাবিক।
শ্রম বাণিজ্য ও অন্যান্য
বিবিসিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেদেশে শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই সংকট কমানোর জন্য রাশিয়া ভারতকে দক্ষ কর্মীদের একটি মূল্যবান উৎস হিসেবে দেখে। অন্যদিকে মোদির নজর রাশিয়ার খুচরো বাজারে। ভূ-রাজনৈতিক মন্দা স্বত্ত্বেও রাশিয়ার বাজারে ভারত নিজেদের উৎপাদিত স্মার্টফোন, চিংড়ি, মাংস ও তৈরি পোশাক রপ্তানি করে আসছে। মোদি চাইবেন যে রাশিয়ার অর্থনীতি ভারতীয় পণ্যের জন্য নিজেদের উন্মুক্ত করুক। এর মাধ্যমেই ভারত দুই দেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা দূর করতে চায়।
চীন ফ্যাক্টর
পুতিনের ভারত সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ‘চীন ফ্যাক্টর’। ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে চীনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বেইজিং ও মস্কোর এই ‘সীমাহীন বন্ধুত্বে’ ভারত বেশ উদ্বিগ্ন। কারণ, হিমালয় সীমান্তে চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে।
ভারত কখনোই চাইবে না রাশিয়া পুরোপুরি চীনের পকেটে চলে যাক। পুতিনকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারত রাশিয়াকে বার্তা দিতে চায়, এশিয়ার ভূ–রাজনীতিতে চীনের বাইরেও রাশিয়ার শক্তিশালী মিত্র ভারত। রাশিয়াও চাচ্ছে না চীনের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা। তাই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা মস্কোর জন্যও এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষার কৌশল।

এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার ইঙ্গিত
পুতিনের এই সফর শুধু দুটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাক্ষাৎ নয়; এটি পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার একটি ইঙ্গিতও। একদিকে আমেরিকা এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা, অন্যদিকে চীন ও রাশিয়ার অক্ষশক্তি—এই দুই মেরুর মাঝখানে ভারত নিজেকে ‘গ্লোবাল সাউথ’ বা উন্নয়নশীল বিশ্বের কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।
ভারত প্রমাণ করতে চাইছে যে, তারা কারো আজ্ঞাবহ নয়। জাতীয় স্বার্থে তারা আমেরিকার ড্রোনও কিনবে, আবার রাশিয়ার তেল আর ক্ষেপণাস্ত্রও কিনবে।
আগামী দুই দিন ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কী আলোচনা হবে, তার ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি আর ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ কোন দিকে মোড় নেবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, এ মুহূর্তে বিশ্বের কূটনৈতিক দাবা খেলায় ভারত এখন কেন্দ্রবিন্দুতেই।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের সফরে ভারত পৌঁছেছেন। এই সফরে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনা বন্ধ করার জন্য ভারতের ওপর আমেরিকার চাপ বাড়ার কয়েক মাসের মধ্যে পুতিনের এই সফরটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সফরটি এমন একটা সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন বিশ্বব্যবস্থা অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ওয়াশিংটনে ক্ষমতার পালাবদল আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের হুমকির মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভারত তার পুরোনো বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের সুতোটি কতটা শক্ত রাখতে পারে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং ভারতের ‘নিরপেক্ষতা’
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে পশ্চিমা বিশ্ব মস্কোকে একঘরে করার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু ভারত ছিল ভিন্ন এক অবস্থানে। জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে ভারত বরাবরই ভোটদানে বিরত থেকেছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ভারত রাশিয়ার সঙ্গে তার বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পুতিনের এই সফর পশ্চিমাদের প্রতি ভারতের একটি স্পষ্ট বার্তা। বার্তাটি হলো—ভারত কোনো নির্দিষ্ট বলয়ের অংশ হতে চায় না। তারা তাদের ‘কৌশলগত স্বাতন্ত্র্য’ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। তবে এই জায়গায় ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কৌশলগত ভারসাম্য তারা কতটা বজায় রাখতে সক্ষম। ভারতের ওপর আমেরিকার চাপ থাকবে, সেটিকে মোকাবিলা করেই তাদের মস্কোর ওপর নির্ভরশীলতা বজায় রাখতে হবে।

তেলের রাজনীতি
এই সফরের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় অনুঘটক হলো ‘জ্বালানি তেল’। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে রাশিয়া থেকে সেভাবে তেল আমদানি করত না ভারত। কিন্তু যুদ্ধের পর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া রীতিমতো বিশাল ছাড় দিয়েই ভারতে তেল বিক্রি শুরু করে। এই মুহূর্তে ভারতের মোট আমদানি করা তেলের প্রায় ৩৫ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে।
বিবিসি-র তথ্যমতে, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের শেষে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বেড়ে ৬৮.৭২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২০ সালেই ছিল মাত্র ৮.১ বিলিয়ন ডলার। তবে এই বাণিজ্যের পাল্লা রাশিয়ার দিকেই বেশি ভারী। ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনেছে দেদারসে, কিন্তু রাশিয়ায় ভারতের রপ্তানি সেই তুলনায় বাড়েনি। এই সফরে মোদী এবং ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী তেল চুক্তির বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। ভারত চায় তেলের অস্থির বিশ্ববাজারে একটি স্থিতিশীল সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে।
প্রতিরক্ষা এবং এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম
ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্য রাশিয়া থেকে তেল কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য দুটি দেশ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো বিবেচনা করবে।
প্রতিরক্ষা সেক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ বিকল্প। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, রাশিয়া থেকে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০১০ থেকে ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ ৭২ শতাংশ এবং ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ৫৫ শতাংশ ছিল।
বহু আগে থেকেই ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। সেটি সোভিয়েত আমল থেকেই। ভারতীয় বিমান বাহিনীর ২৯টি স্কোয়াড্রন আছে। এর বেশিরভাগই রাশিয়ার তৈরি সুখোই-৩০ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে। যদিও গত এক দশকে ভারত এক্ষেত্রে ফ্রান্স, ইসরায়েল ও আমেরিকার দিকে ঝুঁকেছে, তবুও রাশিয়া ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় খুব শক্ত অবস্থান নিয়েই আছে।

একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত আপগ্রেড করা রাশিয়ান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৫০০ ক্ষেপনাস্ত্র ও রাশিয়ার তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান এসইউ–৫৭ কিনতে চায়। পাকিস্তান চীনের তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান জে-৩৫ কিনতে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এটির ওপর ভারতের কড়া নজর আছে। ভারতও দ্রুত একই রকমের কিছু কিনতে চাইবে সেটিই স্বাভাবিক।
শ্রম বাণিজ্য ও অন্যান্য
বিবিসিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেদেশে শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই সংকট কমানোর জন্য রাশিয়া ভারতকে দক্ষ কর্মীদের একটি মূল্যবান উৎস হিসেবে দেখে। অন্যদিকে মোদির নজর রাশিয়ার খুচরো বাজারে। ভূ-রাজনৈতিক মন্দা স্বত্ত্বেও রাশিয়ার বাজারে ভারত নিজেদের উৎপাদিত স্মার্টফোন, চিংড়ি, মাংস ও তৈরি পোশাক রপ্তানি করে আসছে। মোদি চাইবেন যে রাশিয়ার অর্থনীতি ভারতীয় পণ্যের জন্য নিজেদের উন্মুক্ত করুক। এর মাধ্যমেই ভারত দুই দেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা দূর করতে চায়।
চীন ফ্যাক্টর
পুতিনের ভারত সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ‘চীন ফ্যাক্টর’। ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে চীনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বেইজিং ও মস্কোর এই ‘সীমাহীন বন্ধুত্বে’ ভারত বেশ উদ্বিগ্ন। কারণ, হিমালয় সীমান্তে চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে।
ভারত কখনোই চাইবে না রাশিয়া পুরোপুরি চীনের পকেটে চলে যাক। পুতিনকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারত রাশিয়াকে বার্তা দিতে চায়, এশিয়ার ভূ–রাজনীতিতে চীনের বাইরেও রাশিয়ার শক্তিশালী মিত্র ভারত। রাশিয়াও চাচ্ছে না চীনের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা। তাই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা মস্কোর জন্যও এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষার কৌশল।

এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার ইঙ্গিত
পুতিনের এই সফর শুধু দুটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাক্ষাৎ নয়; এটি পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার একটি ইঙ্গিতও। একদিকে আমেরিকা এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা, অন্যদিকে চীন ও রাশিয়ার অক্ষশক্তি—এই দুই মেরুর মাঝখানে ভারত নিজেকে ‘গ্লোবাল সাউথ’ বা উন্নয়নশীল বিশ্বের কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।
ভারত প্রমাণ করতে চাইছে যে, তারা কারো আজ্ঞাবহ নয়। জাতীয় স্বার্থে তারা আমেরিকার ড্রোনও কিনবে, আবার রাশিয়ার তেল আর ক্ষেপণাস্ত্রও কিনবে।
আগামী দুই দিন ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কী আলোচনা হবে, তার ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি আর ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ কোন দিকে মোড় নেবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, এ মুহূর্তে বিশ্বের কূটনৈতিক দাবা খেলায় ভারত এখন কেন্দ্রবিন্দুতেই।
তথ্যসূত্র: বিবিসি