৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১

কোসিগিন বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রকে হত্যা করে সংকট ডেকে আনা হয়েছে’

কোসিগিন বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রকে হত্যা করে সংকট ডেকে আনা হয়েছে’
রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা। ছবি: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পাকিস্তান ভারতে আক্রমণের পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। পাকিস্তানের আক্রমনের জবাবে ভারতীয় নৌবাহিনীর হামলায় পাকিস্তানি ডেস্ট্রয়ার ‘বাইসার’ ও ‘শাহজাহান’ করাচির কাছে ধবংস হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ কমান্ড গঠন করে এর নাম দেওয়া হয় মিত্রবাহিনী।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণই তাদের লক্ষ্য।

৩ তারিখ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী উত্তরে (রংপুর-দিনাজপুর) তেঁতুলিয়া, হাকিমপুর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী; উত্তর-পূর্বে (সিলেট-মৌলভীবাজার) কমলগঞ্জ, ধর্মপাশা, শমশেরনগর; দক্ষিণ-পশ্চিমে (যশোর-খুলনা) বেনাপোল সংলগ্ন এলাকা এবং পূর্বে (কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সীমান্ত সংলগ্ন কসবা, চৌদ্দগ্রামের অংশবিশেষ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করেছিল ।

৪ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর তীব্র আক্রমণে শত্রুমুক্ত হয় কুমিল্লার দেবীদ্বার, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, জীবননগর, জামালপুরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর, শেরপুরের ঝিনাইগাতি, ঠাকুরগাঁও, হাতীবান্ধা, ডিমলা, দেবীগঞ্জ, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া এবং কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এবং নাটোরের চণ্ডীপুর।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম সংসদের উচ্চ ও নিম্নকক্ষে (রাজ্যসভা ও লোকসভা) বিশেষ অধিবেশনে জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একযোগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করছে। তারা বাংলাদেশের সাতটি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। তারা শত্রুর প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় বড় ফাটল ধরিয়েছে। কয়েকটি শহরের পতন হয়েছে।

এদিকে, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকতে ৪ ডিসেম্বর উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, ইতালি, জাপান, আর্জেন্টিনাসহ মোট আটটি দেশ জরুরি বৈঠক ডাকার জন্য অনুরোধ জানিয়ে পরিষদের সভাপতি সিয়েরা লিওনের রাষ্ট্রদূত ইসমাইল টেলর কামারার হাতে চিঠি দেয়।

চিঠিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, ইতালি, জাপান, আর্জেন্টিনা, নিকারাগুয়া ও সোমালিয়া।

জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট এক প্রতিবেদনে নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ভারত-পাকিস্তানের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্স কোসিগিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পূর্ববঙ্গে গণতন্ত্রকে হত্যা করেই এ সংকট ডেকে আনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন এ যুদ্ধে এখনই হস্তক্ষেপ করার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে করে না সোভিয়েত ইউনিয়ন।

অন্যদিকে চীন, ভারতের বিরুদ্ধে সম্প্রসারণশীল মনোভাবের অভিযোগ আনে। ভারতকে সমর্থন জানানোয় সোভিয়েত ইউনিয়নের সমালোচনা করে পাকিস্তানের প্রতি তারা পূর্ণ সমর্থন জানায়।

তথ্যসূত্র:

বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১, এইচ. টি. ইমাম

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র

মুক্তিযুদ্ধ ই আর্কাইভ

একাত্তরের দিনপঞ্জি, সাজ্জাদ শরিফ ও রাশেদুর রহমান

সম্পর্কিত