চরচা ডেস্ক

দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা, দুশ্চিন্তা, কাজের চাপ, সম্পর্কের জটিলতা, সব মিলিয়ে আজকের দুনিয়ায় মানসিক চাপ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এমন এক পরিস্থিতিতে আমরা বারবার সেই পরিচিত জিনিসগুলোর কাছে ফিরে যাই, যা আমাদের মনে নিরাপত্তা, স্বস্তি কিংবা আনন্দ দেয়। এরই একটি বড় উদাহরণ হলো-পছন্দের টিভি শো বারবার দেখা।
অনেকে ভাবে, একই সিরিজ বারবার দেখা কি সময়ের অপচয়? সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ‘ফ্রেন্ডস’ বা ‘দ্য বিগ ব্যাং থিওরি’র বা আমাদের দেশের ‘বন্ধন’ বা ‘আজ রবিবার’-এর মতো টিভি সিরিজ পুনরায় দেখা কেবল অভ্যাসের চেয়েও বেশি কিছু।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি এক ধরনের ‘সেল্ফ কেয়ার’। নস্টালজিয়াকে একসময় দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণ হিসাবে দেখা হতো। এখন একে মানসিক সম্পদ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যা মেজাজ, সেল্ফ-ওর্থ এবং সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি করে, বিশেষ করে চাপ বা একাকীত্বের সময়। কিন্তু কীভাবে?
নস্টালজিয়া মনকে শান্ত করে
আমরা অনেক সময় শিশু বয়সের কার্টুন বা কলেজ জীবনে দেখা সিরিজগুলো আবার দেখি। কারণ এগুলো আমাদের জীবনের সহজ-সরল সময়ের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। ‘নস্টালজিয়া থেরাপি’ মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও স্বীকার করেন। অতীতের সুখস্মৃতির সঙ্গে সংযোগ আমাদের মনকে শান্ত করে, হতাশা কমায় এবং এক ধরনের আবেগগত নিরাপত্তা তৈরি করে। তাই পুরোনো পছন্দের শোগুলো দেখা মানে শুধু বিনোদন নয়, এটি মনের ওপর একটি স্নিগ্ধ থেরাপির মতো কাজ করতে পারে।

আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
পরিচিত চরিত্রগুলোকে দেখে দেখে আমরা তাদের প্রতি একটি মানসিক সংযোগ তৈরি করি। তাদের হাসি, বন্ধুত্ব, জীবনযাপন, সংকট মোকাবিলা, এসব আমাদের মনে প্রভাব ফেলে। মন খারাপের দিনে আবার সেই চরিত্রদের দেখে মনে হয়, “ওরা আছে, আমি একা নই।” এটা যদিও বাস্তব নয়, তবে মস্তিষ্ক এতে বাস্তব ‘ইমোশনাল সাপোর্ট’ অনুভব করে। আবেগ সামলানোর এই পদ্ধতিকে মনোবিজ্ঞানীরা বলেন ‘ইমোশনাল রেগুলেশন’। পছন্দের সিরিজ সেই কাজে অবিশ্বাস্যভাবে সহায়ক।
পরিচিতি আমাদের নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়
মানুষের মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তা খুঁজে। টিভি শোর চরিত্রগুলো, তাদের আচরণ, গল্পের বাঁক, সবই আগে দেখে ফেলা থাকে বলে এসব আমাদের কাছে নতুন নয়। এই পরিচিত অনুভূতি মস্তিষ্ককে শান্ত করে এবং অনিশ্চয়তার উদ্বেগ কমায়। নতুন কনটেন্ট দেখার সময় মস্তিষ্ক কিছুটা সতর্ক থাকে। কী হবে, কোন চরিত্র মারা যাবে, কোনো টুইস্ট থাকবে কি না এসব নিয়ে স্বভাবতই টেনশন তৈরি হয়। কিন্তু পুরনো প্রিয় সিরিজে এসব দুশ্চিন্তা নেই। তাই সেগুলো দেখা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
মানসিক এনার্জি কম খরচ হয়
নতুন কিছু দেখলে মনোযোগ, বিশ্লেষণ, অনুমান, সব মিলিয়ে মানসিক শক্তির ব্যয় বেশি হয়। দিনের শেষে যখন আমরা ক্লান্ত থাকি, তখন নতুন কনটেন্টে ডুবে যাওয়ার মতো শক্তি থাকে না। প্রিয় টিভি শো আবার দেখা তখন অনেকটা মানসিক বিশ্রামের মতো কাজ করে। নতুন করে ভাবতে বা বুঝতে হয় না। তাই এটি মস্তিষ্ককে আরাম দেয়, ক্লান্তি কাটাতে সাহায্য করে।

স্ট্রেস কমায় এবং মুড ভালো করে
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, কমেডি বা ফিল-গুড শো দেখা শরীরে ‘এন্ডোরফিন’ নামক হরমোন বাড়ায়, যা প্রাকৃতিকভাবে মুড ভালো করে। হাসলে যেমন মন হালকা লাগে, তেমনি প্রিয় সিরিজের পরিচিত হাস্যরস আবার দেখলেও মস্তিষ্ক একই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। বিশেষ করে মন খারাপের সময় বা চাপের সময় হালকা ধরনের পরিচিত সিরিজ দেখা অনেক বেশি কার্যকর।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্লান্তি কমায়
নতুন কিছু দেখার জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ‘কী দেখব?’, ‘এটা ভালো হবে?’ ‘রিভিউ কেমন?’ ইত্যাদি। দিনের শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এ ক্লান্তি (Decision Fatigue) আমাদের মনকে আরও ভারী করে। কিন্তু প্রিয় শো’র ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় না। তাই এটি দ্রুত ও সহজ মানসিক আরাম পাওয়ার একটি উপায় হিসেবে কাজ করে।
নিজের জন্য ‘সেফ স্পেস’ তৈরি করা
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রত্যেক মানুষের জীবনে এমন কিছু জিনিস থাকা উচিত যা তাকে নিশ্চিন্তভাবে আরাম দেয়, যাকে বলে ‘সেফ স্পেস’। কারো কাছে সেটা বই, কারো কাছে গান, আবার কারো কাছে প্রিয় টিভি শো। বারবার দেখা এই শোগুলো আমাদের একটি ছোট্ট নিরাপদ জগৎ তৈরি করতে সাহায্য করে, যেখান থেকে আমরা নতুন এনার্জি নিয়ে বাস্তবতায় ফিরতে পারি।

পছন্দের টিভি শো বারবার দেখা মোটেই অলসতা নয়। বরং এটি মানসিক সুস্থতার জন্য একটি সহজ, নিরাপদ এবং কার্যকর উপায়। এটি আমাদের মনকে শান্ত করে, উদ্বেগ কমায়, পুরনো সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ব্যস্ত জীবনের মাঝেই যদি কখনো নিজেকে ক্লান্ত বা মানসিকভাবে ভারী মনে হয়, তাহলে আপনার সেই প্রিয় সিরিজটি আবার দেখতে শুরু করুন।
হয়তো ঠিক সেই পরিচিত দৃশ্য বা হাসির মুহূর্তটি আপনাকে আবারও স্বস্তির জায়গায় ফিরিয়ে নেবে।
তথ্যসূত্র: ভেরিওয়েল মাইন্ড

দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা, দুশ্চিন্তা, কাজের চাপ, সম্পর্কের জটিলতা, সব মিলিয়ে আজকের দুনিয়ায় মানসিক চাপ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এমন এক পরিস্থিতিতে আমরা বারবার সেই পরিচিত জিনিসগুলোর কাছে ফিরে যাই, যা আমাদের মনে নিরাপত্তা, স্বস্তি কিংবা আনন্দ দেয়। এরই একটি বড় উদাহরণ হলো-পছন্দের টিভি শো বারবার দেখা।
অনেকে ভাবে, একই সিরিজ বারবার দেখা কি সময়ের অপচয়? সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ‘ফ্রেন্ডস’ বা ‘দ্য বিগ ব্যাং থিওরি’র বা আমাদের দেশের ‘বন্ধন’ বা ‘আজ রবিবার’-এর মতো টিভি সিরিজ পুনরায় দেখা কেবল অভ্যাসের চেয়েও বেশি কিছু।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি এক ধরনের ‘সেল্ফ কেয়ার’। নস্টালজিয়াকে একসময় দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণ হিসাবে দেখা হতো। এখন একে মানসিক সম্পদ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যা মেজাজ, সেল্ফ-ওর্থ এবং সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি করে, বিশেষ করে চাপ বা একাকীত্বের সময়। কিন্তু কীভাবে?
নস্টালজিয়া মনকে শান্ত করে
আমরা অনেক সময় শিশু বয়সের কার্টুন বা কলেজ জীবনে দেখা সিরিজগুলো আবার দেখি। কারণ এগুলো আমাদের জীবনের সহজ-সরল সময়ের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। ‘নস্টালজিয়া থেরাপি’ মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও স্বীকার করেন। অতীতের সুখস্মৃতির সঙ্গে সংযোগ আমাদের মনকে শান্ত করে, হতাশা কমায় এবং এক ধরনের আবেগগত নিরাপত্তা তৈরি করে। তাই পুরোনো পছন্দের শোগুলো দেখা মানে শুধু বিনোদন নয়, এটি মনের ওপর একটি স্নিগ্ধ থেরাপির মতো কাজ করতে পারে।

আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
পরিচিত চরিত্রগুলোকে দেখে দেখে আমরা তাদের প্রতি একটি মানসিক সংযোগ তৈরি করি। তাদের হাসি, বন্ধুত্ব, জীবনযাপন, সংকট মোকাবিলা, এসব আমাদের মনে প্রভাব ফেলে। মন খারাপের দিনে আবার সেই চরিত্রদের দেখে মনে হয়, “ওরা আছে, আমি একা নই।” এটা যদিও বাস্তব নয়, তবে মস্তিষ্ক এতে বাস্তব ‘ইমোশনাল সাপোর্ট’ অনুভব করে। আবেগ সামলানোর এই পদ্ধতিকে মনোবিজ্ঞানীরা বলেন ‘ইমোশনাল রেগুলেশন’। পছন্দের সিরিজ সেই কাজে অবিশ্বাস্যভাবে সহায়ক।
পরিচিতি আমাদের নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়
মানুষের মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তা খুঁজে। টিভি শোর চরিত্রগুলো, তাদের আচরণ, গল্পের বাঁক, সবই আগে দেখে ফেলা থাকে বলে এসব আমাদের কাছে নতুন নয়। এই পরিচিত অনুভূতি মস্তিষ্ককে শান্ত করে এবং অনিশ্চয়তার উদ্বেগ কমায়। নতুন কনটেন্ট দেখার সময় মস্তিষ্ক কিছুটা সতর্ক থাকে। কী হবে, কোন চরিত্র মারা যাবে, কোনো টুইস্ট থাকবে কি না এসব নিয়ে স্বভাবতই টেনশন তৈরি হয়। কিন্তু পুরনো প্রিয় সিরিজে এসব দুশ্চিন্তা নেই। তাই সেগুলো দেখা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
মানসিক এনার্জি কম খরচ হয়
নতুন কিছু দেখলে মনোযোগ, বিশ্লেষণ, অনুমান, সব মিলিয়ে মানসিক শক্তির ব্যয় বেশি হয়। দিনের শেষে যখন আমরা ক্লান্ত থাকি, তখন নতুন কনটেন্টে ডুবে যাওয়ার মতো শক্তি থাকে না। প্রিয় টিভি শো আবার দেখা তখন অনেকটা মানসিক বিশ্রামের মতো কাজ করে। নতুন করে ভাবতে বা বুঝতে হয় না। তাই এটি মস্তিষ্ককে আরাম দেয়, ক্লান্তি কাটাতে সাহায্য করে।

স্ট্রেস কমায় এবং মুড ভালো করে
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, কমেডি বা ফিল-গুড শো দেখা শরীরে ‘এন্ডোরফিন’ নামক হরমোন বাড়ায়, যা প্রাকৃতিকভাবে মুড ভালো করে। হাসলে যেমন মন হালকা লাগে, তেমনি প্রিয় সিরিজের পরিচিত হাস্যরস আবার দেখলেও মস্তিষ্ক একই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। বিশেষ করে মন খারাপের সময় বা চাপের সময় হালকা ধরনের পরিচিত সিরিজ দেখা অনেক বেশি কার্যকর।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্লান্তি কমায়
নতুন কিছু দেখার জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ‘কী দেখব?’, ‘এটা ভালো হবে?’ ‘রিভিউ কেমন?’ ইত্যাদি। দিনের শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এ ক্লান্তি (Decision Fatigue) আমাদের মনকে আরও ভারী করে। কিন্তু প্রিয় শো’র ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় না। তাই এটি দ্রুত ও সহজ মানসিক আরাম পাওয়ার একটি উপায় হিসেবে কাজ করে।
নিজের জন্য ‘সেফ স্পেস’ তৈরি করা
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রত্যেক মানুষের জীবনে এমন কিছু জিনিস থাকা উচিত যা তাকে নিশ্চিন্তভাবে আরাম দেয়, যাকে বলে ‘সেফ স্পেস’। কারো কাছে সেটা বই, কারো কাছে গান, আবার কারো কাছে প্রিয় টিভি শো। বারবার দেখা এই শোগুলো আমাদের একটি ছোট্ট নিরাপদ জগৎ তৈরি করতে সাহায্য করে, যেখান থেকে আমরা নতুন এনার্জি নিয়ে বাস্তবতায় ফিরতে পারি।

পছন্দের টিভি শো বারবার দেখা মোটেই অলসতা নয়। বরং এটি মানসিক সুস্থতার জন্য একটি সহজ, নিরাপদ এবং কার্যকর উপায়। এটি আমাদের মনকে শান্ত করে, উদ্বেগ কমায়, পুরনো সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ব্যস্ত জীবনের মাঝেই যদি কখনো নিজেকে ক্লান্ত বা মানসিকভাবে ভারী মনে হয়, তাহলে আপনার সেই প্রিয় সিরিজটি আবার দেখতে শুরু করুন।
হয়তো ঠিক সেই পরিচিত দৃশ্য বা হাসির মুহূর্তটি আপনাকে আবারও স্বস্তির জায়গায় ফিরিয়ে নেবে।
তথ্যসূত্র: ভেরিওয়েল মাইন্ড