চরচা ডেস্ক

এ বছর এপ্রিল মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন আমদানি-রপ্তানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা শুরু করেন, তখন অর্থনীতিবিদরা একটি বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা করেছিলেন। তবে সেরকম কিছু হয়নি। এ বছর বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশের কাছাকাছি, যা গত বছরের সমান। প্রায় সব দেশেই বেকারত্বের হার কম। শেয়ার বাজারগুলো সন্তোষজনক অবস্থানে আছে। তবে এর মধ্যে একমাত্র উদ্বেগের বিষয় মূল্যস্ফীতি।
তবে এটা সামগ্রিক চিত্র। দেশভেদে অর্থনীতির অবস্থা একেক রকম। ৩৬টি ধনী দেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা করে দ্য ইকোনোমিস্ট বের করেছে বছরের সেরা অর্থনীতি। পাঁচটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই জরিপ করা হয়েছে- মূল্যস্ফীতি, মূল্যস্ফীতির ব্যাপ্তি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও শেয়ারবাজারের আচরণ।
তালিকায় দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলো ভালো অবস্থানে আছে। গত বছর শীর্ষে ছিল স্পেন, এবার পর্তুগাল। ২০২৫ সালে দেশটি জিডিপি প্রবৃদ্ধি, কম মূল্যস্ফীতি ও শক্তিশালী শেয়ারবাজার- এই তিনের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে পেরেছে। ইউরোজোনের অন্যান্য দেশ গ্রিস ও স্পেন তালিকার ওপরের দিকে রয়েছে।
গত বছর অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা গেলেও এ বছর ইসরায়েল সেটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। এছাড়া অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে আয়ারল্যান্ডের অবস্থাও সন্তোষজনক।
তালিকার নিচের দিকের দেশগুলোর বেশিরভাগই উত্তর ইউরোপের। ৩৬টি দেশের মধ্যে সর্বনিম্নে এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড ও স্লোভাকিয়া। জার্মানি আগের বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো করলেও সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা খুব ভালো না। একই কথা প্রযোজ্য ব্রিটেনের ক্ষেত্রেও।
আটলান্টিকের অপর পারের দেশ আমেরিকার অর্থনীতি ইতালির চেয়েও খারাপ। তালিকার মাঝামাঝি দেশটির অবস্থান। তুলনামূলক অধিক মূল্যস্ফীতি এর সামগ্রিক স্কোর কমিয়ে দিয়েছে।
এই জরিপের প্রথম সূচক ছিল মূল্যস্ফীতি। কোনো দেশের বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের কাছাকাছি হলে র্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান ভালো। এ বছর সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির দেশ তুরস্ক, যা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অদ্ভুত অর্থনৈতিক নীতির ফল। এরপরের অবস্থানে এস্তোনিয়া, ২০২২ সালের জ্বালানি ঘাটতির ধাক্কা থেকে দেশটি এখনো পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ব্রিটেনের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশ, আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও এটি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের স্বাভাবিক মাত্রার অনেক ওপরে।
সুইডেন, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে মূল্যস্ফীতি শূন্যের কাছাকাছি। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করেন, মূল্যস্ফীতি শূন্যের কাছাকাছি থাকলে মন্দাভাব দেখা দিতে পারে, যা প্রকৃত ঋণের বোঝা বাড়ায়। মূল্যস্ফীতি না থাকার চেয়ে সামান্য মূল্যস্ফীতি থাকা ভালো। এশিয়ার দেশ জাপানে বিগত দশকের তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি হলেও তা এখনও সীমিত পর্যায়ে আছে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান ভোটারদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উভয় ক্ষেত্রেই পর্তুগালের সাফল্য ঈর্ষণীয়। পর্যটন খাতে উন্নতি ও কম করহারের সুবিধা নিতে বহু ধনী বিদেশি দেশটিতে বসবাস শুরু করেছেন। সমগ্র ইউরোপীয় গড়ের তুলনায় পর্তুগালের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। চেক প্রজাতন্ত্র ও কলম্বিয়ায় জিডিপি ও কর্মসংস্থান- দুটিতেই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। তবে বিপরীত চিত্র দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে কর্মসংস্থান কমেছে। এ ছাড়া পণ্য ও শিপিং খাতে নির্ভরশীল দেশ নরওয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্থর হওয়ায় চাপের মধ্যে আছে।
জরিপের সর্বশেষ সূচক শেয়ারবাজার। অনুমিত ছিল আমেরিকার শেয়ারবাজার শীর্ষে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে লাভের হার কেবল মাঝারি পর্যায়ের। ফ্রান্সের অবস্থাও একই রকম, দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের কোম্পানি এলভিএমএইচ-এর শেয়ারদর বাড়েওনি, কমেওনি; স্থির রয়েছে। এই সূচকে সবচেয়ে খারাপ করেছে ডেনমার্ক। গত এক বছরে ওজেম্পিক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নোভো নরডিস্কের শেয়ারদর প্রায় ৬০ শতাংশ পড়ে গেছে, কারণ ওজন কমানোর ওষুধের বাজারে প্রতিষ্ঠানটি তার শীর্ষস্থান হারিয়েছে।
শেয়ারবাজার সূচকে ২০২৫ সালে চেক ও দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলো ভালো করলেও স্থানীয় মুদ্রায় হিসাব করলে ইসরায়েলের চেয়ে ভালো কেউ করেনি। গত এক বছরে দেশটির সবচেয়ে মূল্যবান তালিকাভুক্ত কোম্পানি ব্যাংক লেউমির শেয়ারদর বেড়েছে ৭০ শতাংশ। লাভবান হয়েছেন পর্তুগালের বিনিয়োগকারীরাও, ২০২৫ সালে দেশটির শেয়ারবাজার বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। সামনে আরও বাড়তে পারে।
এই জরিপ কিন্তু বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনীতির অবস্থা প্রকাশ করে না। উন্নত অর্থনীতির ৩৬টি দেশকে নিয়ে এটা করা হয়েছে। এর বাইরের দেশগুলো বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশসমূহের অর্থনীতি যে আরও খারাপ- তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এ বছর এপ্রিল মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন আমদানি-রপ্তানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা শুরু করেন, তখন অর্থনীতিবিদরা একটি বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা করেছিলেন। তবে সেরকম কিছু হয়নি। এ বছর বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশের কাছাকাছি, যা গত বছরের সমান। প্রায় সব দেশেই বেকারত্বের হার কম। শেয়ার বাজারগুলো সন্তোষজনক অবস্থানে আছে। তবে এর মধ্যে একমাত্র উদ্বেগের বিষয় মূল্যস্ফীতি।
তবে এটা সামগ্রিক চিত্র। দেশভেদে অর্থনীতির অবস্থা একেক রকম। ৩৬টি ধনী দেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা করে দ্য ইকোনোমিস্ট বের করেছে বছরের সেরা অর্থনীতি। পাঁচটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই জরিপ করা হয়েছে- মূল্যস্ফীতি, মূল্যস্ফীতির ব্যাপ্তি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও শেয়ারবাজারের আচরণ।
তালিকায় দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলো ভালো অবস্থানে আছে। গত বছর শীর্ষে ছিল স্পেন, এবার পর্তুগাল। ২০২৫ সালে দেশটি জিডিপি প্রবৃদ্ধি, কম মূল্যস্ফীতি ও শক্তিশালী শেয়ারবাজার- এই তিনের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে পেরেছে। ইউরোজোনের অন্যান্য দেশ গ্রিস ও স্পেন তালিকার ওপরের দিকে রয়েছে।
গত বছর অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা গেলেও এ বছর ইসরায়েল সেটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। এছাড়া অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে আয়ারল্যান্ডের অবস্থাও সন্তোষজনক।
তালিকার নিচের দিকের দেশগুলোর বেশিরভাগই উত্তর ইউরোপের। ৩৬টি দেশের মধ্যে সর্বনিম্নে এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড ও স্লোভাকিয়া। জার্মানি আগের বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো করলেও সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা খুব ভালো না। একই কথা প্রযোজ্য ব্রিটেনের ক্ষেত্রেও।
আটলান্টিকের অপর পারের দেশ আমেরিকার অর্থনীতি ইতালির চেয়েও খারাপ। তালিকার মাঝামাঝি দেশটির অবস্থান। তুলনামূলক অধিক মূল্যস্ফীতি এর সামগ্রিক স্কোর কমিয়ে দিয়েছে।
এই জরিপের প্রথম সূচক ছিল মূল্যস্ফীতি। কোনো দেশের বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের কাছাকাছি হলে র্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান ভালো। এ বছর সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির দেশ তুরস্ক, যা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অদ্ভুত অর্থনৈতিক নীতির ফল। এরপরের অবস্থানে এস্তোনিয়া, ২০২২ সালের জ্বালানি ঘাটতির ধাক্কা থেকে দেশটি এখনো পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ব্রিটেনের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশ, আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও এটি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের স্বাভাবিক মাত্রার অনেক ওপরে।
সুইডেন, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে মূল্যস্ফীতি শূন্যের কাছাকাছি। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করেন, মূল্যস্ফীতি শূন্যের কাছাকাছি থাকলে মন্দাভাব দেখা দিতে পারে, যা প্রকৃত ঋণের বোঝা বাড়ায়। মূল্যস্ফীতি না থাকার চেয়ে সামান্য মূল্যস্ফীতি থাকা ভালো। এশিয়ার দেশ জাপানে বিগত দশকের তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি হলেও তা এখনও সীমিত পর্যায়ে আছে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান ভোটারদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উভয় ক্ষেত্রেই পর্তুগালের সাফল্য ঈর্ষণীয়। পর্যটন খাতে উন্নতি ও কম করহারের সুবিধা নিতে বহু ধনী বিদেশি দেশটিতে বসবাস শুরু করেছেন। সমগ্র ইউরোপীয় গড়ের তুলনায় পর্তুগালের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। চেক প্রজাতন্ত্র ও কলম্বিয়ায় জিডিপি ও কর্মসংস্থান- দুটিতেই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। তবে বিপরীত চিত্র দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে কর্মসংস্থান কমেছে। এ ছাড়া পণ্য ও শিপিং খাতে নির্ভরশীল দেশ নরওয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্থর হওয়ায় চাপের মধ্যে আছে।
জরিপের সর্বশেষ সূচক শেয়ারবাজার। অনুমিত ছিল আমেরিকার শেয়ারবাজার শীর্ষে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে লাভের হার কেবল মাঝারি পর্যায়ের। ফ্রান্সের অবস্থাও একই রকম, দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের কোম্পানি এলভিএমএইচ-এর শেয়ারদর বাড়েওনি, কমেওনি; স্থির রয়েছে। এই সূচকে সবচেয়ে খারাপ করেছে ডেনমার্ক। গত এক বছরে ওজেম্পিক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নোভো নরডিস্কের শেয়ারদর প্রায় ৬০ শতাংশ পড়ে গেছে, কারণ ওজন কমানোর ওষুধের বাজারে প্রতিষ্ঠানটি তার শীর্ষস্থান হারিয়েছে।
শেয়ারবাজার সূচকে ২০২৫ সালে চেক ও দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলো ভালো করলেও স্থানীয় মুদ্রায় হিসাব করলে ইসরায়েলের চেয়ে ভালো কেউ করেনি। গত এক বছরে দেশটির সবচেয়ে মূল্যবান তালিকাভুক্ত কোম্পানি ব্যাংক লেউমির শেয়ারদর বেড়েছে ৭০ শতাংশ। লাভবান হয়েছেন পর্তুগালের বিনিয়োগকারীরাও, ২০২৫ সালে দেশটির শেয়ারবাজার বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। সামনে আরও বাড়তে পারে।
এই জরিপ কিন্তু বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনীতির অবস্থা প্রকাশ করে না। উন্নত অর্থনীতির ৩৬টি দেশকে নিয়ে এটা করা হয়েছে। এর বাইরের দেশগুলো বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশসমূহের অর্থনীতি যে আরও খারাপ- তা বলার অপেক্ষা রাখে না।