আবু নওফেল সাজিদ

আমেরিকার রাজনীতিতে, বিশেষত প্রশাসনিক ধারায় নির্বাহী আদেশ বলে একটা বিষয় আছে। এক প্রেসিডেন্ট এসে আগেরজনের নির্বাহী আদেশ বাতিল করাটা এক রকম রেওয়াজ। কিন্তু এবার কী হলো যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পূর্বসূরির নির্বাহী আদেশ বাতিলে ‘অটোপেন’-এর মতো একটি বিষয়কে সামনে আনতে চাইছেন?
আগে জানা যাক, অটোপেন নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প আসলে কী বলছেন? নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি অটোপেন ব্যবহার করে যে আইনগুলোতে স্বাক্ষর করেছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে সেগুলো বাতিল করে দেবেন।
ঠিক সেই ধারাবাহিকতায় ট্রাম্প সম্প্রতি জো বাইডেনের ক্ষমতায় থাকাকালে নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে ‘অবৈধ’ বলছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছেন, তার আগের প্রেসিডেন্ট দ্বারা সরাসরি স্বাক্ষরিত হয়নি–এমন সমস্ত নির্বাহী আদেশ ও অন্য সবকিছু বাতিল করছেন।

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদে শপথ গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২১৭টি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই সই করেছেন ২৬টি আদেশে। এর মধ্যে একটি আদেশ ছিল জো বাইডেনের করা ‘ক্ষতিকর নির্বাহী আদেশ’ বাতিল শীর্ষক একগুচ্ছ আদেশের একটি তালিকা।
এর আগের মেয়াদে ট্রাম্প বিশেষভাবে আলোচিত ছিলেন অত্যধিক পরিমাণে নির্বাহী আদেশে সই করার কারণে। সেবার তিনি বারাক ওবামা প্রশাসনের সময় দেওয়া বিভিন্ন নির্বাহী আদেশ কলমের খোঁচায় বাতিল করেছেন। এর মধ্যে ‘ড্রিমারস প্রকল্প’সহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা বলয় বাতিলের বিষয়টিও ছিল, যা তাকে ভয়াবহ সমালোচনার সম্মুখীন করে।
এবার তিনি সেই সমালোচনা এড়াতেই কি জো বাইডেনের দেওয়া নির্বাহী আদেশকে ‘অটোপেন’ দিয়ে দেওয়া আদেশ হিসেবে সাব্যস্ত করতে চাইছেন? এ নিয়ে বিশদ আলোচনার আগে দেখা যাক অটোপেন নিয়ে বাইডেন কী বলছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন অটোপেনের বিষয়টি ‘ধামাচাপা’দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। বাইডেন জানান, প্রেসিডেন্ট হিসেবে সব সিদ্ধান্ত তিনিই নিয়েছিলেন এবং রিপাবলিকানদের তিনি ‘মিথ্যাবাদী’বলে অভিহিত করেছেন।
অটোপেন কী?
অটোপেন হলো একটি রোবোটিক যন্ত্র, যা একজন ব্যক্তির আসল স্বাক্ষরকে নকল করে। ১৮০৩ সালে আমেরিকায় প্রথম অটোপেন ব্যবহার করা হয়। সইগুলোতে আসল কালি ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের অটোপেন সাধারণত একসাথে অনেক নথিপত্র বা কাগজে সইয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
আমেরিকায় ২০০৫ সালে বিচার বিভাগ এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেয়। এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্টের নিজে স্বাক্ষর করার দরকার নেই। তিনি একজন অধস্তন কর্মকর্তাকে অটোপেন দিয়ে তার পক্ষে কোনো বিলে স্বাক্ষর করার নির্দেশ দিতে পারেন এবং সেটি আইনগতভাবে বৈধ।
অন্য প্রেসিডেন্টরা কি এটি ব্যবহার করেছেন?
আমেরিকার ইতিহাসে অনেক প্রেসিডেন্ট অটোপেন ব্যবহার করেছেন। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন, জন এফ কেনেডি ও বারাক ওবামা যখন দেশের বাইরে ছিলেন, তখন বিভিন্ন অ্যাক্ট ও আইনে স্বাক্ষর করতে অটোপেন ব্যবহার করা হয়েছিল।
এমনকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন যে, তিনি ‘খুব গুরুত্বহীন কাগজপত্র’সইয়ে অটোপেন ব্যবহার করেছেন।

বাইডেনের অটোপেন ব্যবহার, আমরা কী জানি?
ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’প্ল্যাটফর্মে দাবি করেছেন, বাইডেনের ‘অজান্তেই’ অন্যরা অটোপেন ব্যবহার করে তার নামে কাগজে সই করেছেন। ফলে বাইডেনের ‘প্রায় ৯২ শতাংশ নির্বাহী আদেশকে অবৈধ’ বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। তবে এই দাবির পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ তিনি দেননি।
রিপাবলিকান দলের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি গত অক্টোবরে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। বাইডেনের অগোচরে নীতি প্রয়োগের কোনো প্রমাণ সেখানে ছিল না। ডেমোক্র্যাটরা এই প্রতিবেদনকে ‘ভুয়া’বলে উড়িয়ে দেন।
বাইডেন তার অটোপেন ব্যবহারের বিষয়ে কথা বলেছেন। গত মার্চে তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, “আমি প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং অনেক লোকের ক্ষমা-সংক্রান্ত নথিতে কর্মীদের অটোপেন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলাম।”
ট্রাম্প কেন বারবার এটি উত্থাপন করছেন?
বাইডেনের অটোপেন ব্যবহারকে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের আক্রমণ করার একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছেন।
নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, বাইডেনের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা তার প্রেসিডেন্ট পদে থাকার জন্য বাধা। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ডানপন্থী থিঙ্কট্যাঙ্ক-এর শাখা ‘ওভারসাইট প্রজেক্ট’ এই অটোপেন ব্যবহারের বিষয়টি প্রচার করছে। এই প্রজেক্ট দাবি করেছে, “যে অটোপেন নিয়ন্ত্রণ করত, সে-ই প্রেসিডেন্ট পদ নিয়ন্ত্রণ করত।”যদিও এই দাবির পক্ষেও কোনো প্রমাণ নেই।
এর আগে, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের নতুন প্রেসিডেন্সিয়াল গ্যালারিতে বাইডেনের ছবির পরিবর্তে একটি অটোপেনের ছবি ঝুলিয়েছিলেন, যা এখনো আছে।
বাইডেনের নির্বাহী আদেশ কি বাতিল হবে?
নির্বাহী আদেশের ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রেসিডেন্টরা আইনিভাবে আগের প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশ বাতিল করতে পারেন। তাই ট্রাম্প বাইডেনের জারি করা নির্বাহী আদেশগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তন করতে পারেন। তবে আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবিধান অনুযায়ী সাবেক প্রেসিডেন্টের দেওয়া সাধারণ ক্ষমার আদেশ বাতিলের ক্ষমতা রাখেন না অন্য প্রেসিডেন্ট।
তাহলে ট্রাম্প কেন বাইডেনের দেওয়া নির্বাহী আদেশ বাতিলের জন্য ‘অটোপেন’-এর প্রসঙ্গ আনছেন বারবার? তিনি চাইলে তো সহজেই বাইডেনের সময়ে করা আদেশগুলো একে একে বাতিল করে নতুন আদেশ জারি করতে পারেন।

এর একটি কারণ একদম শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি আদেশ দেবেন কিন্তু দায় নেবেন না। এমনকি নিজের আদেশের দায়ও চাপাতে চাইছেন জো বাইডেনের ওপর। অটোপেনকে সামনে এনে তিনি যুক্তি হাজির করছেন যে, যেহেতু বাইডেন নিজে সই করতেন না, তার অটোপেন করত, সেহেতু এসব আদেশ আমেরিকার মানুষের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের নয়। তিনি শুধু এটি দাবিই করছেন না, এর পক্ষে প্রচার চালাতে নিজের ও রিপাবলিকান দলের প্রচারযন্ত্রকে ব্যবহারও করছেন।
দেখা যাক, ট্রাম্প আসলে কী চান? নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে এমনকি তার আগের মেয়াদেও ট্রাম্প আমেরিকার খোলা দরজাগুলো একে একে বন্ধ করেছিলেন। কারও ভুলে যাওয়ার কথা নয় যে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে প্রবেশ করেই ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশে সই করে আলোড়ন তুলেছিলেন, তার একটি হলো–ছয় মুসলিম অধ্যুষিত দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত।
এবারের নির্বাচনের আগে রিপাবলিকান দল ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া প্রোজেক্ট ২০২৫-এ ঠিক একই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে আমেরিকায় কারও প্রবেশকে নিরুৎসাহিত করার বক্তব্য হাজির হয়েছে। সোমালীয়দের ‘আবর্জনা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে সেই পুরোনো ধাঁচের বক্তব্যই হাজির করছেন ট্রাম্প। আজ হোক বা কাল ট্রাম্প তার কট্টর ধারার পদক্ষেপগুলো আইনি পথে না হলে নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন বলে অনুমান করা যায়। আর এ ক্ষেত্রেই তিনি বারবার বাইডেনের দেওয়া আদেশগুলোকে ‘অটোপেনে’ হয়েছে মর্মে ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণার একটা চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে সফল হলে ট্রাম্প কথিত বাইডেনের ’৯২ শতাংশ’ নির্বাহী আদেশে তিনি অনায়াসে ছুরি চালাতে পারবেন। এর জন্য এমনকি তাকে সেভাবে সমালোচিতও হতে হবে না। ট্রাম্প সম্ভবত এটাই চান।

আমেরিকার রাজনীতিতে, বিশেষত প্রশাসনিক ধারায় নির্বাহী আদেশ বলে একটা বিষয় আছে। এক প্রেসিডেন্ট এসে আগেরজনের নির্বাহী আদেশ বাতিল করাটা এক রকম রেওয়াজ। কিন্তু এবার কী হলো যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পূর্বসূরির নির্বাহী আদেশ বাতিলে ‘অটোপেন’-এর মতো একটি বিষয়কে সামনে আনতে চাইছেন?
আগে জানা যাক, অটোপেন নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প আসলে কী বলছেন? নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি অটোপেন ব্যবহার করে যে আইনগুলোতে স্বাক্ষর করেছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে সেগুলো বাতিল করে দেবেন।
ঠিক সেই ধারাবাহিকতায় ট্রাম্প সম্প্রতি জো বাইডেনের ক্ষমতায় থাকাকালে নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে ‘অবৈধ’ বলছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছেন, তার আগের প্রেসিডেন্ট দ্বারা সরাসরি স্বাক্ষরিত হয়নি–এমন সমস্ত নির্বাহী আদেশ ও অন্য সবকিছু বাতিল করছেন।

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদে শপথ গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২১৭টি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই সই করেছেন ২৬টি আদেশে। এর মধ্যে একটি আদেশ ছিল জো বাইডেনের করা ‘ক্ষতিকর নির্বাহী আদেশ’ বাতিল শীর্ষক একগুচ্ছ আদেশের একটি তালিকা।
এর আগের মেয়াদে ট্রাম্প বিশেষভাবে আলোচিত ছিলেন অত্যধিক পরিমাণে নির্বাহী আদেশে সই করার কারণে। সেবার তিনি বারাক ওবামা প্রশাসনের সময় দেওয়া বিভিন্ন নির্বাহী আদেশ কলমের খোঁচায় বাতিল করেছেন। এর মধ্যে ‘ড্রিমারস প্রকল্প’সহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা বলয় বাতিলের বিষয়টিও ছিল, যা তাকে ভয়াবহ সমালোচনার সম্মুখীন করে।
এবার তিনি সেই সমালোচনা এড়াতেই কি জো বাইডেনের দেওয়া নির্বাহী আদেশকে ‘অটোপেন’ দিয়ে দেওয়া আদেশ হিসেবে সাব্যস্ত করতে চাইছেন? এ নিয়ে বিশদ আলোচনার আগে দেখা যাক অটোপেন নিয়ে বাইডেন কী বলছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন অটোপেনের বিষয়টি ‘ধামাচাপা’দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। বাইডেন জানান, প্রেসিডেন্ট হিসেবে সব সিদ্ধান্ত তিনিই নিয়েছিলেন এবং রিপাবলিকানদের তিনি ‘মিথ্যাবাদী’বলে অভিহিত করেছেন।
অটোপেন কী?
অটোপেন হলো একটি রোবোটিক যন্ত্র, যা একজন ব্যক্তির আসল স্বাক্ষরকে নকল করে। ১৮০৩ সালে আমেরিকায় প্রথম অটোপেন ব্যবহার করা হয়। সইগুলোতে আসল কালি ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের অটোপেন সাধারণত একসাথে অনেক নথিপত্র বা কাগজে সইয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
আমেরিকায় ২০০৫ সালে বিচার বিভাগ এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেয়। এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্টের নিজে স্বাক্ষর করার দরকার নেই। তিনি একজন অধস্তন কর্মকর্তাকে অটোপেন দিয়ে তার পক্ষে কোনো বিলে স্বাক্ষর করার নির্দেশ দিতে পারেন এবং সেটি আইনগতভাবে বৈধ।
অন্য প্রেসিডেন্টরা কি এটি ব্যবহার করেছেন?
আমেরিকার ইতিহাসে অনেক প্রেসিডেন্ট অটোপেন ব্যবহার করেছেন। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন, জন এফ কেনেডি ও বারাক ওবামা যখন দেশের বাইরে ছিলেন, তখন বিভিন্ন অ্যাক্ট ও আইনে স্বাক্ষর করতে অটোপেন ব্যবহার করা হয়েছিল।
এমনকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন যে, তিনি ‘খুব গুরুত্বহীন কাগজপত্র’সইয়ে অটোপেন ব্যবহার করেছেন।

বাইডেনের অটোপেন ব্যবহার, আমরা কী জানি?
ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’প্ল্যাটফর্মে দাবি করেছেন, বাইডেনের ‘অজান্তেই’ অন্যরা অটোপেন ব্যবহার করে তার নামে কাগজে সই করেছেন। ফলে বাইডেনের ‘প্রায় ৯২ শতাংশ নির্বাহী আদেশকে অবৈধ’ বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। তবে এই দাবির পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ তিনি দেননি।
রিপাবলিকান দলের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি গত অক্টোবরে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। বাইডেনের অগোচরে নীতি প্রয়োগের কোনো প্রমাণ সেখানে ছিল না। ডেমোক্র্যাটরা এই প্রতিবেদনকে ‘ভুয়া’বলে উড়িয়ে দেন।
বাইডেন তার অটোপেন ব্যবহারের বিষয়ে কথা বলেছেন। গত মার্চে তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, “আমি প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং অনেক লোকের ক্ষমা-সংক্রান্ত নথিতে কর্মীদের অটোপেন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলাম।”
ট্রাম্প কেন বারবার এটি উত্থাপন করছেন?
বাইডেনের অটোপেন ব্যবহারকে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের আক্রমণ করার একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছেন।
নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, বাইডেনের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা তার প্রেসিডেন্ট পদে থাকার জন্য বাধা। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ডানপন্থী থিঙ্কট্যাঙ্ক-এর শাখা ‘ওভারসাইট প্রজেক্ট’ এই অটোপেন ব্যবহারের বিষয়টি প্রচার করছে। এই প্রজেক্ট দাবি করেছে, “যে অটোপেন নিয়ন্ত্রণ করত, সে-ই প্রেসিডেন্ট পদ নিয়ন্ত্রণ করত।”যদিও এই দাবির পক্ষেও কোনো প্রমাণ নেই।
এর আগে, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের নতুন প্রেসিডেন্সিয়াল গ্যালারিতে বাইডেনের ছবির পরিবর্তে একটি অটোপেনের ছবি ঝুলিয়েছিলেন, যা এখনো আছে।
বাইডেনের নির্বাহী আদেশ কি বাতিল হবে?
নির্বাহী আদেশের ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রেসিডেন্টরা আইনিভাবে আগের প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশ বাতিল করতে পারেন। তাই ট্রাম্প বাইডেনের জারি করা নির্বাহী আদেশগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তন করতে পারেন। তবে আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবিধান অনুযায়ী সাবেক প্রেসিডেন্টের দেওয়া সাধারণ ক্ষমার আদেশ বাতিলের ক্ষমতা রাখেন না অন্য প্রেসিডেন্ট।
তাহলে ট্রাম্প কেন বাইডেনের দেওয়া নির্বাহী আদেশ বাতিলের জন্য ‘অটোপেন’-এর প্রসঙ্গ আনছেন বারবার? তিনি চাইলে তো সহজেই বাইডেনের সময়ে করা আদেশগুলো একে একে বাতিল করে নতুন আদেশ জারি করতে পারেন।

এর একটি কারণ একদম শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি আদেশ দেবেন কিন্তু দায় নেবেন না। এমনকি নিজের আদেশের দায়ও চাপাতে চাইছেন জো বাইডেনের ওপর। অটোপেনকে সামনে এনে তিনি যুক্তি হাজির করছেন যে, যেহেতু বাইডেন নিজে সই করতেন না, তার অটোপেন করত, সেহেতু এসব আদেশ আমেরিকার মানুষের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের নয়। তিনি শুধু এটি দাবিই করছেন না, এর পক্ষে প্রচার চালাতে নিজের ও রিপাবলিকান দলের প্রচারযন্ত্রকে ব্যবহারও করছেন।
দেখা যাক, ট্রাম্প আসলে কী চান? নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে এমনকি তার আগের মেয়াদেও ট্রাম্প আমেরিকার খোলা দরজাগুলো একে একে বন্ধ করেছিলেন। কারও ভুলে যাওয়ার কথা নয় যে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে প্রবেশ করেই ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশে সই করে আলোড়ন তুলেছিলেন, তার একটি হলো–ছয় মুসলিম অধ্যুষিত দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত।
এবারের নির্বাচনের আগে রিপাবলিকান দল ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া প্রোজেক্ট ২০২৫-এ ঠিক একই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে আমেরিকায় কারও প্রবেশকে নিরুৎসাহিত করার বক্তব্য হাজির হয়েছে। সোমালীয়দের ‘আবর্জনা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে সেই পুরোনো ধাঁচের বক্তব্যই হাজির করছেন ট্রাম্প। আজ হোক বা কাল ট্রাম্প তার কট্টর ধারার পদক্ষেপগুলো আইনি পথে না হলে নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন বলে অনুমান করা যায়। আর এ ক্ষেত্রেই তিনি বারবার বাইডেনের দেওয়া আদেশগুলোকে ‘অটোপেনে’ হয়েছে মর্মে ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণার একটা চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে সফল হলে ট্রাম্প কথিত বাইডেনের ’৯২ শতাংশ’ নির্বাহী আদেশে তিনি অনায়াসে ছুরি চালাতে পারবেন। এর জন্য এমনকি তাকে সেভাবে সমালোচিতও হতে হবে না। ট্রাম্প সম্ভবত এটাই চান।