ইউরোপীয় নেতাদের নতুন ফাঁদে পড়তে যাচ্ছেন জেলেনস্কি?

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
ইউরোপীয় নেতাদের নতুন ফাঁদে পড়তে যাচ্ছেন জেলেনস্কি?
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় কি এবার অর্থনীতির টেবিলে ঘুরতে যাচ্ছে? ওয়াশিংটনের সহায়তা কমে আসা এবং রণক্ষেত্রে রাশিয়ার অগ্রগতির মুখে এক অভাবনীয় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউক্রেনকে রক্ষা করতে রাশিয়ারই গচ্ছিত কয়েক শ বিলিয়ন ইউরো জব্দ করে তা ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে ব্রাসেলস।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনের আগামী দুই বছরের খরচ মেটাতে প্রয়োজন প্রায় ১৩৫ বিলিয়ন ইউরো, যা বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী ১৫৮ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারের সমান। এই বিশাল অর্থের জোগান দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন হাত বাড়িয়েছে রাশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের ২১০ বিলিয়ন ইউরো সমমূল্যের সম্পদের দিকে, যা বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংকে ‘ফ্রিজ’ হয়ে আছে।

এ ব্যাপারে সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি এনালাইসিসের (সিইপিএ) সিনিয়র ফেলো আলেকজান্ডার কোলিয়ান্দ্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘রাশিয়ার এই ‘ফ্রিজ করা বা আটকে রাখা সম্পদগুলো মূলত দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ। যদিও কিছু ব্যক্তিগত বা কোম্পানির সম্পদও এর মধ্যে আছে। তবে আমরা এখানে মূলত রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ নিয়ে কথা বলছি। এগুলো হলো রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং তাদের ‘ন্যাশনাল ওয়েলবিয়িং ফান্ড’, যেখানে ক্রেমলিন তেল থেকে আসা অতিরিক্ত টাকা জমিয়ে রাখত।’’

এই সম্পদের সিংহভাগ (প্রায় ১৮৫ বিলিয়ন ইউরো) জমা আছে বেলজিয়ামের সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরি ইউরোক্লিয়ারে। কিন্তু সমস্যা একটাই, এই অর্থ সরাসরি বাজেয়াপ্ত করা আন্তর্জাতিক আইনে বেশ জটিল। তাই ইইউ সাজিয়েছে এক নতুন পরিকল্পনা।

পরিকল্পনাটি হলো ‘ক্ষতিপূরণ ঋণ’। ইইউ এই জব্দ করা সম্পদের বিপরীতে বড় অঙ্কের টাকা ধার করবে এবং তা ইউক্রেনকে দেবে। মজার ব্যাপার হলো, ইউক্রেন এই টাকা তখনই ফেরত দেবে, যখন রাশিয়া যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ইউক্রেনকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে। সহজ কথায়, রাশিয়ার টাকা দিয়েই ইউক্রেন তার লড়াই চালিয়ে যাবে।

আলেকজান্ডার কোলিয়ান্দ্র বলছেন, ‘‘আমেরিকা বর্তমানে ইউক্রেনকে আগের মতো অর্থ সাহায্য দিচ্ছে না। এখন এই বিল মেটানোর পুরো দায়িত্ব ইউরোপের কাঁধে। ইউরোপীয় গ্যারান্টি বা অর্থ ছাড়া ইউক্রেন আর্থিকভাবে টিকে থাকতে পারবে না। কারণ, ইউরোপের নিশ্চয়তা ছাড়া আইএমএফ ইউক্রেনকে ঋণ দেবে না। বর্তমানে ইউক্রেনের বাজেটে বিশাল ঘাটতি রয়েছে এবং এর মধ্যে সেনাবাহিনীর খরচ তো আছেই।’’

তবে এই পথ সহজ নয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একে ‘চুরি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এমনকি হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান এই পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, এটি এমন একটি যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করবে, যা জেতা অসম্ভব।

এতে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেলজিয়াম। তারা ভয় পাচ্ছে, রাশিয়ার এই টাকা ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে আইনি লড়াইয়ে তাদের ওপর দায় চাপতে পারে। এমনকি রাশিয়া প্রতিশোধ হিসেবে সাইবার হামলা বা ড্রোন হামলার হুমকি দিচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

অধিকাংশ রুশ সম্পদ বেলজিয়ামে জমা থাকায় তারা কিছুটা চিন্তিত। বেলজিয়াম চায় এই দায়ভার অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোসহ যুক্তরাজ্য, কানাডা ও জাপান ভাগ করে নিক। কারণ, ভবিষ্যতে যদি রাশিয়া কখনো এই টাকা ফেরত চায়, বেলজিয়াম একা সেই পরিস্থিতির বা আইনি লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে চায় না।

যদি এই সম্পদ ব্যবহারের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, তবে ইউরোপকে তার নিজের বাজেট থেকে ধার করতে হবে। যা ইতোমধ্যে ঋণে জর্জরিত ইউরোপীয় অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলবে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠেয় বৈঠকে নির্ধারিত হবে ইউরোপের এই ‘জুয়া’ সফল হবে কি না। একদিকে ইউক্রেনের অস্তিত্ব রক্ষা, অন্যদিকে রাশিয়ার সম্ভাব্য পাল্টা আঘাত–ইউরোপ এখন এক কঠিন সন্ধিক্ষণে।

সম্পর্কিত