চরচা ডেস্ক

অনুভূতি যত জটিল, প্রেম তার চেয়েও বেশি জটিল। তবে এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা খুব সহজেই কারো প্রতি আবেগে ভেসে যান, খুব দ্রুত প্রেমে পড়েন। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ইমোফিলিয়া (Emophilia)। প্রথম পরিচয়, দু’একটা সুন্দর মুহূর্ত বা সামান্য যত্ন দেখলেই মনে হয়, ‘এই তো সেই মানুষ!’
শুনতে রোমান্টিক লাগলেও, বাস্তবে ইমোফিলিয়ার রয়েছে বেশ কিছু কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক দিক।
ভুল মানুষকে বেছে নেওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়
যারা তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়ে যান, তারা সাধারণত অন্যকে যাচাই করার সময় নেন না। মানুষকে কাছে টেনে নেওয়ার আগে যে মানসিক পরিপক্বতা, মূল্যবোধ, আচরণ, এসব খুঁটিনাটি দেখা প্রয়োজন, তা তারা এড়িয়ে যান। ফলে অনেক সময় টক্সিক, ম্যানিপুলেটিভ বা আবেগহীন মানুষের সঙ্গেও সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। এতে শুধু বারবারই হৃদয়ই ভাঙে না, কমতে থাকে ব্যক্তিগত আত্মবিশ্বাসও।
আবেগের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া
ইমোফিলিয়াতে ভোগা মানুষ প্রায়ই প্রেমকে একটা ‘চাওয়া-পাওয়া’র অনুভূতি দিয়ে দেখেন। তারা মনে করেন, কারো ভালোবাসা পেলেই জীবন পূর্ণ হবে। এই মানসিকতা থেকে এক ধরনের ‘ইমোশনাল ডিপেনডেন্সি’ বা মানসিক নির্ভরতা তৈরি হয়। সেখানে নিজের সুখ, আত্মসম্মান, সিদ্ধান্ত, সবকিছু অন্য কারো উপস্থিতির উপর নির্ভর হয়ে পড়ে। এটি দীর্ঘমেয়াদে মানসিক দৃঢ়তাকে দুর্বল করে এবং নিজের ওপর বিশ্বাস কমিয়ে দেয়।

দ্রুত গভীরতায় যাওয়ার কারণে সম্পর্কের চাপ তৈরি হয়
যখন কেউ খুব তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়ে, তখন তিনি একই গতিতে গভীর সম্পর্ক চাইতেও শুরু করেন। কম সময়ের পরিচয়েই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, অতিরিক্ত নিষ্ক্রিয়তা, সারাক্ষণ যোগাযোগের চাহিদা, এসব সম্পর্কের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ ফেলে। অন্যপক্ষ হয়তো সেই রকম প্রস্তুত নয়, ফলে সম্পর্কের মধ্যে অস্বস্তি, ভুল বোঝাবুঝি এবং দূরত্ব তৈরি হতে পারে।
নিজের সীমা ও সীমানা হারিয়ে ফেলা
দ্রুত প্রেমে পড়া মানুষ অনেক সময় নিজের সীমারেখা বজায় রাখতে পারেন না। কারো মন জয়ের জন্য তারা নিজের সময়, অভ্যাস, পছন্দ এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজনগুলোকে অবহেলা করতে থাকেন। এই অতিরিক্ত ‘গিভিং’ আচরণ মানসিকভাবে ক্লান্ত করে এবং পরে আফসোসের জন্ম দেয়। কারণ সম্পর্ক টিকে না থাকলে মনে হয় সবকিছু বৃথা গেল।
প্রেমের সঙ্গে বাস্তবতাকে গুলিয়ে ফেলা
ইমোফিলিয়াতে আক্রান্ত মানুষ বেশি আবেগী হওয়ায় বাস্তবতাকে অনেক সময় রোমান্টিক কল্পনায় ঢেকে ফেলেন। মানুষকে যে যেমন, ঠিক তেমনভাবে দেখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। প্রাথমিক আকর্ষণ বা ‘ইনফ্যাচুয়েশন’-কে তারা সত্যিকারের প্রেম মনে করে ফেলেন। ফলে যখন বাস্তবতা সামনে আসে,অন্য মানুষের ত্রুটি, মতবিরোধ, অভ্যাস তারা সহজে মানিয়ে নিতে পারেন না।

বারবার ব্যর্থ সম্পর্ক মানসিক স্বাস্থ্যে চাপ ফেলে
দ্রুত প্রেমে পড়ার একটি বড় ক্ষতি হলো-এমন মানুষের সম্পর্ক টেকানোর হার তুলনামূলকভাবে কম। বারবার সম্পর্ক ভেঙে গেলে মনে হতে পারে, ‘আমার মধ্যে নিশ্চয়ই সমস্যা আছে।’ এই ভাবনা পরবর্তীতে আত্মবিশ্বাস কমানো, উদ্বেগ বাড়ানো, এমনকি সম্পর্ক ভীতি তৈরি করতে পারে। অনেকেই আবার ব্যথা ভুলতে দ্রুত নতুন প্রেমের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ফলে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি হয়।
জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব
প্রেমই যদি সব চিন্তার কেন্দ্র হয়ে যায়, তাহলে পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, বন্ধুত্ব, পরিবার, সব কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অতিরিক্ত আবেগের ওঠানামায় কাজে মনোযোগ কমে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দুর্বল হয় এবং জীবনযাপনে অস্থিরতা তৈরি হয়।
প্রেম জীবনের একটি সুন্দরতম অধ্যায়। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে কেউ যদি জীবনের কেন্দ্রস্থলে স্থান পেয়ে যায়, তবে তা ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। ইমোফিলিয়া কোনো রোগ নয়, বরং একটি আচরণগত প্রবণতা। সচেতনতা, আত্মসম্মান এবং সময় নিয়ে পরিচয়, এই তিনটি জিনিসই এই প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যদি এই সমস্যা থেকে বের হওয়া অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে তাহলে মানসিক থেরাপি নেওয়া যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: ভেরিওয়েল মাইন্ড

অনুভূতি যত জটিল, প্রেম তার চেয়েও বেশি জটিল। তবে এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা খুব সহজেই কারো প্রতি আবেগে ভেসে যান, খুব দ্রুত প্রেমে পড়েন। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ইমোফিলিয়া (Emophilia)। প্রথম পরিচয়, দু’একটা সুন্দর মুহূর্ত বা সামান্য যত্ন দেখলেই মনে হয়, ‘এই তো সেই মানুষ!’
শুনতে রোমান্টিক লাগলেও, বাস্তবে ইমোফিলিয়ার রয়েছে বেশ কিছু কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক দিক।
ভুল মানুষকে বেছে নেওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়
যারা তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়ে যান, তারা সাধারণত অন্যকে যাচাই করার সময় নেন না। মানুষকে কাছে টেনে নেওয়ার আগে যে মানসিক পরিপক্বতা, মূল্যবোধ, আচরণ, এসব খুঁটিনাটি দেখা প্রয়োজন, তা তারা এড়িয়ে যান। ফলে অনেক সময় টক্সিক, ম্যানিপুলেটিভ বা আবেগহীন মানুষের সঙ্গেও সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। এতে শুধু বারবারই হৃদয়ই ভাঙে না, কমতে থাকে ব্যক্তিগত আত্মবিশ্বাসও।
আবেগের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া
ইমোফিলিয়াতে ভোগা মানুষ প্রায়ই প্রেমকে একটা ‘চাওয়া-পাওয়া’র অনুভূতি দিয়ে দেখেন। তারা মনে করেন, কারো ভালোবাসা পেলেই জীবন পূর্ণ হবে। এই মানসিকতা থেকে এক ধরনের ‘ইমোশনাল ডিপেনডেন্সি’ বা মানসিক নির্ভরতা তৈরি হয়। সেখানে নিজের সুখ, আত্মসম্মান, সিদ্ধান্ত, সবকিছু অন্য কারো উপস্থিতির উপর নির্ভর হয়ে পড়ে। এটি দীর্ঘমেয়াদে মানসিক দৃঢ়তাকে দুর্বল করে এবং নিজের ওপর বিশ্বাস কমিয়ে দেয়।

দ্রুত গভীরতায় যাওয়ার কারণে সম্পর্কের চাপ তৈরি হয়
যখন কেউ খুব তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়ে, তখন তিনি একই গতিতে গভীর সম্পর্ক চাইতেও শুরু করেন। কম সময়ের পরিচয়েই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, অতিরিক্ত নিষ্ক্রিয়তা, সারাক্ষণ যোগাযোগের চাহিদা, এসব সম্পর্কের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ ফেলে। অন্যপক্ষ হয়তো সেই রকম প্রস্তুত নয়, ফলে সম্পর্কের মধ্যে অস্বস্তি, ভুল বোঝাবুঝি এবং দূরত্ব তৈরি হতে পারে।
নিজের সীমা ও সীমানা হারিয়ে ফেলা
দ্রুত প্রেমে পড়া মানুষ অনেক সময় নিজের সীমারেখা বজায় রাখতে পারেন না। কারো মন জয়ের জন্য তারা নিজের সময়, অভ্যাস, পছন্দ এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজনগুলোকে অবহেলা করতে থাকেন। এই অতিরিক্ত ‘গিভিং’ আচরণ মানসিকভাবে ক্লান্ত করে এবং পরে আফসোসের জন্ম দেয়। কারণ সম্পর্ক টিকে না থাকলে মনে হয় সবকিছু বৃথা গেল।
প্রেমের সঙ্গে বাস্তবতাকে গুলিয়ে ফেলা
ইমোফিলিয়াতে আক্রান্ত মানুষ বেশি আবেগী হওয়ায় বাস্তবতাকে অনেক সময় রোমান্টিক কল্পনায় ঢেকে ফেলেন। মানুষকে যে যেমন, ঠিক তেমনভাবে দেখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। প্রাথমিক আকর্ষণ বা ‘ইনফ্যাচুয়েশন’-কে তারা সত্যিকারের প্রেম মনে করে ফেলেন। ফলে যখন বাস্তবতা সামনে আসে,অন্য মানুষের ত্রুটি, মতবিরোধ, অভ্যাস তারা সহজে মানিয়ে নিতে পারেন না।

বারবার ব্যর্থ সম্পর্ক মানসিক স্বাস্থ্যে চাপ ফেলে
দ্রুত প্রেমে পড়ার একটি বড় ক্ষতি হলো-এমন মানুষের সম্পর্ক টেকানোর হার তুলনামূলকভাবে কম। বারবার সম্পর্ক ভেঙে গেলে মনে হতে পারে, ‘আমার মধ্যে নিশ্চয়ই সমস্যা আছে।’ এই ভাবনা পরবর্তীতে আত্মবিশ্বাস কমানো, উদ্বেগ বাড়ানো, এমনকি সম্পর্ক ভীতি তৈরি করতে পারে। অনেকেই আবার ব্যথা ভুলতে দ্রুত নতুন প্রেমের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ফলে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি হয়।
জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব
প্রেমই যদি সব চিন্তার কেন্দ্র হয়ে যায়, তাহলে পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, বন্ধুত্ব, পরিবার, সব কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অতিরিক্ত আবেগের ওঠানামায় কাজে মনোযোগ কমে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দুর্বল হয় এবং জীবনযাপনে অস্থিরতা তৈরি হয়।
প্রেম জীবনের একটি সুন্দরতম অধ্যায়। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে কেউ যদি জীবনের কেন্দ্রস্থলে স্থান পেয়ে যায়, তবে তা ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। ইমোফিলিয়া কোনো রোগ নয়, বরং একটি আচরণগত প্রবণতা। সচেতনতা, আত্মসম্মান এবং সময় নিয়ে পরিচয়, এই তিনটি জিনিসই এই প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যদি এই সমস্যা থেকে বের হওয়া অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে তাহলে মানসিক থেরাপি নেওয়া যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: ভেরিওয়েল মাইন্ড