‘নতুন বন্দোবস্ত’ ঘিরেই হলো সংস্কারের জোট

চরচা প্রতিবেদক
চরচা প্রতিবেদক
‘নতুন বন্দোবস্ত’ ঘিরেই হলো সংস্কারের জোট
জোট ঘোষণার পর তিন দলের নেতারা। ছবি: ফেসবুক

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন এবং পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’-এর ঘোষণা দিল তিন দল–জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গঠন ও তার পরবর্তী সময়ে বারবার আলোচনায় উঠে আসা ‘নতুন বন্দোবস্তের’ রাজনীতিকেই জোটের মূলভিত্তি বলছেন নেতারা।

বড় দুই দলের রাজনীতির সমীকরণের বাইরে বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী দল তিনটি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে যুক্ত করার চেষ্টা চালিয়েছিল শুরুতে। দীর্ঘ প্রচেষ্টা শেষে আজ রোববার সংবাদ সম্মেলনে আপাতত তিন দল মিলেই পথ চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। জোট ঘোষণার এ সংবাদ সম্মেলনে তিন দলের শীর্ষ নেতাই ‘নতুন বন্দোবস্ত’কে কেন্দ্র করে বক্তব্য দিয়েছেন।

‘পুরাতনপন্থী’ বনাম নতুনের রাজনীতি

গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই জোটকে ‘পুরাতনপন্থীদের’ বিপরীতে সংস্কারপন্থীদের জোট হিসেবে অভিহিত করে বলছেন, “গণঅভ্যুত্থানের অঙ্গীকার রক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণে আগ্রহীদের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী ঐক্যের আকাঙ্ক্ষা থেকেই নতুন এই জোট। আমরা বাংলাদেশকে পুরাতন রাজনীতির পথে আর ফেরত যেতে দেব না।”

জোট গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর ভাষায়, “গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। নতুন ভাষায় প্রতিবাদ, নতুন ভাষার সংগ্রাম, নতুন ভাষার কর্মসূচি–সেই নতুনদের নিয়েই আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে চাই।”

‘পুরাতনপন্থী’ দলগুলোর সাথে নানা সমঝোতা করে সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন নেতারা। মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “নতুনরা নতুনভাবে নতুন ভাষায় নতুন প্রতিবাদে এই ফ্যাসিবাদকে চ্যালেঞ্জ করেছিল বলেই নতুন একটা বাংলাদেশের সূর্যোদয় আমরা দেখতে পেয়েছি।”

জোটের অন্যতম নেতা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম বলেছেন, “নতুন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে…একটা কর্মসূচি নিয়ে আমরা তিন সংগঠন প্রাথমিকভাবে যাত্রা করছি।”

সংস্কারের রাজনীতি নিয়ে যা জানা গেল

সংস্কারের রাজনীতি নিয়ে জোট ঘোষণার অনুষ্ঠানে বিশদ ধারণা দিয়েছেন নেতারা। অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কারকে প্রাধান্য দিয়ে দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বলে ভাষ্য জোট নেতাদের।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের জাতীয় মর্যাদা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির প্রশ্নকে সামনে রেখে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। দেশ বদলের সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে, এই নির্বাচনটাকে আমরা রাজনৈতিক নির্বাচনে পরিণত করতে চাই। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির যাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই।”

এ সংস্কারকে ১৯৭১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত জন-আকাঙ্ক্ষার বাস্তাবায়নের পথে যাত্রা বলে অভিহিত করেছেন হাসনাম কাইয়ুম। তিনি বলেন, “৭১-এর যে আকাঙ্ক্ষা ২৪ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয় নাই, ২৬-এর পরে সে আকাঙ্ক্ষাকে আমরা বাস্তবায়ন করব।’’

এক বাক্সে ভোট আনাই লক্ষ্য

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে এক সময়ের জোটসঙ্গী বিএনপি ও জামায়াতের মুখোমুখি অবস্থানকে ত্রিমুখি করার বার্তা ছিল আগেই। নতুন জোট গঠন করে সংস্কার সমর্থকদের সব ভোট এক বাক্সে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নেতারা। দুই দলের দিকে ইঙ্গিত করে নেতারা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে গায়ের জোরে দখলদারত্ব অথবা ধর্মের নামে মানুষকে প্রতারণা করে ভোট আদায়কারী–উভয়ই পরাজিত হবে।

নতুন জোটে বাংলাদেশকে পরিবর্তন করতে চাওয়া এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দেশপ্রেমিক নাগরিক ও সামাজিক নেতৃত্বকে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এটা প্রত্যাশা রাখছি যে, আমরা একটা প্রতীকেই, একটা বাক্সে আমরা আমাদের যে সমর্থনগুলো রয়েছে সেটাকে আনতে পারব।”

মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলছেন, নির্বাচনে আমরা সংস্কারের পক্ষে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করব। নির্বাচনে এই জোটের সফলতা নিয়ে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘‘আন্দোলনের বিজয়ী পক্ষই বাংলাদেশে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। এবারের আন্দোলন টিকবে কি টিকবে না, তা আগামী নির্বাচনে নির্ধারিত হবে।”

সম্পর্কিত