চরচা ডেস্ক

২০২৪ সালে যখন ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ বাংলাদেশ ‘কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার’ বা বছরের সেরা দেশ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল, তখন তার পেছনে ছিল এক অভাবনীয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন গণতান্ত্রিক যাত্রার সূচনা। বাংলাদেশের সেই অর্জন বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছিল যে, জনআকাঙ্ক্ষার কাছে হিমালয়সম দুর্নীতিগ্রস্ত ক্ষমতাও নতি স্বীকার করে। ঠিক এক বছর পর, ২০২৫ সালে এসে দ্য ইকোনমিস্ট তাদের বার্ষিক শিরোপাটি এমন একটি দেশের হাতে তুলে দিল যার সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে। এবারের দেশ মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া।
ব্রিটিশ সাময়িকীটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্য ইকোনমিস্ট কখনোই সবচেয়ে শক্তিশালী বা সবচেয়ে সুখী দেশকে এই খেতাব দেয় না। তারা খোঁজে সেই দেশটিকে, যারা গত ১২ মাসে নিজেদের অবস্থার সবচেয়ে আমূল ও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। ২০২৫ সালে এই প্রতিযোগিতায় আর্জেন্টিনার মতো শক্তিশালী প্রতিযোগী থাকা সত্ত্বেও সিরিয়া কেন সেরা হলো, তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
প্রেক্ষাপটে ২০২৫ সালের উত্তাল বিশ্ব
দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ২০২৫ সালটি বৈশ্বিক রাজনীতির জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং গাজা ও সুদানের সংঘাতের মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও বেশ কিছু দেশ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে।
কিন্তু এই সব দেশই ছিল ‘স্থিতিশীলতা বজায় রাখা’র উদাহরণ। সিরিয়া ও আর্জেন্টিনা যা করেছে, তা ছিল ‘আমূল রূপান্তর’।
অর্থনীতির 'চেইনসো' বনাম রাজনীতির পুনর্জন্ম
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই তার ‘চেইনসো’ নীতি দিয়ে দেশটির মৃতপ্রায় অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরিয়েছেন। মুদ্রাস্ফীতি ২১১ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ২১ শতাংশ পয়েন্ট উন্নতি করা কোনো সাধারণ অর্জন নয়। তবুও সিরিয়া কেন আর্জেন্টিনাকে ছাড়িয়ে গেল? এর উত্তর লুকিয়ে আছে ‘উন্নতির মাত্রা’র মধ্যে। আর্জেন্টিনার পরিবর্তন ছিল অর্থনৈতিক নীতির সংস্কার, কিন্তু সিরিয়ার পরিবর্তনকে ‘একটি জাতির পুনর্জন্ম’ বলে অভিহিত করে ইকোনমিস্ট।
সিরিয়ার রাজনৈতিক উত্থান
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ, ধ্বংসলীলা এবং স্বৈরশাসনে পিষ্ট একটি দেশের এমন নাটকীয় প্রত্যাবর্তন আধুনিক ভূ-রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতন সিরিয়ার জন্য ছিল এক নতুন ভোরের সূচনা। ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু এবং ৬০ লাখ মানুষের দেশত্যাগের পর সিরিয়া ছিল একটি ধ্বংসস্তূপ। আসাদ বাহিনীর রাসায়নিক অস্ত্রের বিভীষিকা থেকে মুক্তি পাওয়া সিরিয়ার জন্য উন্নতির প্রথম এবং প্রধান ধাপ ছিল।
বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারা যখন ক্ষমতা দখল করেন, তখন বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছিল যে, সিরিয়া হয়তো আরেকটি ‘তালেবানি’ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। কিন্তু ২০২৫ সালে শারা প্রশাসন বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে। তারা কোনো কঠোর ধর্মীয় নিয়ম চাপিয়ে দেয়নি। সিরিয়ার রাস্তায় এখন নারীরা স্বাধীনভাবে চলাচল করছেন, বিনোদন এমনকি মদ্যপানও সেখানে নিষিদ্ধ করা হয়নি। এই প্রগতিশীল ও উদার মানসিকতা সিরিয়াকে এক আধুনিক রূপ দিয়েছে।
একটি দেশ কতটা নিরাপদ, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো সেই দেশের মানুষের ফিরে আসা। ২০২৫ সালে প্রায় ৩০ লাখ সিরীয় নাগরিক তাদের বিদেশের নিরাপদ জীবন ছেড়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত কিন্তু স্বাধীন মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছে। এটাই সিরিয়াকে ‘কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার’ হওয়ার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে দিয়েছে।
আসাদ আমলের বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে সিরিয়া এখন আমেরিকা এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার ফলে দেশটির অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। রাশিয়ার কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে এসে বৈশ্বিক মূলধারায় সিরিয়ার এই অন্তর্ভুক্তি ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চমক।
ভবিষ্যৎ কি নিষ্কণ্টক?
অবশ্যই সিরিয়া এখনো ত্রুটিমুক্ত নয়। ২০২৫ সালে দেশটিতে মিলিশিয়া বাহিনী দুটি বড় ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালায় যাতে প্রায় ২,০০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। শারার শাসনে এখনো পারিবারিক বা গোষ্ঠীগত প্রভাব স্পষ্ট। তবুও, ২০২৪ সালের সেই অন্ধকার ও মৃত্যুপুরীর তুলনায় আজকের সিরিয়া অনেক বেশি বাসযোগ্য, মানবিক এবং আশাবাদী।

২০২৪ সালে যখন ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ বাংলাদেশ ‘কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার’ বা বছরের সেরা দেশ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল, তখন তার পেছনে ছিল এক অভাবনীয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন গণতান্ত্রিক যাত্রার সূচনা। বাংলাদেশের সেই অর্জন বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছিল যে, জনআকাঙ্ক্ষার কাছে হিমালয়সম দুর্নীতিগ্রস্ত ক্ষমতাও নতি স্বীকার করে। ঠিক এক বছর পর, ২০২৫ সালে এসে দ্য ইকোনমিস্ট তাদের বার্ষিক শিরোপাটি এমন একটি দেশের হাতে তুলে দিল যার সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে। এবারের দেশ মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া।
ব্রিটিশ সাময়িকীটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্য ইকোনমিস্ট কখনোই সবচেয়ে শক্তিশালী বা সবচেয়ে সুখী দেশকে এই খেতাব দেয় না। তারা খোঁজে সেই দেশটিকে, যারা গত ১২ মাসে নিজেদের অবস্থার সবচেয়ে আমূল ও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। ২০২৫ সালে এই প্রতিযোগিতায় আর্জেন্টিনার মতো শক্তিশালী প্রতিযোগী থাকা সত্ত্বেও সিরিয়া কেন সেরা হলো, তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
প্রেক্ষাপটে ২০২৫ সালের উত্তাল বিশ্ব
দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ২০২৫ সালটি বৈশ্বিক রাজনীতির জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং গাজা ও সুদানের সংঘাতের মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও বেশ কিছু দেশ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে।
কিন্তু এই সব দেশই ছিল ‘স্থিতিশীলতা বজায় রাখা’র উদাহরণ। সিরিয়া ও আর্জেন্টিনা যা করেছে, তা ছিল ‘আমূল রূপান্তর’।
অর্থনীতির 'চেইনসো' বনাম রাজনীতির পুনর্জন্ম
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই তার ‘চেইনসো’ নীতি দিয়ে দেশটির মৃতপ্রায় অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরিয়েছেন। মুদ্রাস্ফীতি ২১১ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ২১ শতাংশ পয়েন্ট উন্নতি করা কোনো সাধারণ অর্জন নয়। তবুও সিরিয়া কেন আর্জেন্টিনাকে ছাড়িয়ে গেল? এর উত্তর লুকিয়ে আছে ‘উন্নতির মাত্রা’র মধ্যে। আর্জেন্টিনার পরিবর্তন ছিল অর্থনৈতিক নীতির সংস্কার, কিন্তু সিরিয়ার পরিবর্তনকে ‘একটি জাতির পুনর্জন্ম’ বলে অভিহিত করে ইকোনমিস্ট।
সিরিয়ার রাজনৈতিক উত্থান
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ, ধ্বংসলীলা এবং স্বৈরশাসনে পিষ্ট একটি দেশের এমন নাটকীয় প্রত্যাবর্তন আধুনিক ভূ-রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতন সিরিয়ার জন্য ছিল এক নতুন ভোরের সূচনা। ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু এবং ৬০ লাখ মানুষের দেশত্যাগের পর সিরিয়া ছিল একটি ধ্বংসস্তূপ। আসাদ বাহিনীর রাসায়নিক অস্ত্রের বিভীষিকা থেকে মুক্তি পাওয়া সিরিয়ার জন্য উন্নতির প্রথম এবং প্রধান ধাপ ছিল।
বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারা যখন ক্ষমতা দখল করেন, তখন বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছিল যে, সিরিয়া হয়তো আরেকটি ‘তালেবানি’ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। কিন্তু ২০২৫ সালে শারা প্রশাসন বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে। তারা কোনো কঠোর ধর্মীয় নিয়ম চাপিয়ে দেয়নি। সিরিয়ার রাস্তায় এখন নারীরা স্বাধীনভাবে চলাচল করছেন, বিনোদন এমনকি মদ্যপানও সেখানে নিষিদ্ধ করা হয়নি। এই প্রগতিশীল ও উদার মানসিকতা সিরিয়াকে এক আধুনিক রূপ দিয়েছে।
একটি দেশ কতটা নিরাপদ, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো সেই দেশের মানুষের ফিরে আসা। ২০২৫ সালে প্রায় ৩০ লাখ সিরীয় নাগরিক তাদের বিদেশের নিরাপদ জীবন ছেড়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত কিন্তু স্বাধীন মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছে। এটাই সিরিয়াকে ‘কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার’ হওয়ার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে দিয়েছে।
আসাদ আমলের বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে সিরিয়া এখন আমেরিকা এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার ফলে দেশটির অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। রাশিয়ার কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে এসে বৈশ্বিক মূলধারায় সিরিয়ার এই অন্তর্ভুক্তি ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চমক।
ভবিষ্যৎ কি নিষ্কণ্টক?
অবশ্যই সিরিয়া এখনো ত্রুটিমুক্ত নয়। ২০২৫ সালে দেশটিতে মিলিশিয়া বাহিনী দুটি বড় ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালায় যাতে প্রায় ২,০০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। শারার শাসনে এখনো পারিবারিক বা গোষ্ঠীগত প্রভাব স্পষ্ট। তবুও, ২০২৪ সালের সেই অন্ধকার ও মৃত্যুপুরীর তুলনায় আজকের সিরিয়া অনেক বেশি বাসযোগ্য, মানবিক এবং আশাবাদী।

চীন বর্তমানে তার সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে বিতর্কিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর একটি নির্মাণ করছে। আর সেটি হলো ইয়ারলুং জাংবো নদের ওপর একটি বিশাল জলবিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এই প্রকল্পের প্রভাব ভারত ও বাংলাদেশের ওপর সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মানুষের জীবন ও পরিবেশের