ড্রোন মোকাবেলায় নতুন যুগের সূচনা

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
ড্রোন মোকাবেলায় নতুন যুগের সূচনা
ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির ড্রাগন ফায়ার হেল-এর প্রতিটির খরচ হবে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি। এআই দিয়ে তৈরি প্রতীকি ছবি

আমেরিকান প্রতিরক্ষা বিভাগের অর্থায়নে ১৯৬০ সালে একটি ল্যাব প্রথম লেজার অস্ত্রের ব্যবহার দেখিয়েছিল। এরপর কয়েক দশক ধরে প্রযুক্তির উন্নয়নের চেষ্টা করা হলেও সফল হয়নি, তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে। “দ্য ইকনোমিস্ট”-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ‘হেল’ নামে লেজারের কথা।

গত বছর আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের বাহিনীর দিকে আসা ড্রোন ভূপাতিত করতে একটি উচ্চশক্তি সম্পন্ন লেজার ব্যবহার করেছে। ইসরায়েল ও রাশিয়া ড্রোন হামলা রুখতে একই কাজ করেছে।

লেজার অস্ত্রের ক্ষমতা এখনও পর্যন্ত কল্পবিজ্ঞানের 'হিট রে'-এর মতো নয়। একটি যুদ্ধজাহাজ বা ট্যাঙ্ক ধ্বংস করার জন্য কয়েক মেগাওয়াট শক্তির প্রয়োজন। তবে এখনকার প্রচলিত লেজার অস্ত্র কিলোওয়াট পর্যায়ের শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম।

একসময় মনে করা হয়েছিল, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো লেজার অস্ত্রের সহজ লক্ষ্য হতে পারে। এর কারণ বাইরের পাতলা কাঠামো এবং ভেতরের জ্বালানি ও বিস্ফোরক। শব্দের চেয়ে দ্রুতগামী ক্ষেপণাস্ত্রে আলোর গতিতে ছুটে আসা লেজার রশ্মি সহজে আঘাতও হানতে পারবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।

তবে ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্যবস্তু করা কঠিন ছিল। ২০১০ সালের পরে ছোট ড্রোন যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে বাজারে আসতে শুরু করে। তখন লেজার অস্ত্র উপযুক্ত একটি লক্ষ্য খুঁজে পেল।

ড্রোনগুলোকে প্রচলিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েও ভূপাতিত করা যায়। তবে ক্ষেপণাস্ত্রের দাম অনেক বেশি এবং সরবরাহও সীমিত। অন্যদিকে, লেজার অস্ত্রের প্রতি রশ্মির খরচ মাত্র কয়েক ডলার। বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন, ড্রোন ধ্বংস করার জন্য লেজারই হলো আদর্শ অস্ত্র।

আমেরিকা ২০১৪ সালে পারস্য উপসাগরে ছোট নৌকা ও নানা প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলার জন্য একটি লেজার সিস্টেম মোতায়েন করেছিল। তবে সেই লেজার সিস্টেমটি ব্যবহার করা হয়নি। গত বছর মধ্যপ্রাচ্যের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীর ছোড়া ড্রোন ভূপাতিত করার জন্য ২০-কিলোওয়াটের ‘লোকাস্ট’ নামের একটি লেজার সিস্টেম প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়।

চলতি বছর ইসরায়েল–লেবানন যুদ্ধে হিজবুল্লাহর ছোড়া ড্রোন ধ্বংস করার ভিডিও এক পর্যায়ে প্রকাশিত হয়েছিল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা 'ডজনখানেক' ড্রোন ভূপাতিত করেছিল সেই সময়। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ইসরায়েল ১০ কিলোওয়াটের ‘কেরেন ওর’ সিস্টেম ব্যবহার করেছে। একে প্রচলিত আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার পরিপূরক হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে।

অন্যদিকে রাশিয়াও ইউক্রেনের ড্রোনকে লেজার দিয়ে আঘাত করার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে কিছুদিন আগে। আর ইউক্রেন ৫০ কিলোওয়াটের ‘ট্রাইডেন্ট’ নামের লেজার দিয়ে ড্রোন ধ্বংস করার পরীক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের ভিডিও প্রকাশ করেছে।

লেজার অস্ত্র জনপ্রিয় হচ্ছে ক্রমশ। তবে এর কিছু দুর্বলতাও আছে। যদিও এই অস্ত্রের ব্যবহার সাশ্রয়ী, তবে লেজার অস্ত্রের একটি পরিপূর্ণ ইউনিট কার্যকর করা বেশ ব্যয়বহুল। উদাহরণ হিসেবে আসতে পারে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির ‘ড্রাগন ফায়ার হেল’, এর প্রতিটির জন্য খরচ ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি।

মূলত ব্যয়বহুল হওয়ার কারণেই বর্তমানে লেজার অস্ত্র ব্যবহারের পরিসর তুলনামূলকভাবে কম। আবার প্রাকৃতিক কারণেও এর কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া প্রথাগত পদ্ধতির অস্ত্রও এর একটি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। কারণ প্রথাগত অস্ত্র ব্যবস্থা এখনো অপেক্ষাকৃত সস্তা এবং একাধিক লক্ষ্যবস্তুকে একসাথে মোকাবিলাও করতে পারে।

সুতরাং, বলাই যায় যে, সাই–ফাই মুভির চোখ ধাঁধানো লেজার অস্ত্রের ধুন্ধুমার কাজ–কারবার খুব শিগগিরই হয়তো বাস্তবে রূপ পাবে না। তবে ধীরে ধীরে পুরো দুনিয়া কিন্তু সেই পথেই এগোচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে যুদ্ধের ময়দানে লেজার অস্ত্রের তুমুল ব্যবহার হলে, অবাক হওয়ার নেই কিছু!

সম্পর্কিত