ট্রাম্প জমানা: প্রতিরক্ষা বিভাগ এখন থেকে যুদ্ধ বিভাগ, কেন এই বদল?

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
ট্রাম্প জমানা: প্রতিরক্ষা বিভাগ এখন থেকে যুদ্ধ বিভাগ, কেন এই বদল?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

মহাশক্তিধর মার্কিন সেনাবাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ‘কখনও জয়ের জন্য লড়াই করেনি’–বললেন ট্রাম্প। এই শিরোনামে সংবাদ করেছে আমেরিকার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিরক্ষা বিভাগকে “যুদ্ধ বিভাগ” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই নামটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে এর ফলে দেশটি “কখনও জয়ের জন্য লড়াই করেনি”। ফলে নাম বদলের সাথে সাথে এই জয়ের জন্য লড়াই না করার দর্শনও বদলে যাবে।

হঠাৎ কী এমন হলো যে ৭৬ বছর পর বিভাগের নাম বদল করার দরকার পড়ল? তাহলে কী আমেরিকা বড় কোনো যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে? আর সেই যুদ্ধে জয়ই হবে একমাত্র লক্ষ্য। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন, “আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জিতেছি। আমরা আগে সবকিছু জিতেছি। এবং যেমনটি আমি বলেছি, আমরা এর মধ্যে সবকিছু জিতেছি। আমরা খুব শক্তিশালী ছিলাম, কিন্তু আমরা কখনও জয়ের জন্য লড়াই করিনি। আমরা কেবল জয়ের জন্য লড়াই করিনি।” মার্কিন প্রেসিডেন্টের আকস্মিক এই বোধদয়ের পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে। এর মধ্যে চীনের সামরিক শক্তি প্রদর্শন। আমেরিকার বাইরে গিয়ে বিকল্প একটি বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ইউক্রেন নিয়ে পুতিনের কথা না শোনা। মার্কিন ডলারের বাজার হারানোর হুমকি। আরও কত কিছু আছে তার ঠিক নেই।

ট্রাম্পের যুক্তি, সামরিক বাহিনীর সকল শাখাকে একত্রিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যান যে নামটি পরিবর্তন করেছিলেন, তা পরিবর্তন করা হয়েছে। কারণ দেশটি “জেগে ওঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে”। তিনি বলছেন, ‘আমি মনে করি যুদ্ধ বিভাগ একটি সংকেত পাঠাচ্ছে। এটি অনেক বেশি উপযুক্ত নাম, বিশেষ করে বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে।’ তাঁর দাবি, ‘আমরা প্রতিটি যুদ্ধেই জিততে পারতাম, কিন্তু আমরা সত্যিই রাজনৈতিকভাবে সঠিক, অথবা শুধু জেগে থেকে চিরকাল লড়াই করে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছি।’

আমেরিকার সংবিধান অনুমোদিত হওয়ার মাত্র কয়েক মাস পরে, ১৭৮৯ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের অধীনে কংগ্রেস কর্তৃক যুদ্ধ বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রসিডেন্ট ট্রুম্যান ১৯৪৭ সালে স্বাক্ষরিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অংশ হিসেবে সংস্থার নাম পরিবর্তন করে আইনে পরিণত করেন, যা নৌবাহিনী এবং যুদ্ধ বিভাগ এবং একটি নতুন স্বাধীন বিমান বাহিনীকে একটি একক সংস্থায় একীভূত করে। কংগ্রেস ১৯৪৯ সালে প্রতিরক্ষা বিভাগ নামটি প্রতিষ্ঠা করে। ট্রাম্পের কথায় পরিস্কার, নাম বদলের কারণেই আমেরিকা দ্বিতীয় বিধ্বযুদ্ধের পর কোনো লড়াইয়ে জেতেনি। অবশ্য ট্রাম্প যে একেবারে ভুল বলেছেন এমনটা না। কোরিয়া যুদ্ধ, ভিয়েতনাম, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া–কোথাও আমেরিকা জিতেছে বলে দাবি করতে পারবে না। এমনকি এখন ইউক্রেনে ঝেলেনস্কিকে সামনে রেখে আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো যে লড়াই রাশিয়ার বিরুদ্ধে চালাচ্ছে, তাতেও জয়ের সম্ভাবনা সুদূর পরাহত।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটরা অবশ্য এই পরিবর্তনকে ভালোভাবে নেয়নি। তারা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের আদেশের সমালোচনা করেছে। সিনেটের মার্কিন সশস্ত্র পরিষেবা কমিটির শীর্ষপর্যায়ের সদস্য ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর জ্যাক রিডের মন্তব্য, ‘প্রেসিডেন্ট জনসংযোগে ভালো, কিন্তু আসলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংবিধানের ভিত্তিতে পেন্টাগন তৈরি করা। এটা রাজনীতি বা দলীয় ধারণার ওপর নয়, বরং আমাদের প্রতিপক্ষের ওপর ননজর রাখতেই এটা করা হয়েছিল।’

এই আদেশের ফলে প্রতিরক্ষা সচিবের পদবি বদলে হয়ে গেছে “যুদ্ধ সচিব”। নাম পরিবর্তনের একজন উৎসাহী সমর্থক, প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ ইতিমধ্যেই বিভাগের নামফলক পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। গত মাসে হেগসেথ একটি সম্মেলন কক্ষের বাইরে একটি সোনার প্রলেপযুক্ত সাইনবোর্ড স্থাপন করেছিলেন, যাতে “W.A.R. রুম” লেখা ছিল, যা স্পষ্টতই তিনজন অনির্দিষ্ট প্রেসিডেন্টের সম্মানে লেখা ছিল।

আদেশ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে ছিলেন হেগসেথ। তিনি বলেন, এই নামটি সংস্থাটির “যোদ্ধা নীতি” পুনরুদ্ধার করার বিষয়ে। তিনি বলছেন, প্রেসিডেন্টের সাথে তিন একমত যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে নামটি বাদ দেওয়ার পর থেকে “আমরা কোনও বড় যুদ্ধে জয়ী হইনি”।

কোরিয়ান যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে হেগসেথ বলেন, তিনি যোদ্ধাদের অবমাননা করার ইচ্ছা পোষণ করেননি। এই নাম পরিবর্তন কেবল নাম পরিবর্তনের বিষয়ে নয়; এটি দর্শন পুনরুদ্ধারের বিষয়। শব্দ খুবই গুরুত্বপূর্ণ–মনে করেন হেগসেথ। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার যুদ্ধমন্ত্রী মনে করেন, নামের কারণে সব ধরনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আমেরিকা জিততে পারেননি।

এখন প্রশ্নটা হচ্ছে,“শান্তিপ্রিয়” ও “শান্তিতে নোবেল প্রত্যাশী” প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ কেন যুদ্ধবাজ হয়ে ওঠার সিদ্ধান্ত নিলেন?

সম্পর্কিত