তাসীন মল্লিক

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন সমঝোতা করে ভোটের মাঠে নামার খবর চাউর হওয়ার পর জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) ভাঙনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। জামায়াতের পক্ষে-বিপক্ষে স্পষ্ট দুটি ভাগ দেখা দিয়েছে দলটির নেতাদের মধ্যে।
তবে এনসিপির শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি। বক্তব্য জানতে ফোন এবং এসএমএস পাঠালেও সাড়া দিচ্ছেন না তারা। জামায়াতও এখনো খোলাসা করেনি কিছু।
এরই মধ্যে আজ শনিবার এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। ফেসবুকে তিনি পদত্যাগের কথা না লিখে বলেছেন, ঢাকা-৯ আসন থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়বেন তিনি।
জারার পদত্যাগের পরপরই এনসিপির ৩০ নেতা আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে একটি চিঠি দিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। ওই চিঠিতে তারা জামায়াতের সঙ্গে জোট না করতে দলের শীর্ষ নেতার প্রতি আহ্বান জানান।
চিঠিতে নেতারা বলেন, একাধিকবার ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণার পর এখন অল্প কিছু আসনের জন্য কোনো জোটে যাওয়া ‘জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল’।
এদিকে ৩০টি আসনে দল দুটির মধ্যে সমঝোতার খবর এসেছে। একই সঙ্গে জামায়াত এনসিপিকে আসনপ্রতি দেড় কোটি টাকা ভোটের ব্যয় দেবে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
জামায়াত-এনসিপি নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে গুঞ্জনের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আব্দুল কাদেরের একটি ফেসবুক পোস্ট আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করে।
গত বৃহস্পতিবার আব্দুল কাদের এনসিপির সম্ভাব্য পাঁচটি পদক্ষেপের বিষয় জানান। তিনি উল্লেখ করেন, “জামায়াতের থেকে এনসিপি ৫০ আসন চেয়েছিল, দর-কষাকষির সর্বশেষ পর্যায়ে সেটা ৩০ আসনে গিয়ে চূড়ান্ত হয়েছে। জোটের শর্ত অনুযায়ী এনসিপি বাকি ২৭০ আসনে কোনো প্রার্থী দিতে পারবে না, সেগুলোতে জামায়াত সহযোগিতা করবে এনসিপি। জামায়াতের পক্ষ থেকে জোটসঙ্গী হিসেবে আসন প্রতি এনসিপিকে নির্বাচনী খরচ দেওয়া হবে দেড় কোটি টাকা।”
কাদের আরও লেখেন, “তারুণ্যের রাজনীতির কবর রচিত হতে যাচ্ছে। এনসিপি অবশেষে জামায়াতের সঙ্গেই সরাসরি জোট বাঁধতেছে। সারা দেশে মানুষের, নেতা-কর্মীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে গুটিকয়েক নেতার স্বার্থ হাসিল করতেই এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।”

এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার বিপক্ষে থাকারা কি এনসিপি ত্যাগ করবে?
জামায়াত-এনসিপির সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির একজন যুগ্ম সদস্য সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরচাকে বলেন, “এক্সিকিউটিভ কমিটির সভায় জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য তাতে সায় দিয়েছেন। এখন আহ্বায়ক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।”
তবে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে দ্বিমত পোষণকারী আরেক যুগ্ম সদস্য সচিব চরচাকে বলেন, “৫১ জনের এক্সিকিউটিভ কমিটির অনেকেই সেদিন উপস্থিত ছিলেন না। ফলে এটা সামগ্রিক সিদ্ধান্ত নয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই আমি মনে করি।”
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্য সচিব নুসরাত তাবাসসুম, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ও তাজনূভা জাবীনসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেত্রীরা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিরোধিতা করছেন।
এদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরচাকে বলেন, “রাজনৈতিক পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পর এ বিষয়ে নিজের মতামত জানাব।”
এনসিপিতে ভাঙনের শঙ্কা
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ সেপ্টেম্বর গঠন হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি। অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নানা মত-পথের তরুণরা যুক্ত হয় সেখানে। আর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি নাগরিক কমিটিকে তরুণদের রাজনৈতিক দল এনসিপি আত্মপ্রকাশ করে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বড় দুই দল বিএনপি এবং জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এনসিপিতে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দলের শীর্ষ পাঁচ নেতা ও তাদের সমর্থকরা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় আগ্রহী বলে জানা যায়।

অপর দিকে সদ্য পদত্যাগ করা দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তাদের সমর্থকরা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার পক্ষে ছিলেন।
জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টি সামনে আসার পর যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক পদত্যাগ করেন। ডাকসু নির্বাচনের সময় জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির ঘনিষ্ঠতা নিয়ে দুই কেন্দ্রীয় নেতা পদত্যাগ করেছিলেন। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা ঘোষণার পর দলটির কয়েকজন নেতা পদত্যাগ করতে পারেন।
সমঝোতার ঘোষণার আগেই শনিবার দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তাসনিম জারা।
জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হলেও দলটির সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্যে আগ্রহী নন সিপিপির একজন যুগ্ম সদস্য সচিব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি চরচাকে বলেন, “আমি এই মুহূর্তে কোন স্ট্যান্ড নিতে পারছি না। আমার তো আগে আহ্বায়কের মুখে শুনতে হবে।শ
আরেক নারী যুগ্ম সদস্য সচিব চরচাকে বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক পরিষদের ১০ জনের দল সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন। তখন আমি হয়তো আমার অবস্থান জানাতে পারব।”
‘সুপার সেভেন’ ঘিরে ৩০ আসনে সমঝোতা
গত বুধবার রাতে সিপিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক্সিকিউটিভ কমিটির সভায় জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা চরচাকে জানিয়েছেন, ৩০টি আসনে সিপিপিকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি যাবতীয় নির্বাচনী সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে এনসিপি। এই বৈঠকের পরেই আব্দুল কাদের ফেসবুকে পোস্ট দেন।
এনসিপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই বৈঠকে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে এনসিপির শীর্ষ পাঁচ নেতা (নাহিদ ইসলাম, আখতার হোসেন, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, তাসনিম জারা, হাসনাত আব্দুল্লাহ) বক্তব্য রাখেন। আসন নিশ্চিতে জামায়াতের ভোট ও সহায়তার পাশাপাশি নির্বাচন পরবর্তী ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়ন কেন্দ্রিক রাজনীতিতে ঐক্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তারা।

এনসিপির একাধিক নেতা চরচাকে জানিয়েছেন, অন্তত সাতটি আসনে এনসিপির শীর্ষ নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। ঢাকা-৯, ঢাকা-১১, ঢাকা-১৮, রংপুর-৪, কুমিল্লা-৪, নোয়াখালী-৬ এবং কুড়িগ্রাম-২; এ সাতটি আসনে এনসিপির নেতারা তুলনামূলক জনপ্রিয়। আসনগুলোতে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা তুলনামূলক কম জনপ্রিয়।
এসব আসনে জয় নিশ্চিতের জন্য যথেষ্ট সাংগঠনিক শক্তি এনসিপির নেই। জামায়াতের সমর্থন ও সহায়তা এসব আসনে চমক সৃষ্টিতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করছে এনসিপি।
এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, মোট ৩০টি আসনে সমঝোতার আলোচনা চলছে।
জামায়াতের সঙ্গে কত আসনে সমঝোতা হয়েছে জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির চরচাকে বলেন, “আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব সমঝোতার বিষয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করবেন। উল্লেখ করার মত কোন সংখ্যা বা তথ্য তারাই অবহিত করবেন।”
তবে জামায়াতের সূত্রগুলো বলছে, এনসিপিকে তারা ২৮টি আসনে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এনসিপি বেশি চাইলে সেক্ষেত্রে সংখ্যা ৩০ হতে পারে।
এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্ব এরই মধ্যে জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করছেন। এনসিপি অন্তত ৫০টি আসনে ছাড় চেয়েছে। তবে জামায়াতের দিক থেকে এ সংখ্যাকে বেশি মনে করা হচ্ছে। যদিও জামায়াতের দিক থেকে এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা হয়নি। এ নিয়ে আজ-কালের মধ্যে জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আবারও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে ইতিবাচক কথা বলেছেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। সম্প্রতি বিবিসিকে তিনি বলেছেন, “ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গেই অন্য দলগুলোর মতভিন্নতা পরিলক্ষিত হতো। সেখানে সংস্কারের পয়েন্টগুলোতে ন্যাচারালি (স্বাভাবিকভাবেই) এনসিপি, জামায়াত এবং অন্য দলগুলো একমত হয়েছে।”
গত ৭ ডিসেম্বর এনসিপির নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে তিন দলের ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’। এ জোটের বাকি দুই দল হলো-এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জামায়াতের সঙ্গে জোট করার বিষয়ে আপত্তি জানালেও, জোটের অন্য দল এবি পার্টির এতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম না প্রকাশ করার স্বার্থে এই দুই দলের কয়েকজন নেতা চরচাকে জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনে জামায়াত একাই ২০০ আসনে প্রার্থী দিতে চায়।
কাউকে হতাশ করতে চায় না জানিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, জয়ের বিষয় মাথায় রেখেই আসন সমঝোতার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে জামায়াতের আগ্রহের একই তথ্য জোটের অন্য দুই দল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতারা জানিয়েছিলেন। জামায়াতের কাছ থেকে সম্মানজনক আসন বরাদ্দ না পাওয়ারও অনুযোগ করেছিল তারা।
তবে, জামায়াত নেতারা বলছেন, আসনভিত্তিক জরিপের ওপর ভিত্তি করে যেখানে মিত্রদের জয় নিশ্চিত, এমন আসন ছাড়া হবে।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন সমঝোতা করে ভোটের মাঠে নামার খবর চাউর হওয়ার পর জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) ভাঙনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। জামায়াতের পক্ষে-বিপক্ষে স্পষ্ট দুটি ভাগ দেখা দিয়েছে দলটির নেতাদের মধ্যে।
তবে এনসিপির শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি। বক্তব্য জানতে ফোন এবং এসএমএস পাঠালেও সাড়া দিচ্ছেন না তারা। জামায়াতও এখনো খোলাসা করেনি কিছু।
এরই মধ্যে আজ শনিবার এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। ফেসবুকে তিনি পদত্যাগের কথা না লিখে বলেছেন, ঢাকা-৯ আসন থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়বেন তিনি।
জারার পদত্যাগের পরপরই এনসিপির ৩০ নেতা আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে একটি চিঠি দিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। ওই চিঠিতে তারা জামায়াতের সঙ্গে জোট না করতে দলের শীর্ষ নেতার প্রতি আহ্বান জানান।
চিঠিতে নেতারা বলেন, একাধিকবার ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণার পর এখন অল্প কিছু আসনের জন্য কোনো জোটে যাওয়া ‘জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল’।
এদিকে ৩০টি আসনে দল দুটির মধ্যে সমঝোতার খবর এসেছে। একই সঙ্গে জামায়াত এনসিপিকে আসনপ্রতি দেড় কোটি টাকা ভোটের ব্যয় দেবে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
জামায়াত-এনসিপি নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে গুঞ্জনের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আব্দুল কাদেরের একটি ফেসবুক পোস্ট আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করে।
গত বৃহস্পতিবার আব্দুল কাদের এনসিপির সম্ভাব্য পাঁচটি পদক্ষেপের বিষয় জানান। তিনি উল্লেখ করেন, “জামায়াতের থেকে এনসিপি ৫০ আসন চেয়েছিল, দর-কষাকষির সর্বশেষ পর্যায়ে সেটা ৩০ আসনে গিয়ে চূড়ান্ত হয়েছে। জোটের শর্ত অনুযায়ী এনসিপি বাকি ২৭০ আসনে কোনো প্রার্থী দিতে পারবে না, সেগুলোতে জামায়াত সহযোগিতা করবে এনসিপি। জামায়াতের পক্ষ থেকে জোটসঙ্গী হিসেবে আসন প্রতি এনসিপিকে নির্বাচনী খরচ দেওয়া হবে দেড় কোটি টাকা।”
কাদের আরও লেখেন, “তারুণ্যের রাজনীতির কবর রচিত হতে যাচ্ছে। এনসিপি অবশেষে জামায়াতের সঙ্গেই সরাসরি জোট বাঁধতেছে। সারা দেশে মানুষের, নেতা-কর্মীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে গুটিকয়েক নেতার স্বার্থ হাসিল করতেই এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।”

এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার বিপক্ষে থাকারা কি এনসিপি ত্যাগ করবে?
জামায়াত-এনসিপির সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির একজন যুগ্ম সদস্য সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরচাকে বলেন, “এক্সিকিউটিভ কমিটির সভায় জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য তাতে সায় দিয়েছেন। এখন আহ্বায়ক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।”
তবে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে দ্বিমত পোষণকারী আরেক যুগ্ম সদস্য সচিব চরচাকে বলেন, “৫১ জনের এক্সিকিউটিভ কমিটির অনেকেই সেদিন উপস্থিত ছিলেন না। ফলে এটা সামগ্রিক সিদ্ধান্ত নয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই আমি মনে করি।”
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্য সচিব নুসরাত তাবাসসুম, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ও তাজনূভা জাবীনসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেত্রীরা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিরোধিতা করছেন।
এদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরচাকে বলেন, “রাজনৈতিক পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পর এ বিষয়ে নিজের মতামত জানাব।”
এনসিপিতে ভাঙনের শঙ্কা
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ সেপ্টেম্বর গঠন হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি। অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নানা মত-পথের তরুণরা যুক্ত হয় সেখানে। আর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি নাগরিক কমিটিকে তরুণদের রাজনৈতিক দল এনসিপি আত্মপ্রকাশ করে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বড় দুই দল বিএনপি এবং জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এনসিপিতে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দলের শীর্ষ পাঁচ নেতা ও তাদের সমর্থকরা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় আগ্রহী বলে জানা যায়।

অপর দিকে সদ্য পদত্যাগ করা দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তাদের সমর্থকরা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার পক্ষে ছিলেন।
জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টি সামনে আসার পর যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক পদত্যাগ করেন। ডাকসু নির্বাচনের সময় জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির ঘনিষ্ঠতা নিয়ে দুই কেন্দ্রীয় নেতা পদত্যাগ করেছিলেন। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা ঘোষণার পর দলটির কয়েকজন নেতা পদত্যাগ করতে পারেন।
সমঝোতার ঘোষণার আগেই শনিবার দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তাসনিম জারা।
জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হলেও দলটির সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্যে আগ্রহী নন সিপিপির একজন যুগ্ম সদস্য সচিব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি চরচাকে বলেন, “আমি এই মুহূর্তে কোন স্ট্যান্ড নিতে পারছি না। আমার তো আগে আহ্বায়কের মুখে শুনতে হবে।শ
আরেক নারী যুগ্ম সদস্য সচিব চরচাকে বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক পরিষদের ১০ জনের দল সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন। তখন আমি হয়তো আমার অবস্থান জানাতে পারব।”
‘সুপার সেভেন’ ঘিরে ৩০ আসনে সমঝোতা
গত বুধবার রাতে সিপিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক্সিকিউটিভ কমিটির সভায় জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা চরচাকে জানিয়েছেন, ৩০টি আসনে সিপিপিকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি যাবতীয় নির্বাচনী সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে এনসিপি। এই বৈঠকের পরেই আব্দুল কাদের ফেসবুকে পোস্ট দেন।
এনসিপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই বৈঠকে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে এনসিপির শীর্ষ পাঁচ নেতা (নাহিদ ইসলাম, আখতার হোসেন, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, তাসনিম জারা, হাসনাত আব্দুল্লাহ) বক্তব্য রাখেন। আসন নিশ্চিতে জামায়াতের ভোট ও সহায়তার পাশাপাশি নির্বাচন পরবর্তী ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়ন কেন্দ্রিক রাজনীতিতে ঐক্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তারা।

এনসিপির একাধিক নেতা চরচাকে জানিয়েছেন, অন্তত সাতটি আসনে এনসিপির শীর্ষ নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। ঢাকা-৯, ঢাকা-১১, ঢাকা-১৮, রংপুর-৪, কুমিল্লা-৪, নোয়াখালী-৬ এবং কুড়িগ্রাম-২; এ সাতটি আসনে এনসিপির নেতারা তুলনামূলক জনপ্রিয়। আসনগুলোতে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা তুলনামূলক কম জনপ্রিয়।
এসব আসনে জয় নিশ্চিতের জন্য যথেষ্ট সাংগঠনিক শক্তি এনসিপির নেই। জামায়াতের সমর্থন ও সহায়তা এসব আসনে চমক সৃষ্টিতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করছে এনসিপি।
এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, মোট ৩০টি আসনে সমঝোতার আলোচনা চলছে।
জামায়াতের সঙ্গে কত আসনে সমঝোতা হয়েছে জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির চরচাকে বলেন, “আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব সমঝোতার বিষয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করবেন। উল্লেখ করার মত কোন সংখ্যা বা তথ্য তারাই অবহিত করবেন।”
তবে জামায়াতের সূত্রগুলো বলছে, এনসিপিকে তারা ২৮টি আসনে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এনসিপি বেশি চাইলে সেক্ষেত্রে সংখ্যা ৩০ হতে পারে।
এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্ব এরই মধ্যে জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করছেন। এনসিপি অন্তত ৫০টি আসনে ছাড় চেয়েছে। তবে জামায়াতের দিক থেকে এ সংখ্যাকে বেশি মনে করা হচ্ছে। যদিও জামায়াতের দিক থেকে এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা হয়নি। এ নিয়ে আজ-কালের মধ্যে জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আবারও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে ইতিবাচক কথা বলেছেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। সম্প্রতি বিবিসিকে তিনি বলেছেন, “ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গেই অন্য দলগুলোর মতভিন্নতা পরিলক্ষিত হতো। সেখানে সংস্কারের পয়েন্টগুলোতে ন্যাচারালি (স্বাভাবিকভাবেই) এনসিপি, জামায়াত এবং অন্য দলগুলো একমত হয়েছে।”
গত ৭ ডিসেম্বর এনসিপির নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে তিন দলের ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’। এ জোটের বাকি দুই দল হলো-এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জামায়াতের সঙ্গে জোট করার বিষয়ে আপত্তি জানালেও, জোটের অন্য দল এবি পার্টির এতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম না প্রকাশ করার স্বার্থে এই দুই দলের কয়েকজন নেতা চরচাকে জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনে জামায়াত একাই ২০০ আসনে প্রার্থী দিতে চায়।
কাউকে হতাশ করতে চায় না জানিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, জয়ের বিষয় মাথায় রেখেই আসন সমঝোতার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে জামায়াতের আগ্রহের একই তথ্য জোটের অন্য দুই দল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতারা জানিয়েছিলেন। জামায়াতের কাছ থেকে সম্মানজনক আসন বরাদ্দ না পাওয়ারও অনুযোগ করেছিল তারা।
তবে, জামায়াত নেতারা বলছেন, আসনভিত্তিক জরিপের ওপর ভিত্তি করে যেখানে মিত্রদের জয় নিশ্চিত, এমন আসন ছাড়া হবে।