অস্ত্র বিক্রিতে এখনো শীর্ষে আমেরিকা, রাশিয়ার অবস্থান কত

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
অস্ত্র বিক্রিতে এখনো শীর্ষে আমেরিকা, রাশিয়ার অবস্থান কত
বৈশ্বিক অস্ত্র বাজার সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাবে বৈশ্বিক অস্ত্র বাজার সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই )– এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের শীর্ষ ১০০ অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের মোট বিক্রি ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ৬৭৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।

সংবাদ মাধ্যম ফ্রান্স ২৪–এর এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইউক্রেন ও গাজায় চলমান সংঘাত সরাসরি অস্ত্রের চাহিদা বাড়িয়েছে। ফলে ২০১৫ থেকে ২০২৪– এই দশ বছরে অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলোর আয় বেড়েছে মোট ২৬ শতাংশ। গবেষক লরেঞ্জো স্কারাজ্জাতো বলেন, “চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড গড়েছে।”

বিশেষ করে ইউরোপে অস্ত্রের চাহিদা দ্রুত বেড়েছে। গবেষক জেড গুইবারতো রিকার্ড জানান, রাশিয়াকে ঘিরে নিরাপত্তা উদ্বেগ ও ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘায়নে ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে ঝুঁকছে। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে গিয়ে অনেক দেশ নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার পূরণ করতে নতুন করে অস্ত্র কিনছে।

আমেরিকা এই বাজারে এখনও শীর্ষে। বিশ্বের শীর্ষ ১০০ অস্ত্র প্রস্তুতকারকের মধ্যে ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর আমেরিকায়। লকহিড মার্টিন, আরটিএক্স (সাবেক রেথিয়ন) ও নর্থরপ গ্রুম্যান– এই তিন প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আমেরিকার কোম্পানিগুলোর মোট বিক্রি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৪ বিলিয়ন ডলার, যা প্রায় অর্ধেক।

এসআইপিআরআই জানায়, ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রাশিয়াকে ঠেকানোর জন্য প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে। তবে চীনের কঠোর রপ্তানি নীতির কারণে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্কতা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

রাশিয়ার দুটি কোম্পানি, রোস্তেক এবং ইউনাইটেড শিপবিল্ডিং করপোরেশন এই তালিকায় রয়েছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও তাদের সম্মিলিত আয় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩১.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

ইউরোপের ২৬টি প্রতিষ্ঠানের আয় ১৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৫১ বিলিয়ন ডলার। চেক রিপাবলিকের চেকোস্লোভাক গ্রুপ সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে, তাদের বিক্রি বেড়েছে ১৯৩ শতাংশ। তবে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো কাঁচামাল সংকট ও সরবরাহের ব্যাঘাতে সমস্যায় পড়ছে।

এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলে মোট বিক্রি কিছুটা কমলেও ইসরায়েলি অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় বেড়েছে ১৬ শতাংশ। যদিও গাজা যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনা বাড়ছে, তবু ইসরায়েলি অস্ত্রের চাহিদা কমেনি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে, বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং যুদ্ধপরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী অস্ত্রচাহিদা আরও বাড়াবে– এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রতিবেদন।

সম্পর্কিত