মোহাম্মদপুরে গৃহকর্মীর হাতে মা–মেয়ে হত্যা: যা জানাল ডিএমপি

চরচা প্রতিবেদক
চরচা প্রতিবেদক
মোহাম্মদপুরে গৃহকর্মীর হাতে মা–মেয়ে হত্যা: যা জানাল ডিএমপি
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম। ছবি: চরচা

চুরি নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে পুলিশে দেওয়ার হুমকিতে ক্ষুদ্ধ হয়ে আয়েশা চাকু দিয়ে লায়লা (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসাকে (১৫) হত্যা করে—এমনটিই দাবি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

আজ বৃহস্পতিবার মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গতকাল বুধবার ঝালকাঠির নলছিটি থেকে গৃহকর্মী আয়েশা আক্তার ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে বাসায় ঢোকে আয়েশা এবং সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এই সময়ের মধ্যেই মা–মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, “মাত্র তিন দিন আগে কাজ নেওয়া আয়েশা সম্পর্কে বাসার কেউ কোনো পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানত না। হত্যার পর আয়েশা নিজের রক্তমাখা কাপড় বদলে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে ল্যাপটপ, মোবাইলসহ কিছু জিনিস নিয়ে বাসা ছাড়ে। পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল এলাকায় পোশাক পরিবর্তন করে সাভারের দিকে পালিয়ে যায়। রক্তমাখা কাপড় পানিতে ফেলে দেয় বলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে (আয়েশা) জানিয়েছে।”

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পরিচয় লুকাতে আয়েশা প্রায়ই মুখ ঢাকা অবস্থায় চলাফেরা করত, ফলে সিসিটিভিতে তাকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে আগের চুরির একটি জিডি পর্যালোচনা করতে গিয়ে পুলিশ তার গলায় পোড়া দাগ দেখে মিল খুঁজে পায়। তার ব্যবহৃত পুরোনো মোবাইল ফোন নম্বর, স্বামী রাব্বি ও জেনেভা ক্যাম্পের ঠিকানা শনাক্ত করে পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় ঝালকাঠি এলাকায় অভিযান চালিয়ে আয়েশা ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে। চুরি করা ল্যাপটপও উদ্ধার করা হয়।’’

আয়েশা একজন ‘হ্যাবিচুয়াল অপরাধী’—এমনটিই দাবি করেন পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গৃহকর্মীর ছদ্মবেশে বিভিন্ন বাসায় কাজ নিয়ে চুরি করাই ছিল তার (আয়েশা) মূল লক্ষ্য। পরিচয় গোপন, মুখ ঢাকা, মোবাইল ব্যবহার না করা—সবই ছিল পরিকল্পিত কৌশল।

রাজধানীবাসীকে সতর্ক করে নজরুল ইসলাম জানান, গৃহকর্মী রাখার আগে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, মোবাইল নম্বর যাচাই করা জরুরি—অন্যথায় বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

নজরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা অপরাধ স্বীকার করেছে।’’ এই ঘটনার সঙ্গে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে, গৃহকর্মী আয়েশা আক্তারকে ছয় দিন ও তার স্বামী রাব্বিকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হারুনুর রশীদ জানান, আজ বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই সহিদুল ওসমান মাসুম তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। পরে আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সম্পর্কিত