রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যা ‘সমাধানের পথে’, চুক্তিতে বড় পরিবর্তন চায় ক্রেমলিন

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যা ‘সমাধানের পথে’, চুক্তিতে বড় পরিবর্তন চায় ক্রেমলিন
ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের কোস্তিয়ানতিনিভকাতে রাশিয়ান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলির পাশ দিয়ে হাঁটছেন একজন ইউক্রেনীয় সেনা। ছবি রয়টার্স

ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ী দূত কিথ কেলগ বলেছেন, তারা এই সমস্যা প্রায় সমাধান করে ফেলেছে। তবে এই আলোচনা এমন এক সূক্ষ্ণ কূটনৈতিক পর্যায়ে এসে থেমে আছে, যাকে কিথ কেলগ উপমা দিয়েছেন ‘শেষ ১০ মিটারে’ এসে থমকে যাওয়া। মূলত এখনো দুটি প্রধান সমস্যা রয়েছে, যার কারণে চুক্তি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। কেলগ রিগান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোরামে এই মন্তব্য করেন। আগামী জানুয়ারিতে তার পদত্যাগ করার কথা রয়েছে।

ডনবাস আর জাপোরিঝিয়া এখন মীমাংসার পথে প্রধান অন্তরায়

রয়টার্স লিখেছে, যে দুটি প্রধান সমস্যার জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যার মীমাংসা হচ্ছে না তা মূলত ভূখণ্ড কেন্দ্রিক। এর একটি হলো ডনবাসের ভবিষ্যৎ আর অন্যটি ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ। ইউরোপের বৃহত্তম এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

কেলগ বলেন, “আমরা যদি এই দুটি সমস্যার সমাধান করতে পারি, তবে আমার মনে হয় বাকি বিষয়গুলো বেশ সহজে মিটে যাবে। আর আমার মনে হয় আমরা সেটা করেও ফেলব।”

গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে ক্রেমলিনে চার ঘণ্টার বৈঠক করেছেন। এরপর, পুতিনের বিদেশ নীতি পরামর্শক ইউরি উশাকভ বলেন, এই বৈঠকে আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এই কথার অর্থ হলো সমগ্র ডনবাসের উপর রাশিয়ার দাবি বোঝানোর একটি ইঙ্গিত। তবে এই অঞ্চলের কমপক্ষে পাঁচ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পৃথিবীর প্রায় সব দেশই ডনবাসকে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে মনে করে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং ভবিষ্যতে তা রাশিয়াকে ইউক্রেনে আবারও হামলা চালানোর একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেবে।

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমে গত ৭ ডিসেম্বর উশাকভের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ইউক্রেন সংক্রান্ত এই চুক্তিপত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। তবে মস্কো ঠিক কী ধরনের পরিবর্তন চায়, সে সম্পর্কে তিনি স্পষ্ট করে কিছু জানাননি।

এদিকে, জেলেনস্কি গত ৬ ডিসেম্বর বলেছেন, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং জ্যারেড কুশনারের সেঙ্গ তার দীর্ঘ এবং কার্যকর আলোচনা হয়েছে। এদিকে ক্রেমলিন জানিয়েছে, তারা আশা করে যে একটি সম্ভাব্য চুক্তির খসড়া তৈরির প্রধান কাজটি কুশনারই করবেন।

‘ইউক্রেন যুদ্ধে ২০ লক্ষাধিক হতাহত’

ইউক্রেন যুদ্ধে মৃত্যু এবং আহতের সংখ্যা ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছেন কিথ কেলগ। কেলগ এর আগে সামরিক বাহিনীতে থাকাকালীন ভিয়েতনাম, পানামা ও ইরাকে কাজ করেছেন।

কেলগ বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া এবং ইউক্রেন একসঙ্গে ২০ লক্ষাধিকের বেশি হতাহত হয়েছে। এদিকে রাশিয়া বা ইউক্রেন কেউই তাদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ করে না।

বর্তমানে ইউক্রেনের মোট ১৯.২ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়া, পুরো লুহানস্ক, দোনেৎস্কের ৮০ শতাংশের বেশি, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং খারকিভ, সুমি, মাইকোলাইভ ও নিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলের কিছু অংশ।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ২৮-দফা খসড়া শান্তি প্রস্তাবের একটি সেট ফাঁস হয়। এই প্রস্তাব দেখে ইউক্রেনীয় এবং ইউরোপীয় কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এই খসড়ায় ন্যাটো সংক্রান্ত বিষয়ে মস্কোর প্রধান দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে, ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয়েছে।

ট্রাম্পের লক্ষ্য হলো নিজেকে শান্তি স্থাপনাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। সেই জায়গা থেকেই তিনি বলেছেন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই সংঘাতের অবসান ঘটানো তার প্রেসিডেন্সির এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে অধরা বৈদেশিক নীতি।

রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণ করে। এর আগে, ডনবাস অঞ্চলে-যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত-রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে আট বছর ধরে লড়াই চলছিল।

সম্পর্কিত