পর্ব-১
জেমস এম. লিন্ডসে

যারা আশা করেছিলেন, ২০২৪ সালের বিশ্বমঞ্চের ক্লান্তিকর পরিস্থিতির পর ২০২৫ কিছুটা স্বস্তি দেবে, তারা শেষ পর্যন্ত হতাশই হয়েছেন। গত বারোটি মাস বিশ্ব রাজনীতির জন্য এক কঠিন সময় ছিল। কারণ, এসময় সংঘাত ও বিরোধ আরও প্রবল হয়ে উঠেছে এবং আমেরিকা-নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার অবসান আরও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়েছে।
২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিকের জাঁকজমক আয়োজন যেভাবে সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় কী অর্জন করতে পারে, ২০২৫ সাল সে তুলনায় অনুপ্রেরণা জাগানোর মতো খুব কম উদাহরণই তৈরি করতে পেরেছে। আমরা এখন কেবল এটাই আশা করতে পারি যে, ২০২৬ সাল আমাদের ইতিবাচক কোনো চমক দেবে।
তবে নতুন বছরে পা রাখার আগে, ২০২৫ সালের ভূ-রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দশটি ঘটনার দিকে আলোকপাত করা যেতে পারে। আজ প্রথম পর্বে থাকছে ৫টি ঘটনা।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাত
একটি দেশ অন্য দেশের তুলনায় আয়তনে অনেক বড় এবং সামরিকভাবে শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। জুলাই মাসে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে শুরু হওয়া সংঘাতটি এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মাত্র ১ কোটি ৭০ লাখ জনসংখ্যার কম্বোডিয়া তার প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডের তুলনায় অনেক ছোট এবং সামরিকভাবে দুর্বল, সেখানে থাইল্যান্ডের জনসংখ্যা কম্বোডিয়ার তুলনায় চারগুণ বেশি।
জুলাই মাসের এই লড়াই ছিল গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ, যার আপাত কারণ ছিল এক শতাব্দী পুরোনো সীমান্ত বিরোধ। মূলত, দুই দেশের বিভাজনকারী বনাচ্ছাদিত দাঙ্গরেক পাহাড়ের ওপর অবস্থিত 'প্রাসাত তা মুয়েন থম' নামক একটি প্রাচীন মন্দিরের মালিকানা দাবি করে উভয় দেশ। কিন্তু সীমান্তের উভয় পাশে বিদ্যমান জটিল অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এই সুপ্ত উত্তেজনাকে প্রকাশ্য যুদ্ধে রূপ দেয়। প্রাথমিক লড়াইয়ে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারায় এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এতে হস্তক্ষেপ করেন এবং হুমকি দেন যে, লড়াই বন্ধ না হলে তিনি কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করবেন। এরপর উভয় পক্ষ অনিচ্ছাসত্ত্বেও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। অক্টোবরের শেষের দিকে কুয়ালালামপুরে বার্ষিক আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে সেই চুক্তি স্থায়ী হয়নি।
নভেম্বর মাসে একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে চারজন থাই সেনা নিহত হলে ব্যাংকক চুক্তির একাংশ স্থগিত করে। চলতি মাসের শুরুর দিকে থাই যুদ্ধবিমান কম্বোডিয়ার বোমা হামলা চালালে লড়াই আরও তীব্রতর হয়। থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী যার পূর্বসূরিকে নমপেনের প্রতি অত্যন্ত নমনীয় হওয়ার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল, শপথ নিয়েছেন যে, “যদি যুদ্ধ থামাতে হয়, তবে কম্বোডিয়াকে অবশ্যই থাইল্যান্ডের নির্ধারিত পথ অনুসরণ করতে হবে।” এটি স্পষ্টতই চলমান সংঘাত অব্যাহত থাকার একটি পূর্বাভাস।

পোপ লিও
রোমান ক্যাথলিক গির্জার ইতিহাসে এ পর্যন্ত ২৬৭ জন পোপ এসেছেন। ২০২৫ সালের আগে তাদের মধ্যে কেউই উত্তর আমেরিকা, এমনকি আমেরিকা থেকেও ছিলেন না। মে মাসে সেই ইতিহাসের পরিবর্তন ঘটে। গত ২১ এপ্রিল পোপ ফ্রান্সিস আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি এক যুগ ধরে পোপের দায়িত্বে ছিলেন। পোপের মৃত্যুর পর রোমান ক্যাথলিক গির্জা 'ইন্টাররেগনাম' বা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে প্রবেশ করে, যা নতুন পোপ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
কালজয়ী ঐতিহ্য অনুসরণ করে, পোপ নির্বাচনের জন্য যোগ্য ১৩৩ জন কার্ডিনাল রোমে 'কনক্লেভ' বা পোপ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় সমবেত হন। প্রথম তিনটি ব্যালটে সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়, যার অর্থ ছিল কেউই প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পাননি। এরপর চতুর্থ ব্যালটে ধোঁয়ার রঙ সাদা হয়ে ওঠে। কনক্লেভ কার্ডিনাল রবার্ট প্রিভোস্টকে নির্বাচিত করে।
শিকাগোর দক্ষিণাঞ্চলে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্নাতক দুই দশকের বেশি সময় পেরুতে কাটিয়েছেন; প্রথমে মিশনারি হিসেবে এবং পরবর্তীতে চিকলায়োর বিশপ হিসেবে। ২০২৩ সালে তিনি রোমে চলে আসেন ‘ডিকাস্টারি ফর বিশপস’-এর প্রিফেক্ট (প্রধান) হিসেবে, যা মূলত বিশপ নির্বাচনের বিষয়টি দেখভাল করে। এর পরপরই তাকে কার্ডিনাল করা হয়। ১২৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘অগাস্টিনিয়ান’ ধর্মীয় আদেশের প্রথম সদস্য হিসেবে প্রিভোস্ট পোপ নির্বাচিত হন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ‘লিও চতুর্দশ’ নাম ধারণ করেন। ১৮৯১ সালে পোপ লিও ত্রয়োদশ তার ‘রেরাম নোভ্যারাম’ (বৈপ্লবিক পরিবর্তন) নামক বিশ্বপত্রে শ্রমজীবী মানুষের অবস্থার উন্নতির যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তার সেই আদর্শকে স্মরণ করতেই প্রিভোস্ট এই নাম বেছে নেন।
পাকিস্তান ও ভারত সংঘাত
২০০০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন কাশ্মীরকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ভারত-শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামের কাছে পাঁচজন সন্ত্রাসীর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর, মে মাসে এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা প্রকাশ্য যুদ্ধে রূপ নেয়। ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলায় ১৭৫ জনের প্রাণহানি ঘটানো পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা সম্ভবত পেহেলগাম হামলার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল। ২০০৮ সালে ভারত পাল্টা কোনো হামলা না চালালেও, এবার তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে (যেটিকে ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ হিসেবে অভিহিত করেছে) আঘাত হানে।
পাকিস্তান এর জবাবে ভারতের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় এবং ভারতের দুটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। ভারতও পাল্টা লাহোর শহরের চারপাশে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়। বিগত অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে তীব্র এই লড়াইয়ে কোনো পক্ষই উল্লেখ করার মতো সামরিক সুবিধা অর্জন করতে পারেনি এবং তিন দিন পর তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি এই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছেন। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান এবং দেশটির প্রকৃত (ডি ফ্যাক্টো) নেতা আসিম মুনির এই দাবি সমর্থন করলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এই লড়াইয়ের তাৎক্ষণিক ফলাফল হিসেবে ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়; বিশেষ করে মোদি ট্রাম্পের মধ্যস্থতার বিষয়টি স্বীকার করতে অস্বীকার করায় ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করেন। তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার মূল শত্রুতা এখনো বিদ্যমান। এখন একটি বড় অমীমাংসিত প্রশ্ন হলো, ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার মাধ্যমে তারা সিন্ধু নদ থেকে পানি প্রবাহ কমিয়ে দেবে কি না, যা পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষিজমির পানির উৎস।
এআই প্রতিযোগিতার তীব্রতা বৃদ্ধি
২০১৭ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সম্পর্কে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, "যিনি এই ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবেন, তিনিই হবেন বিশ্বের শাসক।" ইতিহাস হয়তো তাকে ভুল প্রমাণ করতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে দেশগুলো এমনভাবে কাজ করছে, যেন তার কথাই ঠিক হতে চলেছে। বর্তমানে এআইয়ের ক্ষেত্রে আমেরিকা ও চীন বিশ্বের শীর্ষ দুই শক্তি এবং অন্য কোনো দেশ তাদের ধারেকাছেও নেই। জানুয়ারি মাসে চীনা প্রতিষ্ঠান 'ডিপসিক' বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে, যখন তারা এমন একটি এআই মডেল উন্মোচন করে, যা আমেরিকার সেরা মডেলগুলোর সমকক্ষ। অথচ তারা এনভিডিয়ার মতো উন্নত কোন চিপ ব্যবহার করেনি, যেগুলোকে এআই অপারেশনের জন্য অপরিহার্য মনে করা হতো। বিশেষজ্ঞরা ডিপসিকের এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করলেও, মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো একে নিজেদের এআই বিনিয়োগ দ্বিগুণ করার সংকেত হিসেবে গ্রহণ করে।
এআই উন্নয়নে চিপের গুরুত্ব বিবেচনা করে ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমে বাইডেন প্রশাসনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র বা মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি উন্নত সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানির ওপর সেই বিধিনিষেধ আরও প্রসারিত করে। তবে দুই সপ্তাহ আগে ট্রাম্প তার অবস্থান পরিবর্তন করেন এবং এনভিডিয়াকে তাদের শক্তিশালী 'এইচ২০০' চিপ চীনের কাছে বিক্রির অনুমতি দেন। এই সিদ্ধান্ত তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয় এবং অনেকে দাবি করেন, তিনি আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছেন। এই বিতর্কের ভিড়ে যে বিষয়টি আড়ালে পড়ে গেছে তা হলো, এআই প্রতিযোগিতা কেবল সেরা মডেল তৈরির লড়াই নয়, বরং দৈনন্দিন কাজে এআইকে কে কত ভালোভাবে সমন্বয় করতে পারে, তারও লড়াই। আর এই ক্ষেত্রে চীন সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারে। এদিকে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলছেন যে, এআই কি শেষ পর্যন্ত বড় কোনো বিপর্যয়ে রূপ নিয়ে অর্থনীতিকে বড় ধাক্কা দেবে, নাকি অভাবনীয় সাফল্যের মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থান কেড়ে নেবে?
সুদান
সুদানের প্রায় তিন বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধকে বর্ণনা করার জন্য ‘পৃথিবীর বুকে নরক’ সম্ভবত সবচেয়ে উপযুক্ত বাক্য। এই লড়াইয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন সুদানি সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) এবং মোহাম্মদ হামদান ‘হেমেদতি’ দাগালোর নেতৃত্বাধীন আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। এই দুই ব্যক্তি ২০২১ সালের অক্টোবরে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত জয় পায়নি এবং একাধিক ফ্রন্টে লড়াই অব্যাহত রয়েছে। এসএএফ লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত পোর্ট সুদান থেকে শাসনকার্য পরিচালনা করছে এবং উত্তর ও পূর্বের বড় শহরগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; আন্তর্জাতিকভাবেও তারাই সুদানের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃত। অন্যদিকে, আরএসএফ দারফুর এবং মধ্য ও পশ্চিম সুদানের বেশিরভাগ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। উভয় পক্ষেরই বিদেশি মদদদাতা রয়েছে। মিশর, রাশিয়া এবং তুরস্ক সমর্থন দিচ্ছে এসএএফ-কে; আর চাদ, ইথিওপিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থন দিচ্ছে আরএসএফ-কে।
এই যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতো। প্রায় ৪ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। দেশের বড় একটি অংশ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন এবং মানবিক সাহায্যের চাহিদা প্রাপ্ত সম্পদের তুলনায় অনেক বেশি। দারফুরে এসএএফের শেষ ঘাঁটি এল ফাশের শহরে লড়াই ছিল ভয়াবহ; আঠারো মাস অবরুদ্ধ রাখার পর গত অক্টোবরে আরএসএফ শহরটি দখল করে নেয়। শহরবাসীদের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, তার রক্ত এবং লাশের সারি মহাকাশ থেকেও দেখা যাচ্ছিল। মধ্যস্থতার মাধ্যমে এই গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা বর্তমানে খুবই ক্ষীণ এবং দেশটির বিভাজন এখন একটি বাস্তব আশঙ্কা।
লেখক: কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনের (সিএফআর) মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক জৈষ্ঠ্য ফেলো
*লেখাটি সিএফআরে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে অনুবাদ করেছেন ফাহমিদা শিকদার*

যারা আশা করেছিলেন, ২০২৪ সালের বিশ্বমঞ্চের ক্লান্তিকর পরিস্থিতির পর ২০২৫ কিছুটা স্বস্তি দেবে, তারা শেষ পর্যন্ত হতাশই হয়েছেন। গত বারোটি মাস বিশ্ব রাজনীতির জন্য এক কঠিন সময় ছিল। কারণ, এসময় সংঘাত ও বিরোধ আরও প্রবল হয়ে উঠেছে এবং আমেরিকা-নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার অবসান আরও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়েছে।
২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিকের জাঁকজমক আয়োজন যেভাবে সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় কী অর্জন করতে পারে, ২০২৫ সাল সে তুলনায় অনুপ্রেরণা জাগানোর মতো খুব কম উদাহরণই তৈরি করতে পেরেছে। আমরা এখন কেবল এটাই আশা করতে পারি যে, ২০২৬ সাল আমাদের ইতিবাচক কোনো চমক দেবে।
তবে নতুন বছরে পা রাখার আগে, ২০২৫ সালের ভূ-রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দশটি ঘটনার দিকে আলোকপাত করা যেতে পারে। আজ প্রথম পর্বে থাকছে ৫টি ঘটনা।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাত
একটি দেশ অন্য দেশের তুলনায় আয়তনে অনেক বড় এবং সামরিকভাবে শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। জুলাই মাসে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে শুরু হওয়া সংঘাতটি এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মাত্র ১ কোটি ৭০ লাখ জনসংখ্যার কম্বোডিয়া তার প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডের তুলনায় অনেক ছোট এবং সামরিকভাবে দুর্বল, সেখানে থাইল্যান্ডের জনসংখ্যা কম্বোডিয়ার তুলনায় চারগুণ বেশি।
জুলাই মাসের এই লড়াই ছিল গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ, যার আপাত কারণ ছিল এক শতাব্দী পুরোনো সীমান্ত বিরোধ। মূলত, দুই দেশের বিভাজনকারী বনাচ্ছাদিত দাঙ্গরেক পাহাড়ের ওপর অবস্থিত 'প্রাসাত তা মুয়েন থম' নামক একটি প্রাচীন মন্দিরের মালিকানা দাবি করে উভয় দেশ। কিন্তু সীমান্তের উভয় পাশে বিদ্যমান জটিল অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এই সুপ্ত উত্তেজনাকে প্রকাশ্য যুদ্ধে রূপ দেয়। প্রাথমিক লড়াইয়ে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারায় এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এতে হস্তক্ষেপ করেন এবং হুমকি দেন যে, লড়াই বন্ধ না হলে তিনি কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করবেন। এরপর উভয় পক্ষ অনিচ্ছাসত্ত্বেও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। অক্টোবরের শেষের দিকে কুয়ালালামপুরে বার্ষিক আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে সেই চুক্তি স্থায়ী হয়নি।
নভেম্বর মাসে একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে চারজন থাই সেনা নিহত হলে ব্যাংকক চুক্তির একাংশ স্থগিত করে। চলতি মাসের শুরুর দিকে থাই যুদ্ধবিমান কম্বোডিয়ার বোমা হামলা চালালে লড়াই আরও তীব্রতর হয়। থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী যার পূর্বসূরিকে নমপেনের প্রতি অত্যন্ত নমনীয় হওয়ার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল, শপথ নিয়েছেন যে, “যদি যুদ্ধ থামাতে হয়, তবে কম্বোডিয়াকে অবশ্যই থাইল্যান্ডের নির্ধারিত পথ অনুসরণ করতে হবে।” এটি স্পষ্টতই চলমান সংঘাত অব্যাহত থাকার একটি পূর্বাভাস।

পোপ লিও
রোমান ক্যাথলিক গির্জার ইতিহাসে এ পর্যন্ত ২৬৭ জন পোপ এসেছেন। ২০২৫ সালের আগে তাদের মধ্যে কেউই উত্তর আমেরিকা, এমনকি আমেরিকা থেকেও ছিলেন না। মে মাসে সেই ইতিহাসের পরিবর্তন ঘটে। গত ২১ এপ্রিল পোপ ফ্রান্সিস আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি এক যুগ ধরে পোপের দায়িত্বে ছিলেন। পোপের মৃত্যুর পর রোমান ক্যাথলিক গির্জা 'ইন্টাররেগনাম' বা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে প্রবেশ করে, যা নতুন পোপ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
কালজয়ী ঐতিহ্য অনুসরণ করে, পোপ নির্বাচনের জন্য যোগ্য ১৩৩ জন কার্ডিনাল রোমে 'কনক্লেভ' বা পোপ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় সমবেত হন। প্রথম তিনটি ব্যালটে সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়, যার অর্থ ছিল কেউই প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পাননি। এরপর চতুর্থ ব্যালটে ধোঁয়ার রঙ সাদা হয়ে ওঠে। কনক্লেভ কার্ডিনাল রবার্ট প্রিভোস্টকে নির্বাচিত করে।
শিকাগোর দক্ষিণাঞ্চলে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্নাতক দুই দশকের বেশি সময় পেরুতে কাটিয়েছেন; প্রথমে মিশনারি হিসেবে এবং পরবর্তীতে চিকলায়োর বিশপ হিসেবে। ২০২৩ সালে তিনি রোমে চলে আসেন ‘ডিকাস্টারি ফর বিশপস’-এর প্রিফেক্ট (প্রধান) হিসেবে, যা মূলত বিশপ নির্বাচনের বিষয়টি দেখভাল করে। এর পরপরই তাকে কার্ডিনাল করা হয়। ১২৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘অগাস্টিনিয়ান’ ধর্মীয় আদেশের প্রথম সদস্য হিসেবে প্রিভোস্ট পোপ নির্বাচিত হন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ‘লিও চতুর্দশ’ নাম ধারণ করেন। ১৮৯১ সালে পোপ লিও ত্রয়োদশ তার ‘রেরাম নোভ্যারাম’ (বৈপ্লবিক পরিবর্তন) নামক বিশ্বপত্রে শ্রমজীবী মানুষের অবস্থার উন্নতির যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তার সেই আদর্শকে স্মরণ করতেই প্রিভোস্ট এই নাম বেছে নেন।
পাকিস্তান ও ভারত সংঘাত
২০০০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন কাশ্মীরকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ভারত-শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামের কাছে পাঁচজন সন্ত্রাসীর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর, মে মাসে এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা প্রকাশ্য যুদ্ধে রূপ নেয়। ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলায় ১৭৫ জনের প্রাণহানি ঘটানো পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা সম্ভবত পেহেলগাম হামলার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল। ২০০৮ সালে ভারত পাল্টা কোনো হামলা না চালালেও, এবার তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে (যেটিকে ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ হিসেবে অভিহিত করেছে) আঘাত হানে।
পাকিস্তান এর জবাবে ভারতের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় এবং ভারতের দুটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। ভারতও পাল্টা লাহোর শহরের চারপাশে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়। বিগত অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে তীব্র এই লড়াইয়ে কোনো পক্ষই উল্লেখ করার মতো সামরিক সুবিধা অর্জন করতে পারেনি এবং তিন দিন পর তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি এই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছেন। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান এবং দেশটির প্রকৃত (ডি ফ্যাক্টো) নেতা আসিম মুনির এই দাবি সমর্থন করলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এই লড়াইয়ের তাৎক্ষণিক ফলাফল হিসেবে ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়; বিশেষ করে মোদি ট্রাম্পের মধ্যস্থতার বিষয়টি স্বীকার করতে অস্বীকার করায় ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করেন। তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার মূল শত্রুতা এখনো বিদ্যমান। এখন একটি বড় অমীমাংসিত প্রশ্ন হলো, ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার মাধ্যমে তারা সিন্ধু নদ থেকে পানি প্রবাহ কমিয়ে দেবে কি না, যা পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষিজমির পানির উৎস।
এআই প্রতিযোগিতার তীব্রতা বৃদ্ধি
২০১৭ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সম্পর্কে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, "যিনি এই ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবেন, তিনিই হবেন বিশ্বের শাসক।" ইতিহাস হয়তো তাকে ভুল প্রমাণ করতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে দেশগুলো এমনভাবে কাজ করছে, যেন তার কথাই ঠিক হতে চলেছে। বর্তমানে এআইয়ের ক্ষেত্রে আমেরিকা ও চীন বিশ্বের শীর্ষ দুই শক্তি এবং অন্য কোনো দেশ তাদের ধারেকাছেও নেই। জানুয়ারি মাসে চীনা প্রতিষ্ঠান 'ডিপসিক' বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে, যখন তারা এমন একটি এআই মডেল উন্মোচন করে, যা আমেরিকার সেরা মডেলগুলোর সমকক্ষ। অথচ তারা এনভিডিয়ার মতো উন্নত কোন চিপ ব্যবহার করেনি, যেগুলোকে এআই অপারেশনের জন্য অপরিহার্য মনে করা হতো। বিশেষজ্ঞরা ডিপসিকের এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করলেও, মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো একে নিজেদের এআই বিনিয়োগ দ্বিগুণ করার সংকেত হিসেবে গ্রহণ করে।
এআই উন্নয়নে চিপের গুরুত্ব বিবেচনা করে ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমে বাইডেন প্রশাসনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র বা মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি উন্নত সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানির ওপর সেই বিধিনিষেধ আরও প্রসারিত করে। তবে দুই সপ্তাহ আগে ট্রাম্প তার অবস্থান পরিবর্তন করেন এবং এনভিডিয়াকে তাদের শক্তিশালী 'এইচ২০০' চিপ চীনের কাছে বিক্রির অনুমতি দেন। এই সিদ্ধান্ত তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয় এবং অনেকে দাবি করেন, তিনি আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছেন। এই বিতর্কের ভিড়ে যে বিষয়টি আড়ালে পড়ে গেছে তা হলো, এআই প্রতিযোগিতা কেবল সেরা মডেল তৈরির লড়াই নয়, বরং দৈনন্দিন কাজে এআইকে কে কত ভালোভাবে সমন্বয় করতে পারে, তারও লড়াই। আর এই ক্ষেত্রে চীন সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারে। এদিকে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলছেন যে, এআই কি শেষ পর্যন্ত বড় কোনো বিপর্যয়ে রূপ নিয়ে অর্থনীতিকে বড় ধাক্কা দেবে, নাকি অভাবনীয় সাফল্যের মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থান কেড়ে নেবে?
সুদান
সুদানের প্রায় তিন বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধকে বর্ণনা করার জন্য ‘পৃথিবীর বুকে নরক’ সম্ভবত সবচেয়ে উপযুক্ত বাক্য। এই লড়াইয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন সুদানি সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) এবং মোহাম্মদ হামদান ‘হেমেদতি’ দাগালোর নেতৃত্বাধীন আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। এই দুই ব্যক্তি ২০২১ সালের অক্টোবরে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত জয় পায়নি এবং একাধিক ফ্রন্টে লড়াই অব্যাহত রয়েছে। এসএএফ লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত পোর্ট সুদান থেকে শাসনকার্য পরিচালনা করছে এবং উত্তর ও পূর্বের বড় শহরগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; আন্তর্জাতিকভাবেও তারাই সুদানের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃত। অন্যদিকে, আরএসএফ দারফুর এবং মধ্য ও পশ্চিম সুদানের বেশিরভাগ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। উভয় পক্ষেরই বিদেশি মদদদাতা রয়েছে। মিশর, রাশিয়া এবং তুরস্ক সমর্থন দিচ্ছে এসএএফ-কে; আর চাদ, ইথিওপিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থন দিচ্ছে আরএসএফ-কে।
এই যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতো। প্রায় ৪ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। দেশের বড় একটি অংশ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন এবং মানবিক সাহায্যের চাহিদা প্রাপ্ত সম্পদের তুলনায় অনেক বেশি। দারফুরে এসএএফের শেষ ঘাঁটি এল ফাশের শহরে লড়াই ছিল ভয়াবহ; আঠারো মাস অবরুদ্ধ রাখার পর গত অক্টোবরে আরএসএফ শহরটি দখল করে নেয়। শহরবাসীদের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, তার রক্ত এবং লাশের সারি মহাকাশ থেকেও দেখা যাচ্ছিল। মধ্যস্থতার মাধ্যমে এই গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা বর্তমানে খুবই ক্ষীণ এবং দেশটির বিভাজন এখন একটি বাস্তব আশঙ্কা।
লেখক: কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনের (সিএফআর) মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক জৈষ্ঠ্য ফেলো
*লেখাটি সিএফআরে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে অনুবাদ করেছেন ফাহমিদা শিকদার*