চরচা ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল বা ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি (এনএসএস) প্রকাশ করেছেন। এই কৌশলে আমেরিকার বৈশ্বিক ভূমিকা পুনর্গঠন ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব পুনর্দাবির লক্ষ্য স্পষ্ট করা হয়েছে। কৌশল নথিতে বলা হয়েছে–আমেরিকা পশ্চিম গোলার্ধে তার আধিপত্য আরও জোরদার করবে, ইন্দো-প্যাসিফিক বা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়াবে এবং ইউরোপের সাথে সম্পর্ক নতুনভাবে মূল্যায়ন করতে পারে।
নথিতে ১৮২৩ সালের মনরো ডকট্রিন পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানানো হয়েছে। মনরো ডকট্রিনে পশ্চিম গোলার্ধকে আমেরিকার প্রভাববলয় হিসেবে দেখা হতো। ওই অঞ্চলে আমেরিকার বড় সামরিক মোতায়েন দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে। লাতিন আমেরিকায় চীনের বাড়তি অর্থনৈতিক প্রভাবও নথিতে উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে।
ইন্দো-প্যাসিফিক অধ্যায়ে বলা হয়েছে, তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরকে ঘিরে সম্ভাব্য সংঘাত ঠেকাতে আমেরিকা ও মিত্রদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো হবে। নথিতে বলা হয়েছে, “তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে সংঘাত প্রতিরোধই অগ্রাধিকার।”
ইউরোপ নিয়ে নথিতে কড়া ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইউরোপ ‘সভ্যতার মুছে যাওয়ার ঝুঁকি’র সামনে রয়েছে। তাদের আমেরিকার নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে থাকতে হলে অবশ্যই কৌশল পরিবর্তন প্রয়োজন।এর কিছু অংশের সাথে ইউরোপের ডানপন্থী রাজনীতির বক্তব্য মিলে যায় বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। নথিতে ‘পশ্চিমা পরিচয়’ পুনরুদ্ধারের কথাও বলা হয়েছে।

আমেরিকা ইউক্রেন সংকট দ্রুত সমাধানের কথা বলেছে এবং রাশিয়ার সাথে ‘কৌশলগত স্থিতিশীলতা’ ফেরানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে ইউরোপ এখনো নিরাপত্তার জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ওয়াশিংটন চাইছে ন্যাটোর প্রচলিত প্রতিরক্ষা সক্ষমতার বড় অংশ ইউরোপ নিজেরাই বহন করুক। একে অনেক ইউরোপীয় কর্মকর্তা অবাস্তব মনে করছেন।
একজন মার্কিন বিশ্লেষকের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের মনোযোগ বেশি যাচ্ছে পশ্চিম গোলার্ধ ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে; ইউরোপ তুলনামূলকভাবে গুরুত্ব হারাচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থান ‘অপেক্ষমাণ,’ আর আফ্রিকার ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল বদলানো শুধু ওয়াশিংটনের ভেতরকার নীতি-পরিবর্তন নয়। এটি বিশ্ব রাজনীতির ওপরও সরাসরি চাপ ফেলে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি ঘোষণা করতেই তাই স্বাভাবিকভাবেই অসংখ্য প্রশ্ন মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তরই নির্ধারণ করবে, আমেরিকার ভবিষ্যৎ কৌশল কতটা বাস্তবসম্মত হবে, আর বিশ্ব কতটা অস্থির হবে।
১. প্রধান হুমকি কারা? এই প্রশ্নটিই সবচেয়ে স্পর্শকাতর। ট্রাম্প কোন দেশ বা গোষ্ঠীকে মূল হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করলেন? চীন ও রাশিয়াকে কি আগের মতোই প্রতিদ্বন্দ্বী বলা হচ্ছে, নাকি সরাসরি ‘প্রতিপক্ষ’ চিহ্নিত করা হলো? সন্ত্রাসবাদ ও সাইবার হুমকির জায়গা এখন কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর আমেরিকার সামরিক ব্যয় থেকে বৈশ্বিক উত্তেজনা–সবকিছুতেই প্রভাব ফেলবে।
২. আগের কৌশল থেকে এটা কী আলাদা? আসলে প্রতিটি নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টই আগের কৌশলের থেকে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরতে চান। কিন্তু ট্রাম্পের ঘোষণায় কতটা মৌলিক পরিবর্তন এল? অর্থনীতি কি এখন নিরাপত্তার কেন্দ্রে? বাণিজ্যনীতি কি নিরাপত্তা নীতির অংশ হয়ে যাচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার আগে কৌশলের গভীরতা বোঝা সম্ভব নয়।
৩. চীন-রাশিয়া নীতি কি আরও কঠোর হবে? বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা হচ্ছে আমেরিকা বনাম চীন। তার পাশাপাশি রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন নিয়ে চলছে তীব্র অস্বস্তি। নতুন কৌশলে আমেরিকা কীভাবে এই দুই শক্তির মোকাবিলা করবে–এই প্রশ্ন শুধু ওয়াশিংটনের একার নয়। ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য–সর্বত্র এর প্রভাব অনুভব করবে।

৪. মিত্রদেশগুলোকে ট্রাম্প কী বার্তা দিলেন? ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে ইউরোপের সম্পর্ক আগেই খানিক অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি মিত্রদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছিল। নতুন এনএসএস কি সেই সন্দেহ দূর করতে পারবে? নাকি আবারও চাপ বাড়বে? বিশেষত ন্যাটো সদস্যদের ওপর? এই প্রশ্নের উত্তরই নির্ধারণ করবে পশ্চিমা জোট কতটা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে তার ওপর।
৫. নিরাপত্তা ও অর্থনীতি কি এক হয়ে যাচ্ছে? ট্রাম্প বারবার বলেছেন, আমেরিকার অর্থনৈতিক শক্তিই তার প্রকৃত নিরাপত্তা। এ কারণে শুল্ক, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণকে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে পরিণত করেছেন।
নতুন কৌশলে এই অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ কতদূর যাবে–এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
৬. সামরিক শক্তি বাড়ানোর ঘোষণা কি অর্থবহ? আমেরিকা ইতিমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তি। তবুও কৌশলে যদি বড় ধরনের সামরিক আধুনিকায়নের অঙ্গীকার থাকে, তাহলে এর অর্থ কী? এটি কি সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি? নাকি প্রতিযোগীদের ভয় দেখানোর কৌশল? এই প্রশ্নগুলো আজ আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাজার থেকে কূটনীতির টেবিল–সবখানে ঘুরছে।
৭. সাইবার ও উদীয়মান নতুন প্রযুক্তি নিয়ে অবস্থান কী? যুদ্ধ এখন শুধু আকাশে বা স্থলে নয়; ডেটা, নেটওয়ার্ক এবং অ্যালগরিদমের মধ্যেও যুদ্ধ চলছে। ট্রাম্পের কৌশলে সাইবার প্রতিরক্ষা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি বা মহাকাশ-নিরাপত্তার স্থান কোথায়? এই প্রশ্ন ভবিষ্যতের ভূরাজনীতির প্রতিযোগিতাকেই নির্দেশ করে।
৮. অভিবাসন ও সীমান্ত-নীতি কি নিরাপত্তা না রাজনীতি? ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি আগে থেকেই বিতর্কিত। নতুন এনএসএস-এ অভিবাসনকে জাতীয় নিরাপত্তার সাথে কতটা জুড়ে দেখা হয়েছে, সেটাও সমালোচকদের বড় প্রশ্ন। এটি কি বাস্তব হুমকির মূল্যায়ন, নাকি রাজনৈতিক সমর্থন তৈরির কৌশল?
৯. জলবায়ু পরিবর্তন আসলে নিরাপত্তা নাকি অবহেলা? অনেক দেশই জলবায়ুকে নিরাপত্তা হুমকি বলে বিবেচনা করে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনে এই ইস্যু বারবার গুরুত্ব হারিয়েছে। নতুন কৌশলেও যদি জলবায়ু উপেক্ষিত থাকে, তাহলে বৈশ্বিক সহযোগিতায় কী প্রভাব পড়বে–এ প্রশ্ন এখন দিন দিন জোরালো হচ্ছে।
১০. বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব? যে কোনো কৌশলই কাগজে শক্তিশালী দেখাতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা বাস্তবায়নের জন্য লাগে রাজনৈতিক ঐক্য, কংগ্রেসের সমর্থন এবং বিপুল সম্পদ। নতুন কৌশলের ক্ষেত্রে এই তিনটির কতটা পাওয়া যাবে? যদি সমর্থন না থাকে, তাহলে পুরো নীতিই কি কেবল নির্বাচনমুখী ঘোষণায় পরিণত হবে?
আসলে ট্রাম্পের নতুন ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি এখনো অনেকটাই রাজনৈতিক বিতর্কের ভেতর বন্দী। এর প্রতিটি ঘোষণার পেছনে লুকিয়ে আছে একেকটি বড় প্রশ্ন। সেই প্রশ্নগুলোর উত্তরই নির্ধারণ করবে, আমেরিকার শক্তি কোন পথে যাবে, এবং বিশ্ব রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেবে। এক কথায়, কৌশল ঘোষণা শেষ হয়েছে; এখন শুরু হয়েছে প্রশ্নের রাজনীতি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল বা ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি (এনএসএস) প্রকাশ করেছেন। এই কৌশলে আমেরিকার বৈশ্বিক ভূমিকা পুনর্গঠন ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব পুনর্দাবির লক্ষ্য স্পষ্ট করা হয়েছে। কৌশল নথিতে বলা হয়েছে–আমেরিকা পশ্চিম গোলার্ধে তার আধিপত্য আরও জোরদার করবে, ইন্দো-প্যাসিফিক বা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়াবে এবং ইউরোপের সাথে সম্পর্ক নতুনভাবে মূল্যায়ন করতে পারে।
নথিতে ১৮২৩ সালের মনরো ডকট্রিন পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানানো হয়েছে। মনরো ডকট্রিনে পশ্চিম গোলার্ধকে আমেরিকার প্রভাববলয় হিসেবে দেখা হতো। ওই অঞ্চলে আমেরিকার বড় সামরিক মোতায়েন দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে। লাতিন আমেরিকায় চীনের বাড়তি অর্থনৈতিক প্রভাবও নথিতে উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে।
ইন্দো-প্যাসিফিক অধ্যায়ে বলা হয়েছে, তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরকে ঘিরে সম্ভাব্য সংঘাত ঠেকাতে আমেরিকা ও মিত্রদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো হবে। নথিতে বলা হয়েছে, “তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে সংঘাত প্রতিরোধই অগ্রাধিকার।”
ইউরোপ নিয়ে নথিতে কড়া ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইউরোপ ‘সভ্যতার মুছে যাওয়ার ঝুঁকি’র সামনে রয়েছে। তাদের আমেরিকার নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে থাকতে হলে অবশ্যই কৌশল পরিবর্তন প্রয়োজন।এর কিছু অংশের সাথে ইউরোপের ডানপন্থী রাজনীতির বক্তব্য মিলে যায় বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। নথিতে ‘পশ্চিমা পরিচয়’ পুনরুদ্ধারের কথাও বলা হয়েছে।

আমেরিকা ইউক্রেন সংকট দ্রুত সমাধানের কথা বলেছে এবং রাশিয়ার সাথে ‘কৌশলগত স্থিতিশীলতা’ ফেরানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে ইউরোপ এখনো নিরাপত্তার জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ওয়াশিংটন চাইছে ন্যাটোর প্রচলিত প্রতিরক্ষা সক্ষমতার বড় অংশ ইউরোপ নিজেরাই বহন করুক। একে অনেক ইউরোপীয় কর্মকর্তা অবাস্তব মনে করছেন।
একজন মার্কিন বিশ্লেষকের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের মনোযোগ বেশি যাচ্ছে পশ্চিম গোলার্ধ ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে; ইউরোপ তুলনামূলকভাবে গুরুত্ব হারাচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থান ‘অপেক্ষমাণ,’ আর আফ্রিকার ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল বদলানো শুধু ওয়াশিংটনের ভেতরকার নীতি-পরিবর্তন নয়। এটি বিশ্ব রাজনীতির ওপরও সরাসরি চাপ ফেলে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি ঘোষণা করতেই তাই স্বাভাবিকভাবেই অসংখ্য প্রশ্ন মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তরই নির্ধারণ করবে, আমেরিকার ভবিষ্যৎ কৌশল কতটা বাস্তবসম্মত হবে, আর বিশ্ব কতটা অস্থির হবে।
১. প্রধান হুমকি কারা? এই প্রশ্নটিই সবচেয়ে স্পর্শকাতর। ট্রাম্প কোন দেশ বা গোষ্ঠীকে মূল হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করলেন? চীন ও রাশিয়াকে কি আগের মতোই প্রতিদ্বন্দ্বী বলা হচ্ছে, নাকি সরাসরি ‘প্রতিপক্ষ’ চিহ্নিত করা হলো? সন্ত্রাসবাদ ও সাইবার হুমকির জায়গা এখন কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর আমেরিকার সামরিক ব্যয় থেকে বৈশ্বিক উত্তেজনা–সবকিছুতেই প্রভাব ফেলবে।
২. আগের কৌশল থেকে এটা কী আলাদা? আসলে প্রতিটি নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টই আগের কৌশলের থেকে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরতে চান। কিন্তু ট্রাম্পের ঘোষণায় কতটা মৌলিক পরিবর্তন এল? অর্থনীতি কি এখন নিরাপত্তার কেন্দ্রে? বাণিজ্যনীতি কি নিরাপত্তা নীতির অংশ হয়ে যাচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার আগে কৌশলের গভীরতা বোঝা সম্ভব নয়।
৩. চীন-রাশিয়া নীতি কি আরও কঠোর হবে? বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা হচ্ছে আমেরিকা বনাম চীন। তার পাশাপাশি রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন নিয়ে চলছে তীব্র অস্বস্তি। নতুন কৌশলে আমেরিকা কীভাবে এই দুই শক্তির মোকাবিলা করবে–এই প্রশ্ন শুধু ওয়াশিংটনের একার নয়। ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য–সর্বত্র এর প্রভাব অনুভব করবে।

৪. মিত্রদেশগুলোকে ট্রাম্প কী বার্তা দিলেন? ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে ইউরোপের সম্পর্ক আগেই খানিক অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি মিত্রদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছিল। নতুন এনএসএস কি সেই সন্দেহ দূর করতে পারবে? নাকি আবারও চাপ বাড়বে? বিশেষত ন্যাটো সদস্যদের ওপর? এই প্রশ্নের উত্তরই নির্ধারণ করবে পশ্চিমা জোট কতটা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে তার ওপর।
৫. নিরাপত্তা ও অর্থনীতি কি এক হয়ে যাচ্ছে? ট্রাম্প বারবার বলেছেন, আমেরিকার অর্থনৈতিক শক্তিই তার প্রকৃত নিরাপত্তা। এ কারণে শুল্ক, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণকে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে পরিণত করেছেন।
নতুন কৌশলে এই অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ কতদূর যাবে–এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
৬. সামরিক শক্তি বাড়ানোর ঘোষণা কি অর্থবহ? আমেরিকা ইতিমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তি। তবুও কৌশলে যদি বড় ধরনের সামরিক আধুনিকায়নের অঙ্গীকার থাকে, তাহলে এর অর্থ কী? এটি কি সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি? নাকি প্রতিযোগীদের ভয় দেখানোর কৌশল? এই প্রশ্নগুলো আজ আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাজার থেকে কূটনীতির টেবিল–সবখানে ঘুরছে।
৭. সাইবার ও উদীয়মান নতুন প্রযুক্তি নিয়ে অবস্থান কী? যুদ্ধ এখন শুধু আকাশে বা স্থলে নয়; ডেটা, নেটওয়ার্ক এবং অ্যালগরিদমের মধ্যেও যুদ্ধ চলছে। ট্রাম্পের কৌশলে সাইবার প্রতিরক্ষা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি বা মহাকাশ-নিরাপত্তার স্থান কোথায়? এই প্রশ্ন ভবিষ্যতের ভূরাজনীতির প্রতিযোগিতাকেই নির্দেশ করে।
৮. অভিবাসন ও সীমান্ত-নীতি কি নিরাপত্তা না রাজনীতি? ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি আগে থেকেই বিতর্কিত। নতুন এনএসএস-এ অভিবাসনকে জাতীয় নিরাপত্তার সাথে কতটা জুড়ে দেখা হয়েছে, সেটাও সমালোচকদের বড় প্রশ্ন। এটি কি বাস্তব হুমকির মূল্যায়ন, নাকি রাজনৈতিক সমর্থন তৈরির কৌশল?
৯. জলবায়ু পরিবর্তন আসলে নিরাপত্তা নাকি অবহেলা? অনেক দেশই জলবায়ুকে নিরাপত্তা হুমকি বলে বিবেচনা করে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনে এই ইস্যু বারবার গুরুত্ব হারিয়েছে। নতুন কৌশলেও যদি জলবায়ু উপেক্ষিত থাকে, তাহলে বৈশ্বিক সহযোগিতায় কী প্রভাব পড়বে–এ প্রশ্ন এখন দিন দিন জোরালো হচ্ছে।
১০. বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব? যে কোনো কৌশলই কাগজে শক্তিশালী দেখাতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা বাস্তবায়নের জন্য লাগে রাজনৈতিক ঐক্য, কংগ্রেসের সমর্থন এবং বিপুল সম্পদ। নতুন কৌশলের ক্ষেত্রে এই তিনটির কতটা পাওয়া যাবে? যদি সমর্থন না থাকে, তাহলে পুরো নীতিই কি কেবল নির্বাচনমুখী ঘোষণায় পরিণত হবে?
আসলে ট্রাম্পের নতুন ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি এখনো অনেকটাই রাজনৈতিক বিতর্কের ভেতর বন্দী। এর প্রতিটি ঘোষণার পেছনে লুকিয়ে আছে একেকটি বড় প্রশ্ন। সেই প্রশ্নগুলোর উত্তরই নির্ধারণ করবে, আমেরিকার শক্তি কোন পথে যাবে, এবং বিশ্ব রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেবে। এক কথায়, কৌশল ঘোষণা শেষ হয়েছে; এখন শুরু হয়েছে প্রশ্নের রাজনীতি