ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কেন এত জনপ্রিয়?

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কেন এত জনপ্রিয়?
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং হলো একটি সহজ-সরল খাবার বিরতির প্যাটার্ন। ছবি: ফ্রিপিক

স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে এখন সবচেয়ে আলোচিত শব্দগুলোর একটি ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ (আইএফ)। এটি এক ধরনের খাদ্যাভ্যাস যেখানে নির্দিষ্ট সময় খাওয়া এবং নির্দিষ্ট সময় না খাওয়ার (ফাস্টিং) একটি নিয়ম মানা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওজন নিয়ন্ত্রণ, শক্তি বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের কারণে পদ্ধতিটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কেন এটি এত জনপ্রিয়?

জীবনযাপনের সঙ্গে সহজে মানিয়ে নেওয়া যায়

যারা ব্যস্ত জীবনযাপন করেন, তাদের জন্য প্রতিদিন ক্যালরি গোনা বা কঠোর ডায়েট প্ল্যান মানা ঝামেলার। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এ শুধু সময় মেনে খেতে হয়। যেমন-১৬ ঘণ্টা উপোস, আট ঘণ্টা খাবার খাওয়া বা ১২ ঘণ্টা উপোস বা ১২ ঘণ্টা খাবার গ্রহণ। এতে খাবারের বিশাল তালিকা বানাতে হয় না, আবার নিজের সুবিধামতো সময় নির্ধারণ করা যায়।

দ্রুত দৃশ্যমান ফল

অনেকে বলেন, আইএফ শুরু করার দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে শরীর হালকা অনুভূত হয়, ওজন কমতে শুরু করে। এই দ্রুত ফল পাওয়ার অভিজ্ঞতা এই ডায়েটকে আরও জনপ্রিয় করেছে।

অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ কমে যায়

দিনের নির্দিষ্ট অংশে শুধু খেতে পারার কারণে স্বাভাবিকভাবে খাবারের পরিমাণ কমে যায়। অনেককে আলাদা করে ক্যালরি কমাতে হয় না; সময় সীমাই ক্যালরি কমিয়ে দেয়।

ওজন ও চর্বি কমায়

খাওয়ার ঘণ্টা কমে গেলে শরীর সহজেই ফ্যাট বার্নিং মোডে ঢুকে যায়। দীর্ঘ সময় খাবার না পাওয়ায় শরীর জমা থাকা চর্বিকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ইনসুলিন সেনসিটিভিটি উন্নতি করে

ফাস্টিং অবস্থায় শরীর ইনসুলিন কম তৈরি করে, ফলে রক্তে গ্লুকোজ ব্যবহার আরও কার্যকরভাবে হয়। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে এটি সহায়ক।

দিনের নির্দিষ্ট অংশে শুধু খেতে পারার কারণে স্বাভাবিকভাবে খাবারের পরিমাণ কমে যায়। ছবি: ফ্রিপিক
দিনের নির্দিষ্ট অংশে শুধু খেতে পারার কারণে স্বাভাবিকভাবে খাবারের পরিমাণ কমে যায়। ছবি: ফ্রিপিক

ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ কমাতে ভূমিকা রাখে

গবেষণায় দেখা গেছে, আইএফ শরীরে প্রদাহের লক্ষণ কমাতে পারে। প্রদাহ কমলে হৃদ্‌রোগ, জয়েন্টের সমস্যা এবং দীর্ঘমেয়াদি অনেক অসুখের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

কোষ মেরামত প্রক্রিয়া বা অটোফেজি সক্রিয় করে

ফাস্টিং অবস্থায় শরীর ক্ষতিগ্রস্ত কোষ ও অবাঞ্চিত প্রোটিন ভেঙে নতুন কোষ তৈরি করতে বেশি সক্রিয় হয়। এই অটোফেজি বয়স কমানোর প্রক্রিয়া এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়া ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

মানসিক স্বচ্ছতা ও শক্তি বাড়ায়

অনেকে জানান, আইএফ করলে ‘ব্রেন ফগ’ কমে, মনোযোগ বাড়ে, আর সারাদিন প্রায় একই রকম শক্তি পাওয়া যায়। স্থায়ী শক্তির এই অনুভূতিও আইএফকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং হলো একটি সহজ-সরল খাবার বিরতির প্যাটার্ন, যা জীবনযাপনের ব্যস্ততার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ। দ্রুত ফল, বৈজ্ঞানিক উপকারিতা এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সুবিধার কারণে এটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়েছে। তবে সবার শরীর আলাদা; তাই আইএফ শুরু করার আগে নিজের স্বাস্থ্য-অবস্থা, কাজের ধরন এবং ব্যক্তিগত অভ্যাস বিবেচনা করা জরুরি।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন

সম্পর্কিত