চরচা ডেস্ক

আজকাল অনেকেরই অভ্যাস ডিনারের প্লেট হাতে নিয়ে সোফায় বসা, আর সামনে টিভি চলছে। টিভি ছাড়াও অনেকে ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ বা ট্যাব ছেড়ে মুভি কিংবা সিরিজ দেখেন। ব্যস্ত দিনের পর একটু আরাম করতে করতে খাবার খাওয়ায় যেন কোনো সমস্যা নেই এটাই মনে হয়। কিন্তু গবেষণা বলছে, এই ‘মাল্টিটাস্কিং’ অভ্যাসটা আমাদের শরীর ও মনের জন্য যতটা আরামদায়ক মনে হয়, বাস্তবে ততটা নয়। বরং এতে খাবারের স্বাদ, পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, এমনকি হজম,সবই প্রভাবিত হয়।
মনোযোগ হারানোর ফলে বেশি খাওয়ার ঝুঁকি
খাবার খাওয়া শুধু পেট ভরানোর কাজ নয়; এটি একটি সেন্সরি প্রক্রিয়া। খাবারের রং, গন্ধ, গঠন সবই মস্তিষ্ক খাবার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করে। কিছু দেখতে দেখতে সেই মনোযোগ পুরোপুরি সরে যায় পর্দার দিকে। ফলে আপনি কখন কতটা খাচ্ছেন, তা বুঝতে পারেন না।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টিভি দেখতে দেখতে খাবার খায়, তারা সাধারণত ২০-৩০% বেশি ক্যালরি গ্রহণ করে। এছাড়া পরের খাবারের সময়ও তাদের ক্ষুধা বাড়তি থাকে, কারণ মস্তিষ্ক আগের খাবারটিকে ‘পরিপূর্ণ খাবার’ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না।
খাবারের স্বাদ কম অনুভূত হয়
টিভির শব্দ, গল্প, উত্তেজনা, এসব বিভ্রান্তির কারণে খাবারের স্বাদ, গন্ধ ঠিকমতো বোঝা যায় না। কারণ তখন আমরা অন্যমনস্ক থাকি। অনেক সময় খাবার যত ভালোই রান্না হোক না কেন, মনোযোগ অন্যদিকে থাকায় তৃপ্তি কম হয় বিবিসিকে এমনটা জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিনজেন খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থার একজন ডেটা সায়েন্স গবেষক ফ্লোর ভ্যান মীর। পাশাপাশি ‘মাইন্ডফুল ইটিং’-এর যে উপকারিতা,যেমন ধীরে খাওয়া, প্রতিটি কামড় উপভোগ করা তা হারিয়ে যায়।

হজমে সমস্যা তৈরি হতে পারে
হজম শুধু পেটের কাজ নয়; খাবার ভালোভাবে চিবানো এবং ধীরে ধীরে খাওয়া হজমকে সহজ করে। কিন্তু টিভির সামনে খেতে গিয়ে আমরা দ্রুত বড় কামড় খেয়ে ফেলি, বা ভালোভাবে চিবাই না। এর ফলে গ্যাস, পেটফাঁপা, বদহজমের মতো সমস্যা বাড়ে।
ওজন বাড়ানোর অন্যতম কারণ
অনেকেই ব্যায়াম করেন, ডায়েট অনুসরণ করেন, তবু ওজন কমে না। কারণটি হয়তো টিভির সামনে খাবার খাওয়ার অভ্যাসেই লুকিয়ে আছে। বেশি ক্যালরি খাওয়া + কম মনোযোগ + দ্রুত খাওয়া = ওজন বাড়ার উপযুক্ত সমীকরণ। বিশেষ করে হাই-ক্যালরি খাবার যেমন নুডলস, চিপস, ভাজাপোড়া টিভি দেখার সময়েই বেশি খাওয়া হয়।
মানসিক সংযোগ তৈরি হয়ে যায়
মস্তিষ্কে একটি অভ্যাসগত সংযোগ তৈরি হয় ‘টিভি মানেই খাবার’। ফলে ক্ষুধা না থাকলেও টিভি ছাড়লেই কিছু একটা খেতে ইচ্ছে করে। এই অভ্যাস ভাঙা কঠিন হয়ে যায়, এবং তা অপ্রয়োজনীয় স্ন্যাকিং বাড়িয়ে দেয়।

শিশুদের ক্ষেত্রে আরো ক্ষতিকর
শিশুরা টিভির সামনে খেতে খেতে বড় হলে তাদের খাওয়ার আচরণও অনিয়মিত হয়ে যায়। তারা খাবারকে ‘বিনোদনের অংশ’ হিসেবে দেখতে শেখে এবং ভবিষ্যতে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।
তাহলে কি টিভি দেখে খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ?
একেবারেই নয়। তবে সময় বেছে নিতে হবে। মূল খাবারের সময় (ব্রেকফাস্ট/লাঞ্চ/ডিনার) না দেখে হালকা স্ন্যাকস বা ফল খেতে খেতে টিভি দেখা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। কিন্তু প্রতিদিনের প্রধান খাবারটি খেতে চেষ্টা করুন টেবিলে বসে, ধীরে, মনোযোগ দিয়ে।
টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া দেখতে যত নিরীহ মনে হয়, শরীরের জন্য তা ততটাই ক্ষতিকর। ওজন নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে হজম, এমনকি খাবারের সঙ্গে মানসিক সম্পর্ক সবকিছুর ওপরই এর প্রভাব পড়ে। তাই আজই একটু সচেতন হোন; খাবারের সময় খাবারেই মন দিন। টিভির আনন্দ পরে উপভোগ করুন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, ওয়েলনেস ডাভ

আজকাল অনেকেরই অভ্যাস ডিনারের প্লেট হাতে নিয়ে সোফায় বসা, আর সামনে টিভি চলছে। টিভি ছাড়াও অনেকে ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ বা ট্যাব ছেড়ে মুভি কিংবা সিরিজ দেখেন। ব্যস্ত দিনের পর একটু আরাম করতে করতে খাবার খাওয়ায় যেন কোনো সমস্যা নেই এটাই মনে হয়। কিন্তু গবেষণা বলছে, এই ‘মাল্টিটাস্কিং’ অভ্যাসটা আমাদের শরীর ও মনের জন্য যতটা আরামদায়ক মনে হয়, বাস্তবে ততটা নয়। বরং এতে খাবারের স্বাদ, পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, এমনকি হজম,সবই প্রভাবিত হয়।
মনোযোগ হারানোর ফলে বেশি খাওয়ার ঝুঁকি
খাবার খাওয়া শুধু পেট ভরানোর কাজ নয়; এটি একটি সেন্সরি প্রক্রিয়া। খাবারের রং, গন্ধ, গঠন সবই মস্তিষ্ক খাবার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করে। কিছু দেখতে দেখতে সেই মনোযোগ পুরোপুরি সরে যায় পর্দার দিকে। ফলে আপনি কখন কতটা খাচ্ছেন, তা বুঝতে পারেন না।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টিভি দেখতে দেখতে খাবার খায়, তারা সাধারণত ২০-৩০% বেশি ক্যালরি গ্রহণ করে। এছাড়া পরের খাবারের সময়ও তাদের ক্ষুধা বাড়তি থাকে, কারণ মস্তিষ্ক আগের খাবারটিকে ‘পরিপূর্ণ খাবার’ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না।
খাবারের স্বাদ কম অনুভূত হয়
টিভির শব্দ, গল্প, উত্তেজনা, এসব বিভ্রান্তির কারণে খাবারের স্বাদ, গন্ধ ঠিকমতো বোঝা যায় না। কারণ তখন আমরা অন্যমনস্ক থাকি। অনেক সময় খাবার যত ভালোই রান্না হোক না কেন, মনোযোগ অন্যদিকে থাকায় তৃপ্তি কম হয় বিবিসিকে এমনটা জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিনজেন খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থার একজন ডেটা সায়েন্স গবেষক ফ্লোর ভ্যান মীর। পাশাপাশি ‘মাইন্ডফুল ইটিং’-এর যে উপকারিতা,যেমন ধীরে খাওয়া, প্রতিটি কামড় উপভোগ করা তা হারিয়ে যায়।

হজমে সমস্যা তৈরি হতে পারে
হজম শুধু পেটের কাজ নয়; খাবার ভালোভাবে চিবানো এবং ধীরে ধীরে খাওয়া হজমকে সহজ করে। কিন্তু টিভির সামনে খেতে গিয়ে আমরা দ্রুত বড় কামড় খেয়ে ফেলি, বা ভালোভাবে চিবাই না। এর ফলে গ্যাস, পেটফাঁপা, বদহজমের মতো সমস্যা বাড়ে।
ওজন বাড়ানোর অন্যতম কারণ
অনেকেই ব্যায়াম করেন, ডায়েট অনুসরণ করেন, তবু ওজন কমে না। কারণটি হয়তো টিভির সামনে খাবার খাওয়ার অভ্যাসেই লুকিয়ে আছে। বেশি ক্যালরি খাওয়া + কম মনোযোগ + দ্রুত খাওয়া = ওজন বাড়ার উপযুক্ত সমীকরণ। বিশেষ করে হাই-ক্যালরি খাবার যেমন নুডলস, চিপস, ভাজাপোড়া টিভি দেখার সময়েই বেশি খাওয়া হয়।
মানসিক সংযোগ তৈরি হয়ে যায়
মস্তিষ্কে একটি অভ্যাসগত সংযোগ তৈরি হয় ‘টিভি মানেই খাবার’। ফলে ক্ষুধা না থাকলেও টিভি ছাড়লেই কিছু একটা খেতে ইচ্ছে করে। এই অভ্যাস ভাঙা কঠিন হয়ে যায়, এবং তা অপ্রয়োজনীয় স্ন্যাকিং বাড়িয়ে দেয়।

শিশুদের ক্ষেত্রে আরো ক্ষতিকর
শিশুরা টিভির সামনে খেতে খেতে বড় হলে তাদের খাওয়ার আচরণও অনিয়মিত হয়ে যায়। তারা খাবারকে ‘বিনোদনের অংশ’ হিসেবে দেখতে শেখে এবং ভবিষ্যতে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।
তাহলে কি টিভি দেখে খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ?
একেবারেই নয়। তবে সময় বেছে নিতে হবে। মূল খাবারের সময় (ব্রেকফাস্ট/লাঞ্চ/ডিনার) না দেখে হালকা স্ন্যাকস বা ফল খেতে খেতে টিভি দেখা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। কিন্তু প্রতিদিনের প্রধান খাবারটি খেতে চেষ্টা করুন টেবিলে বসে, ধীরে, মনোযোগ দিয়ে।
টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া দেখতে যত নিরীহ মনে হয়, শরীরের জন্য তা ততটাই ক্ষতিকর। ওজন নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে হজম, এমনকি খাবারের সঙ্গে মানসিক সম্পর্ক সবকিছুর ওপরই এর প্রভাব পড়ে। তাই আজই একটু সচেতন হোন; খাবারের সময় খাবারেই মন দিন। টিভির আনন্দ পরে উপভোগ করুন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, ওয়েলনেস ডাভ