চরচা ডেস্ক

২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারে প্রথম ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর কথা বলেছিলেন। ২০২৪ সালেও তিনি যখন একই কথা বলেন, তখন আমেরিকানরা ভাবতে থাকে, এবার হয়তো উচ্চ সামরিক ব্যয় বা অসম বোঝা থেকে মুক্তি মিলবে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানটি এমন এক পররাষ্ট্রনীতির ইঙ্গিত দিয়েছিল, যা মতাদর্শের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামা যুগের ব্যয়বহুল জাতি গঠনের কর্মসূচি বন্ধ হবে।
এখন প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে, দ্বিতীয় মেয়াদের অনেকটা পথ পেরিয়ে গেলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি সত্যিই তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন? নাকি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এমন এক পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা প্রকৃতপক্ষে আক্রমণাত্মক এবং প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ?
আমেরিকা ফার্স্ট নীতি আসলে কী?
প্রথমত, আমেরিকার নিজস্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখার মানে এই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। এর মানে বাস্তব হুমকিকে প্রতিরোধ করা বা আঞ্চলিক সংঘাতকে অস্তিত্বগত সংকট হিসেবে দেখানো নয়। দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রয়োজনীয় সমুদ্রপথ, বাণিজ্য রুট এবং বাজার–এগুলোর অবাধ প্রবেশাধিকার, কারণ এর ওপর আমেরিকার সমৃদ্ধি নির্ভর করে।
তৃতীয়ত, সমান শক্তিসম্পন্ন প্রতিদ্বন্দ্বীর উত্থান প্রতিরোধ করা, যা বহু ক্ষেত্রে আমেরিকান স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। চতুর্থত, স্থিতিশীলতা ও উন্মুক্ত বাণিজ্যে যাদের অভিন্ন স্বার্থ আছে, এমন মিত্রদের নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক বজায় রাখা।
সত্যিকারের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি এই মৌলিক স্বার্থগুলোকে অগ্রাধিকার দেবে, প্রকৃত সংকটের জন্য সম্পদ সংরক্ষণ করবে এবং অপ্রয়োজনীয় সংঘাত এড়াবে।
আমেরিকা ফার্স্ট নাকি আমেরিকার আগ্রাসন?
ব্রিটিশ সাময়িকী ইকনোমিস্ট বলছে, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে বেশকিছু ফাঁকফোকর আছে। তিনি যুদ্ধ শেষ করার এবং সেনাদের ঘরে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিই আবার আমেরিকার সামরিক শক্তি ব্যবহারে বিস্ময়কর আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন না- এমন প্রচার চালানো ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়েছেন প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিভিন্ন দেশে সেনা মোতায়েন বজায় রেখেছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে সামরিক অভিযান আরও বাড়িয়েছেন তিনি।
মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকানো যাক। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে আরও ভালো চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ তাঁর প্রশাসন কখনও সামরিক হামলার হুমকি দিচ্ছে, আবার কখনও কূটনৈতিক প্রস্তাব দিচ্ছে। অর্থাৎ তারা স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না।
২০২৫ সালের মাঝামাঝি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পরিপন্থী, এর প্রভাব যাই হোক না কেন। এগুলো আমেরিকার সুরক্ষার জন্য প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নয়; বরং মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক আধিপত্য কায়েমের লক্ষ্যে এই আঘাত হানা হয়েছে।
ইউক্রেনকে নিয়ে আমেরিকার নীতিও ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। ট্রাম্প প্রথমদিকে যে শান্তি পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন, সেখানে ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার কথা ছিল। ন্যাটো সম্প্রসারণ নিয়ে তিনি সংশয়ী ছিলেন এবং পুতিনের সঙ্গে চুক্তি করতে আগ্রহও দেখিয়েছিলেন।
কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, আমেরিকার চাপের জন্য ইউরোপীয় মিত্ররা ইউক্রেনকে আরও বেশি সহায়তা দিচ্ছে। এটা কৌশলগত সাফল্য না কৌশলগত বিভ্রান্তি–তা নির্ভর করে দিনের কোন সময়ে ট্রাম্প তার কোন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলছেন তার ওপর।
বাস্তব চিত্র কী বলে?
ট্রাম্প কি সত্যিই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুসরণ করছেন? উত্তর হলো, সবসময় না। আবার যখন করছেন তখনও আংশিক ও খাপছাড়াভাবে। এটি এখন এক ধরণের ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্প যা করতে চান, তার ওপরই এটা প্রয়োগ করা হয়। স্লোগানটি আকর্ষণীয়, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি এখন পরিচালিত হচ্ছে সুসংগঠিত কৌশলের বদলে ব্যক্তিগত প্রবৃত্তি ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবেচনায়।
যেসব আমেরিকান ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন এই আশায় যে, তিনি আমেরিকাকে অপ্রয়োজনীয় বৈদেশিক ঝামেলা থেকে মুক্ত করে দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে মনোযোগ দেবেন, তারা হতাশ হতে পারেন। কারণ তাদের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এখন বিদেশে আমেরিকান শক্তি প্রয়োগ করতে পছন্দ করেন। এবং তিনি তা করেন নিজের মতো করে এবং নিজের কারণেই। কোনোরকম কূটনৈতিক কৌশলের তোয়াক্কা না করে।
মোদ্দাকথা, ট্রাম্প এখন অনেক কিছুই করছেন। কিন্তু ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ সম্ভবত এসবের মধ্যে নেই।

২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারে প্রথম ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর কথা বলেছিলেন। ২০২৪ সালেও তিনি যখন একই কথা বলেন, তখন আমেরিকানরা ভাবতে থাকে, এবার হয়তো উচ্চ সামরিক ব্যয় বা অসম বোঝা থেকে মুক্তি মিলবে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানটি এমন এক পররাষ্ট্রনীতির ইঙ্গিত দিয়েছিল, যা মতাদর্শের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামা যুগের ব্যয়বহুল জাতি গঠনের কর্মসূচি বন্ধ হবে।
এখন প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে, দ্বিতীয় মেয়াদের অনেকটা পথ পেরিয়ে গেলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি সত্যিই তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন? নাকি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এমন এক পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা প্রকৃতপক্ষে আক্রমণাত্মক এবং প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ?
আমেরিকা ফার্স্ট নীতি আসলে কী?
প্রথমত, আমেরিকার নিজস্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখার মানে এই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। এর মানে বাস্তব হুমকিকে প্রতিরোধ করা বা আঞ্চলিক সংঘাতকে অস্তিত্বগত সংকট হিসেবে দেখানো নয়। দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রয়োজনীয় সমুদ্রপথ, বাণিজ্য রুট এবং বাজার–এগুলোর অবাধ প্রবেশাধিকার, কারণ এর ওপর আমেরিকার সমৃদ্ধি নির্ভর করে।
তৃতীয়ত, সমান শক্তিসম্পন্ন প্রতিদ্বন্দ্বীর উত্থান প্রতিরোধ করা, যা বহু ক্ষেত্রে আমেরিকান স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। চতুর্থত, স্থিতিশীলতা ও উন্মুক্ত বাণিজ্যে যাদের অভিন্ন স্বার্থ আছে, এমন মিত্রদের নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক বজায় রাখা।
সত্যিকারের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি এই মৌলিক স্বার্থগুলোকে অগ্রাধিকার দেবে, প্রকৃত সংকটের জন্য সম্পদ সংরক্ষণ করবে এবং অপ্রয়োজনীয় সংঘাত এড়াবে।
আমেরিকা ফার্স্ট নাকি আমেরিকার আগ্রাসন?
ব্রিটিশ সাময়িকী ইকনোমিস্ট বলছে, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে বেশকিছু ফাঁকফোকর আছে। তিনি যুদ্ধ শেষ করার এবং সেনাদের ঘরে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিই আবার আমেরিকার সামরিক শক্তি ব্যবহারে বিস্ময়কর আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন না- এমন প্রচার চালানো ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়েছেন প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিভিন্ন দেশে সেনা মোতায়েন বজায় রেখেছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে সামরিক অভিযান আরও বাড়িয়েছেন তিনি।
মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকানো যাক। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে আরও ভালো চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ তাঁর প্রশাসন কখনও সামরিক হামলার হুমকি দিচ্ছে, আবার কখনও কূটনৈতিক প্রস্তাব দিচ্ছে। অর্থাৎ তারা স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না।
২০২৫ সালের মাঝামাঝি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পরিপন্থী, এর প্রভাব যাই হোক না কেন। এগুলো আমেরিকার সুরক্ষার জন্য প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নয়; বরং মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক আধিপত্য কায়েমের লক্ষ্যে এই আঘাত হানা হয়েছে।
ইউক্রেনকে নিয়ে আমেরিকার নীতিও ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। ট্রাম্প প্রথমদিকে যে শান্তি পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন, সেখানে ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার কথা ছিল। ন্যাটো সম্প্রসারণ নিয়ে তিনি সংশয়ী ছিলেন এবং পুতিনের সঙ্গে চুক্তি করতে আগ্রহও দেখিয়েছিলেন।
কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, আমেরিকার চাপের জন্য ইউরোপীয় মিত্ররা ইউক্রেনকে আরও বেশি সহায়তা দিচ্ছে। এটা কৌশলগত সাফল্য না কৌশলগত বিভ্রান্তি–তা নির্ভর করে দিনের কোন সময়ে ট্রাম্প তার কোন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলছেন তার ওপর।
বাস্তব চিত্র কী বলে?
ট্রাম্প কি সত্যিই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুসরণ করছেন? উত্তর হলো, সবসময় না। আবার যখন করছেন তখনও আংশিক ও খাপছাড়াভাবে। এটি এখন এক ধরণের ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্প যা করতে চান, তার ওপরই এটা প্রয়োগ করা হয়। স্লোগানটি আকর্ষণীয়, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি এখন পরিচালিত হচ্ছে সুসংগঠিত কৌশলের বদলে ব্যক্তিগত প্রবৃত্তি ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবেচনায়।
যেসব আমেরিকান ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন এই আশায় যে, তিনি আমেরিকাকে অপ্রয়োজনীয় বৈদেশিক ঝামেলা থেকে মুক্ত করে দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে মনোযোগ দেবেন, তারা হতাশ হতে পারেন। কারণ তাদের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এখন বিদেশে আমেরিকান শক্তি প্রয়োগ করতে পছন্দ করেন। এবং তিনি তা করেন নিজের মতো করে এবং নিজের কারণেই। কোনোরকম কূটনৈতিক কৌশলের তোয়াক্কা না করে।
মোদ্দাকথা, ট্রাম্প এখন অনেক কিছুই করছেন। কিন্তু ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ সম্ভবত এসবের মধ্যে নেই।