দীর্ঘ সময় বসে থাকার ক্ষতি

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
দীর্ঘ সময় বসে থাকার ক্ষতি
ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটানা বসে থাকলে শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার প্রতিটিই স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

খাওয়ার পর পরই বসে থাকলে তা ধূমপানের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর এমন একটি ধারণা অনেকের মধ্যেই রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সারাদিনে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, যা ধূমপানের ঝুঁকির প্রায় কাছাকাছি।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বেশি বসে থাকার বিপদ সম্পর্কে তুলে ধরা হয়।

কেরালার কিমশেলথ ত্রিভান্দ্রামের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. দীনেশ ডেভিড সংবাদমাধ্যম বলেন, খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বসে থাকা ধমনীর জন্য ধূমপানের চেয়ে খারাপ, এমন কোনো প্রমাণ নেই।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, আসল বিপদটি অন্য জায়গায় সারাদিনে আট ঘণ্টার বেশি শারীরিক কার্যকলাপ ছাড়া বসে থাকা অনেক বেশি ক্ষতিকর। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ধূমপানের মতোই মারাত্মক হতে পারে।

‘দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা’ বলতে শুধু খাবার খাওয়ার পরেই বসা নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটানা বসে থাকলে শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার প্রতিটিই স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।

বসে থাকার সময় মেটাবলিজম বা বিপাক প্রক্রিয়া প্রায় ৩০% ধীর হয়ে যায়। ফলে ওজন বাড়ে এবং ধমনীতে ফ্যাট বা চর্বি জমতে শুরু করে, যা এথেরোস্ক্লেরোসিস বা ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়া রোগ সৃষ্টি করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন আট ঘণ্টার বেশি বসে থাকলে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। কিছু গবেষণায় দেখা যায়, দিনে আট ঘণ্টার বেশি বসে থাকার সঙ্গে মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ৩৪% বৃদ্ধি পায়। এটি দৈনিক ১-৫টি সিগারেট পান করার মাধ্যমে সৃষ্ট হৃদরোগের ঝুঁকির প্রায় সমান।

দীর্ঘক্ষণ শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে শরীরে এলডিএল কোলেস্টেরল বা খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়, যা হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা থেকে মেটাবলিক ডিসফাংশন, স্থূলতা এবং টাইপ-টু ডায়াবেটিস হতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ডা. মোহিত শর্মা বলেন, ধূমপান সাধারণত আরও তাৎক্ষণিক এবং গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আসে। যেখানে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে।

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার প্রভাব শুধু হার্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর ফলে ঘাড়, কাঁধ এবং পিঠের নিচের অংশে পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া এবং দুর্বল রক্ত ​​সঞ্চালন হতে পারে। এছাড়াও, পা এর পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যা হাঁটা এবং ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পেশি দুর্বল হলে পড়ে যাওয়া বা ব্যায়ামের সময় আঘাতের ঝুঁকি বাড়ে। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও এর প্রভাব পড়ে, যেমন মনোযোগের অভাব, অনুপ্রেরণার অভাব এবং উদ্বেগ সৃষ্টি হতে পারে।

সম্পর্কিত