চরচা ডেস্ক

বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যেন এক অদৃশ্য জাল ঘিরে ফেলে। দায়িত্ব, কাজ, সম্পর্ক, আত্মোন্নয়ন- সবকিছুর ভার একসঙ্গে এসে পড়ে কাঁধে। প্রত্যেকে চায় নিজেকে আরও ভালো করে গড়ে তুলতে, আরও সাফল্য অর্জন করতে।
কিন্তু এই ‘নিজেকে সেরা প্রমাণের’ দৌড়ে আমরা অনেক সময় নিজের অজান্তেই গতি হারিয়ে ফেলি। একসময় বুঝে উঠতে পারি না, আমরা কি সত্যিই বাঁচছি, নাকি কেবল দৌড়াচ্ছি। ভেবে দেখুন আপনি ঘুম থেকে ওঠেন এমন এক মানসিকতা নিয়ে, যেখানে মস্তিষ্কে চলতে থাকে অবিরাম চিন্তা-আরও কী কী ঠিক করা দরকার, কী কী উন্নতি করা বাকি, কী কী অর্জন করা জরুরি। ফলস্বরূপ, দিন শুরু হয় উদ্বেগের মধ্য দিয়ে।
তারপর এর সঙ্গে যোগ হয় ডিজিটাল সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান চাপ যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে মনে হয়, ‘আমি যথেষ্ট করছি না।’ লক্ষ্যপূরণের দৌড়ে জীবন যেন ছোট হয়ে আসে, মুহূর্তগুলো হাতছাড়া হয়ে যায়। অথচ জীবনের ভারসাম্য ও শান্তি ফিরে পাওয়ার সহজতর উপায় হতে পারে একটু ‘ধীরে চলা’। বর্তমান মুহূর্তে সম্পূর্ণভাবে উপস্থিত থাকা আপনার জীবনবোধকেই পাল্টে দিতে পারে। তবে বর্তমানে বাঁচা মোটেও সহজ নয়। কারণ আজকের পৃথিবীতে মনোযোগ নষ্ট করার অসংখ্য উপাদান হাতের মুঠোয়। ফোনের নোটিফিকেশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের টান এবং একসঙ্গে অনেক কাজ করার অভ্যাস সবকিছুই মনোযোগকে ভেঙে দেয়।

ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকোলজি-এ ২০২১ সালের এক গবেষণায় ৩০০ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে দেখা যায়, মানুষ কেন এত ঘন ঘন সোশ্যাল মিডিয়া চেক করে। গবেষণায় দেখা যায়, সংযোগে থাকার আকাঙ্ক্ষা, ‘কিছু মিস হয়ে যাওয়ার ভয়’ (ফোমোফোমো) এবং কাজ এড়ানোর প্রবণতা এই তিনটি কারণেই মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি এতটা টান অনুভব করে। বিশেষ করে, যখন মন শান্ত বা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে যেমন পড়াশোনা বা টিভি দেখার সময় তখনই মানুষ সবচেয়ে বেশি ফোনে হাত দেয়।
এই গবেষণা আমাদের একটি সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায় সোশ্যাল মিডিয়া ধীরে ধীরে আমাদের মস্তিষ্ককে ক্রমাগত উদ্দীপনা খোঁজার অভ্যাসে অভ্যস্ত করে তুলছে। এই অভ্যাস শুধু ফোনে সীমাবদ্ধ থাকে না, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে। মস্তিষ্ক যখন নিয়মিত উত্তেজনা চায়, তখন স্থির মুহূর্তগুলো অস্বস্তিকর লাগে। কিছু না ঘটলে মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
এই বিভ্রান্তি শুধু মনোযোগই নষ্ট করে না, বরং সময়বোধকেও বিকৃত করে দেয়। জার্নাল অব সাইক্রিয়াট্রিক রিসার্চ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত, তারা কাজের সময়কে বাস্তবের তুলনায় অনেক দীর্ঘ মনে করেন। অর্থাৎ, মন যখন বারবার বাইরের উদ্দীপনায় টানা পড়ে, তখন সময়ও বিকৃত হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো অগোচরে হারিয়ে যায়।

অন্যদিকে, ধীরে চলা বা মাইন্ডফুলনেস-এই অভ্যাসটিকেই উল্টে দিতে পারে। নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড বায়োবিহেভিওরাল রিভিউস-এ প্রকাশিত এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মননশীলতা বা ধ্যান আমাদের সময় অনুভবের ক্ষমতাকে বদলে দেয়। যারা দীর্ঘমেয়াদি ধ্যান করেন, তারা সাধারণ মানুষের তুলনায় সময়কে ‘ধীরে বয়ে যাওয়া’ হিসেবে অনুভব করেন। যদিও বাস্তবে সময় একই থাকে, কিন্তু তাদের কাছে প্রতিটি মুহূর্তের মান অনেক গভীর ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। তাদের কাছে গত সপ্তাহ বা মাসও তুলনামূলক দীর্ঘ মনে হয়, যদিও বাস্তবে সময় মাপার নির্ভুলতায় কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ধ্যান আমাদের সময়ের বাস্তব মাপ না বদলালেও, সময় ‘বয়ে যাওয়ার’ অনুভূতিকে ধীর করে দেয়। এই ‘ধীরে চলা’ মানে কিন্তু আলস্য নয়। বরং এটি এক সচেতন জীবনবোধ-যেখানে আপনি সিদ্ধান্ত নেন প্রতিটি মুহূর্তকে পুরোপুরি উপভোগ করবেন। এটি শুরু হতে পারে ছোট ছোট পদক্ষেপে যেমন- এক কাপ চা হাতে সূর্যাস্ত দেখা, প্রিয়জনের সঙ্গে মন খুলে কথা বলা বা কাজের মাঝখানে এক মুহূর্ত গভীর শ্বাস নেওয়া।
যখন আপনি ধীরে চলতে শেখেন, তখনই জীবন তার আসল রঙে ফিরে আসে। প্রতিটি অভিজ্ঞতা পূর্ণতা পায়, সম্পর্কগুলো গভীর হয় এবং সময় যেন প্রসারিত হয়ে যায়। কারণ আপনি তখন সত্যিই ‘এখানে’ আছেন, ‘এখন’-এর মধ্যে আছেন। ধীরে চলা মানে সময়কে বাড়ানো নয়, বরং জীবনকে গভীরভাবে অনুভব করা। এই মননশীল উপস্থিতিই আমাদের শেখায় জীবনের আসল সৌন্দর্য দৌড়ে নয়, থেমে থাকার মাঝেই লুকিয়ে আছে।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস

বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যেন এক অদৃশ্য জাল ঘিরে ফেলে। দায়িত্ব, কাজ, সম্পর্ক, আত্মোন্নয়ন- সবকিছুর ভার একসঙ্গে এসে পড়ে কাঁধে। প্রত্যেকে চায় নিজেকে আরও ভালো করে গড়ে তুলতে, আরও সাফল্য অর্জন করতে।
কিন্তু এই ‘নিজেকে সেরা প্রমাণের’ দৌড়ে আমরা অনেক সময় নিজের অজান্তেই গতি হারিয়ে ফেলি। একসময় বুঝে উঠতে পারি না, আমরা কি সত্যিই বাঁচছি, নাকি কেবল দৌড়াচ্ছি। ভেবে দেখুন আপনি ঘুম থেকে ওঠেন এমন এক মানসিকতা নিয়ে, যেখানে মস্তিষ্কে চলতে থাকে অবিরাম চিন্তা-আরও কী কী ঠিক করা দরকার, কী কী উন্নতি করা বাকি, কী কী অর্জন করা জরুরি। ফলস্বরূপ, দিন শুরু হয় উদ্বেগের মধ্য দিয়ে।
তারপর এর সঙ্গে যোগ হয় ডিজিটাল সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান চাপ যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে মনে হয়, ‘আমি যথেষ্ট করছি না।’ লক্ষ্যপূরণের দৌড়ে জীবন যেন ছোট হয়ে আসে, মুহূর্তগুলো হাতছাড়া হয়ে যায়। অথচ জীবনের ভারসাম্য ও শান্তি ফিরে পাওয়ার সহজতর উপায় হতে পারে একটু ‘ধীরে চলা’। বর্তমান মুহূর্তে সম্পূর্ণভাবে উপস্থিত থাকা আপনার জীবনবোধকেই পাল্টে দিতে পারে। তবে বর্তমানে বাঁচা মোটেও সহজ নয়। কারণ আজকের পৃথিবীতে মনোযোগ নষ্ট করার অসংখ্য উপাদান হাতের মুঠোয়। ফোনের নোটিফিকেশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের টান এবং একসঙ্গে অনেক কাজ করার অভ্যাস সবকিছুই মনোযোগকে ভেঙে দেয়।

ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকোলজি-এ ২০২১ সালের এক গবেষণায় ৩০০ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে দেখা যায়, মানুষ কেন এত ঘন ঘন সোশ্যাল মিডিয়া চেক করে। গবেষণায় দেখা যায়, সংযোগে থাকার আকাঙ্ক্ষা, ‘কিছু মিস হয়ে যাওয়ার ভয়’ (ফোমোফোমো) এবং কাজ এড়ানোর প্রবণতা এই তিনটি কারণেই মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি এতটা টান অনুভব করে। বিশেষ করে, যখন মন শান্ত বা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে যেমন পড়াশোনা বা টিভি দেখার সময় তখনই মানুষ সবচেয়ে বেশি ফোনে হাত দেয়।
এই গবেষণা আমাদের একটি সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায় সোশ্যাল মিডিয়া ধীরে ধীরে আমাদের মস্তিষ্ককে ক্রমাগত উদ্দীপনা খোঁজার অভ্যাসে অভ্যস্ত করে তুলছে। এই অভ্যাস শুধু ফোনে সীমাবদ্ধ থাকে না, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে। মস্তিষ্ক যখন নিয়মিত উত্তেজনা চায়, তখন স্থির মুহূর্তগুলো অস্বস্তিকর লাগে। কিছু না ঘটলে মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
এই বিভ্রান্তি শুধু মনোযোগই নষ্ট করে না, বরং সময়বোধকেও বিকৃত করে দেয়। জার্নাল অব সাইক্রিয়াট্রিক রিসার্চ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত, তারা কাজের সময়কে বাস্তবের তুলনায় অনেক দীর্ঘ মনে করেন। অর্থাৎ, মন যখন বারবার বাইরের উদ্দীপনায় টানা পড়ে, তখন সময়ও বিকৃত হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো অগোচরে হারিয়ে যায়।

অন্যদিকে, ধীরে চলা বা মাইন্ডফুলনেস-এই অভ্যাসটিকেই উল্টে দিতে পারে। নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড বায়োবিহেভিওরাল রিভিউস-এ প্রকাশিত এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মননশীলতা বা ধ্যান আমাদের সময় অনুভবের ক্ষমতাকে বদলে দেয়। যারা দীর্ঘমেয়াদি ধ্যান করেন, তারা সাধারণ মানুষের তুলনায় সময়কে ‘ধীরে বয়ে যাওয়া’ হিসেবে অনুভব করেন। যদিও বাস্তবে সময় একই থাকে, কিন্তু তাদের কাছে প্রতিটি মুহূর্তের মান অনেক গভীর ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। তাদের কাছে গত সপ্তাহ বা মাসও তুলনামূলক দীর্ঘ মনে হয়, যদিও বাস্তবে সময় মাপার নির্ভুলতায় কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ধ্যান আমাদের সময়ের বাস্তব মাপ না বদলালেও, সময় ‘বয়ে যাওয়ার’ অনুভূতিকে ধীর করে দেয়। এই ‘ধীরে চলা’ মানে কিন্তু আলস্য নয়। বরং এটি এক সচেতন জীবনবোধ-যেখানে আপনি সিদ্ধান্ত নেন প্রতিটি মুহূর্তকে পুরোপুরি উপভোগ করবেন। এটি শুরু হতে পারে ছোট ছোট পদক্ষেপে যেমন- এক কাপ চা হাতে সূর্যাস্ত দেখা, প্রিয়জনের সঙ্গে মন খুলে কথা বলা বা কাজের মাঝখানে এক মুহূর্ত গভীর শ্বাস নেওয়া।
যখন আপনি ধীরে চলতে শেখেন, তখনই জীবন তার আসল রঙে ফিরে আসে। প্রতিটি অভিজ্ঞতা পূর্ণতা পায়, সম্পর্কগুলো গভীর হয় এবং সময় যেন প্রসারিত হয়ে যায়। কারণ আপনি তখন সত্যিই ‘এখানে’ আছেন, ‘এখন’-এর মধ্যে আছেন। ধীরে চলা মানে সময়কে বাড়ানো নয়, বরং জীবনকে গভীরভাবে অনুভব করা। এই মননশীল উপস্থিতিই আমাদের শেখায় জীবনের আসল সৌন্দর্য দৌড়ে নয়, থেমে থাকার মাঝেই লুকিয়ে আছে।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস