মিয়ানমারে কেন পিছু হটছে বিদ্রোহীরা

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
মিয়ানমারে কেন পিছু হটছে বিদ্রোহীরা
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপগুলো, যেমন তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ) ২০২৩ সালের অক্টোবরে ‘অপারেশন ১০২৭’ চালিয়ে জান্তার ওপর বড় ধাক্কা দিয়েছিল। তখন শান রাজ্যের বড় অংশ দখল নেয় তারা। কিয়াউকম, হিসিপাও এবং লাশিওর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখল করেছিল বিদ্রোহীরা।

কিয়াউকম এশিয়ান হাইওয়ে ১৪-এর ওপর অবস্থিত , যা চীন সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অংশে বাণিজ্যের প্রধান পথ।

কিন্তু ২০২৫ সালে পরিস্থিতি উলটে গেছে। বিদ্রোহীরা পিছু হটছে, জান্তারা আবার এলাকা দখল করছে। কেন এমন হলো?

মিয়ানমারে জান্তা তার সেনা শক্তিকে পুনর্গঠিত করেছে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
মিয়ানমারে জান্তা তার সেনা শক্তিকে পুনর্গঠিত করেছে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

প্রথমত, জান্তা তার সেনা শক্তিকে পুনর্গঠিত করেছে। ২০২৩ এর শেষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর তারা জোরপূর্বক নিয়োগ (কনস্ক্রিপশন) চালু করে। ফলে ৬০ হাজারের বেশি যুবক সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে, যদিও তারা অভিজ্ঞতাহীন। এতে জান্তা বাহিনী পুনরায় শক্তিশালী হয়েছে।

বিদ্রোহী সূত্রগুলো স্বীকার করেছে যে, এই নতুন সেনারা ড্রোন এবং বিমান হামলার চালিয়ে যুদ্ধের ভারসাম্য উল্টে দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কিয়াউকম শহরটি টিএনএলএ দখল করেছিল গত বছরের কয়েক মাসের কঠোর লড়াইয়ে, কিন্তু এই মাসে মাত্র তিন সপ্তাহে জান্তা পুনরুদ্ধার করেছে। একইভাবে, হিসিপাও এবং লাশিও পুনরায় জান্তার অধীনে চলে এসেছে।

দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন জান্তাকে সুবিধা দিয়েছে। বিদ্রোহীরা প্রথমে সস্তা ড্রোনের সুবিধা নিয়ে এগিয়ে ছিল, কিন্তু জান্তা চীন থেকে হাজার হাজার ড্রোন কিনে নিয়েছে এবং যুদ্ধের ময়দানে থাকা ইউনিটগুলোকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এছাড়া, ধীরগতির মোটরাইজড প্যারাগ্লাইডার ব্যবহার করে যা হালকাভাবে সুরক্ষিত এলাকার তারা নির্ভুল বোমা হামলা চালাচ্ছে। চীন এবং রাশিয়া থেকে সরবরাহ করা যুদ্ধবিমান দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বিমান হামলা চালানো হচ্ছে, যা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শহরগুলোকে ধ্বংস করছে।

মিয়ানমারে এ বছর হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, যা বিদ্রোহীদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্টের (অ্যাকলেড) জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক এবং সশস্ত্র সংঘাতের তথ্য সংগ্রহে বিশেষজ্ঞ সু মন বিবিসিকে বলেন, ড্রোন হামলা বিদ্রোহীদের পিছু হটতে বাধ্য করেছে। এছাড়া, জান্তার জ্যামিং প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে, যা বিদ্রোহীদের ড্রোনগুলোকে অকার্যকর করে দিচ্ছে।

এখানে চীনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চীন জান্তার ডিসেম্বর নির্বাচনকে সমর্থন করছে। এতে অংশ নিতে পারবে না অং সান সু চি’র ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি। সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে চীন দ্বৈত ব্যবহারের পণ্য রপ্তানি রপ্তানি বন্ধ করেছে, যা বিদ্রোহীদের ড্রোন এবং অস্ত্র সরবরাহকে কঠিন করে তুলেছে।

সম্পর্কিত