ইরান কেন আমেরিকাকে বিস্ময়কর প্রস্তাব দিচ্ছে?

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
ইরান কেন আমেরিকাকে বিস্ময়কর প্রস্তাব দিচ্ছে?

আমেরিকার পক্ষ থেকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা ভেঙে দেওয়া এবং ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিয়ে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ১২ দিনের বোমা হামলা চালানোর পর মাত্র পাঁচ মাস কেটেছে। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ধ্বংস হয়ে গেছে, শীর্ষ জেনারেলরা নিহত হয়েছেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলো মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হতে পারত ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা এবং এর জন্য যারা দায়ী- ইসরায়েল ও আমেরিকাকে অভিশাপ দেওয়া। অথচ তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ঠিক উল্টো সংকেত দিচ্ছেন।

এটাই যথেষ্ট বিস্ময়কর যে আব্বাস আরাঘচি দ্য ইকোনমিস্টকে তেহরানে সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তার চেয়ে বড় কথা যে তিনি তার সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন ইংরেজিতে, তার মিডিয়া টিমের পরামর্শের বিরুদ্ধে গিয়ে। এখানে উল্লেখ্য, তিনি সেই প্রতিবেদকের সঙ্গেও কথা বলতে রাজি হয়েছেন, যাকে এর আগে ইরানি কর্তৃপক্ষ আটক করেছিল। এই সব অপ্রত্যাশিত উদ্যোগ যেন একটি বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করছে- তিনি কী বলেছেন। আরাঘচি ঘোষণা করেন, ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা তো দূরের কথা, ইরান আমেরিকার সঙ্গে একটি ‘ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি’ করতে প্রস্তুত। ধারণা করা হয়, সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান এই একই বার্তা ১৮ নভেম্বর ওয়াশিংটন সফরের সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি পৌঁছে দিয়েছেন ইরানের পক্ষ থেকে। এক ইরানি বিশ্লেষক বলেন, “ইরানি প্রশাসন একটি চুক্তি করতে মরিয়া”।

শুভ ইঙ্গিত

আরাঘচি নিজেকে দুর্বল হিসেবে প্রকাশ করতে চান না। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু নির্দেশ মানার জন্য নই।” তিনি আরও বলেন, আবার লড়াই বেঁধে গেলে ইরানও প্রস্তুত, ১২ দিনের যুদ্ধ তাদের কঠিন শিক্ষা দিয়েছে। তার দেশ ইতিমধ্যে আরও উন্নত সমরাস্ত্র তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

ইরানি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অনবরত দেখাচ্ছে, কীভাবে মরুভূমির গোপন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করা হচ্ছে, কালো পোশাকে সশস্ত্র লোকজন গোলাবারুদ বয়ে নিচ্ছে, আর ভয়াবহ বিস্ফোরণে আকাশ লাল হয়ে যাচ্ছে। “রাত দীর্ঘ আর দরবেশ জাগ্রত,” বলেন একজন ইরানি কর্মকর্তা।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো দম্ভোক্তি। ইরানের প্রতিরোধ ক্ষমতার তিনটি শাখার মধ্যে দুইটি- মধ্যপ্রাচ্যের প্রক্সি মিলিশিয়া এবং পারমাণবিক কর্মসূচি-আগের তুলনায় ক্ষীণ হয়েছে।

ইসরায়েল হামাস ও হিজবুল্লাহকে দমিয়ে দিয়েছে, যারা আগে ইরানের প্রক্সি হিসেবে কাজ করত। যদিও হুথি যোদ্ধারা ইয়েমেনে এখনো সক্রিয়, কিন্তু তারা ইসরায়েলের জন্য বড় ধরনের সমস্যা না। আমেরিকা ও ইসরায়েলের হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকেও পিছিয়ে দিয়েছে। বোমাবর্ষণের কারণেই হোক বা সতর্কতা থেকে হোক ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এখন বন্ধ আছে। তারপরও ইরানের সমৃদ্ধ করা প্রায় ৪০০ কেজি ইউরেনিয়ামের কী হয়েছে- এ প্রশ্নই ইরানের আলোচনায় কিছু প্রভাব বজায় রাখছে। ইরান পরমাণু স্থাপনাগুলোতে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। পশ্চিমা গোয়েন্দাদের ধারণা, ইরান হয়তো বোমা পড়ার আগেই পর্যাপ্ত উপাদান সরিয়ে ফেলেছে, যা দিয়ে একটি পারমাণবিক ক্ষেপনাস্ত্র বানানো সম্ভব। অথবা অনাবিষ্কৃত সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রও থাকতে পারে।

চাপে পড়ে থাকা ইরান আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে- এরকম সম্ভাবনাও আছে। ইরানের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা মনে করেন, আমেরিকা-ইসরায়েলের হামলার জবাব খুবই সতর্ক ছিল। আইআরজিসির এক সাবেক প্রধানের ছেলে এবং বিশ্লেষক হামজে সাফাভি বলেন, পরেরবার আমেরিকার উপসাগরীয় ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য হতে পারে। আরেক কর্মকর্তা বলেন, “ইরানের ওপর হামলায় যে দেশ সাহায্য করবে, তার যেকোনো ঘাঁটিতে আমরা আঘাত করব।” এতে উপসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হতে পারে।

ইরান স্পষ্টতই অনড় অবস্থান থেকে আলোচনা চাইছে না। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক-দুই দিক থেকেই সরকার চাপে। চীন ইরানের তেল কিনলেও অস্ত্র দেবে কি না, তাতে সন্দেহ। রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানিতে আপত্তি নেই, কিন্তু তার নিজস্ব মজুদ খুব বেশি না। অর্থনীতই সংকটাপন্ন। একটি পত্রিকার সম্পাদক বলেন, পানি সংকট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, দূষণ ও লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি এখন সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের সমস্যা- যার কারণে মানুষ বিক্ষোভ করছে। ফলে পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এখন ইরানের জন্য প্রয়োজন।

ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এক বছরে চালের দাম দ্বিগুণ হয়েছে; পেঁয়াজের দাম ৭০% বেড়েছে; তেলের দাম বেড়েছে ৪০%। ২০১৮ থেকে ২০২২-এর মধ্যে মাথাপিছু আয় ২০% কমেছে। সরকারি হিসাব মতে ইরানের এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। শিক্ষকরা বেতন পান ২৫০ ডলারেরও কম, যা ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের আগের তুলনায় বেশ কম।

ফুটন্ত কড়াইয়ে

তেহরানের রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলেও নতুন কোনো অবকাঠামো নির্মাণের কাজ দেখা যায় না। ছয় বছর আগের তুলনায় শহরের অবস্থা এখন অনেক খারাপ। ভিখারির সংখ্যা বেড়েছে। আগে যে যানজট ছিল ভয়াবহ, তা এখন অনেকটাই কম। উত্তর তেহরানে কিছু আধুনিক কফিশপ আছে, কিন্তু সেখানে লোকজনের যাতায়াত কম।

ইরান পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম গ্যাসসমৃদ্ধ দেশ, তবু গ্রীষ্মকালে প্রায়শই লোডশেডিং হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গ্যাসের বদলে সস্তা, নিম্নমানের তেল ব্যবহার করছে, যার ফলে বায়ুদূষণ হচ্ছে। ইরান প্রতিদিন প্রায় ৩ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উত্তোলন করছে, অথচ শাহের আমলে উত্তোলন করা হতো ছয় মিলিয়ন ব্যারেলের কাছাকাছি। ২০০৫ সালে সরকার যে ২০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েছিল, তার একটি লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেনি।

বিগত ছয় বছরের খরার কারণে অর্থনীতি ধুঁকছে। রাজধানীর আশপাশের জলাধারগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। তেহরানের পাহাড়গুলো সাধারণত বরফে ঢাকা থাকে, কিন্তু এখন কুয়াশা সরে গেলে কেবল শুকনো পাথর দেখা যায়। দক্ষিণের বড় শহর বুশেহরে পানি সরবরাহ একেবারে বন্ধ।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আগামী বছরে ১৭টি নয়, মাত্র পাঁচটি প্রদেশে ধান চাষ হবে। তিনি আরও যোগ করেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে তিনি রাজধানী খালি করার কথা ভাববেন।

ইরানের সরকার সব দোষ চাপায় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ওপর । কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ কিছু গোষ্ঠী এর ফলে লাভবান হয় এবং তারা কার্যকরী পরিবর্তন চায় না। নিষেধাজ্ঞার ফলে পশ্চিমের সঙ্গে বাণিজ্য কঠিন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে সরকারি উচ্চ শুল্কের কারণে অনেক চীনা পণ্য দেশে প্রবেশ করতে পারে না। একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রধান আরসলান কাজেমপুর বলেন যে এসব শুল্ক দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারকে শক্তিশালী করে এবং তার কোম্পানির বিক্রি বছরে ৪০% বেড়েছে। আইআরজিসিও অনেক চোরাচালান নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত।

অনেক ইরানি নাগরিক বলছেন, আসল সমস্যা হলো দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা। পানি সাশ্রয়ের বিজ্ঞাপন ঝুলছে রাস্তায়, অভিজাতদের ক্লাবে ফোয়ারা দিব্যি পানি ছিটিয়ে চলছে। ইরানে এখন সব ক্ষেত্রে অসন্তোষ চলছে। সাধারণ মানুষ খোলাখুলি সরকারকে নিয়ে অভিযোগ করে। এমনকি সরকারি কর্মকর্তারাও অনেক সময় একই কথা বলেন। সরকার ব্যস্ত বিরোধী মত দমনে। একজন চিকিৎসক এই প্রতিবেদককে বলেন, “এখানে কী করছেন? আপনাকে গ্রেপ্তার করতে পারে।” এক সংবাদপত্র সম্পাদক বলেন, “২৫ বছর আগে যা লিখতাম, তার ৮০% এখন আর প্রকাশ করতে পারি না।” তার কর্মীদের প্রতিনিয়ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় অথবা গ্রেপ্তার করা হয়। জরিমানা ও মামলার ভয়ে পত্রিকাটি পূর্বের তুলনায় অর্ধেক কপি ছাপতে বাধ্য হয়েছে এবং অপেক্ষাকৃত ছোট অফিসে চলে গেছে।

গত এক বছরে সরকার এক হাজারেরও বেশি মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, যা ১৯৮০ এর দশকের পর সর্বোচ্চ। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, জেলেই সন্দেহজনক ‘আত্মহত্যা’ বেড়েছে। ইসরায়েল সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইরানের গোপন তথ্য কতটা জানত, তা প্রকাশের পর সরকার আরও সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়েছে। ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এত চাপের পরও মানুষ মাঝেমধ্যে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে। মরুকরণের বিরুদ্ধে কৃষকেরা আন্দোলন করছে। বেকার, ট্রাকচালক, নার্স- সবাই ভর্তুকি কমানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ছাত্ররা সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদী: তারা স্লোগান দেয়, ‘আইআরজিসি-তোমরা ইরানের আইসিস।’ নির্বাচনের প্রতিও মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছিল মাত্র ১১%।

সরকারও বুঝতে পারছে যে সব বিষয়ে জনগনকে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এখন ধর্মীয় আচরণ চাপিয়ে দেওয়ার তেমন চেষ্টা নেই। আজান হয় বেশ নিচুস্বরে। সরকারি প্রচারণা এখন মাজারে নয়, হয় শপিংমলে। এক সার্জন তো বলেন, “আমরাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ।” বিশেষ করে নারীদের হিজাব পরানো নিয়ে সরকারের কড়াকড়ি প্রায় নেই বললেই চলে। আইন আছে ঠিকই, কিন্তু মরাল পুলিশিং নেই। সরকারি ভবন ছাড়া প্রায় সব জায়গায় নারীরা হিজাব ছাড়া চলাফেরা করেন। উত্তর তেহরানে মহিলাদের পোশাক দেখে রাস্তাগুলো যেন ফ্যাশন শো মনে হয়। এমনকি শীর্ষ কর্মকর্তারাও এখন নিয়ম মানতে আগ্রহী নন, শামখানির (ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার উপদেষ্টা) মেয়ের বিয়ের ফাঁস হওয়া ভিডিওতে তাকে হিজাববিহীন অবস্থায় দেখা যায়।

ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

এখন মনে হচ্ছে যে সরকার তার বিশ্বাসে স্থির নয়। জাতীয়তাবাদী চেতনা উজ্জীবিত করার জন্য রাজধানী শহরে প্রাক-ইসলামী পুরুষদের ছবি টাঙানো হয়েছে।

ইসলামী বিপ্লব চত্বরে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে একটি প্রাচীন পারস্য রাজা রোমান সম্রাটের সম্মান গ্রহণ করছেন। ইরানের এই প্রাচীন ইতিহাস উদযাপন আগে শাহের শাসনকালকে মনে করাত এবং বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ইরানে এটি নিষিদ্ধ ছিল। একজন চিকিৎসক বলেন, “পুরনো গল্প আর কাজ করছে না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা একটি সাধারণ প্রজাতন্ত্র হয়ে যাচ্ছি, ইসলামী প্রজাতন্ত্র আর নেই।”

জনগণের মধ্যে আমেরিকাবিরোধী মনোভাবও এখন কম। ইরানি কূটনীতিকরা আন্তরিকভাবে আমেরিকার কূটনীতিকদের সঙ্গে কাজ করছেন। আরাঘচি, ট্রাম্পের প্রধান বৈদেশিক দূত স্টিভ উইটকফকে কেবল ‘স্টিভ’ বলে সম্বোধন করেন। এমনকি আগের আমেরিকান দূতাবাসের (যা এখন জাদুঘর) একজন গাইড বলেন, ১৯৭৯ সালের বিপ্লবে ছাত্রদের দূতাবাস দখল করে সবাইকে বন্দি করা একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।

ধর্মগুরুদের বিভ্রান্ত সিদ্ধান্ত

জুন মাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়তো সাময়িকভাবে ইরানিদের একত্রিত করেছিল, কিন্তু এখন সেই সংহতি আর দেখা যাচ্ছে না। আইআরজিসি এই যুদ্ধে নিজেদের ক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ নিয়েছে। খামেনি যুদ্ধের সময় বাঙ্কারে ছিলেন এবং বাইরের জগতের সঙ্গে খুব কম যোগাযোগ রাখতেন। ধর্মগুরুদের দ্বারা সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করার কথা থাকলেও, যুদ্ধের শুরুতে নিহত জেনারেলদের মসজিদের প্রাঙ্গণে সম্মানের সঙ্গে সমাহিত করা হয়েছে।

ইরানের কট্টরপন্থী ‘হক’ এবং শান্তিপ্রিয় ‘দাভ’ দলের মধ্যে দ্বন্দ্বও আবার প্রকাশ্যে এসেছে। কট্টরপন্থীরা মনে করে, আমেরিকা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ২০১৫ সালে ইরান আমেরিকার সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করেছিল, কিন্তু এক বছর পর ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়ে তা বাতিল করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। আরাঘচি তখনও আমেরিকার প্রতিনিধি ‘স্টিভ’-এর সঙ্গে দর কষাকষি করছিলেন, সেই সময় আমেরিকা গ্রীষ্মে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলাকে অনুমোদন দিয়েছিল। পার্লামেন্টে হকপন্থীরা নিজেদের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই মাসে তারা দাভপন্থী অর্থমন্ত্রীকে অভিশংসন করেছেন। তারা হয়তো আমেরিকার সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করবেন না, কিন্তু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করা বা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিরোধিতা করবেন।

সরকারের ভেতরের বিভিন্ন পক্ষ একটি বড় পরিবর্তনের অপেক্ষায় আছে। খামেনি এখন ৮৬ বছর বয়সী, আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্থ এবং দুর্বল। তিনি সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীর তালিকা তৈরি করেছেন। তার ছেলে মুজতবা সেই তালিকায় নেই। অনেকে আশঙ্কা করছেন যে বিপ্লবী সরকার, যা এক রাজতন্ত্রকে উৎখাত করেছে, আবার বংশানুক্রমিক শাসনে ফিরে যেতে পারে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো প্রায়শই এমন ব্যক্তিদের দেয়া হয়, যারা জনগণের অপরিচিত এবং বিভিন্ন দলের সমর্থন পায়। ক্ষমতার লড়াইয়ে অর্থনৈতিক স্বার্থ আদর্শের চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলে।

অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শেষ হবে, না আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারে ফিরবে- কেউ বলতে পারছে না। ইসরায়েলের অনেকে মনে করছে ইরানের সরকার হয়তো পুরনো আচরণে ফিরে যেতে চাচ্ছে। তবে তেহরানের অস্থিরতা দেখাচ্ছে, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে সরকার হয়তো নিজেকে নতুনভাবে রূপান্তরিত করতে পারে।

সূত্র: দ্য ইকনোমিস্ট

সম্পর্কিত