চরচা ডেস্ক

ইউক্রেন আসলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কতটা বিশ্বাস করবে? এ প্রশ্ন ওঠার কারণ, রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত বন্ধে উদ্যোগী ট্রাম্প ইউক্রেন নিয়ে যেভাবে বারবার ভোল পাল্টাচ্ছেন তাতে ওই দেশে তার ইউরোপীয় মিত্ররা চিন্তিত। কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক বিশ্লেষণে ইউক্রেনের করুণ অবস্থা এবং তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলা হয়েছে।
আল জাজিরা লিখেছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে সরাসরি বৈঠকের পরিকল্পনা গত মঙ্গলবার ভেস্তে গেছে। ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বর্তমান ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘স্থগিত’ করা হোক।
বৈঠক আপাতত হবে না–এমন ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি কোনো ব্যর্থ বৈঠক চাই না। সময় নষ্ট করতেও চাই না, তাই দেখি কী হয়।” রাশিয়ার ইউক্রেনবিরোধী ৪২ মাসব্যাপী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যে শান্তি আলোচনা আবারও ভেস্তে গেল। গত আগস্টে আলাস্কায় তড়িঘড়ি করে আয়োজিত ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকের মাত্র দুই মাস পর এটা ঘটল। আলাস্কার বৈঠকেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
আল জাজিরা বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় ও রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে দুই পক্ষেরই ১০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এবার আলোচনার পরিকল্পনাই ভেস্তে গেল। আসলে এই সংঘাত বন্ধ করাটা রাশিয়ার আদৌ প্রয়োজন আছে কী?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের সর্বশেষ প্রস্তাব কী ছিল?
গত বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যেই’ শেষ করতে পারবেন। কিন্তু সেই কথার পর এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদও ১০ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো যুদ্ধ না থামায় ক্রমেই হতাশ হচ্ছেন ট্রাম্প।
পুতিনের দাবি, যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে হলে ইউক্রেনকে পুরোপুরি অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। রাশিয়ার দখলে থাকা এলাকার ওপর দাবি ছাড়তে হবে। অন্যদিকে, ইউক্রেন নিজের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে রাজি নয়। এই দুই বিপরীত অবস্থানের মধ্যে সমাধান বের করতে ট্রাম্প ব্যর্থ হয়েছেন।
গত রোববার রাতে ট্রাম্প নতুন প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, রাশিয়া যেন বর্তমান যুদ্ধক্ষেত্রের সীমারেখায় যুদ্ধ ‘স্থগিত’ করে। ভবিষ্যতের আলোচনায় ভূমি সংক্রান্ত ‘বিস্তারিত বিষয়গুলো’ সমাধান করা যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমি যা বলছি তা হলো–তাদের এখনই যুদ্ধ থামানো উচিত। যেখানে লড়াই চলছে সেখানেই থামা উচিত। সবাই বাড়ি ফিরে যাক। মানুষ হত্যা বন্ধ করুক। আর বিষয়টি শেষ হোক।”
বর্তমান ফ্রন্টলাইনটি দোনবাস অঞ্চলের ভেতর দিয়ে গেছে। এলাকাটি একটি শিল্পাঞ্চল। ফলে শিল্প উৎপাদনে যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ ধাক্কা লেগেছে। এই অঞ্চল নিয়ে ট্রাম্প বলেন, “এটা যেভাবে কেটে গেছে, সেভাবেই থাকুক। এখন জায়গাটা বিভক্ত। আমি মনে করি রাশিয়া ইতিমধ্যে প্রায় ৭৮ শতাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে। আপাতত যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকুক। পরে তারা চাইলে আলোচনার মাধ্যমে কিছু সমাধান বের করতে পারবে।”

ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা কি এই প্রস্তাবের পক্ষে ছিল?
হ্যাঁ। গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ ইউরোপীয় নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, তারা ‘অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধে’ ট্রাম্পের প্রস্তাবকে জোরালভাবে সমর্থন করছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান সংঘর্ষের সীমারেখাই আলোচনার সূচনাবিন্দু হওয়া উচিত।
ওই নেতারা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে শান্তি প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার অভিযোগ করেন। তারা বলেন, “রাশিয়ার বিলম্বকৌশল বারবার প্রমাণ করেছে যে শান্তির ব্যাপারে ইউক্রেনই একমাত্র আন্তরিক পক্ষ। আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি, পুতিন এখনো সহিংসতা ও ধ্বংসের পথই বেছে নিচ্ছেন।”
বিবৃতিতে ইউরোপীয় নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন যে তারা, “রাশিয়ার অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর চাপ আরও বাড়াবেন, যতক্ষণ না পুতিন সত্যিকার অর্থে শান্তির জন্য প্রস্তুত হন।”
রাশিয়ার অবস্থান কী?
গত সোমবার, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার আগে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ স্পষ্ট করে জানান যে রুশ প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ ‘স্থগিত’ করার ট্রাম্পের সর্বশেষ প্রস্তাবে রাজি নন।
তিনি বলেন, “রাশিয়ার অবস্থানের ধারাবাহিকতা অপরিবর্তিত”; অর্থাৎ যুদ্ধ শেষ করতে রাশিয়া এখনো তার শক্ত দাবিগুলোর ব্যাপারে অটল আছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার। বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে। ওইসব এলাকা নিজের বলে মস্কো দাবি করে আসছে।
মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, রাশিয়া ‘সপ্তাহান্তে’ আমেরিকাকে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছে। ওই বার্তায় তারা ইউক্রেনের পুরো দোনবাস অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে, শুধু দখল করা অংশ নয়।
সেদিনই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। পরে মস্কোতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আলাস্কা সম্মেলনে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল, রাশিয়ার অবস্থান সেগুলোর তুলনায় কোনো পরিবর্তন হয়নি।” লাভরভ আবার পুতিনের আলাস্কা সম্মেলনের সময়কার অবস্থান তুলে ধরে বলেন, রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে রাজি হবে কেবল তখনই, যখন সংঘাতের ‘মূল কারণগুলো’ দূর করা হবে। অর্থাৎ ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করতে হবে। রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলগুলো স্থায়ীভাবে ছাড়তে হবে। এটি কিয়েভের কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য
ট্রাম্প কি আলোচনার সময় তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন?
হ্যাঁ। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টায় ট্রাম্প বারবার তার অবস্থান বদলেছেন। পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসন, অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে ওয়াশিংটন ইউক্রেনের প্রতি অবিচল সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন একেবারেই ভিন্ন পথে চলছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন ডিসির ওভাল অফিসে এক বৈঠকে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন। তাদের মতে, আমেরিকা যে সাহায্য ইতিমধ্যে দিয়েছে তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি।
মার্চ মাসে ট্রাম্প মস্কোর বিরুদ্ধে ব্যাপক পরিসরের শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেন। আগস্টেও সেই হুমকি পুনরাবৃত্তি করেন। ওই মাসে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্পের আচরণ বদলে যায়। তিনি বরং জেলেনস্কির ওপর চাপ দিচ্ছিলেন ইউক্রেন যেন ভূমি ছাড় দিয়ে কোনো সমঝোতায় রাজি হয়। যদিও ক্রেমলিন তখনো দাবি করছিল ইউক্রেনকে ন্যাটো থেকে দূরে থাকতে হবে।
সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “কিছু ভূমি বিনিময় হবে, দুই পক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিতে হবে।” তবে পরের মাসেই আবার অবস্থান বদলে ট্রাম্প ইউক্রেনের পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, কিয়েভ তার দখল হারানো ভূমি পুনরুদ্ধার করতে পারবে, “বা হয়তো তার থেকেও বেশি কিছু অর্জন করতে পারবে।”
যুদ্ধের অর্থ তাহলে কী দাঁড়াল?
যুদ্ধের অর্থ দাঁড়াল মূলত আরও অনিশ্চয়তা। পরিকল্পিত শীর্ষ বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় আপাতত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না। গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আবারও হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন। তিনি মার্কিন টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের দাবি আবার তোলেন। তিনি আশায় ছিলেন, এর মাধ্যমে কিয়েভ রাশিয়ার ভেতরের লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে পারবে। কিন্তু তার অনুরোধ টেকেনি।
ট্রাম্প আগে এই প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তবে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন। জেলেনস্কি আবার সামরিক সহায়তা বাড়ানোর জন্যও হোয়াইট হাউসের ওপর চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু ট্রাম্প ঠারেঠোরে বলেই দিয়েছেন, ইউক্রেনকে সহায়তায় ন্যাটোর ইউরোপীয় মিত্ররাই আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত।
এখন ইউক্রেনের এই বিপদে পশ্চিম ইউরোপের মিত্র দেশগুলো কতটা থাকে এবং কী পরিমান সাহায্য দেয় সেটাই দেখার। শুধু সাহায্য করলেই তো হবে না, তা যেন মার্কিনিদের ছাঁটাই করা অর্থের ও অস্ত্রের সমান হয়। সে সক্ষমতা কী আদৌ ওই দেশগুলোর আছে?

ইউক্রেন আসলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কতটা বিশ্বাস করবে? এ প্রশ্ন ওঠার কারণ, রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত বন্ধে উদ্যোগী ট্রাম্প ইউক্রেন নিয়ে যেভাবে বারবার ভোল পাল্টাচ্ছেন তাতে ওই দেশে তার ইউরোপীয় মিত্ররা চিন্তিত। কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক বিশ্লেষণে ইউক্রেনের করুণ অবস্থা এবং তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলা হয়েছে।
আল জাজিরা লিখেছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে সরাসরি বৈঠকের পরিকল্পনা গত মঙ্গলবার ভেস্তে গেছে। ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বর্তমান ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘স্থগিত’ করা হোক।
বৈঠক আপাতত হবে না–এমন ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি কোনো ব্যর্থ বৈঠক চাই না। সময় নষ্ট করতেও চাই না, তাই দেখি কী হয়।” রাশিয়ার ইউক্রেনবিরোধী ৪২ মাসব্যাপী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যে শান্তি আলোচনা আবারও ভেস্তে গেল। গত আগস্টে আলাস্কায় তড়িঘড়ি করে আয়োজিত ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকের মাত্র দুই মাস পর এটা ঘটল। আলাস্কার বৈঠকেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
আল জাজিরা বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় ও রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে দুই পক্ষেরই ১০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এবার আলোচনার পরিকল্পনাই ভেস্তে গেল। আসলে এই সংঘাত বন্ধ করাটা রাশিয়ার আদৌ প্রয়োজন আছে কী?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের সর্বশেষ প্রস্তাব কী ছিল?
গত বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যেই’ শেষ করতে পারবেন। কিন্তু সেই কথার পর এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদও ১০ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো যুদ্ধ না থামায় ক্রমেই হতাশ হচ্ছেন ট্রাম্প।
পুতিনের দাবি, যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে হলে ইউক্রেনকে পুরোপুরি অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। রাশিয়ার দখলে থাকা এলাকার ওপর দাবি ছাড়তে হবে। অন্যদিকে, ইউক্রেন নিজের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে রাজি নয়। এই দুই বিপরীত অবস্থানের মধ্যে সমাধান বের করতে ট্রাম্প ব্যর্থ হয়েছেন।
গত রোববার রাতে ট্রাম্প নতুন প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, রাশিয়া যেন বর্তমান যুদ্ধক্ষেত্রের সীমারেখায় যুদ্ধ ‘স্থগিত’ করে। ভবিষ্যতের আলোচনায় ভূমি সংক্রান্ত ‘বিস্তারিত বিষয়গুলো’ সমাধান করা যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমি যা বলছি তা হলো–তাদের এখনই যুদ্ধ থামানো উচিত। যেখানে লড়াই চলছে সেখানেই থামা উচিত। সবাই বাড়ি ফিরে যাক। মানুষ হত্যা বন্ধ করুক। আর বিষয়টি শেষ হোক।”
বর্তমান ফ্রন্টলাইনটি দোনবাস অঞ্চলের ভেতর দিয়ে গেছে। এলাকাটি একটি শিল্পাঞ্চল। ফলে শিল্প উৎপাদনে যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ ধাক্কা লেগেছে। এই অঞ্চল নিয়ে ট্রাম্প বলেন, “এটা যেভাবে কেটে গেছে, সেভাবেই থাকুক। এখন জায়গাটা বিভক্ত। আমি মনে করি রাশিয়া ইতিমধ্যে প্রায় ৭৮ শতাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে। আপাতত যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকুক। পরে তারা চাইলে আলোচনার মাধ্যমে কিছু সমাধান বের করতে পারবে।”

ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা কি এই প্রস্তাবের পক্ষে ছিল?
হ্যাঁ। গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ ইউরোপীয় নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, তারা ‘অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধে’ ট্রাম্পের প্রস্তাবকে জোরালভাবে সমর্থন করছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান সংঘর্ষের সীমারেখাই আলোচনার সূচনাবিন্দু হওয়া উচিত।
ওই নেতারা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে শান্তি প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার অভিযোগ করেন। তারা বলেন, “রাশিয়ার বিলম্বকৌশল বারবার প্রমাণ করেছে যে শান্তির ব্যাপারে ইউক্রেনই একমাত্র আন্তরিক পক্ষ। আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি, পুতিন এখনো সহিংসতা ও ধ্বংসের পথই বেছে নিচ্ছেন।”
বিবৃতিতে ইউরোপীয় নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন যে তারা, “রাশিয়ার অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর চাপ আরও বাড়াবেন, যতক্ষণ না পুতিন সত্যিকার অর্থে শান্তির জন্য প্রস্তুত হন।”
রাশিয়ার অবস্থান কী?
গত সোমবার, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার আগে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ স্পষ্ট করে জানান যে রুশ প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ ‘স্থগিত’ করার ট্রাম্পের সর্বশেষ প্রস্তাবে রাজি নন।
তিনি বলেন, “রাশিয়ার অবস্থানের ধারাবাহিকতা অপরিবর্তিত”; অর্থাৎ যুদ্ধ শেষ করতে রাশিয়া এখনো তার শক্ত দাবিগুলোর ব্যাপারে অটল আছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার। বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে। ওইসব এলাকা নিজের বলে মস্কো দাবি করে আসছে।
মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, রাশিয়া ‘সপ্তাহান্তে’ আমেরিকাকে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছে। ওই বার্তায় তারা ইউক্রেনের পুরো দোনবাস অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে, শুধু দখল করা অংশ নয়।
সেদিনই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। পরে মস্কোতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আলাস্কা সম্মেলনে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল, রাশিয়ার অবস্থান সেগুলোর তুলনায় কোনো পরিবর্তন হয়নি।” লাভরভ আবার পুতিনের আলাস্কা সম্মেলনের সময়কার অবস্থান তুলে ধরে বলেন, রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে রাজি হবে কেবল তখনই, যখন সংঘাতের ‘মূল কারণগুলো’ দূর করা হবে। অর্থাৎ ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করতে হবে। রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলগুলো স্থায়ীভাবে ছাড়তে হবে। এটি কিয়েভের কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য
ট্রাম্প কি আলোচনার সময় তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন?
হ্যাঁ। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টায় ট্রাম্প বারবার তার অবস্থান বদলেছেন। পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসন, অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে ওয়াশিংটন ইউক্রেনের প্রতি অবিচল সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন একেবারেই ভিন্ন পথে চলছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন ডিসির ওভাল অফিসে এক বৈঠকে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন। তাদের মতে, আমেরিকা যে সাহায্য ইতিমধ্যে দিয়েছে তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি।
মার্চ মাসে ট্রাম্প মস্কোর বিরুদ্ধে ব্যাপক পরিসরের শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেন। আগস্টেও সেই হুমকি পুনরাবৃত্তি করেন। ওই মাসে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্পের আচরণ বদলে যায়। তিনি বরং জেলেনস্কির ওপর চাপ দিচ্ছিলেন ইউক্রেন যেন ভূমি ছাড় দিয়ে কোনো সমঝোতায় রাজি হয়। যদিও ক্রেমলিন তখনো দাবি করছিল ইউক্রেনকে ন্যাটো থেকে দূরে থাকতে হবে।
সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “কিছু ভূমি বিনিময় হবে, দুই পক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিতে হবে।” তবে পরের মাসেই আবার অবস্থান বদলে ট্রাম্প ইউক্রেনের পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, কিয়েভ তার দখল হারানো ভূমি পুনরুদ্ধার করতে পারবে, “বা হয়তো তার থেকেও বেশি কিছু অর্জন করতে পারবে।”
যুদ্ধের অর্থ তাহলে কী দাঁড়াল?
যুদ্ধের অর্থ দাঁড়াল মূলত আরও অনিশ্চয়তা। পরিকল্পিত শীর্ষ বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় আপাতত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না। গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আবারও হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন। তিনি মার্কিন টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের দাবি আবার তোলেন। তিনি আশায় ছিলেন, এর মাধ্যমে কিয়েভ রাশিয়ার ভেতরের লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে পারবে। কিন্তু তার অনুরোধ টেকেনি।
ট্রাম্প আগে এই প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তবে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন। জেলেনস্কি আবার সামরিক সহায়তা বাড়ানোর জন্যও হোয়াইট হাউসের ওপর চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু ট্রাম্প ঠারেঠোরে বলেই দিয়েছেন, ইউক্রেনকে সহায়তায় ন্যাটোর ইউরোপীয় মিত্ররাই আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত।
এখন ইউক্রেনের এই বিপদে পশ্চিম ইউরোপের মিত্র দেশগুলো কতটা থাকে এবং কী পরিমান সাহায্য দেয় সেটাই দেখার। শুধু সাহায্য করলেই তো হবে না, তা যেন মার্কিনিদের ছাঁটাই করা অর্থের ও অস্ত্রের সমান হয়। সে সক্ষমতা কী আদৌ ওই দেশগুলোর আছে?