রয়টার্সের বিশ্লেষণ
চরচা ডেস্ক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী জোটের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। রোববার এই ঘোষণাতে তিনি জানান, তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের সঙ্গে জোটে রয়েছে। পরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এর মধ্য দিয়ে তরুণদের এই দল আসলে কোন পথে হাঁটল?
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে জোট করে নিজেদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে ফেলেছে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানকে ভিত্তি করে গঠন করা রাজনৈতিক দল এনসিপি। এ ছাড়া তরুণদের দল এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও শক্তিশালী করল। অথচ তারা বিকল্প ধারার রাজনীতির কথা বলে আসছে।
শিক্ষাবিদ এইচ এম নাজমুল আলম বলছেন, ‘‘এনসিপি নিজেদের প্রথাগত রাজনৈতিক কাঠামোর বিপরীতে একটি তরুণ-নির্ভর বিকল্প রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। সেই পরিচয়টি এখন চরম সংকটের মুখে। তারুণ্য-নির্ভর আন্দোলনগুলো কেবল নির্বাচনে হারলেই ভেঙে পড়ে না। এগুলো তখনই ভেঙে পড়ে, যখন তারা স্বচ্ছতা এবং অভ্যন্তরীণ ঐক্য হারিয়ে ফেলে।”
রয়টার্স বলছে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা নিয়ে গঠিত তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি চরম অভ্যন্তরীণ সংকটে পড়েছে। ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী জোট করার প্রতিবাদে দলটির ভেতরে ‘বিদ্রোহ’শুরু হয়েছে, যার ফলে অন্তত ৩০ জন জ্যেষ্ঠ নেতা লিখিতভাবে এর বিরোধিতা করেছেন। এর মধ্যে পদত্যাগ করেছেন একটি অংশ।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে রোববার জোট ঘোষণার পর এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম জানান, সম্প্রতি অভ্যুত্থানের অন্যতম রূপকার শরিফ ওসমান হাদি হত্যার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবং নির্বাচন নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র রুখতে তারা জামায়াতের সঙ্গে এই ‘কৌশলগত’ জোট করেছেন। তার মতে, দলের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২৭ বছর বয়সী নাহিদ বলেন, “আমরা যে স্বৈরাচারকে উৎখাত করেছি, তারা নির্বাচন পণ্ড করার চেষ্টা করছে। তাই বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে আমরা জামায়াতের সঙ্গে একটি নির্বাচনী সমঝোতায় পৌঁছেছি। এটি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত ছিল, তবে কেউ কেউ এর বিরোধী হতে পারেন এবং তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন।”
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুর দিকে ঢাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারের সূচনাকালে মুখোশধারী আততায়ীদের গুলিতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নিহত হন হাদি। পুলিশ জানিয়েছে, তারা খুনিদের শনাক্ত করেছে, তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
নাহিদ এর আগে রয়টার্সকে বলেছিলেন, নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় তার সংগঠনটি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। ডিসেম্বরের শুরুতে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে দলীয় নেতাদের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছিল যে, তহবিল সংকট এবং নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে অস্পষ্ট অবস্থানের কারণে দলটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ওই সময়েই জোটের বিষয়ে আলোচনা চলছিল।
গত রোববার জামায়াতের সঙ্গে জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে ও পরে দলটিতে ভাঙন দেখা দেয়। দল থেকে পদত্যাগ করা অন্যতম জ্যেষ্ঠ এনসিপি নেতা হলেন তাসনিম জারা। তিনি ব্রিটেনে নিজের ক্যারিয়ার ছেড়ে এই দলে যোগ দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রয়োজনীয় ৫ হাজার ভোটারের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “আমি আপনাদের এবং এ দেশের মানুষকে কথা দিয়েছিলাম, আমি আপনাদের জন্য এবং একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ার জন্য লড়াই করব। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমি সেই কথা রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
জোট ঘোষণার আগে করা এক জরিপের কথাও উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ওই জরিপে পাওয়া তথ্যমতে, নির্বাচনে এগিয়ে বিএনপি, এরপর রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আর এনসিপি তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও প্রধান দুই দলের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। এর মধ্যে জামায়াতের দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতাই ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের এই ক্ষমতা দেয়নি।
এই জোটে যুক্ত হওয়া এনসিপির জন্য আত্মঘাতী হিসেবে বর্ণনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ শাহান। তিনি বলেন, “জামায়াতের সঙ্গে জোট করলে তা কেবল জামায়াতকেই লাভবান করবে। এতে এনসিপির মধ্যপন্থী আদর্শ বিলীন হয়ে যাবে এবং দলটি একটি ডানপন্থী শক্তিতে পরিণত হবে।”
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত এনসিপি নিজেকে গতানুগতিক রাজনীতির বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। জনমত জরিপ অনুযায়ী, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের তুলনায় এনসিপি অনেকটা পিছিয়ে ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনী লড়াইয়ে টিকে থাকতে গিয়ে দলটি এখন তার নিজস্ব পরিচয় ও অভ্যন্তরীণ ঐক্য হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে।
রয়টার্স বলছে, এনসিপির এই সংগ্রাম রাজপথের শক্তিকে ভোটে রূপান্তরের চ্যালেঞ্জগুলোকে তুলে ধরে। এটি প্রতিবেশী নেপালের জন্যও একটি শিক্ষা, যেখানে এই বছর একই ধরনের যুব-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের মুখে সরকারের পতন ঘটেছে এবং আগামী মার্চ মাসে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী জোটের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। রোববার এই ঘোষণাতে তিনি জানান, তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের সঙ্গে জোটে রয়েছে। পরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এর মধ্য দিয়ে তরুণদের এই দল আসলে কোন পথে হাঁটল?
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে জোট করে নিজেদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে ফেলেছে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানকে ভিত্তি করে গঠন করা রাজনৈতিক দল এনসিপি। এ ছাড়া তরুণদের দল এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও শক্তিশালী করল। অথচ তারা বিকল্প ধারার রাজনীতির কথা বলে আসছে।
শিক্ষাবিদ এইচ এম নাজমুল আলম বলছেন, ‘‘এনসিপি নিজেদের প্রথাগত রাজনৈতিক কাঠামোর বিপরীতে একটি তরুণ-নির্ভর বিকল্প রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। সেই পরিচয়টি এখন চরম সংকটের মুখে। তারুণ্য-নির্ভর আন্দোলনগুলো কেবল নির্বাচনে হারলেই ভেঙে পড়ে না। এগুলো তখনই ভেঙে পড়ে, যখন তারা স্বচ্ছতা এবং অভ্যন্তরীণ ঐক্য হারিয়ে ফেলে।”
রয়টার্স বলছে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা নিয়ে গঠিত তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি চরম অভ্যন্তরীণ সংকটে পড়েছে। ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী জোট করার প্রতিবাদে দলটির ভেতরে ‘বিদ্রোহ’শুরু হয়েছে, যার ফলে অন্তত ৩০ জন জ্যেষ্ঠ নেতা লিখিতভাবে এর বিরোধিতা করেছেন। এর মধ্যে পদত্যাগ করেছেন একটি অংশ।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে রোববার জোট ঘোষণার পর এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম জানান, সম্প্রতি অভ্যুত্থানের অন্যতম রূপকার শরিফ ওসমান হাদি হত্যার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবং নির্বাচন নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র রুখতে তারা জামায়াতের সঙ্গে এই ‘কৌশলগত’ জোট করেছেন। তার মতে, দলের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২৭ বছর বয়সী নাহিদ বলেন, “আমরা যে স্বৈরাচারকে উৎখাত করেছি, তারা নির্বাচন পণ্ড করার চেষ্টা করছে। তাই বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে আমরা জামায়াতের সঙ্গে একটি নির্বাচনী সমঝোতায় পৌঁছেছি। এটি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত ছিল, তবে কেউ কেউ এর বিরোধী হতে পারেন এবং তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন।”
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুর দিকে ঢাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারের সূচনাকালে মুখোশধারী আততায়ীদের গুলিতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নিহত হন হাদি। পুলিশ জানিয়েছে, তারা খুনিদের শনাক্ত করেছে, তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
নাহিদ এর আগে রয়টার্সকে বলেছিলেন, নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় তার সংগঠনটি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। ডিসেম্বরের শুরুতে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে দলীয় নেতাদের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছিল যে, তহবিল সংকট এবং নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে অস্পষ্ট অবস্থানের কারণে দলটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ওই সময়েই জোটের বিষয়ে আলোচনা চলছিল।
গত রোববার জামায়াতের সঙ্গে জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে ও পরে দলটিতে ভাঙন দেখা দেয়। দল থেকে পদত্যাগ করা অন্যতম জ্যেষ্ঠ এনসিপি নেতা হলেন তাসনিম জারা। তিনি ব্রিটেনে নিজের ক্যারিয়ার ছেড়ে এই দলে যোগ দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রয়োজনীয় ৫ হাজার ভোটারের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “আমি আপনাদের এবং এ দেশের মানুষকে কথা দিয়েছিলাম, আমি আপনাদের জন্য এবং একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ার জন্য লড়াই করব। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমি সেই কথা রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
জোট ঘোষণার আগে করা এক জরিপের কথাও উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ওই জরিপে পাওয়া তথ্যমতে, নির্বাচনে এগিয়ে বিএনপি, এরপর রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আর এনসিপি তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও প্রধান দুই দলের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। এর মধ্যে জামায়াতের দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতাই ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের এই ক্ষমতা দেয়নি।
এই জোটে যুক্ত হওয়া এনসিপির জন্য আত্মঘাতী হিসেবে বর্ণনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ শাহান। তিনি বলেন, “জামায়াতের সঙ্গে জোট করলে তা কেবল জামায়াতকেই লাভবান করবে। এতে এনসিপির মধ্যপন্থী আদর্শ বিলীন হয়ে যাবে এবং দলটি একটি ডানপন্থী শক্তিতে পরিণত হবে।”
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত এনসিপি নিজেকে গতানুগতিক রাজনীতির বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। জনমত জরিপ অনুযায়ী, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের তুলনায় এনসিপি অনেকটা পিছিয়ে ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনী লড়াইয়ে টিকে থাকতে গিয়ে দলটি এখন তার নিজস্ব পরিচয় ও অভ্যন্তরীণ ঐক্য হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে।
রয়টার্স বলছে, এনসিপির এই সংগ্রাম রাজপথের শক্তিকে ভোটে রূপান্তরের চ্যালেঞ্জগুলোকে তুলে ধরে। এটি প্রতিবেশী নেপালের জন্যও একটি শিক্ষা, যেখানে এই বছর একই ধরনের যুব-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের মুখে সরকারের পতন ঘটেছে এবং আগামী মার্চ মাসে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।