চরচা ডেস্ক

বাংলাদেশে তামাক পণ্য বিক্রি হয় দেদারসে। নানা ধরনের আইনি বিধি–নিষেধ থাকলেও, সেসবের প্রয়োগ খুব একটা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। তামাক শিল্প থেকে অনেক রাজস্ব আয় হয়। ফলে বেশ প্রভাবও আছে তামাক শিল্পে থাকা কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশে তামাক শিল্পের প্রভাব আসলে কতটা মারাত্মক?
‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, ২০২৫’–এ বাংলাদেশের স্কোর ৬৯, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ। এ তালিকার ভারতের স্কোর ৫৯, পাকিস্তানের স্কোর ৫৪, শ্রীলঙ্কার স্কোর ৪৫।
এই প্রতিবেদনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তামাক শিল্পের হস্তক্ষেপ এবং এই হস্তক্ষেপের প্রতি তাদের নিজ নিজ সরকারের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনসাধারণের কাছে উপলব্ধ তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে তামাকের প্রভাব ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে দেশে তিনটি প্রধান তামাক কোম্পানির কারণে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৩৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এই প্রাণহানির পাশাপাশি নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে তামাক কোম্পানিগুলোর নজিরবিহীন হস্তক্ষেপের চিত্র উঠে এসেছে ‘গ্লোবাল টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি ইন্টারফারেন্স ইনডেক্স ২০২৫’-এ।
সূচকের ‘হাও ডেডলি ইজ টোব্যাকো ইনডাস্ট্রি ইফ্লুয়েন্স ইন বাংলাদেশ?’ অংশে বাংলাদেশের স্কোর ৭২। প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল এবং আবুল খায়ের টোব্যাকো লিমিটেডকে এই বিপুল সংখ্যক মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছে।
সূচক প্রতিবেদনে বলা হয়, তামাক খাতে ২২৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন টাকার কর আরোপ করা হয় কিন্তু এর অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৯১ দশমিক ৭৩ টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ধূমপায়ী। আর ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, ৯ শতাংশ শিশু ধূমপায়ী, যা ভবিষ্যতে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সূচকে নীতি নির্ধারণে অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কিছু মারাত্মক দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে:
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেক সরকারি কর্মকর্তা সরাসরি তামাক শিল্পের কাছ থেকে বিভিন্ন সহায়তা গ্রহণ করছেন। এছাড়া তামাক কোম্পানিগুলোর লবিং ও সরাসরি অনুরোধের কারণে তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত অনেক জরুরি বিধিমালা বাস্তবায়নে অস্বাভাবিক দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিচ্ছে। বিদ্যমান আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো সরকারি সংস্থাগুলোর সমর্থনে ‘সিএসআর’ বা সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ কার্যক্রমের আড়ালে নিজেদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সংসদ, নির্বাহী বিভাগ এবং কূটনৈতিক দপ্তরগুলো তামাক কোম্পানিগুলোর সাথে এমনভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে যা তামাক নিয়ন্ত্রণের আইনি সীমারেখাকে অস্পষ্ট করে তুলছে। কর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান ও উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সবক্ষেত্রেই তামাক শিল্পের সরাসরি প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে অর্থ, বাণিজ্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে তামাক কোম্পানির যোগাযোগ সীমিত করার কোনো কঠোর নীতিমালা এখনও প্রণয়ন করা হয়নি।
২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো-
১. সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল’ (এফসিটিসি)-এর অনুচ্ছেদ ৫.৩ অনুযায়ী একটি কঠোর এবং বাধ্যতামূলক আচরণবিধি গ্রহণ করা।
২. তামাক কোম্পানি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের সকল প্রকার রাজনৈতিক ও দাতব্য অনুদান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
৩. পরিবেশগত ক্ষতির জন্য সরকারগুলোকে তামাক শিল্পের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপ করতে হবে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যয়ভার কোম্পানিগুলোর ওপরই নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিবেদনের শেষ দিকে বলা হয়েছে, তামাক শিল্পকে আর ‘উন্নয়নের অংশীদার’ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটি মূলত জনস্বাস্থ্যের পরিপন্থী একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। বিশ্বের অন্তত ১৮টি দেশ অনুচ্ছেদ ৫.৩ কঠোরভাবে মেনে তামাকের প্রভাব কমাতে সফল হয়েছে।
বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্য অসংক্রামক রোগ ও অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। আসন্ন বাজেট চক্র এবং আইনি সংস্কারের সময়গুলোই হবে সরকারের জন্য এসিড টেস্ট। সরকারি কর্মকর্তারা কেবল মৌখিক অঙ্গীকারেই সীমাবদ্ধ থাকবেন, নাকি তামাক শিল্পের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণে কঠোর হবেন, সেটির ওপর নির্ভর করবে এই তামাক শিল্পের প্রভাব কতটা থাকবে।

বাংলাদেশে তামাক পণ্য বিক্রি হয় দেদারসে। নানা ধরনের আইনি বিধি–নিষেধ থাকলেও, সেসবের প্রয়োগ খুব একটা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। তামাক শিল্প থেকে অনেক রাজস্ব আয় হয়। ফলে বেশ প্রভাবও আছে তামাক শিল্পে থাকা কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশে তামাক শিল্পের প্রভাব আসলে কতটা মারাত্মক?
‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, ২০২৫’–এ বাংলাদেশের স্কোর ৬৯, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ। এ তালিকার ভারতের স্কোর ৫৯, পাকিস্তানের স্কোর ৫৪, শ্রীলঙ্কার স্কোর ৪৫।
এই প্রতিবেদনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তামাক শিল্পের হস্তক্ষেপ এবং এই হস্তক্ষেপের প্রতি তাদের নিজ নিজ সরকারের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনসাধারণের কাছে উপলব্ধ তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে তামাকের প্রভাব ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে দেশে তিনটি প্রধান তামাক কোম্পানির কারণে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৩৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এই প্রাণহানির পাশাপাশি নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে তামাক কোম্পানিগুলোর নজিরবিহীন হস্তক্ষেপের চিত্র উঠে এসেছে ‘গ্লোবাল টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি ইন্টারফারেন্স ইনডেক্স ২০২৫’-এ।
সূচকের ‘হাও ডেডলি ইজ টোব্যাকো ইনডাস্ট্রি ইফ্লুয়েন্স ইন বাংলাদেশ?’ অংশে বাংলাদেশের স্কোর ৭২। প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল এবং আবুল খায়ের টোব্যাকো লিমিটেডকে এই বিপুল সংখ্যক মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছে।
সূচক প্রতিবেদনে বলা হয়, তামাক খাতে ২২৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন টাকার কর আরোপ করা হয় কিন্তু এর অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৯১ দশমিক ৭৩ টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ধূমপায়ী। আর ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, ৯ শতাংশ শিশু ধূমপায়ী, যা ভবিষ্যতে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সূচকে নীতি নির্ধারণে অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কিছু মারাত্মক দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে:
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেক সরকারি কর্মকর্তা সরাসরি তামাক শিল্পের কাছ থেকে বিভিন্ন সহায়তা গ্রহণ করছেন। এছাড়া তামাক কোম্পানিগুলোর লবিং ও সরাসরি অনুরোধের কারণে তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত অনেক জরুরি বিধিমালা বাস্তবায়নে অস্বাভাবিক দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিচ্ছে। বিদ্যমান আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো সরকারি সংস্থাগুলোর সমর্থনে ‘সিএসআর’ বা সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ কার্যক্রমের আড়ালে নিজেদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সংসদ, নির্বাহী বিভাগ এবং কূটনৈতিক দপ্তরগুলো তামাক কোম্পানিগুলোর সাথে এমনভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে যা তামাক নিয়ন্ত্রণের আইনি সীমারেখাকে অস্পষ্ট করে তুলছে। কর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান ও উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সবক্ষেত্রেই তামাক শিল্পের সরাসরি প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে অর্থ, বাণিজ্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে তামাক কোম্পানির যোগাযোগ সীমিত করার কোনো কঠোর নীতিমালা এখনও প্রণয়ন করা হয়নি।
২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো-
১. সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল’ (এফসিটিসি)-এর অনুচ্ছেদ ৫.৩ অনুযায়ী একটি কঠোর এবং বাধ্যতামূলক আচরণবিধি গ্রহণ করা।
২. তামাক কোম্পানি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের সকল প্রকার রাজনৈতিক ও দাতব্য অনুদান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
৩. পরিবেশগত ক্ষতির জন্য সরকারগুলোকে তামাক শিল্পের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপ করতে হবে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যয়ভার কোম্পানিগুলোর ওপরই নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিবেদনের শেষ দিকে বলা হয়েছে, তামাক শিল্পকে আর ‘উন্নয়নের অংশীদার’ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটি মূলত জনস্বাস্থ্যের পরিপন্থী একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। বিশ্বের অন্তত ১৮টি দেশ অনুচ্ছেদ ৫.৩ কঠোরভাবে মেনে তামাকের প্রভাব কমাতে সফল হয়েছে।
বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্য অসংক্রামক রোগ ও অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। আসন্ন বাজেট চক্র এবং আইনি সংস্কারের সময়গুলোই হবে সরকারের জন্য এসিড টেস্ট। সরকারি কর্মকর্তারা কেবল মৌখিক অঙ্গীকারেই সীমাবদ্ধ থাকবেন, নাকি তামাক শিল্পের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণে কঠোর হবেন, সেটির ওপর নির্ভর করবে এই তামাক শিল্পের প্রভাব কতটা থাকবে।