ইয়াসিন আরাফাত

ভারতে সাংবিধানিক সুরক্ষা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির খ্রিস্টানদের জীবনে এক ধরনের অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ধর্মীয় উৎসবগুলোর সময়, যখন আনন্দ ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে পড়ার কথা, ঠিক তখনই একদল উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর কারণে সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা বাড়ছে।
সম্প্রতি বড়দিনের উৎসবে এই সহিংসতা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ভারতজুড়ে খ্রিস্টানদের বড়দিন উৎসবে হামলা চালিয়েছে বেশ কয়েকটি উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী।
বড়দিনে দেশটির আসাম, ছত্তিশগড়, মধ্য ও উত্তর প্রদেশ ও কেরালাসহ বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরজন্য ভারতে থাকা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-ভিএইচপি, বজরং দল ও আরএসএসের মতো উগ্রপন্থি হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করা হচ্ছে।
ছত্তিশগড়ে একটি গ্রামে স্থানীয়দের চাপের কারণে এক খ্রিস্টানকে তিন দিন সমাধিস্থ করা হয়নি। এই ঘটনাতেও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি ও মানবিক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এমনকি মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে একটি ক্রিসমাস অনুষ্ঠানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারীর গায়েও হাত তোলার অভিযোগে উঠেছে এক বিজেপি নারী কর্মীর বিরুদ্ধে। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর এসব সহিংস হামলার ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে ভাইরাল। যার কারণে কট্টরপন্থি এসব হিন্দুদের বিরুদ্ধে বইছে নিন্দার ঝড়।
এদিকে ভারতের কেরালা রাজ্যের লোক ভবনের কর্মীদের বড়দিনের ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তে ভারতজুড়ে জনরোষের সৃষ্টি করেছে। লোক ভবনের কর্মীদের ২৫ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সুশাসন দিবস’- এর সরকারি কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এর আগে ছত্তিশগড়ের ধামতরি জেলায় গত ৮ জুন একটি প্রার্থনা সভায় হিন্দুত্ববাদীরা হামলা চালিয়ে গির্জা ভাঙচুর করেছে, বাইবেল পুড়িয়ে দিয়েছে এবং প্রার্থনারত ব্যক্তিদের মারধর করা হয়। সেখানে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে উগ্রবাদী হিন্দুরা ভবিষ্যতে আর প্রার্থনা না করার হুমকি দেয়।
এবার বড়দিনের মৌসুমে ভারতে খ্রিস্টানদের উৎসবে ৬০টির বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি দেশটির ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স-সিবিসিআইয়ের। এ অবস্থায় সব নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
‘ইউনাইটেড খ্রিস্টান ফোরাম’ (ইউসিএফ)-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৪ সালে হামলার সংখ্যা ছিল ৮৩৪টি এবং ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৭০৬টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
‘ইভানজেলিক্যাল ফেলোশিপ অব ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা ২০২৩ সালে হয়েছিল ৬০১টি। আর ২০২৪ সালে সেটা বেড়ে অন্তত ৮৩০টিতে দাঁড়িয়েছে। এটি গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এবারের বড়দিনের অনুষ্ঠানে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বড়দিনে সহিংসতার ঘটনায় উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। তিনি বলেছেন, বড়দিন সংক্রান্ত সহিংসতা শুধু খ্রিস্টানদের সমস্যা নয়, ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখা উচিত। এই ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের অবহেলা নির্দেশ করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্টালিন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর গুরুত্ব দিলেও দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনা বেড়েই চলেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা বা প্রশাসনিক অবহেলার অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। যদি দ্রুত কার্যকর আইনি পদক্ষেপ, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সামাজিক সংহতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তবে ভারতের দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের ঐতিহ্য বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়বে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য ওয়্যার, এনডিটিভি, ইউসিএফ, ইভানজেলিক্যাল ফেলোশিপ অব ইন্ডিয়া

ভারতে সাংবিধানিক সুরক্ষা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির খ্রিস্টানদের জীবনে এক ধরনের অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ধর্মীয় উৎসবগুলোর সময়, যখন আনন্দ ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে পড়ার কথা, ঠিক তখনই একদল উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর কারণে সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা বাড়ছে।
সম্প্রতি বড়দিনের উৎসবে এই সহিংসতা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ভারতজুড়ে খ্রিস্টানদের বড়দিন উৎসবে হামলা চালিয়েছে বেশ কয়েকটি উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী।
বড়দিনে দেশটির আসাম, ছত্তিশগড়, মধ্য ও উত্তর প্রদেশ ও কেরালাসহ বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরজন্য ভারতে থাকা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-ভিএইচপি, বজরং দল ও আরএসএসের মতো উগ্রপন্থি হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করা হচ্ছে।
ছত্তিশগড়ে একটি গ্রামে স্থানীয়দের চাপের কারণে এক খ্রিস্টানকে তিন দিন সমাধিস্থ করা হয়নি। এই ঘটনাতেও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি ও মানবিক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এমনকি মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে একটি ক্রিসমাস অনুষ্ঠানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারীর গায়েও হাত তোলার অভিযোগে উঠেছে এক বিজেপি নারী কর্মীর বিরুদ্ধে। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর এসব সহিংস হামলার ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে ভাইরাল। যার কারণে কট্টরপন্থি এসব হিন্দুদের বিরুদ্ধে বইছে নিন্দার ঝড়।
এদিকে ভারতের কেরালা রাজ্যের লোক ভবনের কর্মীদের বড়দিনের ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তে ভারতজুড়ে জনরোষের সৃষ্টি করেছে। লোক ভবনের কর্মীদের ২৫ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সুশাসন দিবস’- এর সরকারি কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এর আগে ছত্তিশগড়ের ধামতরি জেলায় গত ৮ জুন একটি প্রার্থনা সভায় হিন্দুত্ববাদীরা হামলা চালিয়ে গির্জা ভাঙচুর করেছে, বাইবেল পুড়িয়ে দিয়েছে এবং প্রার্থনারত ব্যক্তিদের মারধর করা হয়। সেখানে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে উগ্রবাদী হিন্দুরা ভবিষ্যতে আর প্রার্থনা না করার হুমকি দেয়।
এবার বড়দিনের মৌসুমে ভারতে খ্রিস্টানদের উৎসবে ৬০টির বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি দেশটির ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স-সিবিসিআইয়ের। এ অবস্থায় সব নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
‘ইউনাইটেড খ্রিস্টান ফোরাম’ (ইউসিএফ)-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৪ সালে হামলার সংখ্যা ছিল ৮৩৪টি এবং ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৭০৬টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
‘ইভানজেলিক্যাল ফেলোশিপ অব ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা ২০২৩ সালে হয়েছিল ৬০১টি। আর ২০২৪ সালে সেটা বেড়ে অন্তত ৮৩০টিতে দাঁড়িয়েছে। এটি গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এবারের বড়দিনের অনুষ্ঠানে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বড়দিনে সহিংসতার ঘটনায় উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। তিনি বলেছেন, বড়দিন সংক্রান্ত সহিংসতা শুধু খ্রিস্টানদের সমস্যা নয়, ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখা উচিত। এই ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের অবহেলা নির্দেশ করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্টালিন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর গুরুত্ব দিলেও দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনা বেড়েই চলেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা বা প্রশাসনিক অবহেলার অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। যদি দ্রুত কার্যকর আইনি পদক্ষেপ, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সামাজিক সংহতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তবে ভারতের দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের ঐতিহ্য বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়বে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য ওয়্যার, এনডিটিভি, ইউসিএফ, ইভানজেলিক্যাল ফেলোশিপ অব ইন্ডিয়া