ওয়ার্নার ব্রস-এইচবিও কিনে হলিউড এখন নেটফ্লিক্সের পকেটে!

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
ওয়ার্নার ব্রস-এইচবিও কিনে হলিউড এখন নেটফ্লিক্সের পকেটে!
হলিউডে বড় চুক্তি করল নেটফ্লিক্স। ছবি: রয়টার্স

হলিউড ইতিহাসের মোড়ই ঘুরতে যাচ্ছে হয়তো। একটি স্ট্র্রিমিং প্ল্যাটফর্মের হাতে চলে যাচ্ছে হলিউডের শত বছরের ‘সম্পদ’। একে মোড় ঘুরে যাওয়া বললেও কম বলা হবে। হলিউডের অন্যতম প্রাচীন ও মূল্যবান সম্পদ ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির ফিল্ম এবং স্ট্রিমিং ব্যবসা কিনতে যাচ্ছে নেটফ্লিক্স। আর এর মূল্য ৭২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, প্রতিদ্বন্দ্বী কমকাস্ট এবং প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সকে পেছনে ফেলে নেটফ্লিক্স এই চুক্তিতে শীর্ষ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়। আর এটি হলিউড ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুক্তি। এর মধ্য দিয়ে নেটফ্লিক্সের হাতে এখন ‘হলিউডের স্টিয়ারিং’।

‘হ্যারি পটার’ ও ‘গেম অব থ্রোনস’ থেকে শুরু করে স্ট্রিমিং পরিষেবা এইচবিও ম্যাক্স– কী নেই এই ওয়ার্নার ব্রসে। এই কারণেই এই চুক্তি মার্কিন চলচ্চিত্র ও মিডিয়া শিল্পকে আমূল বদলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নেটফ্লিক্সের সহ-প্রধান নির্বাহী টেড সারান্ডোস বলছেন, ‘‘ওয়ার্নার ব্রাদার্সের শো এবং চলচ্চিত্রের (যেমন: ক্যাসাব্লাঙ্কা) সঙ্গে এইচবিওর নিজস্ব সিরিজ (যেমন: ফ্রেন্ডস) একত্রিত করার মাধ্যমে আমরা দর্শকদের আরও অনেক কিছু দিতে পারব। পরবর্তী শতাব্দীর গল্প বলার ঢং সংজ্ঞায়িত করতে পারব।’’

ওয়ার্নার ব্রাদার্সের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী ডেভিড জাসলাভ যোগ করেছেন, ‘‘এই চুক্তি বিশ্বের দুটি সেরা গল্প বলার কোম্পানিকে একত্রিত করবে।’’

নগদ এবং স্টক মিলিয়ে এই চুক্তির মূল্য ওয়ার্নার ব্রাদার্সের প্রতিটি শেয়ারের জন্য ২৭ দশমিক ৭৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। মোট এন্টারপ্রাইজ ভ্যালু প্রায় ৮২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ নেটফ্লিক্সকে ‘গ্লোবাল মেগা পাওয়ার’-এ পরিণত করবে। তবে, এই একীভূতকরণের ফলে গ্রাহকদের জন্য দাম বাড়তে পারে এবং সিনেমা শিল্পের ওপর বড় প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই চুক্তি নিয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়ার্নার ব্রাদার্স কিনে নেওয়ার মাধ্যমে হলিউডে ছড়ি ঘোরাবে নেটফ্লিক্স।

প্রায় ১০ দিন আগে হোয়াইট হাউসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নেটফ্লিক্সের এই বিপুল মার্কেট পাওয়ার নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত এক সরকারি কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়েছে, ‘‘মূলত সকলেই একমত যে, নেটফ্লিক্স একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।’’

বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম স্ট্রিমিং পরিষেবা হিসেবে নেটফ্লিক্সের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি। এর সঙ্গে তৃতীয় বৃহত্তম স্ট্রিমিং পরিষেবা এইচবিও ম্যাক্স যুক্ত হলে স্ট্রিমিং বাজারে প্রতিযোগিতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে বলে হোয়াইট হাউস মনে করছে।

কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, নেটফ্লিক্স শুধু গ্রাহকদের ক্ষেত্রেই নয়, বরং অনুষ্ঠান নির্মাতা ও প্রতিভাধর তারকাদের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রেও বিপুল ক্ষমতা ব্যবহার করছে। এই অধিগ্রহণ সেই ক্ষমতাকে আরও বাড়াবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এর প্রভাব শুধু হলিউডে নয়, ভোক্তাদের ওপরেও পড়বে। নেটফ্লিক্স আরও দামি হয়ে উঠবে।

ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মতো একটি বড় স্টুডিওর অধিগ্রহণ সিনেমা হলগুলোর ওপর বিশাল প্রভাব ফেলবে। কারণ, নেটফ্লিক্স ঐতিহাসিকভাবে সিনেমা হলে রিলিজের বিপক্ষে। হ্যারিংটনের মতে, এটি হলিউডের বিন্যাসকে ‘পুনর্গঠিত’ করবে।

সম্পর্কিত