কাজী সাজিদুল হক

ময়দা গোল্লা বেলে টেনে টেনে বেশ অনেকটা বড় করে তার ওপর ডিম ভেঙে আরও নানা কিছু দিয়ে আবার চারদিক মুড়ে তেলে ভাজা জিনিসটাকে আমরা বলি মোগলাই পরোটা। এই মোগলাই পরোটা কি আসলেই মোগল? জানেন কি, মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের অতি পছন্দ এই পরোটার সঙ্গে একজন বাঙালির নাম জড়িয়ে আছে। চলুন তাহলে মোগলাই পরোটার গল্প শোনা যাক।
মোগলাই পরোটা যিনি আবিষ্কার করেছিলেন সেই মানুষটির বাড়ি ছিল অবিভক্ত বাংলার (এখন পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমানে। আদিল হাফিজ উসমান। যিনি ছিলেন মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের বাবুর্চি। গল্প আছে, একইরকম খাবার খেতে খেতে সম্রাটের অরুচি চলে এসেছিল। ডাক পড়ল আদিল হাফিজের। মোগল সাম্রাজ্যের প্রতাপশালী সম্রাট আকবর তনয় জাহাঙ্গীর দশ দিন সময় দিয়ে আদেশ দিলেন নতুন পরোটা বানাতে হবে। একই পরোটা খেয়ে খেয়ে তিনি বিরক্ত। আদিল হাফিজ পড়লেন চিন্তায়। শুরু করলেন কাজ। নবম দিনের মাথায় নতুন পরোটা ‘জাবির ফালা’ নিয়ে হাজির হলেন সম্রাটের সামনে।
সম্রাট জাহাঙ্গীর অর্থাৎ মির্জা নূর উদ্দিন মুহাম্মদ সেলিম পরোটা খেয়ে এতটাই খুশি হলেন যে হাফিজ উসমানকে ১০০১ স্বর্ণমুদ্রা বখশিস দিলেন। বাবুর্চি সাহেবতো পুরস্কার পেলেন। এদিকে পৃথিবী পেল মোগলাই পরোটা। যদিও অনেকে বলেন আদিল হাফিজের বানানো পরোটা আসলে তুর্কি ‘গোজেলেমাহ’র আরেক রূপ। আদিল হাফিজ তার ছেলেকে এই পরোটা বানানোর কৌশল শিখিয়ে বলে দিলেন আর কেউ যেন না জানে। তিনি নিজেও এই রেসিপি অন্য শাহী খানসামাদের থেকে লুকিয়ে রাখলেন। দিল্লি এবং লখনৌর বাবুর্চিরাও নাকি এর হদিস পাননি।
গল্প আছে, বহু বছর ধরে হাফিজ উসমানের পরিবার এই পরোটার রেসিপি বাইরে কারও কাছে প্রকাশ করেননি। ব্রিটিশ রাজত্বের সময় পরিবারটির সদস্যরা এটি বাইরে বিক্রি শুরু করেন বলে অনেকেরই বিশ্বাস।
ওপরে মুচমুচে আর ভেতরে নরম, গরম গরম মোগলাই পরোটা খেতে খেতে হুট করে মাথায় আসে একজন বাঙালি কীভাবে মোগলাই পরোটা তৈরি করতে পারেন? তাহলে মনে রাখবেন, সম্রাট জাহাঙ্গীরের তিনশ বছর আগে থেকে বাংলায় তুর্ক-আফগানি প্রভাব ছিল। আর ওই ‘গোজলেমাহ’ তো তুর্কি বস্তু। শুধু ডিম নয়, তার সঙ্গে মাংসের কিমা ও নানা ধরনের মশলা ভরা থাকত। তুরস্কের আনাতোলিয়ার গ্রামে যে খাবারের জন্ম তা এখন বলা যায় দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় ফাস্টফুড।

আবার ‘বায়দা রুটি’ নামের যে বস্তু আজকের ভারতের মহারাষ্ট্রে পাওয়া যায় সেও তো সেই ‘জাবির ফালা’। ‘জাবির’ আর ‘বায়দা’ দুটোর অর্থইতো ডিম। তাহলে যারা মনে করেন, মোগলাই পরোটা আসলে গোজলেমাহ’র আরেকটা রূপ তাদের ভাবনাটাও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। এই ঢাকা শহরেইতো একসময় ‘বায়দা রুটি’ পাওয়া যেত।
এই বায়দা রুটি ‘বার্মা রুটি’ নামেও পরিচিত। বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার), এই রুটির একটি সংস্করণ ‘পালাটা’ নামে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ভারতে বার্মা রুটির আগমন ঘটে ব্রিটিশ শাসনামলে, যখন সমগ্র ভারত এবং বার্মা ও শ্রীলঙ্কার কিছু অংশ ব্রিটিশদের অধীনে ছিল। ধারণা করা হয়, সেই সময়ে যারা বার্মা থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন, তারাই এই রেসিপিটি ভারতীয় উপকূলে নিয়ে এসেছিলেন।
খাদ্য সমালোচক বিক্রমজিৎ রায় মোগলাই পরোটার সাথে আরবি বা লেবানিজ রুটির অনেক মিল খুঁজে পান; সেখানেও মাংসের পুর ভরা চারকোনা আকৃতির ডুবো তেলে ভাজা রুটি বা র্যাপ দেখা যায়।
এবার ফুড-হিস্টোরিয়ান পুস্পেশ পান্থ কী বলছেন একটু শুনি। দিল্লি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক বলছেন, খাবারের আগে ‘মোগলাই’ কথাটা জুড়ে দেওয়াটা আসলে ব্রিটিশদের কাজ। মোগল সাম্রাজ্যের পতন ইংরেজদের হাতেই। মোগলদের ‘যোগ্য উত্তরসূরি’ হিসেবে নিজেদের পরিচিত করাতে তারা এই ‘মোগলাই’ অভিধা বিভিন্ন জায়গায় যুক্ত করে দেয়।
এদিকে, দিল্লি সালতানাতের পতনের পর শাহী খানসামারা ছোট ছোট রাজ্যের রাজা, নবাবদের হেঁশেলে ঠাঁই পেলেন। সেখানে গিয়ে বানাতে শুরু করলেন নানা পদ। যেহেতু তারা একসময় মোগলদের হেঁশেলে কাজ করতেন তাই তাদের খাবার হয়ে গেল ‘মোগলাই’। আর ব্রিটিশদের অবদানতো আছেই। ব্যাস! খাবার পেল রাজকীয় রূপ।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে শেফ সব্যসাচী গরাই বলেছেন, তার মতে, মোগলাই পরোটা ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে ঢাকা হয়ে কলকাতা পৌঁছেছিল!

ময়দা গোল্লা বেলে টেনে টেনে বেশ অনেকটা বড় করে তার ওপর ডিম ভেঙে আরও নানা কিছু দিয়ে আবার চারদিক মুড়ে তেলে ভাজা জিনিসটাকে আমরা বলি মোগলাই পরোটা। এই মোগলাই পরোটা কি আসলেই মোগল? জানেন কি, মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের অতি পছন্দ এই পরোটার সঙ্গে একজন বাঙালির নাম জড়িয়ে আছে। চলুন তাহলে মোগলাই পরোটার গল্প শোনা যাক।
মোগলাই পরোটা যিনি আবিষ্কার করেছিলেন সেই মানুষটির বাড়ি ছিল অবিভক্ত বাংলার (এখন পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমানে। আদিল হাফিজ উসমান। যিনি ছিলেন মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের বাবুর্চি। গল্প আছে, একইরকম খাবার খেতে খেতে সম্রাটের অরুচি চলে এসেছিল। ডাক পড়ল আদিল হাফিজের। মোগল সাম্রাজ্যের প্রতাপশালী সম্রাট আকবর তনয় জাহাঙ্গীর দশ দিন সময় দিয়ে আদেশ দিলেন নতুন পরোটা বানাতে হবে। একই পরোটা খেয়ে খেয়ে তিনি বিরক্ত। আদিল হাফিজ পড়লেন চিন্তায়। শুরু করলেন কাজ। নবম দিনের মাথায় নতুন পরোটা ‘জাবির ফালা’ নিয়ে হাজির হলেন সম্রাটের সামনে।
সম্রাট জাহাঙ্গীর অর্থাৎ মির্জা নূর উদ্দিন মুহাম্মদ সেলিম পরোটা খেয়ে এতটাই খুশি হলেন যে হাফিজ উসমানকে ১০০১ স্বর্ণমুদ্রা বখশিস দিলেন। বাবুর্চি সাহেবতো পুরস্কার পেলেন। এদিকে পৃথিবী পেল মোগলাই পরোটা। যদিও অনেকে বলেন আদিল হাফিজের বানানো পরোটা আসলে তুর্কি ‘গোজেলেমাহ’র আরেক রূপ। আদিল হাফিজ তার ছেলেকে এই পরোটা বানানোর কৌশল শিখিয়ে বলে দিলেন আর কেউ যেন না জানে। তিনি নিজেও এই রেসিপি অন্য শাহী খানসামাদের থেকে লুকিয়ে রাখলেন। দিল্লি এবং লখনৌর বাবুর্চিরাও নাকি এর হদিস পাননি।
গল্প আছে, বহু বছর ধরে হাফিজ উসমানের পরিবার এই পরোটার রেসিপি বাইরে কারও কাছে প্রকাশ করেননি। ব্রিটিশ রাজত্বের সময় পরিবারটির সদস্যরা এটি বাইরে বিক্রি শুরু করেন বলে অনেকেরই বিশ্বাস।
ওপরে মুচমুচে আর ভেতরে নরম, গরম গরম মোগলাই পরোটা খেতে খেতে হুট করে মাথায় আসে একজন বাঙালি কীভাবে মোগলাই পরোটা তৈরি করতে পারেন? তাহলে মনে রাখবেন, সম্রাট জাহাঙ্গীরের তিনশ বছর আগে থেকে বাংলায় তুর্ক-আফগানি প্রভাব ছিল। আর ওই ‘গোজলেমাহ’ তো তুর্কি বস্তু। শুধু ডিম নয়, তার সঙ্গে মাংসের কিমা ও নানা ধরনের মশলা ভরা থাকত। তুরস্কের আনাতোলিয়ার গ্রামে যে খাবারের জন্ম তা এখন বলা যায় দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় ফাস্টফুড।

আবার ‘বায়দা রুটি’ নামের যে বস্তু আজকের ভারতের মহারাষ্ট্রে পাওয়া যায় সেও তো সেই ‘জাবির ফালা’। ‘জাবির’ আর ‘বায়দা’ দুটোর অর্থইতো ডিম। তাহলে যারা মনে করেন, মোগলাই পরোটা আসলে গোজলেমাহ’র আরেকটা রূপ তাদের ভাবনাটাও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। এই ঢাকা শহরেইতো একসময় ‘বায়দা রুটি’ পাওয়া যেত।
এই বায়দা রুটি ‘বার্মা রুটি’ নামেও পরিচিত। বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার), এই রুটির একটি সংস্করণ ‘পালাটা’ নামে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ভারতে বার্মা রুটির আগমন ঘটে ব্রিটিশ শাসনামলে, যখন সমগ্র ভারত এবং বার্মা ও শ্রীলঙ্কার কিছু অংশ ব্রিটিশদের অধীনে ছিল। ধারণা করা হয়, সেই সময়ে যারা বার্মা থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন, তারাই এই রেসিপিটি ভারতীয় উপকূলে নিয়ে এসেছিলেন।
খাদ্য সমালোচক বিক্রমজিৎ রায় মোগলাই পরোটার সাথে আরবি বা লেবানিজ রুটির অনেক মিল খুঁজে পান; সেখানেও মাংসের পুর ভরা চারকোনা আকৃতির ডুবো তেলে ভাজা রুটি বা র্যাপ দেখা যায়।
এবার ফুড-হিস্টোরিয়ান পুস্পেশ পান্থ কী বলছেন একটু শুনি। দিল্লি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক বলছেন, খাবারের আগে ‘মোগলাই’ কথাটা জুড়ে দেওয়াটা আসলে ব্রিটিশদের কাজ। মোগল সাম্রাজ্যের পতন ইংরেজদের হাতেই। মোগলদের ‘যোগ্য উত্তরসূরি’ হিসেবে নিজেদের পরিচিত করাতে তারা এই ‘মোগলাই’ অভিধা বিভিন্ন জায়গায় যুক্ত করে দেয়।
এদিকে, দিল্লি সালতানাতের পতনের পর শাহী খানসামারা ছোট ছোট রাজ্যের রাজা, নবাবদের হেঁশেলে ঠাঁই পেলেন। সেখানে গিয়ে বানাতে শুরু করলেন নানা পদ। যেহেতু তারা একসময় মোগলদের হেঁশেলে কাজ করতেন তাই তাদের খাবার হয়ে গেল ‘মোগলাই’। আর ব্রিটিশদের অবদানতো আছেই। ব্যাস! খাবার পেল রাজকীয় রূপ।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে শেফ সব্যসাচী গরাই বলেছেন, তার মতে, মোগলাই পরোটা ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে ঢাকা হয়ে কলকাতা পৌঁছেছিল!

চীন–পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ক সেই ১৯৫১ সাল থেকেই প্রতিশ্রুতির। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের প্রতি চীনের ‘নৈতিক’ সমর্থন ছিল। পাকিস্তানকে অস্ত্রও সরবরাহ করেছিল তারা। কিন্তু পাকিস্তানকে বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত সৈন্য দিয়ে সহায়তা দেয়নি কেন তারা?