গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা কী?

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা কী?
সুমুদ ফ্লোটিলার একটি নৌযান। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা একটি বেসামরিক নৌবহর। এটি ইসরায়েলের গাজা অবরোধকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করছে। ইসরায়েলি গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষের শিকার গাজাবাসীর জন্য সহায়তা পৌঁছাতে ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে ত্রাণবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা (জিএসএফ) গ্লোবাল ফ্রিডম ফ্লোটিলা নামেও পরিচিত। এই আন্তর্জাতিক উদ্যোগ চলতি বছরের মাঝামাঝি শুরু হয়। ‘সুমুদ’ শব্দটির অর্থ আরবিতে ‘অটলতা’ বা ‘ধৈর্য’।

সুমুদ ফ্লোটিলার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠন। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন, গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা, এবং সুমুদ নুসান্তারা। ইতালিয়ান এনজিও ইমার্জেন্সি তাদের একটি চিকিৎসা সহায়তা জাহাজ নিয়ে এই বহরে যোগ দিয়েছে। এই জাহাজটিতে ৪৫ টন ওষুধ ও খাদ্য রয়েছে।

আয়োজকরা একে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বেসামরিক নৌবহর বলছেন। এই বহরে প্রায় ৪৫টি জাহাজে গাজার পথে যাত্রা করেছিলেন অন্তত ৫০০ মানবাধিকারকর্মী। অংশ নিতে নিবন্ধন করেছিল ১৫ হাজারের বেশি মানুষ।

সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন কর্মী, চিকিৎসক এবং শিল্পীরা। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, ফরাসি অভিনেত্রী আদেল হায়েনেল ও জুয়েলেভেলিল ম্যান্ডেলা (নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি)। এছাড়াও রয়েছেন বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম।

সুমুদ ফ্লোটিলার বেশিরভাগই ছোট ও মাঝারি আকারের নৌযান। এগুলো যাত্রা শুরু করেছে জেনোয়া, বার্সেলোনা, তিউনিস ও কাটানিয়ার মতো ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর থেকে।

২০০৭ সালে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গাজায় সরকার গঠনের পর থেকে ইসরায়েল ভূখণ্ডটিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আয়োজকরা এই পদক্ষেপকে বেআইনি এবং আন্তর্জাতিক আইনে ‘সমষ্টিগত শাস্তি’ বলে অভিহিত করছেন।

এর আগেও গাজায় অবরোধ ভাঙার উদ্দেশে যাওয়া বেশি কিছু নৌযানে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। ২০১০ সালের মাভি মারমারা নামের একটি নৌযানে ইসরায়েলের হামলায় ১০ জন নিহত হন।

সুমুদ ফ্লোটিলা সংশ্লিষ্টদের দাবি, গাজার স্থলপথ প্রবেশের পথ হয় বন্ধ করে রাখা হয়, নয়তো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত করা হয়। যার ফলে সেখানে সহায়তা পাঠানো যায় না। তাদের মতে, গাজায় ত্রাণ পাঠানোর জন্য সমুদ্রপথই একমাত্র নির্ভরযোগ্য বিকল্প।

দুই বছর ধরে গাজায় হামাসবিরোধী অভিযানের নামে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েল। সেখানে মানবিক সংকট এখন চরম। সুমুদ ফ্লোটিলার আয়োজকরা শুধু এককালীন ত্রাণ সরবরাহ নয়, তারা গাজার বাসিন্দাদের জন্য একটি স্থায়ী ও বেসামরিক নেতৃত্বাধীন সমুদ্রপথ গড়ে তুলতে চান। তারা জোর দিয়ে বলছেন, ফিলিস্তিনিদের নিজেদের আঞ্চলিক সমুদ্র সীমায় স্বাধীন প্রবেশাধিকারের অধিকার রয়েছে। সেইসঙ্গে শত শত আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারীকে একত্রিত করে তারা গাজার বিচ্ছিন্নতার দিকে বৈশ্বিক মনোযোগ আনতে চান।

এরইমধ্যে ইসরায়েলি বাধা উপেক্ষা করে গাজার জলসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মারিনেট নামের একটি জাহাজ। নৌবহরের বাকি সব জাহাজ আটকের দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। আটক করা হয়েছে সব জাহাজে থাকা ৪৫০ জনের বেশি মানবাধিকারকর্মীকে। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে পড়েছে ইসরায়েল।

তথ্যসূত্র: গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ডট ওআরজি, রয়টার্স, আল জাজিরা

সম্পর্কিত