চরচা ডেস্ক

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে নয়টা-পাঁচটা অফিস সময় শুরু হয়। এটি এখনো অনেক দেশেই প্রচলিত। কর্মক্ষেত্রের সময় নির্ধারণ নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক হয়েছে, এমনকি ধর্মঘটও। এখন যে দিনে আট ঘণ্টার অফিস সময় চলছে, তাও নানা আলোচনা ও কার্যক্রমের ফল।
দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের অ্যামোরি গেথিন ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের ইমানুয়েল সায়েজ শ্রমবাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেন, বিশ্বজুড়ে এখনো প্রাপ্তবয়স্করা সপ্তাহে গড়ে ৪২ ঘণ্টা কাজ করেন। এই সংখ্যার মধ্যে নানা বৈচিত্র্য রয়েছে। লিঙ্গ, বয়স, অর্থনৈতিক অবস্থা- এই সবকিছুই কর্মঘণ্টাকে প্রভাবিত করে। অবশ্য সব চাকরিতে এই নয়টা-পাঁচটা নিয়ম মানা না হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখনো এটি একটি অনুসরণীয় মানদণ্ড।
তবে মানুষ কত ঘণ্টা কাজ করে তার থেকে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলো, কত ঘণ্টা কাজ করা উচিত। অবশ্য চাকরির ধরন, আয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ দেশ-কাল-পাত্র ভেদে এতটাই ভিন্ন যে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া খুবই মুশকিল।
আদর্শ কর্মঘণ্টা নিয়ে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। অনেকে কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পছন্দ করেন।

সম্প্রতি ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেগর জারোশ, লরা পিলোসফ ও আন্থনি স্বামীনাথন জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কর্মীদের ওপর একটি গবেষণা চালান। গবেষণায় তাদের জিজ্ঞেস করা হয়, সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা বাড়াতে বা কমানোর জন্য তারা বেতন কমানো-বাড়ানোতে রাজি কি না।
এ প্রশ্নের জবাবে জার্মানি ও ব্রিটেনের মানুষরা জানিয়েছে, কাজের সময় কমানোর বিনিময়ে তারা বেতনে কিছুটা ছাড় দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। জামার্নির মানুষরা সাপ্তাহিক ৩৭ ঘণ্টার অফিস সময় চেয়েছেন। তবে আমেরিকার মানুষজন বেশি সময় কাজ করে বেশি টাকা পেতে চেয়েছেন।
এটা হয়ত আমেরিকানদের আর্থিক অনিশ্চয়তা ও ইউরোপের মানুষদের এদিক থেকে নিশ্চিন্ত হওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করে।
আবার আদর্শ কর্মঘণ্টার ক্ষেত্রে অনেকে উৎপাদনশীলতাকে অগ্রাধিকার দেন। জারস ও তার সহগবেষকেরা মনে করেন, যদি ধরে নেওয়া যায় যে, কম ঘণ্টা কাজ করাও নিয়োগদাতার জন্য উপকারী হতে পারে, তবে জার্মানিতে কর্মঘণ্টা ও মজুরি কমানো সবার জন্য সুবিধাজনক। এ বিষয়ে কিছু প্রমাণও রয়েছে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন পেনকেভেল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ গোলাবারুদ তৈরির শ্রমিকদের উৎপাদন বিশ্লেষণ করে দেখেন, ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজের পর অতিরিক্ত প্রতিটি ঘণ্টায় উৎপাদন কমতে থাকে। ৬৩ ঘণ্টার পর অতিরিক্ত কাজ মোট উৎপাদনে কোনো লাভই যোগ করে না।
জারসের মতে, নিম্নঝুঁকির কর্মক্ষেত্রেও একই ধারা দেখা যায়। তিনি মজা করে বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন বিকেলে কি কেউ তার সেরা কাজটি করতে পারবে?
অনেকে কর্মঘণ্টাকে আয়-ব্যয়ের দৃষ্টিতেও দেখেন। কর্মী নিয়োগে স্বাস্থ্যসেবার মতো কিছু স্থির খরচ থাকে। এই ব্যয় যদি দীর্ঘ কর্মঘণ্টায় ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে নতুন কর্মী নিয়োগের চেয়ে তা লাভজনক হতে পারে।

সোজা কথায় বলতে গেলে, নতুন কর্মী নিয়োগ না করে, ইতোমধ্যে কর্মরতদের বেশি সময় কাজ করিয়ে বেতন বেশি দেওয়া লাভজনক হতে পাারে।
কেউ কেউ আবার নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেন। ক্লান্তির কারণে কর্মদক্ষতা কমে গেলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।
চার্লস রিভার অ্যাসোসিয়েটসের তানগুই ব্রাশে ও সহগবেষকদের মিসিসিপির প্যারামেডিকদের নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ শিফটের শেষে জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়, যার ফল হয় মারাত্মক।
কাজের মানের দিকটিও দেখেন অনেকে। কিছু ক্ষেত্রে বেশি অভিজ্ঞতার জন্য ক্লান্তিকে মেনে নেওয়া যেতে পারে। লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মারিয়ন কোলেভেট ও সুইডেনের আইইএলএমের ইয়ান সাওয়ারম্যান নেদারল্যান্ডসের পার্ট-টাইম কল-সেন্টার কর্মীদের নিয়ে গবেষণায় দেখেছেন, অতিরিক্ত ঘণ্টা কাজ করলেও কলের সংখ্যা বাড়েনি, তবে তাদের কাজের মান কিছুটা উন্নত হয়েছিল। ক্লান্ত কর্মীরা হয়তো গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধানে বেশি দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন।
অনেকে দীর্ঘ কর্মঘণ্টাকে কর্মক্ষেত্রে প্রকৃত নৈতিকতার প্রমাণ মনে করেন। স্টার্টআপ পর্যায়ে অনেক সময় নির্ঘুম রাত কাটানো আবশ্যক হয়ে পড়ে, কাজের বোঝা অল্প কয়েকজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। বড় প্রতিষ্ঠান হলেও অনেক প্রতিষ্ঠাতা এই প্রবণতা বজায় রাখতে চান।
চলতি বছরের শুরুতে সার্গেই ব্রিন গুগলের এআই টিমকে নাকি বলেছেন, ৬০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহই উৎপাদনশীলতার ‘সুইট স্পট’। ভারতের ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি মনে করেন, দেশে সমৃদ্ধি আনতে হলে সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হবে।
প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানেও পদোন্নতি পেতে অতিরিক্ত সসয় কাজ করতে হয়। ইলন মাস্ক একবার বলেছিলেন, “৪০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহে কেউ কখনো বিশ্ব বদলাতে পারেনি। বেশি ঘণ্টা না দিলে পদোন্নতির সম্ভাবনাও কম।”
মূলত আদর্শ কর্মসপ্তাহ ঘণ্টায় নয়, আউটপুটে নির্ধারিত হয়। কেউ বলবেন, এটা নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তের বিষয়, কেউ হয়তো এআইয়ের দোহাই দেবেন। তবে যে ভাবেই উত্তর দিন না কেন, তা শুধু আপনার শিল্পক্ষেত্র বা জাতীয় সংস্কৃতির প্রতিফলন নয়। এটি নির্দেশ করে আপনার নিজের অগ্রাধিকার কী।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে নয়টা-পাঁচটা অফিস সময় শুরু হয়। এটি এখনো অনেক দেশেই প্রচলিত। কর্মক্ষেত্রের সময় নির্ধারণ নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক হয়েছে, এমনকি ধর্মঘটও। এখন যে দিনে আট ঘণ্টার অফিস সময় চলছে, তাও নানা আলোচনা ও কার্যক্রমের ফল।
দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের অ্যামোরি গেথিন ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের ইমানুয়েল সায়েজ শ্রমবাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেন, বিশ্বজুড়ে এখনো প্রাপ্তবয়স্করা সপ্তাহে গড়ে ৪২ ঘণ্টা কাজ করেন। এই সংখ্যার মধ্যে নানা বৈচিত্র্য রয়েছে। লিঙ্গ, বয়স, অর্থনৈতিক অবস্থা- এই সবকিছুই কর্মঘণ্টাকে প্রভাবিত করে। অবশ্য সব চাকরিতে এই নয়টা-পাঁচটা নিয়ম মানা না হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখনো এটি একটি অনুসরণীয় মানদণ্ড।
তবে মানুষ কত ঘণ্টা কাজ করে তার থেকে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলো, কত ঘণ্টা কাজ করা উচিত। অবশ্য চাকরির ধরন, আয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ দেশ-কাল-পাত্র ভেদে এতটাই ভিন্ন যে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া খুবই মুশকিল।
আদর্শ কর্মঘণ্টা নিয়ে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। অনেকে কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পছন্দ করেন।

সম্প্রতি ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেগর জারোশ, লরা পিলোসফ ও আন্থনি স্বামীনাথন জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কর্মীদের ওপর একটি গবেষণা চালান। গবেষণায় তাদের জিজ্ঞেস করা হয়, সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা বাড়াতে বা কমানোর জন্য তারা বেতন কমানো-বাড়ানোতে রাজি কি না।
এ প্রশ্নের জবাবে জার্মানি ও ব্রিটেনের মানুষরা জানিয়েছে, কাজের সময় কমানোর বিনিময়ে তারা বেতনে কিছুটা ছাড় দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। জামার্নির মানুষরা সাপ্তাহিক ৩৭ ঘণ্টার অফিস সময় চেয়েছেন। তবে আমেরিকার মানুষজন বেশি সময় কাজ করে বেশি টাকা পেতে চেয়েছেন।
এটা হয়ত আমেরিকানদের আর্থিক অনিশ্চয়তা ও ইউরোপের মানুষদের এদিক থেকে নিশ্চিন্ত হওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করে।
আবার আদর্শ কর্মঘণ্টার ক্ষেত্রে অনেকে উৎপাদনশীলতাকে অগ্রাধিকার দেন। জারস ও তার সহগবেষকেরা মনে করেন, যদি ধরে নেওয়া যায় যে, কম ঘণ্টা কাজ করাও নিয়োগদাতার জন্য উপকারী হতে পারে, তবে জার্মানিতে কর্মঘণ্টা ও মজুরি কমানো সবার জন্য সুবিধাজনক। এ বিষয়ে কিছু প্রমাণও রয়েছে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন পেনকেভেল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ গোলাবারুদ তৈরির শ্রমিকদের উৎপাদন বিশ্লেষণ করে দেখেন, ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজের পর অতিরিক্ত প্রতিটি ঘণ্টায় উৎপাদন কমতে থাকে। ৬৩ ঘণ্টার পর অতিরিক্ত কাজ মোট উৎপাদনে কোনো লাভই যোগ করে না।
জারসের মতে, নিম্নঝুঁকির কর্মক্ষেত্রেও একই ধারা দেখা যায়। তিনি মজা করে বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন বিকেলে কি কেউ তার সেরা কাজটি করতে পারবে?
অনেকে কর্মঘণ্টাকে আয়-ব্যয়ের দৃষ্টিতেও দেখেন। কর্মী নিয়োগে স্বাস্থ্যসেবার মতো কিছু স্থির খরচ থাকে। এই ব্যয় যদি দীর্ঘ কর্মঘণ্টায় ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে নতুন কর্মী নিয়োগের চেয়ে তা লাভজনক হতে পারে।

সোজা কথায় বলতে গেলে, নতুন কর্মী নিয়োগ না করে, ইতোমধ্যে কর্মরতদের বেশি সময় কাজ করিয়ে বেতন বেশি দেওয়া লাভজনক হতে পাারে।
কেউ কেউ আবার নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেন। ক্লান্তির কারণে কর্মদক্ষতা কমে গেলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।
চার্লস রিভার অ্যাসোসিয়েটসের তানগুই ব্রাশে ও সহগবেষকদের মিসিসিপির প্যারামেডিকদের নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ শিফটের শেষে জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়, যার ফল হয় মারাত্মক।
কাজের মানের দিকটিও দেখেন অনেকে। কিছু ক্ষেত্রে বেশি অভিজ্ঞতার জন্য ক্লান্তিকে মেনে নেওয়া যেতে পারে। লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মারিয়ন কোলেভেট ও সুইডেনের আইইএলএমের ইয়ান সাওয়ারম্যান নেদারল্যান্ডসের পার্ট-টাইম কল-সেন্টার কর্মীদের নিয়ে গবেষণায় দেখেছেন, অতিরিক্ত ঘণ্টা কাজ করলেও কলের সংখ্যা বাড়েনি, তবে তাদের কাজের মান কিছুটা উন্নত হয়েছিল। ক্লান্ত কর্মীরা হয়তো গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধানে বেশি দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন।
অনেকে দীর্ঘ কর্মঘণ্টাকে কর্মক্ষেত্রে প্রকৃত নৈতিকতার প্রমাণ মনে করেন। স্টার্টআপ পর্যায়ে অনেক সময় নির্ঘুম রাত কাটানো আবশ্যক হয়ে পড়ে, কাজের বোঝা অল্প কয়েকজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। বড় প্রতিষ্ঠান হলেও অনেক প্রতিষ্ঠাতা এই প্রবণতা বজায় রাখতে চান।
চলতি বছরের শুরুতে সার্গেই ব্রিন গুগলের এআই টিমকে নাকি বলেছেন, ৬০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহই উৎপাদনশীলতার ‘সুইট স্পট’। ভারতের ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি মনে করেন, দেশে সমৃদ্ধি আনতে হলে সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হবে।
প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানেও পদোন্নতি পেতে অতিরিক্ত সসয় কাজ করতে হয়। ইলন মাস্ক একবার বলেছিলেন, “৪০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহে কেউ কখনো বিশ্ব বদলাতে পারেনি। বেশি ঘণ্টা না দিলে পদোন্নতির সম্ভাবনাও কম।”
মূলত আদর্শ কর্মসপ্তাহ ঘণ্টায় নয়, আউটপুটে নির্ধারিত হয়। কেউ বলবেন, এটা নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তের বিষয়, কেউ হয়তো এআইয়ের দোহাই দেবেন। তবে যে ভাবেই উত্তর দিন না কেন, তা শুধু আপনার শিল্পক্ষেত্র বা জাতীয় সংস্কৃতির প্রতিফলন নয়। এটি নির্দেশ করে আপনার নিজের অগ্রাধিকার কী।