বিশ্বখ্যাত ‘নেপাম গার্ল’ ছবিটি কে তুলেছিলেন?

বিশ্বখ্যাত ‘নেপাম গার্ল’ ছবিটি কে তুলেছিলেন?
বিশ্বখ্যাত ‘নেপাম গার্ল’। ছবি: এপি

শুরুটা হয়েছিল ১৯৭২ সালের ৮ জুন। পুরোদমে ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলছে। ত্যা নিন প্রদেশে ত্র্যাং ব্যাং শহরের কাওদাই মন্দির থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পালাচ্ছিল একদল বেসামরিক মানুষ ও দক্ষিণ ভিয়েতনামি সেনা। ভিয়েতনামের বিমানবাহিনী ভুল বোঝে, মনে করে শত্রুরা পালাচ্ছে, তারা হামলা করে বসে। অনেকের সঙ্গে সেই নৃশংস আক্রমণের শিকার হয় ৯ বছর বয়সী ফান থি কিম ফুক। তার গায়ে কোনো কাপড় নেই, শরীরের বেশির ভাগ অংশ আগুনে ঝলসে গেছে। আতঙ্ক ও যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে সে সড়কে দৌঁড়াচ্ছে। ঠিক সে সময় তার ছবি তুলেছিলেন ভিয়েতনামি-মার্কিন ফটোসাংবাদিক নিক উট। উট যেহেতু বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) স্টাফ ছিলেন– সেহেতু ছবিটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তার আগে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে সে সময়ের ভিয়েতনাম ব্যুরোর পিকচার এডিটর হর্স্ট ফাসকে। মানুষের উলঙ্গ ছবি এপি তখন ব্যবহার করত না। ফাস এপির সদর দপ্তরকে নিয়ম ভেঙে ছবিটি ছাপতে রাজি করিয়েছিলেন। শর্ত ছিল, শিশুটির ক্লোজআপ ছাপা যাবে না।

যা হোক। ‘দ্য টেরর অব ওয়ার’ শিরোনামের এই ছবি একসময় হয়ে ওঠে বিশ্বের ভীষণ প্রভাবশালী আলোকচিত্রগুলোর একটি। যদিও ছবিটি ‘নেপাম গার্ল’ নামে বেশি পরিচিত। বিশ্বের প্রায় সবগুলো প্রধান পত্রিকায় ছবিটি ছাপা হয়েছে। তা নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা এখনো চলছে।

যুদ্ধ কতটা বিধ্বংসী ও ভয়াবহ হতে পারে, এই ছবি যেন বিশ্ববাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ছবিটি ভুয়া কি না–সেই প্রশ্ন তুললেও, সে সময় আমেরিকানদের যুদ্ধবিরোধী অবস্থানকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেননি। ১৯৭৩ সালে ছবিটির জন্য উট ‘স্পট নিউজ’ বিভাগে পুলিৎজার পুরস্কার এবং ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর বর্ষসেরা আলোকচিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। একই বছর মার্কিন সরকার ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়।

গল্পে নতুন মোড়

মাত্র একটি ছবি বিশ্বনন্দিত করে তুলেছিল ফটোসাংবাদিক নিক উটকে। এই ছবি নিয়ে তিনি সারা দুনিয়া ঘুরেছেন, পুরস্কার গ্রহণ করেছেন, ভাষণ ও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বিশ্বের বড় বড় জাদুঘরে তার সেই ছবি সংরক্ষিত। ফটোগ্রাফি মহলের এমন কোনো সম্মাননা নেই–যা তিনি পাননি। তার ভালোই চলছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের দিকে কার্ল রবিনসন নামের একজন মার্কিন ফটো এজেন্সি সেভেন-এর নির্বাহী পরিচালক ও ফটোসাংবাদিক গ্যারি নাইটকে একটি ই-মেইল পাঠান। গ্যারিকে তিনি জানান, সেই যে বিশ্বখ্যাত আলোকচিত্র–সেটি এপির ফটোসাংবাদিক নিক উটের তোলা নয়! ছবিটি ছিল কোনো এক স্ট্রিঙ্গারের (ফ্রিল্যান্সার) তোলা। সেই স্ট্রিঙ্গারের নামের বদলে নিক উটের নাম বসিয়ে ছবিটি সার্কুলেট করা হয়েছিল! আর এই ঘটনার সাক্ষী তিনি নিজেই। সে সময় রবিনসন ছিলেন ভিয়েতনামে এপি কার্যালয়ের ফটো এডিটর।

রবিনসন দাবি করেন, সেদিন নিক উট ও একজন স্ট্রিঙ্গারের কয়েকটি ফিল্ম রোল তার হাতে আসে। দুজন ফটোসাংবাদিকই সেদিনের ঘটনার ছবি তুলেছিলেন। উটও সেই শিশুর ছবি তুলেছিলেন–কিন্তু অন্য অ্যাঙ্গেলে। ছবিটি নিজেই বাছাই করেছিলেন বলে রবিনসনের কোনো সন্দেহ নেই, ছাপা হওয়া ছবিটি ছিল স্ট্রিঙ্গারের। নির্বাচিত ছবির তথ্য নথিভুক্ত করার সময় তাকে তার সুপারভাইজার এবং এপির পিকচার এডিটর হর্স্ট ফাস স্ট্রিঙ্গারের নামের বদলে নিক উটের নাম লিখতে বলেন। চাকরি হারানোর ভয়ে তাই করতে বাধ্য হয়েছিলেন রবিনসন। যদিও এই অনৈতিক ঘটনার কথা সে সময় এপির সবাই জানত বলেও তিনি জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় সাংবাদিকরাও জানত, এই ছবি আর যারই হোক–অন্তত নিক উটের তোলা নয়।

‘দ্য স্ট্রিঙ্গার’ তথ্যচিত্র থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট, যেখানে আলোচিত স্ট্রিঙ্গারকে দেখা যায়।
‘দ্য স্ট্রিঙ্গার’ তথ্যচিত্র থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট, যেখানে আলোচিত স্ট্রিঙ্গারকে দেখা যায়।

প্রায় ৫০ বছর এই ‘সত্য’ নিজের মধ্যে রেখে দিয়েছিলেন কার্ল রবিনসন। তাহলে এত দিন পর কেন বললেন? জীবনের সায়াহ্নে এসে রবিনসন অপরাধবোধে ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগে এই ‘না-বলা কথা’ বিশ্বকে জানিয়ে যেতে চান। তিনি বলেছেন, “কিছুদিনের মধ্যে আমি ৮০ বছরে পা দেব। মৃত্যুর আগে আমার একটিই ইচ্ছে–ছবিটির আসল আলোকচিত্রীকে খুঁজে বের করে, তাকে বলতে চাই–‘আমি দুঃখিত’।” আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, হর্স্ট ফাসের মতো একজন পেশাদার ফটোসাংবাদিক কেন একজন স্ট্রিঙ্গারের নাম ফেলে দিয়ে নিক উটের নাম তুলে ধরেছিলেন? রবিনসনের অনুমান, উটের প্রতি ফাসের এক ধরনের দায় ছিল। উটের ভাই একটি অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে নিহত হয়েছিলেন, আর তাকে পাঠিয়েছিলেন হাস। সেই অপরাধবোধ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতেই একটি সম্ভাব্য বিখ্যাত ছবির মালিক করে দেওয়া হয় উটকে। তিনি কেন এমনটি করেছিলেন বা আদৌ করেছিলেন কিনা–তা জানার আর উপায় নেই, ২০১২ সালে তিনি মারা যান।

স্ট্রিঙ্গারের সন্ধানে

কার্ল রবিনসনের দাবির ওপর ভিত্তি করে গ্যারি নাইট প্রায় দুই বছর অনুসন্ধান ও গবেষণা করেন। শেষে নিশ্চিত হন–ছবিটি এপির ফটোসাংবাদিক নিক উটের নয়। ছবিটির ফরেনসিক পরীক্ষা করিয়েই থেমে থাকেননি তিনি। খুঁজে বের করেছেন ছবির ‘প্রকৃত মালিক’কে। অনেক বছর আগে রবিনসনের ভিয়েতনামি স্ত্রী আলোকচিত্রবিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে জানতে পারেন, সবাই বলছিল–বিখ্যাত ছবিটির আলোকচিত্রী নিক উট নন, এটি তুলেছিলেন নুইন ত্যান নে নামের একজন স্ট্রিঙ্গার। ২০২২ সালে তো রবিনসন মুখ খুললেন, কিন্তু ২০২৩ সালে সেই তত্ত্বকে আরও উস্কে দেন ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির নারী ফটোসাংবাদিক লে ভ্যান। তিনি নুইন ত্যান নে’র একটি ছবি ফেসবুকে দিয়ে জানতে চান–কেউ তাকে চেনেন কি না। ছবিটি অবশ্য প্রথম পোস্ট করেছিলেন কার্ল রবিনসনই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিটি দেখে নুইন ত্যান নে’র এক বন্ধু চিনতে পারেন এবং নে’কে জানান। কয়েক দিন পর নে সেই নারী সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা করেন। এই যে নে’কে পাওয়ার ঘটনা–তা ভিয়েতনামে কিছুটা সাড়া জাগাতে পারলেও ইংরেজি ভাষার সংবাদমাধ্যমগুলো এড়িয়ে যায়।

গ্যারি নাইট। ছবিটি তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া
গ্যারি নাইট। ছবিটি তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া

পঞ্চাশ বছরেরও বেশি আগের সেই ঘটনার কথা নে বর্ণনা করেছেন। ছবিটির জন্য তিনি এপির কাছ থেকে পেয়েছিলেন মাত্র ২০ ডলার। সঙ্গে স্মারক হিসেবে তাকে দেওয়া হয়েছিল সেই ছবির একটি প্রিন্ট কপি। যদিও সেই কপিটিও তার কাছে নেই। এপি যেহেতু কখনো নে’র নাম নেয়নি–সেই ক্ষোভ থেকে নে’র স্ত্রী হার্ড কপিটি ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। নে ফটোসাংবাদিকতার পেশা ছেড়ে দিয়ে ১৯৭৫ সালে আমেরিকায় পাড়ি জমান। পরে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি পোস্ট-প্রোডাকশন কোম্পানিতে চলচ্চিত্র প্রসেসিংয়ের কাজ নেন। আমেরিকায় তিনি একটি স্যুটকেস নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। ফলে ভিয়েতনামে যেসব সরঞ্জাম, ক্যামেরা ও নেগেটিভ ছিল–তার বেশির ভাগই হারিয়ে গেছে।

নে এখন বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন। যখন স্ট্রোক করে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন গল্পে নতুন মোড় আনা সেই রবিনসন তার সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে যান। নে’র হাত ধরে তিনি বলেছেন, “তোমার অধিকার আমরা কেড়ে নিয়েছিলাম—এই অপরাধবোধ আমাকে শান্তি দিচ্ছে না। আমি দুঃখিত। আমার জন্য তুমিই প্রমাণ, তোমার জন্য আমি।”

রবিনসনের ই-মেইলের পর থেকেই অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছিলেন গ্যারি নাইট। তিনি ‘নেপাম গার্ল’সহ এর আগে-পরের বেশকিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নিয়ে যান ‘ইনডেক্স ইনভেস্টিগেশন্স’ নামের একটি প্যারিসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের কাছে। তারা ছবিগুলোর ওপর ভিত্তি করে সেদিনের ঘটনার একটি ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করে। ‘ইনডেক্স ইনভেস্টিগেশন্স’ বলেছে, আলোচিত ছবিটি যখন তোলা হয়, তার ১৫ সেকেন্ড পরও ছবি তোলার জায়গা থেকে নিক উট ছিলেন ২৫০ ফুট দূরে। একই সময় মার্কিন ফটোসাংবাদিক ডেভিড বারনেটের তোলা একই ঘটনার একটি ছবির ওপর ভিত্তি করে তৈরি মডেলিং বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ওই ছবিটি তুলতে হলে কিম ফুক (শিশু) যে দূরত্ব পার হয়েছে, তার তিনগুণ দূরত্ব উটকে মাত্র ৩ মিনিটে পার করতে হতো। বিচার-বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ছবিটি যেখান থেকে তোলা হয়েছে সেখানে উট ছিলেনই না।

নিক উট। ছবিটি তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া
নিক উট। ছবিটি তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া

তারপর যা হলো

ছবিটি তার তোলা নয়–এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন ফটোসাংবাদিক নিক উট। ১৩ ফেব্রুয়ারি (২০২৫) ফেসবুকে তিনি বলেছেন, এমন দাবি করার অধিকার কারও নেই, “কারণ প্রথম দিন থেকে আমিই আমার প্রতিটি ছবির প্রকৃত স্রষ্টা।” তিনি প্রশ্ন তুলেছেন এত বছর রবিনসন কেন চুপ ছিলেন। তিনি আরও বলেছেন, “এই ছবির জন্য পুলিৎজার পুরস্কার কর্তৃপক্ষ যখন আমার নাম ঘোষণা করে–তখন রবিনসন আমার পাশেই দাঁড়িয়েছিলন।”

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এপিও নিজেদের মতো করে অনুসন্ধান করেছে। প্রায় এক বছর ধরে তদন্ত শেষে তারা ২০২৫ সালের ৬ মে প্রায় ১০০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারা এখনো মনে করে, ছবিটি নিক উটই তুলেছিলেন। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এই প্রতিষ্ঠান সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ৫৩ বছরের পুরোনো ছবিটির ক্রেডিট পরিবর্তন করার মতো পর্যাপ্ত ও গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।

সিএনএনকে পাঠানো এক বিবৃতিতে পুলিৎজার পুরস্কার আয়োজকরা জানিয়েছে, “পুলিৎজার পুরস্কার নির্ভর করে সংবাদ সংস্থাগুলোর জমা দেওয়া তথ্য ও তাদের ঠিক করা স্বত্বাধিকারীর ওপর।” তাই ভবিষ্যতে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার সম্ভাবনা তারা দেখছে না।

ছবিটির জন্য উট নেদারল্যান্ডসের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর ‘ফটো অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। এত অভিযোগ ও সমালোচনার মুখে একমাত্র তারাই বেঁকে বসে। তারাও অনুসন্ধান চালায় এবং জানতে পারে, ছবিটি নিক উটের তোলা নয়। গত ২৬ জুন তারা তাদের ওয়েবসাইটে পুরো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রথমবারের মতো তারা নিক উটের নাম সরিয়ে দিয়ে বলেছে, সন্দেহের মাত্রা এতটাই বেশি যে, ছবিটির সঙ্গে নিক উটের নাম রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। হাতে আসা প্রমাণ জোরালো সম্ভাবনা তৈরি করেছে যে, ছবিটি আসলে নুইন ত্যান নে তুলেছিলেন।

নুইন ত্যান নে। ‘দ্য স্ট্রিঙ্গার’ তথ্যচিত্র থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট
নুইন ত্যান নে। ‘দ্য স্ট্রিঙ্গার’ তথ্যচিত্র থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

দ্য স্ট্রিঙ্গার : দ্য ম্যান হু টুক দ্য ফটো

এই পুরো ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি তথ্যচিত্র। ‘দ্য স্ট্রিঙ্গার: দ্য ম্যান হু টুক দ্য ফটো’ শিরোনামের চলচ্চিত্রটির নির্মাতা বাও নুইন। যার চিত্রনাট্যের অন্যতম লেখক সেই গ্যারি নাইট। তিনি নিজেও তথ্যচিত্রের অন্যতম প্রধান চরিত্র। চলচ্চিত্রটির অন্যতম প্রযোজকও দ্য সেভেন ফাউন্ডেশন। এটি প্রথম সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় (২৫ জানুয়ারি, ২০২৫)। তারপর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায়–২৮ নভেম্বর (২০২৫)।

চলচ্চিত্রটির পরিচালক নুইন টাইম ম্যাগাজিনকে জানিয়েছেন, “ফরেনসিক প্রমাণ বলছে, উট ছবিটি তুলতে যে জায়গায় ছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে, সেখানে তার থাকা অসম্ভব। তিনি সেই ছবি তোলার মুহূর্তে সেখান থেকে অনেক দূরে ছিলেন।” তিনি আরও বলেন, “আমি চাই দর্শকরা এই ফরেনসিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিক।’

‘দ্য স্ট্রিঙ্গার’ চলচ্চিত্রের পোস্টার
‘দ্য স্ট্রিঙ্গার’ চলচ্চিত্রের পোস্টার

শেষ হইয়াও হইল না শেষ

গল্পের গোড়াতেই জেনেছিলাম, ভিয়েতনাম ব্যুরোর পিকচার এডিটর ও ফটোসাংবাদিক হর্স্ট ফাস ছবিটির ক্যাপশন থেকে স্ট্রিঙ্গারের নাম সরিয়ে নিক উটের নাম বসিয়েছিলেন। সবার বক্তব্য পাওয়া গেলেও এই ফাসের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি, তার আগেই তিনি মারা যান। যা হোক, এই ফাসের সঙ্গে কিন্তু বাংলাদেশের একটি সংযোগ রয়েছে। তিনি মোট দুবার পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করেন, ১৯৬৫ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ছবির জন্য এবং ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবির জন্য। তবে তা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো ছবি ছিল না। তিনি তার ছবিতে দেখিয়েছিলেন স্বাধীনতার পর কীভাবে মুক্তিযোদ্ধারা বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে পাকিস্তানের দালালদের হত্যা করেছে। সেই একগুচ্ছ ছবির শিরোনাম ছিল ‘ডেথ অব ঢাকা’। ছবিগুলোর জন্য ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো পুরস্কারও পেয়েছিলেন ফাস। তখন এই ছবি নিয়েও বিতর্ক উঠেছিল। অনেকে অভিযোগ করেছিলেন, ঘটনাস্থলে হর্স্ট ফাস এবং অন্যান্য ফটোসাংবাদিকদের উপস্থিতি ‘হত্যাকাণ্ড’কে উৎসাহিত করেছিল।

তথ্যসূত্র : সিএনএন, লস এঞ্জেলেস টাইমস, টাইম ম্যাগাজিন, দ্য গার্ডিয়ান, পেটা পিক্সেল, এপি ডট ওআরজি, ডেডলাইন, ফটোগ্রাফি ডিকশনারি

সম্পর্কিত