রিতু চক্রবর্ত্তী

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তার জন্য প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে একটি তহবিল গঠনের কথা বলা হয়। এ তহবিল এখন বাস্তব। বাংলাদেশড়সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু এ সহায়তার ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে এর পরিমাণ নিয়েও।
জলবায়ু তহবিল গঠনের গতি শুরু থেকেই শ্লথ ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত তহবিল গঠনে নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর আন্তরিকতার অভাব ছিল। জলবায়ু তহবিল গঠন ও অর্থায়ন সম্পর্কিত যে নীতিমালা, তা বিবেচনায় নিলে একে মোটাদাগে তিনভাগে ভাগ করা যায়–
১. ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ তহবিল
তিন বছর আগে, কপ ২৭ সম্মেলনে, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ প্রথমবারের মতো একটি ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতি তহবিল প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত হন।
এই অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে ক্ষতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর হয়েছে, তা থেকে পুনরুদ্ধার পেতে সাহায্য করবে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো ক্ষতিপূরণের দায়ভার এড়ানোর চেষ্টা করেছে শুরু থেকেই। এ কারণে এই তহবিল প্রতিষ্ঠা করতে কয়েক দশক সময় লেগেছে।
২. প্রশমন
উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারসহ অন্যান্য দূষণকারী কার্যক্রম থেকে সরে আসতে সাহায্য করার লক্ষ্যে এ খাত রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ অর্থ এই খাতেই দেওয়া হয়েছে। অনেক দেশেই কয়লা-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোর মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। সৌরবিদ্যুৎ বা এ ধরনের পরিবেশবান্ধব বা টেকসই শক্তির উৎসে রূপান্তরের জন্য এ দেশগুলোর অর্থায়ন প্রয়োজন।

৩. অভিযোজন
এই অর্থায়ন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলোর জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে–
● শক্তিশালী বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা নির্মাণ
● ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন
● ঝড় প্রতিরোধী ঘর তৈরি
● খরা সহনশীল শস্যবীজ বিতরণ
জলবায়ু তহবিলের আকার কত
২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত কপ ১৫ জলাবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলো একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। সমঝোতা অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করবে ধনী দেশগুলো। তবে ২০২০ সালের শেষে মোট সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, নির্ধঅরিত এই লক্ষ্য ২০২২ সালে অর্জন হয়। এই তহবিলের ৮২ শতাংশ আসে সরকারি তহবিল থেকে, বাকিটা বেসরকারি খাত থেকে। এরপর কপ ২৯ সম্মলনে ২০৩৫ সালের মধ্যে তহবিলের আকার ৩০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ হয়।
এই তহবিল কি যথেষ্ট
ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আসলে কত অর্থের প্রয়োজন, তা নিয়ে ২০১৮ সালে কিছু গবেষণা হয়েছিল। সেই গবেষণায় অনুমান করা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২৯০ বিলিয়ন থেকে ৫৮০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। যদিও অন্য একটি হিসাবে এই ক্ষতির পরিমাণ ৪০০ বিলিয়ন ডলার ধারণা করা হয়। অর্থাৎ, ক্ষতির পরিমাণ এ দুই অঙ্কের যা–ই হোক না কেন, গঠিত তহবিল তা মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়।
বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টানলে বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা অন্যতম দেশ হওয়ায় জলবায়ু অর্থায়নের ন্যায্য দাবিদার বাংলাদেশ। কিন্তু ডেটা বলছে ভিন্ন কথা।

বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি সেন্টারের গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে হওয়া ক্ষতির যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তা বিবেচনায় নিলেই এই অর্থায়নকে অপ্রতুল মনে হতে বাধ্য। তারা বলছে, শুধু ঝড় ও বন্যার পুনঃপুনঃ আঘাতের কারণেই দেশে যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, তা এমনকি ৩২০ কোটি ডলারের সমান। অথচ গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের মতো আরও অনেক দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির সম্মুখীন। ফলে বিদ্যমান তহবিল দিয়ে এসব দেশের সম্মিলিত ক্ষতির কতটা পূরণ সম্ভব, সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই আসে।
এদিকে এই ক্ষতি ক্রমশ বাড়ছে। ঢাকাভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ প্রকাশিত প্রথম জলবায়ু ঋণ ঝুঁকি সূচক (ক্লাইমেট ডেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২৫) অনুযায়ী, ঋণঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশ ১০০ পয়েন্টের মধ্যে পেয়েছে ৬৫ দশমিক ৩৭, যা তাকে “উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ” বিভাগে ফেলেছে। সংস্থাটি বলছে, চলতি ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে এই স্কোর আরও বেড়ে ৬৫ দশমিক ৬৩-এ পৌঁছাতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে আগেই বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ জলবায়ু তহবিল থেকে যে অর্থায়ন পাচ্ছে, তা অনুদানের বদলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঋণ হিসেবে আসছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশ ও অ্যাঙ্গোলায় হওয়া জলবায়ু অর্থায়নের ৯৫ শতাংশই হয় ঋণ হিসেবে।
একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি, অন্যদিকে অপ্রতুল অর্থায়ন এবং তার সঙ্গে অর্থায়নের নামে ঋণের বোঝা চাপানো হচ্ছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর কাঁধে। এতে বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর আর্থিক চাপ স্পষ্টতই বৈষম্যমূলক হয়ে উঠছে। গবেষণা অনুযায়ী, ২০০২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জলবায়ু সম্পর্কিত ঋণ গ্রহণের ফলে দেশে মাথাপিছু ঋণের বোঝা দাঁড়িয়েছে ৭৯.৬১ ডলার। আর এটা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) গড় মাথাপিছু ঋণের (২৩.১২ ডলার) তুলনায় প্রায় ৩.৫ গুণ বেশি।

এই অত্যধিক ঋণের বোঝা নিয়েই বাংলাদেশের ৯ কোটি মানুষ উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় বাস করছে। উচ্চঝুঁকির এলাকায় বসবাসের এ তথ্য জানাচ্ছে, আমেরিকাভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা দ্য ক্লাইমেট রিয়েলিটি প্রোজেক্ট। তার মানে দাঁড়ায়, বাংলাদেশ কপ ৩০ জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিয়েছে মাথায় এ জলবায়ু ঋণের বোঝা নিয়ে। কিন্তু অর্থায়নের নামে এ ঋণ কেন?
এ বিষয়ে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশনের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ চরচাকে বলেন, “এটা খুবই জটিল প্রক্রিয়া। তাছাড়া এই তহবিলের পুরোটাই যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে, এটাও নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এই তহবিল আসলে নানাভাবেই মোবিলাইজ করা হয়-ঋণ হিসেবে বা গ্রাণ্ট হিসেবে।”
তবে এবারের সম্মেলনে এ ঋণের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশসহ এলডিসিভুক্ত দেশগুলো। আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এবারের কপ ৩০ সম্মেলনে সবাই এই ঋণের বিরোধিতাই করেছে এবং এই অর্থ গ্রাণ্ট হিসেবে পাওয়ার কথাই বলেছে। উপনিবেশিক কায়দায় তাদের থেকে আমাদের ঋণ নেওয়ার কিছু নেই। কারণ, এর মাধ্যমে উন্নত বিশ্ব আমাদের ওপর কোনো দয়া করছে না, বরং এই ক্ষতিপূরণ আমাদের প্র্যাপ্য।”

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তার জন্য প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে একটি তহবিল গঠনের কথা বলা হয়। এ তহবিল এখন বাস্তব। বাংলাদেশড়সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু এ সহায়তার ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে এর পরিমাণ নিয়েও।
জলবায়ু তহবিল গঠনের গতি শুরু থেকেই শ্লথ ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত তহবিল গঠনে নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর আন্তরিকতার অভাব ছিল। জলবায়ু তহবিল গঠন ও অর্থায়ন সম্পর্কিত যে নীতিমালা, তা বিবেচনায় নিলে একে মোটাদাগে তিনভাগে ভাগ করা যায়–
১. ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ তহবিল
তিন বছর আগে, কপ ২৭ সম্মেলনে, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ প্রথমবারের মতো একটি ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতি তহবিল প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত হন।
এই অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে ক্ষতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর হয়েছে, তা থেকে পুনরুদ্ধার পেতে সাহায্য করবে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো ক্ষতিপূরণের দায়ভার এড়ানোর চেষ্টা করেছে শুরু থেকেই। এ কারণে এই তহবিল প্রতিষ্ঠা করতে কয়েক দশক সময় লেগেছে।
২. প্রশমন
উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারসহ অন্যান্য দূষণকারী কার্যক্রম থেকে সরে আসতে সাহায্য করার লক্ষ্যে এ খাত রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ অর্থ এই খাতেই দেওয়া হয়েছে। অনেক দেশেই কয়লা-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোর মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। সৌরবিদ্যুৎ বা এ ধরনের পরিবেশবান্ধব বা টেকসই শক্তির উৎসে রূপান্তরের জন্য এ দেশগুলোর অর্থায়ন প্রয়োজন।

৩. অভিযোজন
এই অর্থায়ন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলোর জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে–
● শক্তিশালী বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা নির্মাণ
● ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন
● ঝড় প্রতিরোধী ঘর তৈরি
● খরা সহনশীল শস্যবীজ বিতরণ
জলবায়ু তহবিলের আকার কত
২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত কপ ১৫ জলাবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলো একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। সমঝোতা অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করবে ধনী দেশগুলো। তবে ২০২০ সালের শেষে মোট সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, নির্ধঅরিত এই লক্ষ্য ২০২২ সালে অর্জন হয়। এই তহবিলের ৮২ শতাংশ আসে সরকারি তহবিল থেকে, বাকিটা বেসরকারি খাত থেকে। এরপর কপ ২৯ সম্মলনে ২০৩৫ সালের মধ্যে তহবিলের আকার ৩০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ হয়।
এই তহবিল কি যথেষ্ট
ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আসলে কত অর্থের প্রয়োজন, তা নিয়ে ২০১৮ সালে কিছু গবেষণা হয়েছিল। সেই গবেষণায় অনুমান করা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২৯০ বিলিয়ন থেকে ৫৮০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। যদিও অন্য একটি হিসাবে এই ক্ষতির পরিমাণ ৪০০ বিলিয়ন ডলার ধারণা করা হয়। অর্থাৎ, ক্ষতির পরিমাণ এ দুই অঙ্কের যা–ই হোক না কেন, গঠিত তহবিল তা মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়।
বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টানলে বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা অন্যতম দেশ হওয়ায় জলবায়ু অর্থায়নের ন্যায্য দাবিদার বাংলাদেশ। কিন্তু ডেটা বলছে ভিন্ন কথা।

বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি সেন্টারের গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে হওয়া ক্ষতির যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তা বিবেচনায় নিলেই এই অর্থায়নকে অপ্রতুল মনে হতে বাধ্য। তারা বলছে, শুধু ঝড় ও বন্যার পুনঃপুনঃ আঘাতের কারণেই দেশে যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, তা এমনকি ৩২০ কোটি ডলারের সমান। অথচ গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের মতো আরও অনেক দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির সম্মুখীন। ফলে বিদ্যমান তহবিল দিয়ে এসব দেশের সম্মিলিত ক্ষতির কতটা পূরণ সম্ভব, সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই আসে।
এদিকে এই ক্ষতি ক্রমশ বাড়ছে। ঢাকাভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ প্রকাশিত প্রথম জলবায়ু ঋণ ঝুঁকি সূচক (ক্লাইমেট ডেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২৫) অনুযায়ী, ঋণঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশ ১০০ পয়েন্টের মধ্যে পেয়েছে ৬৫ দশমিক ৩৭, যা তাকে “উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ” বিভাগে ফেলেছে। সংস্থাটি বলছে, চলতি ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে এই স্কোর আরও বেড়ে ৬৫ দশমিক ৬৩-এ পৌঁছাতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে আগেই বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ জলবায়ু তহবিল থেকে যে অর্থায়ন পাচ্ছে, তা অনুদানের বদলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঋণ হিসেবে আসছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশ ও অ্যাঙ্গোলায় হওয়া জলবায়ু অর্থায়নের ৯৫ শতাংশই হয় ঋণ হিসেবে।
একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি, অন্যদিকে অপ্রতুল অর্থায়ন এবং তার সঙ্গে অর্থায়নের নামে ঋণের বোঝা চাপানো হচ্ছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর কাঁধে। এতে বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর আর্থিক চাপ স্পষ্টতই বৈষম্যমূলক হয়ে উঠছে। গবেষণা অনুযায়ী, ২০০২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জলবায়ু সম্পর্কিত ঋণ গ্রহণের ফলে দেশে মাথাপিছু ঋণের বোঝা দাঁড়িয়েছে ৭৯.৬১ ডলার। আর এটা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) গড় মাথাপিছু ঋণের (২৩.১২ ডলার) তুলনায় প্রায় ৩.৫ গুণ বেশি।

এই অত্যধিক ঋণের বোঝা নিয়েই বাংলাদেশের ৯ কোটি মানুষ উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় বাস করছে। উচ্চঝুঁকির এলাকায় বসবাসের এ তথ্য জানাচ্ছে, আমেরিকাভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা দ্য ক্লাইমেট রিয়েলিটি প্রোজেক্ট। তার মানে দাঁড়ায়, বাংলাদেশ কপ ৩০ জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিয়েছে মাথায় এ জলবায়ু ঋণের বোঝা নিয়ে। কিন্তু অর্থায়নের নামে এ ঋণ কেন?
এ বিষয়ে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশনের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ চরচাকে বলেন, “এটা খুবই জটিল প্রক্রিয়া। তাছাড়া এই তহবিলের পুরোটাই যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে, এটাও নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এই তহবিল আসলে নানাভাবেই মোবিলাইজ করা হয়-ঋণ হিসেবে বা গ্রাণ্ট হিসেবে।”
তবে এবারের সম্মেলনে এ ঋণের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশসহ এলডিসিভুক্ত দেশগুলো। আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এবারের কপ ৩০ সম্মেলনে সবাই এই ঋণের বিরোধিতাই করেছে এবং এই অর্থ গ্রাণ্ট হিসেবে পাওয়ার কথাই বলেছে। উপনিবেশিক কায়দায় তাদের থেকে আমাদের ঋণ নেওয়ার কিছু নেই। কারণ, এর মাধ্যমে উন্নত বিশ্ব আমাদের ওপর কোনো দয়া করছে না, বরং এই ক্ষতিপূরণ আমাদের প্র্যাপ্য।”