সোহরাব হাসান

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আজ ৩০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকালে ইন্তেকাল (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন) করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চার দশকের একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান হলো।
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। মুসলিম বিশ্বে দ্বিতীয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টো। এদিক থেকে খালেদা জিয়া একটি ইতিহাস তৈরি করেছেন।
লেখক-গবেষক মহিদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাসদের রাজনৈতিক ইতিহাস লিখেছেন। জামায়াতে ইসলামী নিয়েও তার বই আছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন পাঠকপ্রিয় একাধিক বই। তার এক এগারো বাংলাদেশ ২০০৭-০৮ বইটিতে আছে অনেক অজানা তথ্য, যা ভবিষ্যত গবেষকদের আকরগ্রন্থ হিসেবে কাজ করবে।
মহিউদ্দিন আহমদ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে প্রথম যার জীবনভিত্তিক রাজনৈতিক আখ্যান লিখলেন, তিনি বেগম খালেদা জিয়া। একজন গৃহবধূ নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে যে কেবল দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া নয়, জাতীয় রাজনীতির শীর্ষে উঠেছেন, তারও বর্ণনা আছে এ বইয়ে নানা তথ্য উপাত্তের সমাহারে।

মহিউদ্দিন আহমদ কেন এই বই লিখতে উদ্বুদ্ধ হলেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, “এ দেশে সফল রাজনীতিক অনেকেই আছেন। তারা কেউ কেউ ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছাতে পেরেছেন। আবার অনেক সুদর্শন নারী-পুরুষকে জানি, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ করে চলচ্চিত্রে কিংবদন্তী হয়ে আছেন। সুচিত্রা সেন থেকে সোফিয়া লোরেন অনেকেই আমাদের কৈশোর যৌবনের ‘ক্রাশ’। রাজনীতিতে এমনটা খুব বেশি দেখা যায় না। আমাদের দেশে সুন্দর মুখের নেতা আমরা দেখি শেখ মুজিবের মধ্যে। এরপর দেখলাম খালেদা জিয়াকে।”
মহিউদ্দিন আহমদ বিএনপির ইতিহাস লেখার সময় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করেন। তার সঙ্গে আলোচনা ছিল সংক্ষিপ্ত। দলের ইতিহাসের বিষয়ে জানতে জাইলে খালেদা জিয়া বলেন, “বিএনপির জন্মের সময় তো আমি ছিলাম না।” এরপর বিএনপি সময় অসময় বইটি বের হলে লেখক এর একটি কপি খালেদা জিয়ার হাতে দিতে গেলে সেবারও রাজনীতি নিয়ে লেখকের কথা হয়। মহিউদ্দিন আহমদ তার (খালেদা জিয়া) বায়োগ্রাফি লেখার ইচ্ছের কথা জানান। তিনি বলেন, এরকম বই লিখতে হলে আপনার সঙ্গে অনেকবার বসতে হবে, কথা বলতে হবে। সেখানে উপস্থিত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, খুব ভালো হবে। তবে অফিসে না হয়ে বাসায় সাক্ষাৎকার নেওয়াটাই ঠিক হবে।
সেদিন খালেদা জিয়া কিন্তু তার ওপর বই লেখার বিষয়ে খুব আগ্রহ দেখাননি। তিনি বলেছেন, জীবনী লেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তো আমি নই। এটা ছিল তার বিনয়। এরপর রাজনীতিতে অনেক ঘটনা ঘটে। উদ্দেশ্যমূলক মামলায় খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়ে জেলে যান। ফলে জেল, হাসপাতাল ও বাসায় অন্তরীণ অবস্থায় তাকে কাটাতে পুরোটা সময়। তিনি অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি পান ৫ আগস্ট ক্ষমতার পাালাবদলের পর।

ফলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মহিউদ্দিন আহমদের দেখা করা বা সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ হয়নি। তারপরও তিনি তার রাজনৈতিক জীবন আখ্যান লিখেছেন। নাম দিয়েছেন ‘খালেদা।’ এ বইয়ে অন্যদের ভাষ্যে খালেদা জিয়ার শৈশব ও কৈশোরের কথা আছে। আছে রাজনৈতিক চড়াই উৎরাইয়ের কাহিনী। যে কোনো বৈরি পরিস্থিতিতে তার দৃঢ় ও আপসহীন মনোভাবের কথাই তুলে ধরেছেন লেখক।
মহিউদ্দিন আহমদ উপসংহারে প্রশ্ন তুলেছেন, “ইতিহাস খালেদাকে কীভাবে মনে রাখবে?” নিজেই এর জবাব দিতে গিয়ে লিখেছেন, “বিএনপি সেভাবে একটি দল ছিল না, যেভাবে রাজনৈতিক দল তৈরি হয় আমাদের দেশে। বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে ওঠে এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতার বলয়ের ভেতর থেকে দল তৈরি করেছিলেন। পরে খালেদা জিয়া সে দলকে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে নেন। আজকে আমরা যে বিএনপি দেখি; সেটার আইকন জিয়াউর রহমান হলেও; দলটাকে এ পর্যায়ে এনেছেন খালেদা জিয়া।”
মহিউদ্দিন আহমদের মতে, “খালেদা জিয়াই প্রথম নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। এর আগে যেসব নির্বাচন হয়েছে, তার সবটা নিয়েই বিতর্ক ও প্রশ্ন আছে। একই সঙ্গে তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীও। বিরোধী দলের নেতা হিসেবে খালেদা জিয়া গণতন্ত্র উদ্ধারে প্রতিবারই আপসহীন থেকেছেন। অনির্বাচিত সরকারের দমনপীড়ন উপেক্ষা করে রাজপথের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন।”
মহিউদ্দিন আহমদের শেষ কথা হলো, “হাসিনা সরকারের আমলে খালেদা জিয়া অনেক দিন গণবিচ্ছিন্ন থাকতে বাধ্য হয়েছেন। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি ধৈর্য ধরে ছিলেন। নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল তার। এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
সেই বিশ্বাসের কারণেই তৎকালীন সরকারের চাপ, নির্যাতন ও প্রলোভন সত্ত্বেও নেতা-কর্মীরা তাকে ছেড়ে যাননি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে একদল নেতা-কর্মী ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জুটে যান। মন্ত্রী এমপি হয়ে আখের গোছান। অতীতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসনামলে এমন দৃশ্য অহরহ দেখা গেছে। কিন্তু বিগত পনের বছরে ক্ষমতাসীনেরা যে বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের একজন নেতাকেও ভাগিয়ে নিতে পারেননি, তার পেছেন খালেদা জিয়ার ক্যারিশমাই কাজ করেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষমতায় থাকতে অনেক নেতা-নেত্রী জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম নিয়ত তার গুণকীর্তনে ব্যস্ত থাকে, দলীয় নেতা-কর্মীরাও তাকে মহামানবের আসনে বসান। কিন্তু ক্ষমতার বাইরে থেকে যারা বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন, তিনিই প্রকৃত জনপ্রিয় নেতা বা নেত্রীর শিরোপা পান। সেদিক থেকে খালেদা জিয়া সমসাময়িক অন্যসব নেতা-নেত্রীকে ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী ও দুবার সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কোনো নির্বাচনে হারেননি।
লেখক: সম্পাদক, চরচা।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আজ ৩০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকালে ইন্তেকাল (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন) করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চার দশকের একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান হলো।
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। মুসলিম বিশ্বে দ্বিতীয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টো। এদিক থেকে খালেদা জিয়া একটি ইতিহাস তৈরি করেছেন।
লেখক-গবেষক মহিদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাসদের রাজনৈতিক ইতিহাস লিখেছেন। জামায়াতে ইসলামী নিয়েও তার বই আছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন পাঠকপ্রিয় একাধিক বই। তার এক এগারো বাংলাদেশ ২০০৭-০৮ বইটিতে আছে অনেক অজানা তথ্য, যা ভবিষ্যত গবেষকদের আকরগ্রন্থ হিসেবে কাজ করবে।
মহিউদ্দিন আহমদ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে প্রথম যার জীবনভিত্তিক রাজনৈতিক আখ্যান লিখলেন, তিনি বেগম খালেদা জিয়া। একজন গৃহবধূ নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে যে কেবল দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া নয়, জাতীয় রাজনীতির শীর্ষে উঠেছেন, তারও বর্ণনা আছে এ বইয়ে নানা তথ্য উপাত্তের সমাহারে।

মহিউদ্দিন আহমদ কেন এই বই লিখতে উদ্বুদ্ধ হলেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, “এ দেশে সফল রাজনীতিক অনেকেই আছেন। তারা কেউ কেউ ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছাতে পেরেছেন। আবার অনেক সুদর্শন নারী-পুরুষকে জানি, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ করে চলচ্চিত্রে কিংবদন্তী হয়ে আছেন। সুচিত্রা সেন থেকে সোফিয়া লোরেন অনেকেই আমাদের কৈশোর যৌবনের ‘ক্রাশ’। রাজনীতিতে এমনটা খুব বেশি দেখা যায় না। আমাদের দেশে সুন্দর মুখের নেতা আমরা দেখি শেখ মুজিবের মধ্যে। এরপর দেখলাম খালেদা জিয়াকে।”
মহিউদ্দিন আহমদ বিএনপির ইতিহাস লেখার সময় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করেন। তার সঙ্গে আলোচনা ছিল সংক্ষিপ্ত। দলের ইতিহাসের বিষয়ে জানতে জাইলে খালেদা জিয়া বলেন, “বিএনপির জন্মের সময় তো আমি ছিলাম না।” এরপর বিএনপি সময় অসময় বইটি বের হলে লেখক এর একটি কপি খালেদা জিয়ার হাতে দিতে গেলে সেবারও রাজনীতি নিয়ে লেখকের কথা হয়। মহিউদ্দিন আহমদ তার (খালেদা জিয়া) বায়োগ্রাফি লেখার ইচ্ছের কথা জানান। তিনি বলেন, এরকম বই লিখতে হলে আপনার সঙ্গে অনেকবার বসতে হবে, কথা বলতে হবে। সেখানে উপস্থিত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, খুব ভালো হবে। তবে অফিসে না হয়ে বাসায় সাক্ষাৎকার নেওয়াটাই ঠিক হবে।
সেদিন খালেদা জিয়া কিন্তু তার ওপর বই লেখার বিষয়ে খুব আগ্রহ দেখাননি। তিনি বলেছেন, জীবনী লেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তো আমি নই। এটা ছিল তার বিনয়। এরপর রাজনীতিতে অনেক ঘটনা ঘটে। উদ্দেশ্যমূলক মামলায় খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়ে জেলে যান। ফলে জেল, হাসপাতাল ও বাসায় অন্তরীণ অবস্থায় তাকে কাটাতে পুরোটা সময়। তিনি অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি পান ৫ আগস্ট ক্ষমতার পাালাবদলের পর।

ফলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মহিউদ্দিন আহমদের দেখা করা বা সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ হয়নি। তারপরও তিনি তার রাজনৈতিক জীবন আখ্যান লিখেছেন। নাম দিয়েছেন ‘খালেদা।’ এ বইয়ে অন্যদের ভাষ্যে খালেদা জিয়ার শৈশব ও কৈশোরের কথা আছে। আছে রাজনৈতিক চড়াই উৎরাইয়ের কাহিনী। যে কোনো বৈরি পরিস্থিতিতে তার দৃঢ় ও আপসহীন মনোভাবের কথাই তুলে ধরেছেন লেখক।
মহিউদ্দিন আহমদ উপসংহারে প্রশ্ন তুলেছেন, “ইতিহাস খালেদাকে কীভাবে মনে রাখবে?” নিজেই এর জবাব দিতে গিয়ে লিখেছেন, “বিএনপি সেভাবে একটি দল ছিল না, যেভাবে রাজনৈতিক দল তৈরি হয় আমাদের দেশে। বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে ওঠে এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতার বলয়ের ভেতর থেকে দল তৈরি করেছিলেন। পরে খালেদা জিয়া সে দলকে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে নেন। আজকে আমরা যে বিএনপি দেখি; সেটার আইকন জিয়াউর রহমান হলেও; দলটাকে এ পর্যায়ে এনেছেন খালেদা জিয়া।”
মহিউদ্দিন আহমদের মতে, “খালেদা জিয়াই প্রথম নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। এর আগে যেসব নির্বাচন হয়েছে, তার সবটা নিয়েই বিতর্ক ও প্রশ্ন আছে। একই সঙ্গে তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীও। বিরোধী দলের নেতা হিসেবে খালেদা জিয়া গণতন্ত্র উদ্ধারে প্রতিবারই আপসহীন থেকেছেন। অনির্বাচিত সরকারের দমনপীড়ন উপেক্ষা করে রাজপথের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন।”
মহিউদ্দিন আহমদের শেষ কথা হলো, “হাসিনা সরকারের আমলে খালেদা জিয়া অনেক দিন গণবিচ্ছিন্ন থাকতে বাধ্য হয়েছেন। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি ধৈর্য ধরে ছিলেন। নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল তার। এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
সেই বিশ্বাসের কারণেই তৎকালীন সরকারের চাপ, নির্যাতন ও প্রলোভন সত্ত্বেও নেতা-কর্মীরা তাকে ছেড়ে যাননি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে একদল নেতা-কর্মী ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জুটে যান। মন্ত্রী এমপি হয়ে আখের গোছান। অতীতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসনামলে এমন দৃশ্য অহরহ দেখা গেছে। কিন্তু বিগত পনের বছরে ক্ষমতাসীনেরা যে বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের একজন নেতাকেও ভাগিয়ে নিতে পারেননি, তার পেছেন খালেদা জিয়ার ক্যারিশমাই কাজ করেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষমতায় থাকতে অনেক নেতা-নেত্রী জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম নিয়ত তার গুণকীর্তনে ব্যস্ত থাকে, দলীয় নেতা-কর্মীরাও তাকে মহামানবের আসনে বসান। কিন্তু ক্ষমতার বাইরে থেকে যারা বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন, তিনিই প্রকৃত জনপ্রিয় নেতা বা নেত্রীর শিরোপা পান। সেদিক থেকে খালেদা জিয়া সমসাময়িক অন্যসব নেতা-নেত্রীকে ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী ও দুবার সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কোনো নির্বাচনে হারেননি।
লেখক: সম্পাদক, চরচা।