সোহরাব হাসান

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের একমাত্র বই ‘ভারতের রাজনৈতিক দল’ বা ‘পলিটিকাল পার্টিস অব ইন্ডিয়া।’ এটি ছিল প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হ্যারল্ড লাস্কির অধীনে তার পিএইচডি অভিসন্ধর্ভ। গবেষণা শেষ হওয়ার আগে হ্যারল্ড লাস্কি মারা যান। তিনি পিএইচডি না করেই দেশে ফিরে আসেন। তাতে আবদুর রাজ্জাক পেশাগত জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হয়েছেন তার ভক্ত-শিক্ষার্থীরা। তারা প্রিয় শিক্ষকের কাছে কেবল রাষ্ট্রবিজ্ঞান নয়, জীবন-জগতের সব বিষয়েই জ্ঞান লাভের সুযোগ পেয়েছেন। তাকে বলা হতো জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া।
আবদুর রাজ্জাক তার বইয়ে যে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন, তা হলো ভারতবর্ষে সত্যিকার অর্থে কোনো রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠেনি। এখানকার রাজনৈতিক দলগুলো কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করেছে, কিন্তু রাজনৈতিক দল হতে যে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দর্শন দরকার, সেটা তৈরি হয়নি।
অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ব্রিটিশ ভারতের বাস্তবতায় যে তত্ত্ব দিয়েছেন, পরবর্তী পাকিস্তান আমল এবং বর্তমান বাংলাদেশের জন্যও তা কম-বেশি প্রযোজ্য। পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিসহ যেসব দল গড়ে ওঠেছিল তাদের মূল কথা ছিল পাকিস্তানি শাসকদের বিরোধিতা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সেই ধারা অব্যাহত ছিল এবং এখনো আছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধী দল হিসেবে যতটা সফল হয়েছে, ক্ষমতায় গিয়ে সেই সাফল্য দেখাতে পারেনি। এ কারণে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনে ক্ষমতাসীনেরা বিজয়ী হতে পারেনি। বিজয়ী হয়েছে সেই শক্তি বা দল যারা আগের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিল। চাঁদের যেমন নিজের আলো থাকে না, সূর্যের আলো ধার করে পৃথিবীতে আলো ছড়ায় তেমনি বাংলাদেশেও বিরোধী দলকেও নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না, সরকারি দলের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডই তাদের জয়ের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
এই প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত বিশ্লেষণ করি, দেখব বিরোধী দল বিএনপির নেতা হিসেবে তিনি ম্যাজিক দেখিয়েছেন ২০০১ সালের নির্বাচনে। বিএনপি জোটের আশাতীত সাফল্যের পেছনে তার সাংগঠনিক কৌশল ম্যাজিক বা জাদুর মতো কাজ করেছে।
কিন্তু সরকার গঠনের পর সেই ম্যাজিক কাজ করেনি। নানা বদনাম ও ব্যর্থতার দায়ভার নিয়েই বিএনপিকে ২০০৬ সালে বিদায় নিতে হয়েছিল। তাদের প্রতি জন-অসন্তোষটি এতটাই প্রকট ছিল যে ২০০৮-এর নির্বাচনে তিন বার ক্ষমতায় থাকা দলটি মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল। বিএনপি অবশ্য ওই নির্বাচনকে সাজানো বলে দাবি করে। যেমন আওয়ামী লীগ মনে করে ২০০১ সালের নির্বাচনে তাদের চক্রান্ত করে হারানো হয়েছে। বাংলাদেশে যে দলই নির্বাচনে হারে সেই সূক্ষ্ণ ও স্থূল কারচুপি খোঁজে নেমে পড়ে।
২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয় পায়। কিন্তু তাদের অনাচার ও দুর্নীতি এমন স্তরে পৌঁছেছিল যে পরের নির্বাচনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতে সাহস পায়নি। ২০১১ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তারা সেই ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ এই আওয়ামী লীগই সংবিধানে তত্ত্বাধায়ক ব্যবস্থা চালুর কৃতিত্ব দাবি করেছিল।
স্বাভাবিকভাবে বিএনপি ও এর মিত্ররা ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে এবং আওয়ামী লীগ নজিরবিহীনভাবে ১৫৩টি আসনে বিনা ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। বিএনপির অনুপস্থিতিতে জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের শিরোপা পায়। মাঠের রাজনীতির প্রধান দলটিতে সংসদীয় ব্যবস্থার বাইরে রাখার কৌশল কোনোভাবে গণতান্ত্রিক হতে পারে না। আশির দশকতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও একই কাজ করেছেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ বেশির ভাগ দলের বর্জন সত্ত্বেও প্রহসনমূলক নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করে এবং বিরোধী দলে বসে আসম আবদুর রবের দল। সেই সংসদ দুই বছরের মধ্যে ভেঙে দেওয়া হলেও শেখ হাসিনা পাঁচ বছরই ক্ষমতা থাকেন। কারচুপির নির্বাচন করে ক্ষমতা প্রলম্বিত করার কৌশল যে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানই তার প্রমাণ।
অবশ্য শেখ হাসিনা আরেকটি সুযোগ পেয়েছিলেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে। তিনি দেখাতে পারতেন যে দলীয় সরকারের আমলেও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। ওই নির্বাচনে আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বিএনপি অংশ নিয়েছিল। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। কিন্তু সেই নির্বাচনটিতেও কারসাজির কারণে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। সংবাদমাধ্যমে এমন খবরও পাওয়া গেল যে ভোট গ্রহণের আগেই বেশির ভাগ আসনে রাতে ভোট হয়েছে। এই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ছয়টি আসনে জয়ী হয়, যা ছিল অবিশ্বাস্য।
বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতির দুটি প্রবণতা বেশ প্রবল। যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন না। আর বিরোধী দলে থাকতে যেসব অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে করতেন সেই একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে থাকেন তারা। ফলে জনগণ দ্রুত মুখ ফিরিয়ে নেয়।
এরপর ক্ষমতাসীনেরা পূর্বসুরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিরোধীদের ওপর দমন পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য তাদের আরও বেশি কারচুপি ও জবরদস্তির আশ্রয় নিতে হয়। অতীতে এই জবরদস্তি একবারের মধ্যে সীমিত থাকত। আওয়ামী লীগ তিনটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে করায় জবরদস্তির মাত্রাটাও বেড়েছে। যে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করে ক্ষমতা বদলের সুযোগ থাকে না, সে দেশে বারবার গণঅভ্যুত্থান ঘটে। যেসব দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা কার্যকর থাকে, সেসব দেশে গণঅভ্যুত্থানের প্রয়েোজন হয় না।
২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে, তার স্বরূপ কী হবে এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা চলছে। তবে একটি ইতিবাচক দিক হলো নির্বাচনটি হবে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে, যাদের কোনো দল বা রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। অতএব, সরকারের উপদেষ্টাদের কারও প্রতি পক্ষপাত থাকারও কথা নয়। তবে নির্বাচনের প্রতিযোগী রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের তারা কতটা আচরণবিধি মানাতে পারবেন এবং ভোটারদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবেন, তার ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতিহাসের সেরা নির্বাচন করার অঙ্গীকার করেছেন। সেরা না হোক, মোটামুটি একটি ভালো নির্বাচন তো দেশবাসী আশা করতে পারে।
সোহরাব হাসান: সম্পাদক, চরচা

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের একমাত্র বই ‘ভারতের রাজনৈতিক দল’ বা ‘পলিটিকাল পার্টিস অব ইন্ডিয়া।’ এটি ছিল প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হ্যারল্ড লাস্কির অধীনে তার পিএইচডি অভিসন্ধর্ভ। গবেষণা শেষ হওয়ার আগে হ্যারল্ড লাস্কি মারা যান। তিনি পিএইচডি না করেই দেশে ফিরে আসেন। তাতে আবদুর রাজ্জাক পেশাগত জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হয়েছেন তার ভক্ত-শিক্ষার্থীরা। তারা প্রিয় শিক্ষকের কাছে কেবল রাষ্ট্রবিজ্ঞান নয়, জীবন-জগতের সব বিষয়েই জ্ঞান লাভের সুযোগ পেয়েছেন। তাকে বলা হতো জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া।
আবদুর রাজ্জাক তার বইয়ে যে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন, তা হলো ভারতবর্ষে সত্যিকার অর্থে কোনো রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠেনি। এখানকার রাজনৈতিক দলগুলো কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করেছে, কিন্তু রাজনৈতিক দল হতে যে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দর্শন দরকার, সেটা তৈরি হয়নি।
অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ব্রিটিশ ভারতের বাস্তবতায় যে তত্ত্ব দিয়েছেন, পরবর্তী পাকিস্তান আমল এবং বর্তমান বাংলাদেশের জন্যও তা কম-বেশি প্রযোজ্য। পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিসহ যেসব দল গড়ে ওঠেছিল তাদের মূল কথা ছিল পাকিস্তানি শাসকদের বিরোধিতা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সেই ধারা অব্যাহত ছিল এবং এখনো আছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধী দল হিসেবে যতটা সফল হয়েছে, ক্ষমতায় গিয়ে সেই সাফল্য দেখাতে পারেনি। এ কারণে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনে ক্ষমতাসীনেরা বিজয়ী হতে পারেনি। বিজয়ী হয়েছে সেই শক্তি বা দল যারা আগের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিল। চাঁদের যেমন নিজের আলো থাকে না, সূর্যের আলো ধার করে পৃথিবীতে আলো ছড়ায় তেমনি বাংলাদেশেও বিরোধী দলকেও নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না, সরকারি দলের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডই তাদের জয়ের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
এই প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত বিশ্লেষণ করি, দেখব বিরোধী দল বিএনপির নেতা হিসেবে তিনি ম্যাজিক দেখিয়েছেন ২০০১ সালের নির্বাচনে। বিএনপি জোটের আশাতীত সাফল্যের পেছনে তার সাংগঠনিক কৌশল ম্যাজিক বা জাদুর মতো কাজ করেছে।
কিন্তু সরকার গঠনের পর সেই ম্যাজিক কাজ করেনি। নানা বদনাম ও ব্যর্থতার দায়ভার নিয়েই বিএনপিকে ২০০৬ সালে বিদায় নিতে হয়েছিল। তাদের প্রতি জন-অসন্তোষটি এতটাই প্রকট ছিল যে ২০০৮-এর নির্বাচনে তিন বার ক্ষমতায় থাকা দলটি মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল। বিএনপি অবশ্য ওই নির্বাচনকে সাজানো বলে দাবি করে। যেমন আওয়ামী লীগ মনে করে ২০০১ সালের নির্বাচনে তাদের চক্রান্ত করে হারানো হয়েছে। বাংলাদেশে যে দলই নির্বাচনে হারে সেই সূক্ষ্ণ ও স্থূল কারচুপি খোঁজে নেমে পড়ে।
২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয় পায়। কিন্তু তাদের অনাচার ও দুর্নীতি এমন স্তরে পৌঁছেছিল যে পরের নির্বাচনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতে সাহস পায়নি। ২০১১ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তারা সেই ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ এই আওয়ামী লীগই সংবিধানে তত্ত্বাধায়ক ব্যবস্থা চালুর কৃতিত্ব দাবি করেছিল।
স্বাভাবিকভাবে বিএনপি ও এর মিত্ররা ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে এবং আওয়ামী লীগ নজিরবিহীনভাবে ১৫৩টি আসনে বিনা ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। বিএনপির অনুপস্থিতিতে জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের শিরোপা পায়। মাঠের রাজনীতির প্রধান দলটিতে সংসদীয় ব্যবস্থার বাইরে রাখার কৌশল কোনোভাবে গণতান্ত্রিক হতে পারে না। আশির দশকতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও একই কাজ করেছেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ বেশির ভাগ দলের বর্জন সত্ত্বেও প্রহসনমূলক নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করে এবং বিরোধী দলে বসে আসম আবদুর রবের দল। সেই সংসদ দুই বছরের মধ্যে ভেঙে দেওয়া হলেও শেখ হাসিনা পাঁচ বছরই ক্ষমতা থাকেন। কারচুপির নির্বাচন করে ক্ষমতা প্রলম্বিত করার কৌশল যে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানই তার প্রমাণ।
অবশ্য শেখ হাসিনা আরেকটি সুযোগ পেয়েছিলেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে। তিনি দেখাতে পারতেন যে দলীয় সরকারের আমলেও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। ওই নির্বাচনে আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বিএনপি অংশ নিয়েছিল। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। কিন্তু সেই নির্বাচনটিতেও কারসাজির কারণে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। সংবাদমাধ্যমে এমন খবরও পাওয়া গেল যে ভোট গ্রহণের আগেই বেশির ভাগ আসনে রাতে ভোট হয়েছে। এই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ছয়টি আসনে জয়ী হয়, যা ছিল অবিশ্বাস্য।
বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতির দুটি প্রবণতা বেশ প্রবল। যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন না। আর বিরোধী দলে থাকতে যেসব অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে করতেন সেই একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে থাকেন তারা। ফলে জনগণ দ্রুত মুখ ফিরিয়ে নেয়।
এরপর ক্ষমতাসীনেরা পূর্বসুরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিরোধীদের ওপর দমন পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য তাদের আরও বেশি কারচুপি ও জবরদস্তির আশ্রয় নিতে হয়। অতীতে এই জবরদস্তি একবারের মধ্যে সীমিত থাকত। আওয়ামী লীগ তিনটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে করায় জবরদস্তির মাত্রাটাও বেড়েছে। যে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করে ক্ষমতা বদলের সুযোগ থাকে না, সে দেশে বারবার গণঅভ্যুত্থান ঘটে। যেসব দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা কার্যকর থাকে, সেসব দেশে গণঅভ্যুত্থানের প্রয়েোজন হয় না।
২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে, তার স্বরূপ কী হবে এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা চলছে। তবে একটি ইতিবাচক দিক হলো নির্বাচনটি হবে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে, যাদের কোনো দল বা রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। অতএব, সরকারের উপদেষ্টাদের কারও প্রতি পক্ষপাত থাকারও কথা নয়। তবে নির্বাচনের প্রতিযোগী রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের তারা কতটা আচরণবিধি মানাতে পারবেন এবং ভোটারদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবেন, তার ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতিহাসের সেরা নির্বাচন করার অঙ্গীকার করেছেন। সেরা না হোক, মোটামুটি একটি ভালো নির্বাচন তো দেশবাসী আশা করতে পারে।
সোহরাব হাসান: সম্পাদক, চরচা