তারেক রহমানের ফেরায় ‘মোমেন্টাম’ ফিরে পেল বিএনপি?

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
তারেক রহমানের ফেরায় ‘মোমেন্টাম’ ফিরে পেল বিএনপি?
বাসে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারেক রহমান। ছবি: ফেসবুক

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হবেন। ১৭ বছর পর দেশে ফিরে এসেছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, তারেক রহমানের এই ফেরার মাধ্যমে ‘মোমেন্টাম’ ফিরে পেল বিএনপি।

তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফিরে আসা ঘিরে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে অনুষ্ঠানস্থল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে লাখ লাখ সমর্থক ভিড় করে। সমর্থকরা দলীয় পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফুল নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তারেক রহমানকে বরণ করে নেয় বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

এ সময় সাদা শার্ট ও ধূসর রঙের চেক ব্লেজার পরে তারেক রহমান হাসিমুখে জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। বিএনপি এই সমাবেশকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে উল্লেখ করে জানায়, দলটির লক্ষ্য ছিল রাজধানীতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটানো।

২০২৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এবার বিএনপি মোমেন্টাম ফিরে পেয়েছে এবং আগামী ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে তারেক রহমানকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদের প্রধান দাবিদার হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ঢাকার আল জাজিরা প্রতিনিধি তানভীর চৌধুরী বলেন, “তারেক রহমান এমন এক সময়ে দেশে ফিরেছেন যখন বাংলাদেশ এক অস্থির ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যদিও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু দেশ নেতৃত্বে একটি শূন্যতা বিরাজ করছে।”

তানভীর চৌধুরী আরও বলেন, “বিশেষ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তারেক রহমানই সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে যাচ্ছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর বড় কারণ হলো, প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীতে এখনো গত সরকারের অনেক লোক রয়ে গেছে।”

তারেক রহমান বহু বছর ধরে দেশে ফিরতে পারেননি, কারণ তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল। মানি লন্ডারিং এবং শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় তাকে অনুপস্থিতিতেই সাজা দেওয়া হয়েছিল। তবে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর সেইসব রায় বাতিল করা হয়, যার ফলে তার দেশে ফেরার আইনি পথ পরিষ্কার হয়।

এর আগে ২০০৬-২০০৮ সালের সেনাসমর্থিত সরকারের সময় হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন। তার এই ফেরার পেছনে পারিবারিক আবেগও জড়িয়ে আছে। কারণ তার মা খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। বিমানবন্দর থেকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে তিনি সরাসরি তার মাকে দেখতে যান।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। কয়েক দশক ধরে হাসিনা ও খালেদা জিয়াই পর্যায়ক্রমে দেশ শাসন করেছেন।

আমেরিকার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)-এর একটি জরিপ অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে বিএনপি সবচেয়ে বেশি আসন পেয়ে জয়ী হতে পারে। এই দৌঁড়ে জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির হুমকি দিচ্ছে, যা ভোটগ্রহণে বাধা হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে বাংলাদেশ এখন নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। কর্তৃপক্ষ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও গণমাধ্যমে হামলা এবং বিক্ষিপ্ত সহিংসতা জনমনে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের ফিরে আসা বিএনপি এবং বাংলাদেশের ভঙ্গুর রাজনীতি থেকে উত্তরণের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

সম্পর্কিত