অর্ণব সান্যাল

গুগলে Zero-Click Search নামের ফিচারটি চলে এসেছে গত বছরই। এখন দিনকে দিন এটি বিস্তৃত ও উন্নত হচ্ছে। সেই সঙ্গে Google Zero সংক্রান্ত শঙ্কা প্রবল হচ্ছে। কারণ বর্তমানের Zero-Click Search বা ভবিতব্য হিসেবে আবছাভাবে দেখতে পাওয়া Google Zero, দুটিতেই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত হিসেবে জোরেশোরে আসছে অনলাইন পাবলিশারদের নাম।
Google Zero হলো একটি তত্ত্বের সত্যে পরিণত হওয়ার শঙ্কা। গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের একটি নতুন ফিচার হলো এআই ওভারভিউ। গুগলে কোনো বিষয় নিয়ে সার্চ করতে গেলেই এখন চোখের সামনে আগে ভেসে ওঠে এই ফিচার। এতে সার্চ করা বিষয়ের ওপর একটি সামারি বা সারসংক্ষেপ তুলে ধরে গুগলের এআই। মূলত বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়েই এই সামারি তৈরি করা হয়। তথ্যের সাথে সাথে সেসব ওয়েবসাইটের লিংকও জুড়ে দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি এই এআই ওভারভিউ দেওয়া শুরু করে গুগল।
আর এমন অবস্থাতেই Google Zero তত্ত্বের অবতারণা হয়। ‘গুগল জিরো’ নামের এই শব্দবন্ধটি প্রথম ব্যবহার শুরু করেন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জ-এর প্রধান সম্পাদক নিলয় প্যাটেল। একে ‘Zero-Click Search’ও বলা হয়ে থাকে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে এআই ওভারভিউ চালু হওয়ায় এখন সার্চ করা বিষয় নিয়ে ব্যবহারকারীদের কোনো ক্লিক করার আগেই গুগলের এআই জানিয়ে দিচ্ছে সামারি। এতে করে সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তথ্য খোঁজার কাজ অনেকটাই করে দিতে পারছে গুগলের নতুন ফিচারটি। আর যদি গুগল নিজেদের সার্চ ইঞ্জিনেই প্রয়োজনীয় সব তথ্য ব্যবহারকারীদের সরবরাহ করতে থাকে, তবে থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটে ট্রাফিক পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশেই কমে আসবে। এবং চাইলেই গুগল তখন থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটে ট্রাফিক পাঠানো বন্ধ করে দিতেই পারে। এই পরিস্থিতিকেই বলা হচ্ছে ‘গুগল জিরো’।

সোজা কথায়, গুগল জিরো হলে ওয়েব দুনিয়ায় কোনো ব্যবহারকারী সার্চ ইঞ্জিন থেকে থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটে ক্লিক করে যাবে না। এবং এই কাজটি হবে গুগলের ইচ্ছাতেই। অর্থাৎ, গুগলই যদি ট্রাফিক পাঠানো বন্ধ করে দেয় আর কি। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এর আগের লক্ষণই হলো জিরো ক্লিক সার্চ, যেটি এরই মধ্যে ওয়েব দুনিয়ায় চলে এসেছে। ফলে ওয়েবসাইটগুলোর অরগানিক ট্রাফিক আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে বলে নানা খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বিভিন্ন বিশ্লেষকদের মতে, গুগলের এআই সামারির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে অনলাইন পাবলিশাররা। কারণ, অনলাইন পাবলিশাররা আয়ের জন্য অরগানিক ট্রাফিক এবং এই সূত্রে পাওয়া বিজ্ঞাপনের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। আর এআই সামারির কারণে সেই ঘটনা এরই মধ্যে ঘটতে শুরু করেছে।
বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যমগুলোর কী অবস্থা
গুগলের এআই সামারি আসার পর থেকে বিশ্বজুড়েই অনলাইন পাবলিশাররা কম ওয়েব ট্রাফিক পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন। বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা প্রতিবেদনে এসবের প্রমাণও মিলছে।
প্রেস গেজেটের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের অনলাইন পাবলিশাররা সাম্প্রতিক সময়ে সার্চ ট্রাফিকে প্রায় ৮০ শতাংশ ধস দেখেছে। এটি সাধারণ কোনো ঘটনা নয়, বরং সার্চ ট্রাফিকের গন্তব্যের ক্ষেত্রে এক ধরনের চিরস্থায়ী পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সিমিলারওয়েবের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত বছর এআই ওভারভিউ আসার পর থেকে জিরো ক্লিক সার্চ হতে পারে এমন ধরনের জিজ্ঞাসা ৫৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। অন্যতম বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার-এর অরগানিক সার্চ ট্রাফিক প্রায় ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই কারণেই বিজনেস ইনসাইডারকে নিজের কর্মীবাহিনীর ২১ শতাংশের চাকরি খেতে হয়েছে!
এদিকে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বেইন অ্যান্ড কোম্পানি নিজেদের গবেষণায় দেখেছে, শিগগিরই প্রায় ৮০ শতাংশ ভোক্তা জিরো ক্লিক সার্চে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে বয়সে তরুণ ব্যবহারকারীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এ থেকে এটিও বোঝা যায় যে, থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটে ওয়েব ট্রাফিক ক্রমশ নিম্নমুখীই হবে।
তাই বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়েই বলছেন যে, জিরো ক্লিক সার্চের কারণে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা ভোগ করবেন অনলাইন পাবলিশাররা। এবং এই অনলাইন পাবলিশারদের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি বিপাকে থাকবে সংবাদ ও তথ্যভিত্তিক

ওয়েবসাইটগুলো; অর্থাৎ, নিউজ মিডিয়া ওয়েবসাইটগুলো। কারণ, জিরো ক্লিক সার্চ বর্তমানে প্রাধান্য পাচ্ছে প্রতিদিনের সংবাদ-সংক্রান্ত সার্চে। ২০২৫ সালের মধ্যেই এ ধরনের জিরো ক্লিক সার্চের পরিমাণ ৬৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এরই মধ্যে গুগলের এআই সামারি আবির্ভূত হওয়ার কারণে কোনো কোনো ওয়েবসাইটের মাসিক ২৩০ কোটির পেজভিউ নেমে গেছে ১৭০ কোটিতেও।
ডেস্কটপ ও মোবাইল ওয়েবসাইটে অরগানিক সার্চ থেকে পাওয়া ট্রাফিক কমেছে হাফপোস্টেরও। সিমিলারওয়েব বলছে, দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের ডেস্কটপ ও মোবাইল ওয়েবসাইটে অরগানিক সার্চ থেকে ট্রাফিকের পরিমাণ কমে গেছে প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশের মতো। আর দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ওয়েবসাইটে ট্রাফিক কমেছে ৫ শতাংশের মতো। তবে সব মিডিয়া হাউজই মনে করছে, এই কমে যাওয়া থামবে না, বরং অনেকে শূন্যতে পৌঁছানোর শঙ্কাও করছে!
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রকাশক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উইলিয়াম লুইস মনে করেন, সাংবাদিকতার জন্য এই জিরো ক্লিক সার্চ একটি গুরুতর হুমকি। এটিকে হালকাভাবে নেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। উইলিয়াম আরও জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন পোস্ট নিজেদের ডিজিটাল বিজনেস মডেল পরিবর্তন করার দিকে এখন মনযোগী হচ্ছে।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা শেরি উইজ মনে করেন, এই জিরো ক্লিক সার্চের কারণে ওয়েব দুনিয়ার সার্চ সিস্টেমের পুরোটাই একটা ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পাঠক ও ভোক্তাদের সঙ্গে নতুন করে সংযোগ স্থাপন করার উপায় খুঁজতে হচ্ছে এখন। এমনকি সার্চভিত্তিক যে আস্থার জায়গাটি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অর্জন করেছিল, তা নিয়েও শঙ্কায় পড়তে হচ্ছে।
অর্থাৎ, একটি বিষয় স্পষ্ট যে, বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলো গুগলের এআই সামারি নিয়ে বেশ ভালোই গ্যাঁড়াকলে পড়েছে। সেটা যেমন ভিউ বিবেচনায়, তেমনি আয়ের দিক থেকেও। এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম আবার এআই স্টার্টআপগুলোর বিরুদ্ধে মামলাও ঠুকে দিচ্ছে। যেমন: কিছুদিন আগে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস কপিরাইট ইস্যুতে মামলা করেছে ওপেনএআই ও মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে। আবার সম্প্রতি আমাজনের সঙ্গে এআই লাইসেন্স নিয়ে চুক্তিও সম্পন্ন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। একইভাবে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্যারেন্ট কোম্পানি নিউজ করপোরেশনের সঙ্গে কনটেন্ট নিয়ে চুক্তি করেছে ওপেনএআই। আর অন্যদিকে পারপ্লেক্সিটির বিরুদ্ধে মামলাও দিয়ে রেখেছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
সুতরাং, এআই স্টার্টআপ ও সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে দুনিয়াজুড়েই এক ধরনের দ্বন্দ্বমুখর সম্পর্ক বর্তমানে বিরাজমান। এই দ্বন্দ্ব যে ক্রমশ বাড়তেই থাকবে, সেটি হলফ করে বলে দেওয়া যায়। কারণ, এআই ইন্টিগ্রেশনের ব্যাপারটি পাঠক-দর্শকদের কাছে সংবাদমাধ্যমগুলোর দৃশ্যমানতা হ্রাস করছে এবং একইসাথে রুটি-রুজি সংকোচিত করে ফেলছে। আর পকেটে টান পড়লে সবার মাথাই যে কিছুটা বিগড়ে যায়, সেটি তো জানা কথাই!
লেখক: বার্তা সম্পাদক, চরচা

গুগলে Zero-Click Search নামের ফিচারটি চলে এসেছে গত বছরই। এখন দিনকে দিন এটি বিস্তৃত ও উন্নত হচ্ছে। সেই সঙ্গে Google Zero সংক্রান্ত শঙ্কা প্রবল হচ্ছে। কারণ বর্তমানের Zero-Click Search বা ভবিতব্য হিসেবে আবছাভাবে দেখতে পাওয়া Google Zero, দুটিতেই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত হিসেবে জোরেশোরে আসছে অনলাইন পাবলিশারদের নাম।
Google Zero হলো একটি তত্ত্বের সত্যে পরিণত হওয়ার শঙ্কা। গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের একটি নতুন ফিচার হলো এআই ওভারভিউ। গুগলে কোনো বিষয় নিয়ে সার্চ করতে গেলেই এখন চোখের সামনে আগে ভেসে ওঠে এই ফিচার। এতে সার্চ করা বিষয়ের ওপর একটি সামারি বা সারসংক্ষেপ তুলে ধরে গুগলের এআই। মূলত বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়েই এই সামারি তৈরি করা হয়। তথ্যের সাথে সাথে সেসব ওয়েবসাইটের লিংকও জুড়ে দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি এই এআই ওভারভিউ দেওয়া শুরু করে গুগল।
আর এমন অবস্থাতেই Google Zero তত্ত্বের অবতারণা হয়। ‘গুগল জিরো’ নামের এই শব্দবন্ধটি প্রথম ব্যবহার শুরু করেন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জ-এর প্রধান সম্পাদক নিলয় প্যাটেল। একে ‘Zero-Click Search’ও বলা হয়ে থাকে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে এআই ওভারভিউ চালু হওয়ায় এখন সার্চ করা বিষয় নিয়ে ব্যবহারকারীদের কোনো ক্লিক করার আগেই গুগলের এআই জানিয়ে দিচ্ছে সামারি। এতে করে সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তথ্য খোঁজার কাজ অনেকটাই করে দিতে পারছে গুগলের নতুন ফিচারটি। আর যদি গুগল নিজেদের সার্চ ইঞ্জিনেই প্রয়োজনীয় সব তথ্য ব্যবহারকারীদের সরবরাহ করতে থাকে, তবে থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটে ট্রাফিক পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশেই কমে আসবে। এবং চাইলেই গুগল তখন থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটে ট্রাফিক পাঠানো বন্ধ করে দিতেই পারে। এই পরিস্থিতিকেই বলা হচ্ছে ‘গুগল জিরো’।

সোজা কথায়, গুগল জিরো হলে ওয়েব দুনিয়ায় কোনো ব্যবহারকারী সার্চ ইঞ্জিন থেকে থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটে ক্লিক করে যাবে না। এবং এই কাজটি হবে গুগলের ইচ্ছাতেই। অর্থাৎ, গুগলই যদি ট্রাফিক পাঠানো বন্ধ করে দেয় আর কি। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এর আগের লক্ষণই হলো জিরো ক্লিক সার্চ, যেটি এরই মধ্যে ওয়েব দুনিয়ায় চলে এসেছে। ফলে ওয়েবসাইটগুলোর অরগানিক ট্রাফিক আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে বলে নানা খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বিভিন্ন বিশ্লেষকদের মতে, গুগলের এআই সামারির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে অনলাইন পাবলিশাররা। কারণ, অনলাইন পাবলিশাররা আয়ের জন্য অরগানিক ট্রাফিক এবং এই সূত্রে পাওয়া বিজ্ঞাপনের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। আর এআই সামারির কারণে সেই ঘটনা এরই মধ্যে ঘটতে শুরু করেছে।
বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যমগুলোর কী অবস্থা
গুগলের এআই সামারি আসার পর থেকে বিশ্বজুড়েই অনলাইন পাবলিশাররা কম ওয়েব ট্রাফিক পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন। বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা প্রতিবেদনে এসবের প্রমাণও মিলছে।
প্রেস গেজেটের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের অনলাইন পাবলিশাররা সাম্প্রতিক সময়ে সার্চ ট্রাফিকে প্রায় ৮০ শতাংশ ধস দেখেছে। এটি সাধারণ কোনো ঘটনা নয়, বরং সার্চ ট্রাফিকের গন্তব্যের ক্ষেত্রে এক ধরনের চিরস্থায়ী পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সিমিলারওয়েবের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত বছর এআই ওভারভিউ আসার পর থেকে জিরো ক্লিক সার্চ হতে পারে এমন ধরনের জিজ্ঞাসা ৫৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। অন্যতম বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার-এর অরগানিক সার্চ ট্রাফিক প্রায় ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই কারণেই বিজনেস ইনসাইডারকে নিজের কর্মীবাহিনীর ২১ শতাংশের চাকরি খেতে হয়েছে!
এদিকে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বেইন অ্যান্ড কোম্পানি নিজেদের গবেষণায় দেখেছে, শিগগিরই প্রায় ৮০ শতাংশ ভোক্তা জিরো ক্লিক সার্চে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে বয়সে তরুণ ব্যবহারকারীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এ থেকে এটিও বোঝা যায় যে, থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটে ওয়েব ট্রাফিক ক্রমশ নিম্নমুখীই হবে।
তাই বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়েই বলছেন যে, জিরো ক্লিক সার্চের কারণে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা ভোগ করবেন অনলাইন পাবলিশাররা। এবং এই অনলাইন পাবলিশারদের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি বিপাকে থাকবে সংবাদ ও তথ্যভিত্তিক

ওয়েবসাইটগুলো; অর্থাৎ, নিউজ মিডিয়া ওয়েবসাইটগুলো। কারণ, জিরো ক্লিক সার্চ বর্তমানে প্রাধান্য পাচ্ছে প্রতিদিনের সংবাদ-সংক্রান্ত সার্চে। ২০২৫ সালের মধ্যেই এ ধরনের জিরো ক্লিক সার্চের পরিমাণ ৬৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এরই মধ্যে গুগলের এআই সামারি আবির্ভূত হওয়ার কারণে কোনো কোনো ওয়েবসাইটের মাসিক ২৩০ কোটির পেজভিউ নেমে গেছে ১৭০ কোটিতেও।
ডেস্কটপ ও মোবাইল ওয়েবসাইটে অরগানিক সার্চ থেকে পাওয়া ট্রাফিক কমেছে হাফপোস্টেরও। সিমিলারওয়েব বলছে, দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের ডেস্কটপ ও মোবাইল ওয়েবসাইটে অরগানিক সার্চ থেকে ট্রাফিকের পরিমাণ কমে গেছে প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশের মতো। আর দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ওয়েবসাইটে ট্রাফিক কমেছে ৫ শতাংশের মতো। তবে সব মিডিয়া হাউজই মনে করছে, এই কমে যাওয়া থামবে না, বরং অনেকে শূন্যতে পৌঁছানোর শঙ্কাও করছে!
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রকাশক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উইলিয়াম লুইস মনে করেন, সাংবাদিকতার জন্য এই জিরো ক্লিক সার্চ একটি গুরুতর হুমকি। এটিকে হালকাভাবে নেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। উইলিয়াম আরও জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন পোস্ট নিজেদের ডিজিটাল বিজনেস মডেল পরিবর্তন করার দিকে এখন মনযোগী হচ্ছে।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা শেরি উইজ মনে করেন, এই জিরো ক্লিক সার্চের কারণে ওয়েব দুনিয়ার সার্চ সিস্টেমের পুরোটাই একটা ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পাঠক ও ভোক্তাদের সঙ্গে নতুন করে সংযোগ স্থাপন করার উপায় খুঁজতে হচ্ছে এখন। এমনকি সার্চভিত্তিক যে আস্থার জায়গাটি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অর্জন করেছিল, তা নিয়েও শঙ্কায় পড়তে হচ্ছে।
অর্থাৎ, একটি বিষয় স্পষ্ট যে, বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলো গুগলের এআই সামারি নিয়ে বেশ ভালোই গ্যাঁড়াকলে পড়েছে। সেটা যেমন ভিউ বিবেচনায়, তেমনি আয়ের দিক থেকেও। এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম আবার এআই স্টার্টআপগুলোর বিরুদ্ধে মামলাও ঠুকে দিচ্ছে। যেমন: কিছুদিন আগে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস কপিরাইট ইস্যুতে মামলা করেছে ওপেনএআই ও মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে। আবার সম্প্রতি আমাজনের সঙ্গে এআই লাইসেন্স নিয়ে চুক্তিও সম্পন্ন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। একইভাবে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্যারেন্ট কোম্পানি নিউজ করপোরেশনের সঙ্গে কনটেন্ট নিয়ে চুক্তি করেছে ওপেনএআই। আর অন্যদিকে পারপ্লেক্সিটির বিরুদ্ধে মামলাও দিয়ে রেখেছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
সুতরাং, এআই স্টার্টআপ ও সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে দুনিয়াজুড়েই এক ধরনের দ্বন্দ্বমুখর সম্পর্ক বর্তমানে বিরাজমান। এই দ্বন্দ্ব যে ক্রমশ বাড়তেই থাকবে, সেটি হলফ করে বলে দেওয়া যায়। কারণ, এআই ইন্টিগ্রেশনের ব্যাপারটি পাঠক-দর্শকদের কাছে সংবাদমাধ্যমগুলোর দৃশ্যমানতা হ্রাস করছে এবং একইসাথে রুটি-রুজি সংকোচিত করে ফেলছে। আর পকেটে টান পড়লে সবার মাথাই যে কিছুটা বিগড়ে যায়, সেটি তো জানা কথাই!
লেখক: বার্তা সম্পাদক, চরচা