চরচা ডেস্ক

দিন যত এগোচ্ছে, কাজের পরিমাণ তত বাড়ছে আর সেই সঙ্গে বাড়ছে ‘মাল্টিটাস্কিং’-এর প্রবণতা। আধুনিক কর্মজীবনের বড় একটি অংশ বিশ্বাস করে, একসঙ্গে যত বেশি কাজ করা যায়, ততই মানুষ বেশি সক্ষম। বিভিন্ন অফিসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মীকে মাল্টিটাস্কার হওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া কিন্তু আসলেই কি তাই? মাল্টিটাস্কিং আমাদের দক্ষতা বাড়ায় নাকি উল্টো কমিয়ে দেয়?
মাল্টিটাস্কিং কী?
সাধারণভাবে, একসঙ্গে একাধিক কাজ করার প্রবৃত্তিকেই মাল্টিটাস্কিং বলা হয়। যেমন- আপনি ভিডিও কল করছেন, সেই সময়েই ইমেইল লিখছেন; অথবা রান্না করতে করতে ফোনে বারবার সোশ্যাল মিডিয়া দেখছেন। শুনতে মনে হয় যেন অনেক কিছু একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে মস্তিষ্ক একই সময়ে একাধিক কাজ ১০০% মনোযোগ দিয়ে করতে পারে না। আমাদের ব্রেন আসলে কাজ বদলাতে থাকে খুব দ্রুত, যাকে বলা হয় ‘টাস্ক সুইচিং’।
মাল্টিটাস্কিং-এর বাস্তব উদাহরণ
মাল্টিটাস্কিং আমাদের নিত্যদিনের আচরণে এতটাই মিলেমিশে গেছে যে আমরা অনেক সময় বুঝতেও পারি না কখন এটি করছি। যেমন-
এসব কাজ একসঙ্গে করা যতই কার্যকর মনে হোক, গবেষণা বলছে বিষয়টি ততটা সহজ নয়।
গবেষণায় কী বলছে?
বহু গবেষণায় দেখা গেছে, মাল্টিটাস্কিং-এর কিছু স্পষ্ট নেতিবাচক দিক রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণগুলো হলো-
মনোযোগ ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার মতে, যারা নিয়মিত মাল্টিটাস্কিং করেন, তাদের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়। তারা গুরুত্বপূর্ণ আর অগুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলাদা করে চিনতে বেশি সময় নেন। ফলে একই কাজ করতে তাদের আরও বেশি সময় লাগে।

কাজের মান কমে যায়
বেশ কয়েকটি নিউরোসাইকোলজিক্যাল সমীক্ষা বলছে, মাল্টিটাস্কিং করতে গিয়ে আমাদের মস্তিষ্ককে এক কাজ থেকে আরেক কাজে বারবার সুইচ করতে হয়। এই সুইচিং-এর কারণে কাজের গতি যেমন কমে, তেমনি ভুল করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। বিশেষ করে যেসব কাজ নিরবিচ্ছিন্ন মনোযোগ দাবি করে- যেমন লেখালেখি, কোডিং, প্রেজেন্টেশন তৈরি- এসব ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার হার দ্বিগুণ পর্যন্ত দেখা যায়।
স্মৃতিশক্তির ক্ষতি হতে পারে
সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বারবার মনোযোগ বদলাতে থাকলে ব্রেনের ‘ওয়ার্কিং মেমরি’ দুর্বল হয়। এটি সেই স্মৃতি যা আমরা অল্প সময়ের জন্য তথ্য ধরে রাখতে ব্যবহার করি। মাল্টিটাস্কিং অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে এই স্মৃতিকে ক্লান্ত করে তোলে।
মানসিক চাপ বাড়ায়
একাধিক কাজ একই সময়ে সামলাতে গেলে মস্তিষ্কে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায়। এজন্য মাল্টিটাস্কিং করা ব্যক্তিরা তুলনামূলক বেশি মানসিক চাপ অনুভব করেন। এতে কর্মস্থলে বা ঘরোয়া জীবনে বিরক্তি, অস্থিরতা ও হতাশার অনুভূতি বাড়তে পারে।
সৃজনশীলতা কমে
মাল্টিটাস্কিং আমাদের চিন্তার গভীরতা কমিয়ে দেয় বলে জানাচ্ছে অনেক সাইকোলজি গবেষণা। যখন মনোযোগ ভেঙে ভেঙে যায়, তখন নতুন আইডিয়া তৈরি করার ক্ষমতা কমে যায়। লেখক, ডিজাইনার বা গবেষকদের জন্য এটি বড় বাধা।

তাহলে কি মাল্টিটাস্কিং পুরোপুরি খারাপ?
সব সময় নয়। কিছু সহজ ও স্বয়ংক্রিয় কাজ যেমন হাঁটতে হাঁটতে গান শোনা বা রান্না করতে করতে পডকাস্ট শোনা- এসব ক্ষেত্রে মাল্টিটাস্কিং তেমন ক্ষতি করে না। কারণ একটির প্রতি মনোযোগ কম লাগে। তবে যেসব কাজ মনোযোগ দাবি করে, সেগুলোর সঙ্গে আরেকটি মনোযোগ-নির্ভর কাজ মেলানোই সমস্যার মূল।
মাল্টিটাস্কিং আমাদের সময় বাঁচায়-এমন ধারণা অনেকের মধ্যে থাকলেও গবেষণাগুলো তার উল্টো কথাই বলছে। এক সময়ে একটি কাজ করা, সেটিতে গভীর মনোযোগ দেওয়া, তারপর পরবর্তী কাজ শুরু করা, এই পদ্ধতিটাই আসলে সবচেয়ে কার্যকর।
দ্রুতগতির জীবনে কখন কোন কাজকে অগ্রাধিকার দেবেন, সেটিই মূল চ্যালেঞ্জ। আর মাল্টিটাস্কিং করার চেয়ে স্মার্ট টাস্কিং বা সঠিকভাবে কাজ ভাগ করে নেওয়াই দীর্ঘমেয়াদে আমাদের মস্তিষ্ক, মনোযোগ ও কর্মদক্ষতার জন্য বেশি উপকারী।
তথ্যসূত্র: ভেরিওয়েল মাইন্ড, হেডস্পেস

দিন যত এগোচ্ছে, কাজের পরিমাণ তত বাড়ছে আর সেই সঙ্গে বাড়ছে ‘মাল্টিটাস্কিং’-এর প্রবণতা। আধুনিক কর্মজীবনের বড় একটি অংশ বিশ্বাস করে, একসঙ্গে যত বেশি কাজ করা যায়, ততই মানুষ বেশি সক্ষম। বিভিন্ন অফিসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মীকে মাল্টিটাস্কার হওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া কিন্তু আসলেই কি তাই? মাল্টিটাস্কিং আমাদের দক্ষতা বাড়ায় নাকি উল্টো কমিয়ে দেয়?
মাল্টিটাস্কিং কী?
সাধারণভাবে, একসঙ্গে একাধিক কাজ করার প্রবৃত্তিকেই মাল্টিটাস্কিং বলা হয়। যেমন- আপনি ভিডিও কল করছেন, সেই সময়েই ইমেইল লিখছেন; অথবা রান্না করতে করতে ফোনে বারবার সোশ্যাল মিডিয়া দেখছেন। শুনতে মনে হয় যেন অনেক কিছু একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে মস্তিষ্ক একই সময়ে একাধিক কাজ ১০০% মনোযোগ দিয়ে করতে পারে না। আমাদের ব্রেন আসলে কাজ বদলাতে থাকে খুব দ্রুত, যাকে বলা হয় ‘টাস্ক সুইচিং’।
মাল্টিটাস্কিং-এর বাস্তব উদাহরণ
মাল্টিটাস্কিং আমাদের নিত্যদিনের আচরণে এতটাই মিলেমিশে গেছে যে আমরা অনেক সময় বুঝতেও পারি না কখন এটি করছি। যেমন-
এসব কাজ একসঙ্গে করা যতই কার্যকর মনে হোক, গবেষণা বলছে বিষয়টি ততটা সহজ নয়।
গবেষণায় কী বলছে?
বহু গবেষণায় দেখা গেছে, মাল্টিটাস্কিং-এর কিছু স্পষ্ট নেতিবাচক দিক রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণগুলো হলো-
মনোযোগ ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার মতে, যারা নিয়মিত মাল্টিটাস্কিং করেন, তাদের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়। তারা গুরুত্বপূর্ণ আর অগুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলাদা করে চিনতে বেশি সময় নেন। ফলে একই কাজ করতে তাদের আরও বেশি সময় লাগে।

কাজের মান কমে যায়
বেশ কয়েকটি নিউরোসাইকোলজিক্যাল সমীক্ষা বলছে, মাল্টিটাস্কিং করতে গিয়ে আমাদের মস্তিষ্ককে এক কাজ থেকে আরেক কাজে বারবার সুইচ করতে হয়। এই সুইচিং-এর কারণে কাজের গতি যেমন কমে, তেমনি ভুল করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। বিশেষ করে যেসব কাজ নিরবিচ্ছিন্ন মনোযোগ দাবি করে- যেমন লেখালেখি, কোডিং, প্রেজেন্টেশন তৈরি- এসব ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার হার দ্বিগুণ পর্যন্ত দেখা যায়।
স্মৃতিশক্তির ক্ষতি হতে পারে
সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বারবার মনোযোগ বদলাতে থাকলে ব্রেনের ‘ওয়ার্কিং মেমরি’ দুর্বল হয়। এটি সেই স্মৃতি যা আমরা অল্প সময়ের জন্য তথ্য ধরে রাখতে ব্যবহার করি। মাল্টিটাস্কিং অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে এই স্মৃতিকে ক্লান্ত করে তোলে।
মানসিক চাপ বাড়ায়
একাধিক কাজ একই সময়ে সামলাতে গেলে মস্তিষ্কে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায়। এজন্য মাল্টিটাস্কিং করা ব্যক্তিরা তুলনামূলক বেশি মানসিক চাপ অনুভব করেন। এতে কর্মস্থলে বা ঘরোয়া জীবনে বিরক্তি, অস্থিরতা ও হতাশার অনুভূতি বাড়তে পারে।
সৃজনশীলতা কমে
মাল্টিটাস্কিং আমাদের চিন্তার গভীরতা কমিয়ে দেয় বলে জানাচ্ছে অনেক সাইকোলজি গবেষণা। যখন মনোযোগ ভেঙে ভেঙে যায়, তখন নতুন আইডিয়া তৈরি করার ক্ষমতা কমে যায়। লেখক, ডিজাইনার বা গবেষকদের জন্য এটি বড় বাধা।

তাহলে কি মাল্টিটাস্কিং পুরোপুরি খারাপ?
সব সময় নয়। কিছু সহজ ও স্বয়ংক্রিয় কাজ যেমন হাঁটতে হাঁটতে গান শোনা বা রান্না করতে করতে পডকাস্ট শোনা- এসব ক্ষেত্রে মাল্টিটাস্কিং তেমন ক্ষতি করে না। কারণ একটির প্রতি মনোযোগ কম লাগে। তবে যেসব কাজ মনোযোগ দাবি করে, সেগুলোর সঙ্গে আরেকটি মনোযোগ-নির্ভর কাজ মেলানোই সমস্যার মূল।
মাল্টিটাস্কিং আমাদের সময় বাঁচায়-এমন ধারণা অনেকের মধ্যে থাকলেও গবেষণাগুলো তার উল্টো কথাই বলছে। এক সময়ে একটি কাজ করা, সেটিতে গভীর মনোযোগ দেওয়া, তারপর পরবর্তী কাজ শুরু করা, এই পদ্ধতিটাই আসলে সবচেয়ে কার্যকর।
দ্রুতগতির জীবনে কখন কোন কাজকে অগ্রাধিকার দেবেন, সেটিই মূল চ্যালেঞ্জ। আর মাল্টিটাস্কিং করার চেয়ে স্মার্ট টাস্কিং বা সঠিকভাবে কাজ ভাগ করে নেওয়াই দীর্ঘমেয়াদে আমাদের মস্তিষ্ক, মনোযোগ ও কর্মদক্ষতার জন্য বেশি উপকারী।
তথ্যসূত্র: ভেরিওয়েল মাইন্ড, হেডস্পেস