ভোটের পর ঐকমত্যের সরকার চায় জামায়াত

চরচা প্রতিবেদক
চরচা প্রতিবেদক
ভোটের পর ঐকমত্যের সরকার চায় জামায়াত
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভালো ফলাফল অর্জনের পথে রয়েছে একসময় নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশের ইসলামপন্থী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তারা একটি জাতীয় ঐক্য সরকারে যোগ দিতে আগ্রহী এবং ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে বুধবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন দলটির প্রধান ডা. শফিকুর রহমান।

জনমত জরিপ অনুযায়ী, দীর্ঘ ১৭ বছর পর নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ঠিক পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে নির্বাচন শেষ করতে পারে। ১৭ কোটি ৫০ লাখ মানুষের এই মুসলিম প্রধান দেশটিতে তারা মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর আগে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের অংশীদার হিসেবে ক্ষমতায় ছিল জামায়াতে ইসলামী।

ঢাকার একটি আবাসিক এলাকায় নিজের কার্যালয়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা অন্তত পাঁচ বছরের জন্য একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র দেখতে চাই। যদি দলগুলো একমত হয়, তবে আমরা একসঙ্গে সরকার পরিচালনা করব।”

কয়েকদিন আগেই তরুণদের দলের (জাতীয় নাগরিক পার্টি) সঙ্গে জোট বেঁধে জামায়াত রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

দুর্নীতিবিরোধী অঙ্গীকার

জামায়াত শরিয়া আইনের অধীনে ইসলামী শাসনের কথা বললেও বর্তমানে তারা রক্ষণশীল বলয়ের বাইরে সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ সম্পর্কে জামায়াতের আমির বলেন, যেকোনো ঐক্য সরকারের জন্য দুর্নীতি দমন একটি অভিন্ন এজেন্ডা হওয়া উচিত।

তিনি আরও জানান, যে দল সবচেয়ে বেশি আসন পাবে, প্রধানমন্ত্রী সেই দল থেকেই হবেন। যদি জামায়াত এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তবে তিনি নিজে পদপ্রার্থী হবেন কি না, তা দল সিদ্ধান্ত নেবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর জামায়াতের এই পুনরুত্থান ঘটেছে। হাসিনার দল আওয়ামী লীগ বর্তমানে নির্বাচনে নিষিদ্ধ। শেখ হাসিনা জামায়াতের কট্টর সমালোচক ছিলেন এবং তার শাসনামলে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, জামায়াত ওই যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল।

বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১৩ সালে আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দলটির ওপর থেকে সব বিধিনিষেধ তুলে নেয়।

ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক

শফিকুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ভারতে অবস্থান করা একটি উদ্বেগের বিষয়। কারণ তার পতনের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তি ভারত হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজ করেছিল।

নয়াদিল্লি যখন পরবর্তী সরকার গঠন করতে পারে–এমন দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে, তখন শফিকুর রহমান নিশ্চিত করেছেন যে, চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি একজন ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অন্যান্য দেশের কূটনীতিকরা প্রকাশ্যে তার সাথে দেখা করলেও, ভারতীয় কর্মকর্তা বৈঠকটি গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন বলে জানান এই নেতা।

তিনি বলেন, “সবার এবং একে অপরের জন্য উন্মুক্ত হতে হবে। সম্পর্ক উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।”

তার এই বক্তব্যের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ভারত সরকারের একটি সূত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে জামায়াতের ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা সবার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখি। আমরা কোনো একটি দেশের দিকে ঝুঁকে পড়তে আগ্রহী নই। বরং সবাইকে সম্মান করি এবং জাতিগুলোর মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক চাই।”

তিনি আরও বলেন, জামায়াত অন্তর্ভুক্ত থাকবে এমন যেকোনো সরকার রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে “স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না”। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন সাহাবুদ্দিন। এর আগে সাহাবুদ্দিন চলতি মাসের শুরুতে রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, তিনি মেয়াদের মাঝপথেই পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক।

বুধবার রয়টার্সের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন জামায়াত আমিরের এসব কথার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, বিষয়টিকে আরও জটিল করতে চান না।

সম্পর্কিত